নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গণহত্যা সর্ম্পকে খালদো জিয়ার ধারণা ও একটি পচা বিড়ালের গল্প

০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৩

বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বিএনপি’র চেয়ারপর্সন বেগম খালেদা জিয়া তাঁর প্রেস কনফারেন্সে ‘দেশে বর্তমানে গণহত্যা চলছে’ বলে যে মন্তব্য করেছেন তাকে আর যাই হোক ‘গণহত্যা’ সম্পর্কে তাঁর ধারণার অভাব বা অজ্ঞতা বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। আমাদের কলাম লেখক ও টক শোতে অংশগ্রহণকারী বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই বলেছেন ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রায় পুরো সময় জুড়ে বেগম জিয়া পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর নিরাপদ হেফাজতে অবস্থান করায় গণহত্যা সম্পর্কিত তাঁর ধারণা পাকিস্তানিদের চিন্তা চেতনা দ্বারা প্রভাবিত। ব্লগ লেখকদের কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে স্বল্পশিক্ষিত খালেদা জিয়ার ‘মূর্খতা’কে এ জন্য দায়ী করেছেন। বিষয়টিকে এই সরলীকরণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তিবিশেষের বিভ্রান্তি হিসাবে মনে করা যায় না। আমাদের মনে রাখতে হবে, যিনি এই বক্তব্যটি উপস্থাপন করেছেন তিনি একটি দেশের দুবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান। বিদ্যাবুদ্ধি এবং ইতিহাস সম্পর্কিত জ্ঞানের ঘাটতির কারণে ‘গণহত্যা’ সম্পর্কিত তাঁর ব্যক্তিগত ধারণা যাই হোক তাঁর উপদেষ্টাম-লী অথবা ভাষণ লেখকগণ নিশ্চয়ই বেগম জিয়ার সাথে পরামর্শ করে এবং অনেক চিন্তা ভাবনা করেই জামাত শিবিরের সম্প্রতিক ধ্বংসযজ্ঞে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাকে ‘গণহত্যা’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। এই অবিমৃশ্যকারী মন্তব্যের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধেরর সময় পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার আর বদরদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যাকে ছোট করে দেখানোর একটি সচেতন অপপ্রয়াস খুব সহজেই চোখে পড়ে।



বাংলাদেশের অস্তিত্বে আস্থাহীন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সীমাহীন অবজ্ঞা দেখানো যুদ্ধাপরাধী ঘৃণ্য রাজাকার আল বদরদের পক্ষ অবলম্বন করে প্রেস কনফারেন্সে নিজেদের মুখোশ পুরোপুরি খুলে ফেলার দীর্ঘদিন আগে থেকেই বিএনপির জামাতপন্থী অংশ ১৯৭১ এর গণহত্যাকে খাটো করে দেখাতে শুরু করেছে। সম্প্রতি একজন নারী সংসদ সদস্য স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মানুষের সংখ্যা বড়জোর তিন লাখ বলে উল্লেখ করে একটি টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বলেছেন ভুলক্রমে একটি বাড়তি শূন্য যুক্ত হয়ে যাওয়ায় এটি ত্রিশ লাখ হিসাবে প্রচারিত হয়ে আসছে। বেগম জিয়া স্বয়ং তাঁর ভাষণে প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা এবং দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ চিহ্নিত রাজাকারদের দেশপ্রেমিক এবং ইসলামী চিন্তাবিদ হিসাবে উল্লেখ করে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে তাঁর অবস্থান অনেক আগেই স্পষ্ট করেছেন।



খালেদা জিয়া এবং তাঁর দল তাঁদের ভবিষ্যত ক্ষমতা দখলের রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষ অবলম্বন করেছেন। তাঁরা হয়তো আশা করছেন জামাত শিবিরকে সহযোগী হিসাবে পাওয়া গেলে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা ধর্ষণ লুটপাট ও আগুন লাগানোর ইতিহাস মনে না রেখে আবার বিএনপিকে নির্বাচিত করবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয়করণ এবং দুর্নীতিসহ নানা ব্যর্থতার কারণে সে আশা তাঁরা করতেই পারেন। কিন্তু এক সময়ের ঘোরতর মার্ক্সবাদী বুদ্ধিজীবী, জন দরদী কৃষি উদ্যোক্তা ও বিশিষ্ট কবি ফরহাদ মাযহার কেন সুকৌশলে জামাত শিবিরের পক্ষ অবলম্বন করে কলম ধরেছেন তা বুঝতে স্বাভাবিকভাবেই একটু কষ্ট হয়।



