নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফকির আবদুল মালেক

ফকির আবদুল মালেক

আমি এক উদাস ফকির তারা দানা তসবী গুনিপ্রাণীসম দেহ মাঝে মানুষ নামে স্বপ্ন বুনি

ফকির আবদুল মালেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'বন্দী শিবির থেকে\'- বাংলাদেশের কবিতায় এক বিরল অভিজ্ঞতা

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০



মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের একটি গুরম্নত্বপূর্ণ অধ্যায়। বাঙালি জাতি দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম করে অর্জন করে মাতৃভূমির স্বাধীনতা। প্রকৃতপক্ষে এই স্বাধীনতার উন্মেষ ঘটেছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। একুশের ভাষা-আন্দোলনকে নিয়ে যেমন উন্নত কবিতা রচিত হয়েছে, তেমনি রচিত হয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে নিয়েও।

শামসুর রাহমান একজন সমকাল ও সমাজ-সচেতন কবি। সমকালীন বাঙালির জাতীয় জীবনের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্ত মূর্ত হয়েছে তাঁর কবিতায়। শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মধ্য পঞ্চাশের দশক থেকে কাব্যচর্চা শুরু করেন। কাব্যচর্চার প্রথমদিকে তিনি জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে ও সুধীন্দ্রনাথ দত্ত – এ চারজন কবি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। জীবনানন্দের আত্মসচেতন ও নিজস্ব দর্শনজাত কবিতাই তাঁর কাব্যের প্রথম মৌলিক প্রেরণা। তিনি পরবর্তী ষাটের দশকে খুঁজে পেলেন নিজস্বতা। তিরিশের কবিদের প্রভাবমুক্ত হলেন, যুক্ত হলেন পরিপার্শ্বের সঙ্গে। শামসুর রাহমানের কবিতায় ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীর জীবন, একটি বিশেষ জনপথ, শহর, মানুষ ও স্বদেশ ইত্যাদি প্রসঙ্গ উঠে এসেছে বারবার। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ছিল না তাঁর হাতে রাইফেল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কবিতা লিখে বাঙালি জাতিকে সাহসী হওয়ার মন্ত্র দিয়েছিলেন। আরো দিয়েছেন শক্তি, স্বপ্ন ও সাহস। শামসুর রাহমানের উলেস্নখযোগ্য কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে (১৯৬০), রৌদ্রকরোটিতে (১৯৬৩), বিধ্বস্ত নীলিমা (১৯৬৭), নিরালোকে দিব্যরথ (১৯৬৮), নিজবাসভূমে (১৯৭০), বন্দী শিবির থেকে (১৯৭২), দুঃসময়ের মুখোমুখি (১৯৭৩), ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা (১৯৭৪), আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি (১৯৭৪), এক ধরনের অহংকার (১৯৭৫), আমি অনাহারী (১৯৭৬), শূন্যতায় তুমি শোকসভা (১৯৭৭), প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে (১৯৭৮), বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে (১৯৭৭), উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ (১৯৮২) ইত্যাদি।



একটা ভাষার ও জাতির বড় কবির যে বৈশিষ্ট্য, তার অধিকাংশই শামসুর রাহমানের ছিল। সবচেয়ে বড় যে বৈশিষ্ট্যটি খালি চোখেই ধরা পড়ে তা হচ্ছে, তাঁর কবিতার একটা বড় অংশের রূপ-রূপান্তরের ইতিহাস বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রূপ-রূপান্তরের ইতিহাসের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলেছে। তাঁর কবিতা অধিকাংশ সময় পূর্ব বাংলার বাঙালি জনগোষ্ঠীর চেতনার মর্মশাঁসকে ধারণ করে শিল্পিত হয়েছে। বন্দী শিবির থেকে (১৯৭২) কাব্যের ক্ষেত্রে এ কথা একেবারে চোখ বুজে বলা যায়। এই কবিতার বইয়ে জাতীয়তাবাদের অ্যাসেন্স, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় চৈতন্য আর শিল্পিতার একেবারে মণিকাঞ্চন যোগ ঘটেছে।

