নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধাপরাধের বিচার: পাকিস্তান ও জাতিসংঘ

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৫

যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার পরে পাকিস্তানের একটি অখ্যাত পত্রিকায় পোস্টার হাতে এক শিশুর ছবি ছাপা হয়েছে। ইংরেজিতে লেখা পোস্টারের বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘বাংলাদেশের পাকিস্তান প্রেমিকদের হত্যা বন্ধ করুন।’ অবোধ শিশুটির হাতে যাঁরা এই পোস্টার ধরিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ভুলক্রমে নাকি সচেতন ভাবেই প্রতিবাদের এই ভাষা বেছে নিয়েছেন জানা নেই। তবে কাদের মোল্লার মৃত্যুতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে গৃহীত শোক প্রস্তাবের পাশাপাশি যখন উল্লেখ করা হয়, ‘পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যই এই ইসলামী নেতার দণ্ডাদেশের মূল কারণ’ তখন বুঝতে আর কিছুই বাকি থাকে না। পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর সংসদ সদস্য শের আকবর খান উপস্থাপিত প্রস্তাবে কাদের মোল্লাকে একজন পাকিস্তান প্রেমিক এবং অখণ্ড পাকিস্তানের চেতনায় বিশ্বাসী বলে উল্লেখ করার সাথে সাথে সরকারকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা গ্রহণের’ অনুরোধ জানানো হয়। পার্লমেন্টে সাবেক ক্রিকেটার তেহরিক ই ইনসাফের প্রধান ইমরান খান বলেন, ‘বাংলাদেশের ইসলামপন্থী নেতা আবদুল কাদের মোল্লা সম্পূর্ণ নির্দোষ, কারণ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে আদালত ব্যর্থ হয়েছে।’ এ ছাড়াও আওয়ামী মুসলিম লীগ ও জামায়াতে উলেমা ইসলামসহ ছোট কয়েকটি দলের নেতাও পাকিস্তানের প্রতি কাদের মোল্লার বিশ্বস্ততাই তার মৃত্যু দণ্ডের কারণ বলে উল্লেখ করেন।



পার্লামেন্টে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যটি ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী চৌধুরি নিসার আলী খানের। পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ডকে একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের জনগণ এই ঘটনায় মর্মাহত।’ তাঁর মতে বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ ১৯৭১ সালের ইস্যুগুলার পুনরুজ্জীবন না ঘটিয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেতাদের মুক্তি দিয়ে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতেই সকল মামলার নিষ্পত্তি ঘটনো। আন্তর্জাতিকঅপরাধ ট্রাইবুন্যালের বিচারকে ‘জুডিশিয়াল মার্ডার’ বলে চরম ধৃষ্টতার পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর প্রস্তাব অনুসারে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ভেবে দেখার ব্যাপারেও তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।



পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব এবং উপস্থিত সদস্যদের বক্তব্য থেকে সহজেই অনুমান করা যায় বাংলাদেশের জামায়াত তার নামের শীর্ষে বাংলাদেশ শব্দটি ধারণ করলেও তারা মনে প্রাণে পাকিস্তান জামায়াতেরই একটি অংশ। পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জনেই দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে পাকিস্তানের এজেন্ট হিসাবেই এদেশে তারা নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে একের পর এক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষিত হবার পরে বিচারিক প্রক্রিয়ায় মানবতা বিরোধী এইসব অপরাধীকে মুক্ত করা সম্ভব নয় জেনে বাংলাদেশের জামায়াত-শিবির পাকিস্তানি সহায়তায় নৈরাজ্য, নাশকতা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশকে একটি অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে।



পাকিস্তানিদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রশ্ন সামনে না এনেও নির্দ্বিধায় বলা যায় একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা তাদের কৃতকর্মের জন্যে মোটেও অনুতপ্ত নয়, বরং পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের সাথে সাথে পুরোনো সাঙ্গাতদের মুক্তির জন্য নানা অপচেষ্টায় তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।



পাকিস্তানের পার্লামেন্ট এবং পত্রপত্রিকা ছাড়াও বিশ্বের কয়েকটি দেশের পত্রিকায় ও গণমাধ্যমে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের একাধিক ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত কাদের মোল্লাকে যুদ্ধাপরাধীর পরিবর্তে বিরোধীদলীয় নেতা, ইসলামী চিন্তাবিদ এমনকি ইসলাম প্রচারক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কলাম লেখক এবং প্রতিবেদকদের অনেকেই মানবাধিকারের ধুয়া তুলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার ব্যবস্থাকে অস্বচ্ছ, সরকার নিয়ন্ত্রিত এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয় বলে উল্লেখ করেছেন।