যে কোনো অসময়োচিত মৃত্যুই অনাকাক্সিক্ষত এবং বিশেষ দুঃখবহ। এই মৃত্যু যদি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা বা দেশের স্বাধীনতা অর্জনের মতো কোনো মহতী উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে হয় তবে সেই মৃত্যু একটি গৌরবের আত্মদান হিসাবে অবশ্যই বিবেচিত হবে। এই মৃত্যু যদি বোনের সম্ভ্রম রক্ষার জন্যে অথবা ভাইকে সন্ত্রাসী হামলা থেকে রক্ষার জন্যে হয়, তাহলেও সেখানে সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু একজন সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীকে বাঁচাবার জন্যে একদল ধর্মান্ধ মানুষ যখন বিভ্রান্ত হয়ে দেশের সাধারণ মানুষের সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিতদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, মানুষের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে, যানবাহনে আগুন লাগায় তখনও কি ফরহাদ মাযহার আশা করেন পুলিশ নিরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর জামাত শিবিরের ক্যাডারেরা নির্বিঘেœ তাদের তা-ব চালিয়ে যাবে! সেই কারণে তিনি নির্দ্বিধায় লিখতে পেছেন, ‘দেলাওয়ার হোসেন সাঈদির রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে পুলিশ যেভাবে মানুষ হত্যা করছে তাকে নির্বিচার গণহত্যা ছাড়া মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের দিক থেকে আর কিছুই বলা যায় না। বিক্ষোভ ও মিছিল দেখলেই গুলি করার নির্দেশ পালন করছে পুলিশ।’ (আমার দেশ, ২ মার্চ ২০১৩)



গণহত্যা কাকে বলে তা খালেদা জিয়া না জানলেও ফরহাদ মাযহারের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবীর অজনা থাকার কথা নয়। বিএনপি’র সাংসদের মতো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা তিনি জানেন কিনা জানি না। তবে ভিয়েতনামে ৩৮ লক্ষেরও বেশি, কম্বোডিয়ায় কমবেশি ২২ লক্ষ, রুয়ান্ডায় ৯ লক্ষ এবং প্যালেস্টাইনে গত ৬৫ বছরে কত লক্ষ মানুষ গণহত্যায় প্রাণ দিয়েছেন তা তাঁর জানা থাকার কথা। তিনি বরং ইসলামের নাম ব্যবহার করে যারা বিভ্রান্ত মানুষকে এইসব অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু মুখে ঠেলে দিচ্ছে তাদের সংযত হতে বলতে পারতেন এবং যে সকল বিভ্রান্ত তরুণ শান্তির ধর্ম ইসলাম এবং সন্ত্রাসবাদী রাজনৈতিক সংগঠন জামাতে ইসলামের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না, তাদের একটু নসিহত করতে পারতেন। তা না করে তিনি তাঁর সফেদ লুঙ্গির উপরে মানবাধিকারের নামাবলী গায়ে চড়িয়ে মানবতা বিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষ অবলম্বন করে তাঁর বুদ্ধিবৃত্তির ছুরিতে নতুন করে শান দিতে শুরু করেছেন। এর ফলে ‘জ্ঞানপাপী’ শব্দটির উদাহরণ অনুসন্ধানে আমাদের আর বিশেষ কষ্ট করতে হবে না। বিএনপি সরকারের আস্কারা ও জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় এই নষ্ট বুদ্ধিজীবীর ধৃষ্টতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যে তিনি জেএমবি'র সন্ত্রাসীদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুলনা করে প্রেস ক্লাবে ভাষণে বলেন, ১৭ই আগস্টের বোমা হামলাকারীরা সন্ত্রাসী হলে ৭১এর মুক্তিযোদ্ধারাও সন্ত্রাসী (আমাদের সময় ৯ সেস্টেম্বর ২০০৫)