স্বাধীনতা নামক শব্দটিকে তিনি সাজিয়েছেন নানা বর্ণে-রূপে-সুরে এবং তিনি তা সংগ্রহ করেছেন বাংলার নৈসর্গিক জীবনাচার থেকে। স্বাধীনতাকে নজরুলের বাবরি চুল, রবীন্দ্রনাথের কবিতা, শহীদ মিনার, পতাকা মিছিল, ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি, গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার ইত্যাদির সঙ্গে তুলনা করেছেন। যেমন – ‘স্বাধীনতা তুমি/ রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান/ স্বাধীনতা তুমি/ কাজী নজরুলের ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো/ মহান পুরুষ, সৃষ্টি সুখের উলস্নাসে কাঁপা -’বন্দিত্বের ব্যথা, ক্ষোভ ও হতাশা ইত্যাদি ব্যক্ত হয়েছে বন্দী শিবির থেকে কাব্যগ্রন্থের প্রায় সব কবিতায়। তিনি কখনো ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন, আবার কখনো ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়েছেন।

‘পথের কুকুর’ কবিতার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে একাত্তরের সেই অবরুদ্ধ জীবনের কথা, যেখানে ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকত পুরুষ-নারী, ছেলে-মেয়ে-বুড়ো সবাই। সমস্ত শহরে ছিল সৈন্যদের অত্যাচার, যখন-তখন গুলির আওয়াজ। যত্রতত্র মরা মানুষের লাশ। সব মিলিয়ে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল মানুষের জীবনে-মননে।

‘পথের কুকুর’ নামক কবিতাটিতে বন্দি ও প্রাণভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের চিত্র বিধৃত হয়েছে এভাবে – ‘আমি বন্দি নিজ ঘরে। শুধু/ নিজের, নিঃশ্বাস শুনি, এত স্তব্ধ ঘর।/ কবুরে স্তব্ধতা নিয়ে বসে আছি/ দেয়াল-বিহারী টিকটিকি – / চকিতে উঠলে ডেকে, তাকেও থামিয়ে দিতে চাই,/ পাছে কেউ শব্দ শুনে ঢুকে পড়ে ফালি ফালি চিরে মধ্যবিত্ত/ নিরাপত্তা আমাদের। সমস্ত শহরে/ সৈন্যরা টহল দিচ্ছে, যথেচ্ছ করছে গুলি, দাগছে কামান/ এখন চালাচ্ছে ট্যাঙ্ক যত্রতত্র। মরছে মানুষ/ পথে ঘাটে, ঘরে যেন প্লেগবিদ্ধ রক্তাক্ত ইঁদুর।’ (‘পথের কুকুর’)

এই কবিতায় কুকুরের অসীম সাহসের কথা বলা হয়েছে। জলপাই রং, সন্ত্রাস, সশস্ত্র কতিপয় সৈনিকবোঝাই একটি জিপকে বারবার তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে পথের কুকুর। কিন্তু অসহায় মানুষের সশস্ত্র সেই জিপ তাড়াবার সাহস নেই। তাই কবিতার উপামাতে কবি ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ‘যদি অন্তত হতাম আমি পথের কুকুর’।যুদ্ধকালীন প্রতিদিনের বাস্তবচিত্র ধরা পড়েছে ‘প্রাত্যহিক’ কবিতায়। পুলিশ এবং রাজাকারের দৌরাত্ম্য, নারীর চিৎকার, হাত বাঁধা মানুষ, রাইফেলধারী পাঞ্জাবি সৈনিক ইত্যাদির বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে এ-কবিতায়। চারিদিক পালাবার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে হানাদার বাহিনী। যেমন – ‘পশ্চিমা জোয়ান আসে তেড়ে/ স্টেনগান হাতে আর প্রশ্ন দেয় ছুঁড়ে ঘাড় ধরে/ ‘বাঙালী হো তুম?’ আমি রুদ্রবাক, কি দেব জবাব?/ জ্যোতির্ময় রৌদ্রালোকে বীরদর্পী সেনা/ নিমেষেই হয়ে যায় লুটেরা, তস্কর।’


