নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারঃ দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞতা

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৩

দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসন শেষ হবার প্রায় সাথে সাথেই হত্যা নিপীড়ন নির্যাতনসহ বর্ণবাদী আমলের বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ সংগ্রহ, তথ্য অনুসন্ধান, ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতনের শিকার অসংখ্য মানুষ এবং নিহত ব্যক্তির স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য রেকর্ড করতে শুরু করেছিল ট্রুথ এ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন। ১৯৯৫ সালে অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার এক বছরের মধ্যে 'প্রমোশন অব ন্যাশনাল ইউনিটি এ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন এ্যাক্ট-৩৪/১৯৯৫’ নামে পার্লামেন্টে পাশ করা একটি আইনের আওতায় গঠিত হয় এই কমিশন। সংক্ষেপে ‘টিআরসি’ নামে পরিচিত ট্রুথ এ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের কাজের পদ্ধতি ছিল একটি আদালতের মতো। নির্যাতনের শিকার বা ক্ষতিগ্রস্ত যে কোনো মানুষের অভিযোগ শুনে সে সব অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করেছে টিআরসি। বর্ণবাদের কঠোর সমালোচক কেপ টাউনের আর্চ বিশপ ডেসমন্ড টুটুকে চেয়ারপারসন এবং সারাদেশ থেকে আরও অন্তত দশজন সর্বজনগ্রাহ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সদস্য নির্বাচিত করে কমিশন কাজ শুরু করে। ট্রুথ এ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন কাজের ধারাবহিকতায় ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইনসস্টিটিউট ফর জাস্টিস এ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন।



কেপটাউন শহরের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে নানা ধরনের ছোট বড় গাছপালায় ঘেরা ইনসস্টিটিউট ফর জাস্টিস এ্যান্ড রিকনসিলিয়েশনের সদর দপ্তরে ঢুকবার সময় বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউসের কথা মনে পড়তে পারে। মূল সড়ক থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে ইনস্টিটিউটের ভবন। কাজেই রাস্তার কোনো কোলাহল এতোদূর পর্যন্ত পৌঁছায় না। এই সুনশান নীরবতার মধ্যে আমরা একদল আন্তর্জাতিক মিডিয়া কর্মী হৈ হৈ করে ঢুকে পড়লাম। আমাদের স্বাগত জানাবার জন্যে আইজেআর-এর নির্বাহী পরিচালক চার্লস ভিলা ভিসেনসিও ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী জুবাইদা জাফর।



আগে জুবাইদার পরিচয় পেয়েছিলাম লেখক সাংবাদিক এবং বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা এক সংগ্রামী নারী হিসাবে। এখানে এসে জানা গেল তিনি ইনস্টিটিউট ফর জাস্টিস এ্যান্ড রিকনসিলিয়েশনের অন্যতম রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং আইজেআর-এর প্রকাশনা ‘রিকনসিলিয়েশন ব্যারোমিটার’এর অন্যতম সম্পাদক। মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে জুবাইদা দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস সংস্কৃতি এবং বর্ণবাদ থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের ধারণা যেভাবে আত্মস্থ করেছেন, তাতে চমৎকৃত হতে হয়। তারচেয়ে বড় কথা খুব কম সময়ে একদল বিদেশী মিডিয়া কর্মীর কাছে টিআরসিকে অল্প কথায় অতি সহজে তিনি যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তার কোনো তুলনা হয় না।



ট্রুথ এ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন কাজের শুরুতেই তিনটি কমিটি গঠন করেছিল। প্রথমটির কাজ ছিল ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সংঘটিত সকল মানবতা বিরোধী অপরাধের তদন্ত করা। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ রিপ্যাট্রিয়েশন এ্যান্ড রিহ্যবিলিটেশন কমিটি কাজ করেছে নিহত, আহত, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে। সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সামাজিক মর্যাদা পুনপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও কমিটি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। টিআরসি’র তৃতীয় এবং সর্বশেষ ‘এ্যামনেষ্টি কমিটি’র নাম থেকেই বোঝা যায় ‘চৎড়সড়ঃরড়হ ড়ভ ঘধঃরড়হধষ টহরঃু ধহফ জবপড়পরষষরধঃরড়হ অপঃ-৩৪’ আওতায় সাধারণ ক্ষমার সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল । আইনে অবশ্য অপরাধীদের ক্ষমা অনুমোদনের ক্ষমতার সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছিল দুটি বিশেষ শর্ত। প্রথমত সংঘটিত অপরাধটি হতে হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং দ্বিতীয়ত অভিযুক্ত ব্যক্তি বা অপরাধী তার কৃতকর্মের কোনো প্রসঙ্গ বাদ না দিয়ে কমিশনের সামনে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করেছেÑ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।



আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আল বদরসহ পাকিস্তানের চিহ্নিত দালালেরা পুরো একাত্তর সাল জুড়ে হত্যা ধর্ষণ অগ্নিসংযোগসহ মানবাধিকার লংঘনের সব ধরণের অপতৎপরতা চালিয়ে স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরেও বলে যাচ্ছেন তাঁরা কিছুই করেননি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধপরাধী জামাতে ইসলামী, মুসলিম লিগ এবং ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতারা সম্মিলিতভাবে যে অবস্থান গ্রহণ করেছিল তারা সেখান থেকে এক চুলও সরে আসেনি। সেই কারণে টিআরসি’র ‘এ্যামনেষ্টি কমিটি’র মতো কোনো কমিটির কাছে স্বীকারোক্তির ব্যবস্থা ছাড়াই তারা এখন পর্যন্ত দ্বিধাহীনভাবে উচ্চকণ্ঠে একটি কথাই বলে যাচ্ছে, তা হলো একাত্তর সালে এ দেশে যুদ্ধ একটা হয়েছিল বটেÑ কিন্তু দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। নিশ্চিতভাবে বলা যায় এ্যামনেস্টি কমিটির দ্বিতীয় শর্ত অর্থাৎ ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি বা অপরাধী তার কৃতকর্মের কোনো প্রসঙ্গ বাদ না দিয়ে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করেছেÑ’ আমাদের অপরাধীরা অভিযুক্ত হয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এই শর্ত মেনে কখনও ক্ষমা প্রার্থনা করবে এমনটা আশা করা বৃথা।



অভিযুক্ত না হয়ে স্বাধীন মত প্রকাশের নামে গলাবাজিতে কিংবা জনসভার মিথ্যা ভাষণে অথবা বেতার টেলিভিশনের টক শোতে তারা যে কোনো অপরাধ কখনও করেছে তা কস্মিন কালেও স্বীকার করেনি। অতএব ট্রুথ কমিশনের সামনে দাঁড়ালেও তাঁরা যে একই কথা বলতো তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। তবে যারা এইসব যুদ্ধাপরাধী দুর্বৃত্তদের কাঠগড়ায় তুলে বিচারের মুখোমুখি করবেন সেই রাষ্ট্রযন্ত্রের বিস্মৃতি অথবা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অনীহাও এর জন্যে কম দায়ী নয়। এর সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে আমাদের বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা। প্রকৃতপক্ষে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা পাকিস্তানীদের দালাল, হত্যাকারী লুটেরা, রাজাকার আল বদরদের তালিকা প্রস্তুত করে বিচারের মুখোমুখি করা এবং অপরাধীদের যার যা প্রাপ্য শাস্তি দিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি আরও বহুদিন আগেই করা প্রয়োজন ছিল এবং তা সম্ভবও ছিল। এ ব্যাপারে আমরা আবার দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞতার দিকে চোখ ফেরাতে পারি।



দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ শাসনের অবসান ঘটে ১৯৯৪ সালে। নেলসন মান্ডেলার নেতৃত্বে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস এ বছর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। পার্লামেন্টে আইন পাশ হওয়ার পর ট্রুথ এ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন কাজ শুরু করে ১৯৯৫ সালের মে মাসে। কমিশনের কাছে উত্থাপিত অভিযোগ থেকে সাধারণ মানুষ, পুলিশ বাহিনীর সদস্য, আইনজীবী এবং সরকারি কর্মকর্তাসহ কাউকেই ছাড় দেয়া হয়নি। সবচেয়ে সাহসী এবং সময়োচিত যে কাজটি করে কমিশন তার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছিল তা হলো, রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে সকলকেই বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। পুরো বিচার প্রক্রিয়া যেনো ‘ঔঁংঃরপব ড়ভ ঃযব ারপঃড়ৎং’-এ পরিণত না হয়, সে জন্য বর্ণবাদী আমলের ‘পরাজিত শত্রু’ই শুধু নয়Ñ ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত ও শুনানীর ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল টিআরসিকে এবং কমিশন তার এই ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগের ব্যাপারেও কোনো আপোষ করেনি। ১৯৬০ থেকে ১৯৯৪ সালÑ দীর্ঘ চৌত্রিশ বছরে বর্ণবাদী রাজত্বে ঘটে যাওয়া অসংখ্য হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগ, সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং অভিযুক্তের বক্তব্য ও ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করে বিচার বিশ্লেষণ শেষে মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য কমিশন ৫৩৯২ জনকে ক্ষমার অযোগ্য ঘোষণা করে ১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে টিআরসি তার চূড়ান্ত রিপোর্ট উপস্থাপন করে। একই সাথে অপরাধের গুরুত্ব এবং স্বীকারোক্তির যথার্থতা বিবেচনা করে মোট ৮৪৯ জনের ক্ষমার আবেদন মঞ্জুর করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, বর্ণবাদী শাসনকালে শাসকগোষ্ঠি ও তাদের অনুগ্রহভাজন দালাল ছাড়াও আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস এবং লিবারেশন ফোর্স যে সকল অনৈতিক এবং অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছিল তাও এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।



