নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলাম বিপন্ন বলে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির নেপথ্যে

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২৩

১৯৬৩ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে কাশ্মীরের শ্রীনগরে হযরত বাল দরগায় সংরক্ষিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র কেশগুচ্ছ চুরি হয়ে যায়। কাশ্মীরের, বিশেষ করে শ্রীনগরের মানুষের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এবং গর্বের বিষয় হিসাবে বিবেচিত এই নিদর্শন চুরি হয়ে যাবার ফলে হিন্দু মুসলিম শিখ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন এবং অনতিবিলম্বে কেশগুচ্ছ উদ্ধার ও অপরাধীদের শাস্তি দাবী করেন। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এক সপ্তাহের মধ্যে এই পবিত্র কেশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় এবং কাশ্মীরের জনগণ সম্মিলিতভাবে শ্রীনগরের রাস্তায় নেমে এসে সরকারের দ্রুত উদ্ধার তৎপরতাকে অভিনন্দিত করে।



অন্যদিকে এই ঘটনা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল সে দিকে একটু ফিরে তাকানো যেতে পারে। সরকার নিয়ন্ত্রিত রেডিও পাকিস্তানের সকল সংবাদ, সংবাদ বিশ্লেষণ এবং আলোচনা অনুষ্ঠানসহ সরকারি পত্র পত্রিকায় কয়েকদিন ধরে বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যা এদেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। সরাসরি সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়ার পরেও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সাম্প্রদায়িক গোলযোগ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়ে আইয়ুব খানের সরকার নিজস্ব গুণ্ডা বাহিনী নামিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু করে। ১৯৬৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকা ও খুলনাসহ সারা দেশে প্রায় অর্ধশত মানুষ এই ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রাণ হারায়। উল্লেখ করা যেতে পারে, এ সময় পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে অর্থনৈতিক বৈষম্যজনিত ক্ষোভ, সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের ক্রমবর্ধমান উত্থান থেকে দৃষ্টি ফেরাবার জন্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো একটি ইস্যু জরুরি হয়ে পড়েছিল।



উপমহাদেশের শাসক শোষক গোষ্ঠির স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যা ও ধর্ষণ, তাদের ঘরবাড়ি- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালানো ও অগ্নিসংযোগ এবং মসজিদ মন্দির গির্জা প্যাগোডায় হামলা ও ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটানো একটি বহু ব্যবহৃত অপকৌশল। ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির প্রতিটি প্রচেষ্টার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। অতি সম্প্রতি শাহবাগের আন্দোলনের উদ্যোক্তাদের নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করা এবং ব্লগারদের ধর্ম ও রাসুল (সাঃ) এর অবমাননাকারী বলে উল্লেখ করে ধর্মীর উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টাও অতীতের কূটকৌশল থেকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো অবকাশ নেই। এই অপচেষ্টার প্রধান উদ্দেশ্য একাত্তর সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাদের নায়ক যুদ্ধপরাধী রাজাকার আল বদর, তথা জামায়াতের নেতাদের বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত করা এবং সম্ভব হলে পুরোপুরি বাঞ্চাল করা।



জামায়াত শিবির যুদ্ধাংদেহী মনোভাব নিয়ে তাদের নেতাদের রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করবে সঙ্গত কারণেই। তাদের সহযোগী সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক’এর সৃষ্ট দল হিসাবে দাবীদার বিএনপি তার ক্ষমতা সর্বস্ব ভবিষ্যতের হিসাব নিকাশ থেকে ঢালাওভাবে তরুণদের নাস্তিক বলে উল্লেখ করে নিজেদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু ‘অরাজনৈতিক’ ভূইফোঁড় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম কেন ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে কোন ফায়দা হাসিল করতে চায় তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। তাঁরা কি আসলেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পাবার কারণে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত? তাঁরা কি দেশে তথাকথিত নাস্তিকতাবাদের সম্প্রসারণে ইসলামের অস্তিত্ব বিপন্ন বলে মনে করেন? যদি সত্যিই তাই হয় তাহলে কোনো ধরনের মহাসমাবেশ, হরতাল এবং অবরোধ কর্মসূচী ছাড়াই দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ তাদের সমর্থন দান করবে। তবে হেফাজতের উপস্থাপিত ১৩ দফা দাবী এবং সমাবেশ ও সমাবেশ পরবর্তী সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে তাদেরকে কোনোভাবেই ধর্মপ্রাণ শান্তিপ্রিয় মুসলমান বলে মেনে নেয়া যায় না।