বন্দী শিবির থেকে কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতা একজন সন্ত্রস্থ, ব্যথিত কবির অভিজ্ঞতা ও ভাবনা বেদনার অভিজ্ঞান। শামসুর রাহমান এই কাব্যে যুদ্ধকে ছেঁকে তুলে আনতে চেষ্টা করেন তাঁর কবিতায়। তিনি নিজেকে একজন যোদ্ধা বা বন্দি হিসেবে দেখেননি; দেখেছেন কবি হিসেবে। আর সেজন্য কবিতাও ধরা দেয় তাঁর কাছে। এ-কাব্যের শরীরে-মাংসে-রক্তে ধরা পড়েছে একাত্তরের বুলেটবিদ্ধ হৃৎপিন্ড উঠানামা। বন্দী শিবির থেকে কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতাটি বিশ্লেষণ করা যাক – ‘স্বাধীনতা’ নামক শব্দটিকে তিনি দেখেছেন বিভিন্নভাবে। ‘স্বাধীনতা’ শব্দটিকে তিনি ভরাট গলায় উচ্চারণ করে তৃপ্তি পেতে চান। শহরের অলিতে-গলিতে, আনাচে-কানাচে, প্রতিটি রাস্তায়, বাড়িতে, সাইনবোর্ডে, পাখিতে, নারীতে ঝলকিত হতে দেখেছেন প্রিয় শব্দটিকে। স্বাধীন দেশের কবিদের সম্বোধন করে জানালেন যে, তিনি আজ ক্ষুব্ধ। কেননা স্বাধীনতা নামক শব্দটি নিষিদ্ধ হয়ে গেছে বাংলায় – ‘অথচ জানে না ওরা কেউ/ গাছের পাতায়, ফুটপাতে/ পাখির পালকে, কিংবা নদীর দু’চোখে/ পথের ধুলায়, বস্তির দুরন্ত ছেলেটার/ হাতের মুঠোয়/ সর্বদাই দেখে জ্বলে স্বাধীনতা নামক শব্দটা।’ (বন্দী শিবির থেকে)



ত্রিশ লাখ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার শিকার হয়েছিল। কিন্তু বাকিরাও কি মর্মে-হত্যার শিকার হয়নি? এই মর্মে-হত্যাও তো গণহত্যার আওতাভুক্ত। মুক্তিযুদ্ধের কাব্য-কবিতা সাধারণত এই হত্যা সম্পর্কে নিশ্চুপ থাকে। বন্দী শিবির থেকে অকথিত, অনুল্লেখিত এসব হত্যার এক অসাধারণ দলিল হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি কবিতার পরতে পরতে আছে এসব হত্যার শ্বাসরোধী বর্ণনা। চেখে দেখা যাক কয়েকটি লাইন, ‘আমিও নিজেকে ভালোবাসি/ আর দশজনের মতন। ঘাতকের/ অস্ত্রের আঘাত/ এড়িয়ে থাকতে চাই আমিও সর্বদা।/ অথচ এখানে রাস্তাঘাটে/ সবাইকে মনে হয় প্রচ্ছন্ন ঘাতক।/ মনে হয়, যে কোনো নিশ্চুপ পথচারী/ জামার তলায়/ লুকিয়ে রেখেছে ছোরা, অথবা রিভলবার, যেন/ চোরাগোপ্তা খুনে/ পাকিয়েছে হাত সকলেই।’ (‘না, আমি যাবো না’)

শামসুর রাহমানের ‘বন্দী শিবির থেকে’ কাব্য পড়তে গেলে জাতীয়তাবাদের আদর্শটি সহজেই চোখে পড়ে। কবি খুব স্পষ্টভাবেই বলেছেন, স্বাধীনতার জন্য কারা কারা অপেক্ষা করছে বা আত্মত্যাগের জন্য ঘর ছেড়েছে। কবির তালিকা অত্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক। তালিকায় স্থান পেয়েছে ‘হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী’, ‘সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক’, ‘কেষ্টদাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা’, ‘মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি’, ‘রুস্তম শেখ, ঢাকার রিক্শাওয়ালা’ আর ‘রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো সেই তেজী তরুণ’। একই প্রবণতা লক্ষ করা যায়, তিনি যখন স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত করেন ‘গ্রাম্য মেয়ে’ থেকে শুরু করে ‘মেধাবী শিক্ষার্থী’ হয়ে ‘মজুর যুবা’ পর্যন্ত। কবিকৃত আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এই তালিকা সমকালীন জাতীয়তাবাদী চেতনার ভেতরবাড়িকে উজালা করে আছে। মুক্তিযুদ্ধ যে একটা জনযুদ্ধ ছিল, এখানে যে সবাই ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার হিসাব মেলাতে মিলিত হয়েছিল, এটা যে গরিব মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত ছিল, বন্দী শিবির থেকেতে সেটি কবি বলে ফেলেছেন এক নিশ্বাসে।

বন্দী শিবির থেকেতে কবি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ধ্বংস, দ্রোহ, অসহায়তা, আত্মপ্রত্যয়, বিশ্বাসঘাতকতা, উদ্বাস্তুতা, অন্তর্ঘাত, স্বপ্ন, সার্থকতা, নিঃস্বতার এমন নিবিড় সূক্ষ্ম আর বিস্তৃত বর্ণনা হাজির করেছেন যে অনেক সময় মনে হয় এটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কবিতার ঘাটতি পূরণ করে উপন্যাসের দৈন্য ঘোচানোর দিকে পা বাড়িয়েছে। কারণ বাস্তবের বিস্তৃত, খুঁটিনাটি বর্ণনাই তো উপন্যাস।