ফরহাদ মাযহারের এককালের ভক্ত এবং তাঁর একজন শিষ্যকবি নিশ্চিত করে বলেছেন, ফরহাদ মাযহার সম্পর্কে যে যাই বলুক, তিনি অকৃতজ্ঞ নন। অনেকদিন ধরে নেহায়েত কৃতজ্ঞতাবশত তিনি জাতীয়তাবাদীদের পক্ষে এবং প্রকান্তরে স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে লিখে চলেছেন। খালেদা জিয়ার শাসনামলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য পুত্র তারেক জিয়ার সহায়তায় নয়া কৃষি উদ্যোগের নামে বিপুল পরিমাণে ভূ-সম্পত্তি এবং অর্থ সম্পদ অর্জন করেছেন। তারেক জিয়ার সফরসঙ্গী হয়ে চীন ভ্রমণ এবং সেখান থেকেও আহরণ করেছেন ব্যাপক সহযোগিতা এবং বলাবাহুল্য এ সবই করা হয়েছে জনস্বার্থে। ফরহাদ মাযহার সম্পর্কে এ সব শোনা কথা আংশিক সত্য অথবা পুরোপুরি অসত্য হতে পারে। তবে যে কোনো কারণেই হোক তিনি গণধিকৃত জামাত শিবিরের ‘নয়া দিগন্ত’ এবং নব্য-রাজাকারদের ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় স্বনামে যা লিখে চলেছেন তা মিথ্যা নয়। তিনি যে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে স্বাধীনতা বিরোধীচক্রের স্বার্থরক্ষায় নেমে পড়েছেন তাতে কোনো ভুল নেই। তাঁর একজন প্রাক্তন কমরেড এ প্রসঙ্গে বলেছেন ‘কম্যুনিস্ট পচলে যে মৌলবাদী হয়, তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই বরবাদ মার্জার!’ ফরহাদকে বরবাদ এবং মাযহারকে মার্জার হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‌‌‌'হি ইজ এ রটন ক্যাট' একটা পচা বিড়ালের বেশি কিছু আর নয়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৫

মিতক্ষরা বলেছেন: লেখাটি কার?

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৮

এ্যানড্রোমিডা বলেছেন: ১৯৭১ সালের পর জামাতের পক্ষে সরাসরি ওদের আইডিওজি নিয়ে রাজনিতিতে আসা সম্ভব ছিলোনা। তখন এরা বি.এন.পি নামের একটা টেমপ্লেট তৈরী করে। এখন তার ঐ বি.এন.পি আস্থায়ি টেমপ্লেট কে বাতিল করে আসল রূপে আবির্ভুত হচ্ছে।

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪০

আলাপচারী বলেছেন: কারও নাম বিকৃত করা অশোভন।
কিন্তু নিয়তির পরিহাস এক্ষেত্রে কেন যেন জনাব ফরহাদ মজহারের পরিবতির্ত নামটি তাকে সঠিক ভাবে সনাক্ত করে।

৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০২

মহাবিরক্ত বলেছেন: +

৫| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৫

রামন বলেছেন:
সুন্দর বিশ্লেষণ।

৬| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২৪

ফরিদুর রহমান বলেছেন: মিতক্ষরাকে: লেখাটি যার নামে প্রকাশিত হয়েছে, তারই। আলাপচারীর বক্তব্যের সাথে একমত। মন্তব্যের জন্যে সকলকে ধন্যবাদ।

৭| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৩৬

দন্ডিত বলেছেন: ইদানিং জামাতি লুকজন নাস্তিকদের ফাসি চেয়ে মাদ্রাসার পুলাপানকে সংগঠিত করনের একটা ব্যাপক চেষ্টা করেছে। একজনরে তো মাইরাই ফেলল। অন্যজনকেও কুপাইছিল। ভাগ্য ভাল সে দৌড়াইয়া পালাইতে পারছিল।

জামাতকে আহবান করি তারা যেমন দল আওয়ামী লীগের রাজাকারদের আগে ধরতে বলে, তেমনি তাদের প্রতি সহানুভুতিসম্পন্ন নাস্তিকদেরও আগে গলা কাটা উচিত।

দে ক্যান স্টার্ট উইথ বর্বাদ।

৮| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১৫

ফরিদ বিন হাবিব বলেছেন: '১৭ই আগস্টের বোমা হামলাকারীরা সন্ত্রাসী হলে ৭১এর মুক্তিযোদ্ধারাও সন্ত্রাসী' শুধুমাত্র এই উচ্চারণের জন্য ফরহাদ মাযহারের মতো ছদ্মবেশি রাজাকারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থ্যা গ্রহণ করা উচিত। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.