নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফকির আবদুল মালেক

ফকির আবদুল মালেক

আমি এক উদাস ফকির তারা দানা তসবী গুনিপ্রাণীসম দেহ মাঝে মানুষ নামে স্বপ্ন বুনি

ফকির আবদুল মালেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তৃণমুল নেতা কর্মীদের উপর জাতীয় নিয়ন্ত্রন: প্রেক্ষিত ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪৯



পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে, মানসিকভাবে অসাম্প্রদায়িক৷ অন্তত তেমনটাই ধারণা ছিল৷ কিন্তু গত ১০ বছরে এই ধারণাটা একটু একটু করে ভেঙে পড়েছে৷

বাংলাদেশ সম্পর্কে এ ধারনা প্রচলিত ছিল যে, এ দেশটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ ধারনাটিও দিন দিন ভুল প্রমানিত হয়ে যাচ্ছে।



বাবরি মসজিদ ভাঙার বছরে, ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির ঐতিহ্য নিয়ে এক আলোচনাসভায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলেছিলেন কলকাতার এক বুদ্ধিজীবী৷ তিনি বলেন যে, হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা, আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে মুসলিম-বিদ্বেষ বরাবরই ছিল, আছে এবং থাকবে৷ প্রথমত, ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ এবং বহু হিন্দু পরিবারের উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে চলে আসার যে যন্ত্রণা, তা এত সহজে যাওয়ার নয়৷

আমাদের আজকের এই আলোচনাটি বাংলাদেশের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ও সম্প্রদায়িকতা নিয়ে।

সামহয়্যার ইন ব্লগে মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, ‘‘সাম্প্রদায়িকতা একটা মানসিক ব্যাধি আর অসাম্প্রদায়িকতা হলো মানবিক গুণ৷ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মানব চরিত্রের উপরোক্ত দুটি মানবিক গুণাবলি মানুষ অর্জন করে শৈশব ও কৈশোরে তার বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্নীয়স্বজনদের কাজকর্ম দেখে; আর যৌবন বয়সে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে৷” এরপর পলাশ তাঁর শৈশবের কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘‘আমি সবসময়ই গর্ব করে সকলকে বলি, আমার শৈশবে আমি ঐভাবেই বেড়ে উঠেছি৷ ধর্মভীরু কিন্তু অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মা-বাবা, দাদা-নানাকে দেখে শিখেছি…যখন পত্রিকার পাতা খুলে দেখি শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী হবার কারণে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে তখন ভাবি, কারা মানসিকভাবে অসুস্থ সেই মানুষ? কোন পরিবেশে তারা বেড়ে উঠেছে? তাদের বাবা-মারাই বা কোন শিক্ষা তাদের দিয়েছেন?

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতার স্বরূপ view this linkশিরোনামের প্রবন্ধটির দিকে দৃষ্টি দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।

রাষ্ট্রীয় নীতি এবং রাষ্ট্রাচারে ধর্মের প্রভাব না থাকলেও একটি দেশে সামাজিক এবং
ব্যক্তিপর্যায়ে সাম্প্রদায়িকতা থাকতে পারে৷ থাকতে পারে রাজনীতিতে৷ যেমন বাংলাদেশে শুধু ধর্মভিত্তিক দল নয়, সেক্যুলার রাজনৈতিক দলও রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে৷

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামিক রাজনৈতিক দল হলো ১০টি৷ এগুলো হলো – বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও খেলাফত মজলিস৷ জামায়াতে ইসলামির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে আদালতের নির্দেশে৷

কিন্তু এর বাইরে আরো শতাধিক ইসলামি রাজনৈতিক দল আছে৷ শুধু ইসলাম নয় অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈকি দলও আছে বাংলাদেশে৷ যেমন, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু জোট৷ ৫০টি হিন্দু রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে আছে বাংলাদেশ জনতা পার্টি বা বিজেপি৷

এর বাইরে বাংলাদেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিাক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার (অপব্যবহার) করে বলে অভিযোগ আছে৷

বিএনপি’র নির্বাচনের আগে প্রচারণায় থাকে ইসলাম রক্ষায় নামে ভোট চাওয়া৷ তারা প্রচারণা চালায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে ইসলাম থাকবে না৷ বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ভোটের রাজনীতিকে টার্গেট করেই সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করেন৷ এরপর সামরিক শাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেন ভোটের রাজনীতিকেই টার্গেট করে৷