জাতীয়তাবাদ আর মুক্তিযুদ্ধের গভীর গণমুখী দলিল হিসেবে পড়া যায়, বাংলাদেশের সৃজনশীল সাহিত্যে এমন টেক্সট বিরল। বন্দী শিবির থেকে আর এর কবি শামসুর রাহমানকে এই দৃষ্টিতে পড়া যায়। সমকালীন জাতীয়তাবাদী চেতনার গভীর তলকে স্পর্শের প্রশ্নে, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত অ্যাসেন্স উপলব্ধির প্রশ্নে, শিল্পিতার প্রশ্নে, মুক্তিযুদ্ধকালীন সাধারণ মানুষের স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন চিহ্নিত করার প্রশ্নে, পাকিস্তানি শাসনের চব্বিশ বছরের ইতিহাসের ইশারা ধারণ করার প্রশ্নে বন্দী শিবির থেকে বাংলাদেশের কবিতায় এক বিরল অভিজ্ঞতাই বটে।

সহায়ক গ্রন্থ ও পত্রিকা

মুক্তিযুদ্ধ ও ‘বন্দী শিবির থেকে’,কুদরত-ই-হুদা, প্রথম আলো, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭।
শামসুর রাহমান নিঃসঙ্গ শেরপা, হুমায়ুন আজাদ, বাংলা একাডেমি, ১৯৮৩।
বাংলাদেশের আধুনিক কাব্য পরিচয়, দীপ্তি ত্রিপাঠী, কলকাতা, ১৯৯৪।
আধুনিক কবি ও কবিতা, হাসান হাফিজুর রহমান, বাংলা একাডেমি, ১৯৭৩।
মুক্তিযুদ্ধের কবিতা, আবুল হাসনাত-সম্পাদিত, সন্ধানী প্রকাশনী, ১৯৯১।
বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার কবিতা : তুলনামূলক ধারা, মাসুদুজ্জামান, বাংলা একাডেমি, ১৯৯৩।
পূর্ব বাংলার রাজনীতি-সংস্কৃতি ও কবিতা, সাঈদ উর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৩।মুক্তিযুদ্ধের কবিতা, রফিকুল ইসলাম, সাহিত্য পত্রিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।বাংলাদেশের কবিতায় ব্যক্তি ও সমাজ, দিলারা হাফিজ, বাংলা একাডেমি, ২০০২

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:



যুদ্ধে গেলে আসল কবিতা লিখতে পারতেন তিনি; তিনি বিরাট কিছু মিস করেছেন

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৪

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: বন্দী শিবিরের কবিতাগুলি কি নকল কবিতা!!

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৩

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
সকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিৎকার করতে করতে,
তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হল। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।
তুমি আসবে বলে ছাই হল গ্রামের পর গ্রাম।

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৯

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে ঐ নয়াবাজার।
পুড়ছে দোকানপাট, কাঠ,
লোহালক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির।
দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে ঐ নয়াবাজার।
বিষম পুড়ছে চতুর্দিকে ঘরবাড়ি।
পুড়ছে টিয়ের খাঁচা, রবীন্দ্র রচনাবলি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার,
মানচিত্র, পুরোনো দলিল।
মৌচাকে আগুন দিলে যেমন সশব্দে
সাধের আশ্রয়ত্যাগী হয়
মৌমাছির ঝাঁক
তেমনি সবাই
পালাচ্ছে শহর ছেড়ে দিগ্ধিদিক। নবজাতককে
বুকে নিয়ে উদ্ভ্রান্ত জননী
বনপোড়া হরিণীর মতো যাচ্ছে ছুটে।

৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:


লেখক বলেছেন, " বন্দী শিবিরের কবিতাগুলি কি নকল কবিতা!!"