আমরা বসেছিলাম আইজেআর ভবনের দোতলায় কনফারেন্স রুমে। আলোচনায় শুরুতে প্রায় সকলে হাজির থাকলেও ধীরে ধীরে বুদ্ধিজীবী গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি অর্ধেকে নেমে গেল। কয়েকদিন ধরে ‘জাস্টিস এ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন’ শুনতে শুনতে হয়তো অনেকেই হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। সব দেশে তো রাজাকার আল বদর যুদ্ধাপরাধী নেই এবং অপরাধীদের বিচার বা তাদের সাথে পুনর্মিলনেরও কোনো প্রশ্ন নেই। আমাদের কথা ভিন্ন।



বিষয়গুলো জটিল এবং গুরুগম্ভীর হলেও আইজেআর-এ কথা হচ্ছিল খুবই ইনফরমাল পরিবেশে। টেবিলে কফি চলে আসার পরে পরিবেশ আরও হালকা হয়ে গেল। আমার পাশে বসে একজন সাংবাদিক বন্ধু অনেক্ষণ ধরে উসখুস করে শেষপর্যন্ত বলেই ফেললেন,‘এরা তো চৌত্রিশ বছরের হিসাব নিকাশ তিন বছরে সেরে ফেরেছেÑ আর আমাদের নয় মাসের হিসাব চল্লিশ বছরেও শেষ হয়নি। যেইখানে জাস্টিসই হয়নি, সেখানে রিকনসিলিয়েশন হবে কেমন!’



আমরা আসলেই এমন একটি কঠিন বাস্তবতার মধ্যে বসবাস করছি যেখানে অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করানোর চেয়ে অভিযোগকারীকে যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া অনেক সহজ। জামাত মুসলিম লিগ সমর্থিত ক্ষমতাসীনদের সুদীর্ঘ শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর বিষয়টি ছিল অকল্পনীয়। বরং সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত অথবা বিচারের প্রহসন করে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা বা জেলে পুরে দেয়া নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।



জুবাইদার কাছে বিভিন্নজনের করা অনেকগুলো প্রশ্নের মধ্যে আমার প্রশ্ন ছিল জাস্টিস এ্যান্ড রিকনসিলিয়েশনের ক্ষেত্রে টিআরসি মিডিয়াকে কিভাবে ব্যবহার করেছে? সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্র্মী জুবাইদা জাফরের উত্তরও তৈরিই ছিল।

বর্ণবাদী সময়ের সত্য উদঘাটনের লক্ষ্যে পরিচালিত আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সাড়া জাগানো অনেকগুলো মামলার শুনানী দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৯৬ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৯৮ সালে টিআরসি’র চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করা পর্যন্ত এক একটি মামলার রেকর্ডকৃত বিবরণ প্রতি রবিবার পিক আওয়ারে প্রচার করা হয়েছে। এক ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে অভিযোগকারীর বক্তব্য ছাড়াও অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি, দুঃখ প্রকাশ, ক্ষমা প্রার্থনা এমন কি আত্মপক্ষ সমর্থনে দেয়া বক্তব্যও প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অপরাধীদের অনুতপ্ত হবার যে সর্বোচ্চ সুযোগ এ সব মামলায় সৃষ্টি করা হয়েছিলÑ তার বিবরণ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডিয়া।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.