এদিকে ভোটের আগে আওয়ামী লীগের বহুল ব্যবহৃত স্লোগান হলো, ‘‘লা ই লাহা ইল্লাহ, নৌকার মালিক তুই আল্লাহ৷” দলটি প্রচারণা চালায়, তারা নির্বাচিত হতে না পারলে সংখ্যালঘুরা দেশে থাকতে পারবে না৷” আর প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনের আগে হজ বা ওমরাহ করেন, যান মাজারে৷
বাংলাদেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ইসলামিক গ্রুপ আছে৷ আওয়ামী ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আর জাতীয়তাবাদী ওলামা দল বিএনপি’র সহযোগি সংগঠন৷

যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘২০১৬ সালে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের ওপর বেশি হামলা হয়েছে৷”
সংস্থাটি বলছে, ‘‘ভূমি দখলের ক্ষেত্রে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা আক্রমনের শিকার হন৷ ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বার বার আক্রমনের শিকার হয়েছেন৷”
গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হামলা চালিয়ে ১৫ টি মন্দির ও ২০০ ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়৷
হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকট রানা দাসগুপ্ত’র মতে, ‘‘২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা পাঁচগুণ বেড়েছে৷ তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই তা আবার কমে আসছে৷”



বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে যে রাজনৈতিক দলটির অবদান সবচেয়ে বেশি, সেটি আওয়ামী লীগ৷ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় সবক্ষেত্রে বিভক্ত একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন, যার ফলে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ স্থান করে নেয় ন’মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর৷

বাংলাদেশে একটি প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে, সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের রক্ষা করে আওয়ামী লীগ৷ যে কারণে সংখ্যালঘুদের ভোটের একটি বড় অংশ পায় দলটি৷ এটা সত্য, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অন্যতম বড় হামলার ঘটনাটি ঘটে ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর৷ সেসময় আওয়ামী লীগ ছিল বিরোধী দলে৷ ফলে তখন হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় অনায়াসেই চাপানো যায় সেই জোট সরকারের উপর৷ কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ৷ তাসত্ত্বেও গত কয়েকবছর ধরে সংখ্যালঘুদের উপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে৷ ক্ষমতায় থেকেও আওয়ামী লীগ সেসব হামলা কেন রুখতে পারছে না সেটা এক বিস্ময়৷ সাম্প্রতিক সময়ে বরং হিন্দুদের উপর একাধিক হামলার, তাদের সম্পদ দখলের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে৷

যে কোন সাম্প্রদায়িক হামলার পর বিএনপি জামাতের উপর দোষ চাপানো হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ের হামলাগুলির তদন্তে আওয়ামীপন্থী তৃনমুল পর্যায়ের নেতা কর্মীর নাম চলে আসে যা ভায়াবহ। কেননা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামীলীগই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে এবং সংখ্যলঘুদের পাশে দাড়ায় এবং তার প্রতিদানে সংখ্যালঘুদের ভোটগুলি নিশ্চিতে পেয়ে যায়। কিন্তু কেন তৃনমুল আওয়ামীপন্থী নেতা কর্মীরা নিজেরাই রক্ষক না হয়ে ভক্ষক হয়ে যাচ্ছে? কেন্দ্র নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না!

এর কারণ এ হতে পারে যে, বর্তমানে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বসে পড়েছে, এখন আর কারও ভোটের প্রয়োজন হয় না এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বার নির্বচিত হতে। ফলে সাধারন জনগন হয়ে গেছে মুল্যহীন আর সংখালঘুরাতো একেবারে নগন্য ব্যাপার।

আমরা মনে করি, যে কোন মুল্যে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে এরপর দেশের কোথাও কোন নিয়ন্ত্রন থাকবে না। জোর যার মুল্লুক তার এর উদাহরন হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।

সবশেষে একটি কথা বলে শেষ করতে চাই যে, ভোটার হিসাবে সাধারন জনগনের প্রয়োজন নিশ্চিত করতে পারলেই যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় থাকবে তা নয়, এ জন্য মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন যা ভোটের রাজনীতি একটি বড় ভুমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হয়। এমনিতেই ক্ষমতাশীনরা কোন ধরনের জবাবদিহিতার মুখোমুখি হন না, তার উপর যদি ভোটের সময়ও সাধারন ভোটারের দারস্থ হতে না হয় তবে তৃনমুল নেতা কর্মীদের উপর জাতীয় নেতৃত্ব কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। যা একটি ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করবে।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:১৩

পদ্মপুকুর বলেছেন: কোন শক্তিশালী বক্তব্য কি পরিষ্কারভাবে দিতে পারলেন, না কি আমি বুঝতে ব্যর্থ হলাম বুঝতে পারছি না।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৪৪

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: বক্তব্যটি শক্তিশালী নয়। তবে দুর্বলভাবে যা বলতে চেয়েছি তা হলো যদি তৃনমুলে নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তবে নেতা কর্মীদের জনগনের মুখামুখি দাড় করাতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.