না, এগুলো নকল কবিতা নয়, দুর্বল কবিতা; উনি কবি, অনুধাবন থেকে লিখেছেন; উনি অংশ গ্রহন করলে তখন এই কবিতা আরও শক্তিশালী, আরও জীবন্ত হতো

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩০

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: যাক, অসল শব্দটি ছেড়ে দুর্বল কবিতা বলেছেন, হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করলে আরও জীবন্ত কবিতা হয়ত পেত বাংলাদেশের কবিতা। হয়ত নিয়ে কথা! হতে পারত হয়ত।

কিন্তু কবিতা লেখা অন্য বিষয় বলে মনে করি। এখানে ভিতরের ভাবাবেগ কাজ করে, কাজ করে শব্দ চয়ন ও প্রয়োগের দক্ষতা। যুদ্ধ কি সরাসরি অংশগ্রহন ছাড়া করেন নি কেউ? যাই বলুন না কেন বন্দী শিবির থেকে কবিতাগুলি দুর্বল কবিতা এটা মানতে পারলাম না। বরং আমি মনে করি এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি বাংলাদেশের কবিতায় এক অনন্য সংযোজন।

৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: চাঁদগাজী বলেছেন- এগুলো নকল কবিতা নয়, দুর্বল কবিতা; উনি কবি, অনুধাবন থেকে লিখেছেন; উনি অংশ গ্রহন করলে তখন এই কবিতা আরও শক্তিশালী, আরও জীবন্ত হতো ।

সহমত।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩৩

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আমি তার সাথে একমত নই।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪৭

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: অত বিখ্যাত হয়নি কবিতাটি তবু দেখুন কত দক্ষতায় প্রকাশ করেছেন 'জনৈক পাঠান সৈনিক' কবিতায় যুদ্ধের চিত্র। পুরো কবিতাটিই দিলাম, পড়ে দেখুন-

লাইব্রেরি । Bangla Library
লেখক এবং রচনা
বিবিধ বাংলা বই
বাংলা ইবুক
কৌতুক
ডিকশনারি
লিরিক
বাংলা ওসিআর
বিবিধ রচনা

Search …
বাংলা লাইব্রেরি » শামসুর রাহমান » কাব্যগ্রন্থ - শামসুর রাহমান » বন্দী শিবির থেকে (১৯৭২) » জনৈক পাঠান সৈনিক
« গ্রামীণতার উক্তি »


জনৈক পাঠান সৈনিক
Jan 30, 2014 | বন্দী শিবির থেকে (১৯৭২) | 0 comments
কখনো জঙ্গলে কখনোবা খানাখন্দে ইতস্তত
বাঙ্কারে অথবা ক্যাম্পে উঁচিয়ে বন্দুক
ঘামে রক্তের গন্ধে কী প্রকার আছি
সর্বদা হত্যায় বুঁদ হয়ে-
বলা অবান্তর।
আমার স্মৃতিতে কোনো নিশান দোলে না
ক্ষণে ক্ষণে, দোলে না কামান কারবাইন।
এখন স্মৃতিতে
আমার সুদূর গ্রাম, ছোট ঘর, শিশু
চিঠি হাতে অশ্রুময় বিবি জেগে ওঠে বার বার
আলেখ্য স্বরূপ। দেয় হাতছানি আমার আপন সরহদ।
কেমন নিঃসঙ্গ লাগে মধ্যে-মধ্যে, যখন তাকাই
ডবকা নদীর দিকে, যুগল পাখির দিকে দূরে।
এ মুল্লুকে জিপসির মতো ঘোরে মৌত, বড় ক্ষিপ্র;
হচ্ছে ফৌত বেশুমার লোক, বড় নিরস্ত্র নিরীহ,
দেহাতি, শহুরে, দিনরাত। গ্রামে গ্রামে
দেয় হানা সাঁজোয়া বাহিনী, মানে আমরাই। যুবা,
বৃদ্ধ, নারী, শিশু
শিকার সবাই-চোখ বুজে ছুড়ি গুলি ঝাঁক ঝাঁক।
মনে হয়, যেন আমি নিজেই কাবিল।
কিছু বুঝি আর না-ই বুঝি, এটুকু ভালোই বুঝি
আমাদের সাধের এ রাষ্ট্র পচা মাছের মতন
ভীষণ দুর্গন্ধময় আর
ক্ষমতান্ধ শাসকের গদি সামলাতে
আমরা কাতারবন্দি ফৌজ সর্বদাই।
যে ক্যাপ্টেন আমাকে এগোতে বলে শুধু
বিপক্ষের দিকে,
হোক সে নিরস্ত্র কিংবা সশস্ত্র তুখোড়,
দেয় ঠেলে গায়েবী মৃত্যুর ঝোপঝাড়ে
নদীতে নালায়,
সে কি মিত্র কখনো আমার?
শক্র সে আমার সন্তানের,
আমার শয্যার শক্র সুনিশ্চিত জানি।
যুদ্ধে পক্ষ-বিপক্ষ থাকেই চিরকাল।
অথচ বুঝি না কিছুতেই
আমার মৃত্যুর পরে ফের
কোন দলে থাকব এই গুলিবিদ্ধ আমি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.