হেফাজতের সমাবেশে অংশগ্রহণকারী মাদ্রাসা ছাত্র ও শিক্ষক তো দূরের কথা, ধর্মের জিকির তুলে যারা তাদের সংগঠিত করেছে সেই সব নেতা ও কর্মীদের অধিকাংশই ব্লগ কি, কেন এবং কিভাবে কাজ করে তা জানেন না। যে দেশে ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত সংবাদপত্রের পাঠক সংখ্যাই নিতান্ত নগন্য, সেখানে কোন ব্লগে কবে কি লেখা হয়েছে অথবা আদৌ হয়নি তা প্রকৃতপক্ষে কতজন পাঠ করেছেন? গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময়ে একাধিক ব্লগের সাথে সম্পর্কিত থেকেও নবী রাসুল বা ইসলামের অবমাননা হতে পারে এমন কোনো লেখা আমার চোখে পড়েনি। বরং কিছু ব্লগে প্রতি নিয়তই মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু এবং বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সংগঠনের নামে অযৌক্তিক সমালোচনা, কুৎসা রটনা ও তির্যক মন্তব্য করা হয়ে থাকে এবং এ সব লেখায় প্রায় সব ক্ষেত্রেই ভাষার শালীনতা বজায় রাখা হয় না। এই সব ব্লগ এবং ব্লগের লেখকগণ জামায়াত শিবিরের সুশিক্ষিত এবং তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত তাতে কোনো সন্দেহ নেই।



এ ব্যাপারে প্রায় বছর খানেক পূর্বে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘দুই চারজন কম্পিউটারওয়ালা বুদ্ধিজীবী ছাড়া এ সব ব্লগ-ফ্লগে কি লেখা হলো তা নিয়ে দেশের মানুষ মাথা ঘামায় না। এ সব লিখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করা যাবে না।’

যদি দীর্ঘ সময় ধরে জামাত শিবিরের নিয়মিত অপপ্রচার স্বত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিন্দুমাত্র চিড় না খায়, তাহলে আজ ঠিক এই মুহূর্তে কথিত নাস্তিকতা নিয়ে মাথা ঘামাবার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে কেন? কারণ সেই একটাই, নাস্তিকতা ও ধর্ম অবমাননার ধুয়া তুলে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের রক্ষা করা। যদি নাস্তিকরাই হেফাজতিদের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে স্বঘোষিত নাস্তিক ও বিবাহ বহির্ভূত ‘লিভ টুগেদার’এ বিশ্বাসী কবি ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মাজহার যখন হেফাজতের সমাবেশের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন তখন ইসলামের হেফাজতকারী বিশিষ্ট আলেম ওলামারা নিশ্চুপ থাকেন কেন? আসলে নাস্তিক আস্তিক প্রশ্নে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা ব্লগারসহ বর্তমান প্রজন্মের মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী তরুণদের মূল দাবী যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচারের প্রশ্নটি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা ছাড়া আরকিছুই নয়।



হেফাজত ইসলাম দাবী করেছে তারা জামায়াতের সহযোগী বা তাদের সাহায্যপুষ্ট কোনো সংগঠন নয়। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে নাস্তিক কাফের সম্বোধন করলেও স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা পবিত্র ধর্ম ইসলামের নামে হত্যা ধর্ষণ লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে তারা একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি তারা। একটি মধ্যযুগীয় পশ্চাদপদ দাবীনামা উত্থাপন করে ‘১৩ দফা মেনেই ক্ষমতায় থাকতে বা আসতে হবে’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণের মতো স্পর্ধা যারা দেখাতে পারে তাদের শক্তির উৎস সম্পর্কে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল সচেতন মানুষকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।





মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৩০

আহলান বলেছেন: ভালো বলেছেন .... এসবে সরকারেরও ভালো লাভ হচ্ছে ... তাদের দূর্ণীতি গেলো জনগনের চোখের আড়াল হয়ে যাচ্ছে ....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.