সঙ্গত কারণেই এই সকল ভাড়াটিয়া সাংবাদিক এবং পেশাদার মানবাধিকার কর্মীকে প্রশ্ন করা যায়, ‘আপনারা কি মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত কাদের মোল্লার দণ্ডাদেশের ৭৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা অন্তত একবার উল্টিয়ে দেখেছেন? তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা একটি মামলায় আসামীর আত্মপক্ষ সমর্থনসহ সকল নথিপত্র ও সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন, রায়ের বিরুদ্ধে আপীল এবং আপীল পুনর্বিবেচনাসহ সকল সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও তা যদি স্বচ্ছ না হয় তবে কি যে কোনো অপরাধের বিচারহীনতার সংস্কৃতিই প্রকৃত স্বচ্ছতা! আর বিচারের আন্তর্জাতিক মান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে হলে, দেশের প্রচলিত আইনের সাথে সাংঘর্ষিক না হয় এমনভাবে মানবতা বিরোধী অপরাধের যে সকল আন্তর্জাতিক বিধি বিধানের আলোকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের বিধি বিধান প্রণীত হয়েছে তার সংক্ষিপ্তসারও কি তাঁরা পাঠ করে দেখেছেন?



নিরপেক্ষতার ন্যায় নীতিহীন সাংবাদিক ও পক্ষপাতদুষ্ট মানবাধিকার কর্মীদের অনেকেই সাম্প্রতিক বিশ্বের দেশে দেশে গণহত্যা এবং অন্যায় যুদ্ধে নারী ও শিশুদের অবর্ণনীয় দুদর্শার ক্ষেত্রে নিরব থাকলেও কখনও কখনও একজন ব্যক্তি অপরাধীর মানবাধিকার নিয়ে ভীষণভাবে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। প্রয়োজনে এরা মানব জাতির সর্বোচ্চ ফোরাম জাতিসংঘকেও সাথে সম্পৃক্ত করে নিতে চান। সিএনএন তার ‘ফাইভ স্টোরিজ নট টু মিস’ ক্যাটগরিতে কাদের মোল্লার রিপোর্টটির শিরোনাম করেছে ““Bangladesh hangs Islamist leader despite UN objections”. সিএনএন-এর মতো যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ সংবাদ সংস্থার ভূমিকা খুব সহজেই অনুমানযোগ্য হলেও এক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকা একটু ভেবে দেখা দরকার। অনেকেরই মনে থাকার কথা, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নেয়া প্রায় এককোটি শরণার্থীর ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে মানবিক সহায়তার আবেদন জানানো ছাড়া এই ঠুটো জগন্নাথ প্রতিষ্ঠানটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেনি।



বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের ১২ সদস্যের একটি দল ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরির নেতৃত্বে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৬তম অধিবেশনে বাংলাদেশে গণহত্যার বিষয়টি উত্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অধিবেশনের বাইরে ব্যাপক গণসংযোগ ও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি পর্যায় পর্যন্ত অনেক সদস্য দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সহানুভূতি অর্জনে সক্ষম হলেও জাতিসংঘ বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি এজেন্ডায় অন্তর্ভূক্ত করেনি। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব উ থান্ট ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি তুলে আনার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায় তবে দুই ক্ষমতাধর সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিরোধীতার কারণে তাঁর কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি।



মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত জেনে তড়িঘড়ি করে জাতিসংঘের অধিবেশন ডেকে ১২ই ডিসেম্বর ‘আঞ্চলিক শান্তি রক্ষার স্বার্থে’ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব পাশ করা হয়। ততোদিনে মুক্তিযোদ্ধারা যশোহর-খুলনা, সিলেট এবং রংপুর-বগুড়ার অনেক অংশ পাকিস্তানিদের দখল মুক্ত করে ফেলেছেন। মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় ঢাকায় পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পন তখন সামান্য সময়ের ব্যাপার। সেদিন যেমন জাতিসংঘের শান্তি প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল, আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও মানবাধিকারের নামে মানবতা বিরোধীদের রক্ষা প্রচেষ্টায় জাতিসংঘসহ মানবাধিকারের প্রবক্তাদের অপতৎপরতা অগ্রাহ্য করে বিচার শেষে সকল যুদ্ধাপরাধীর যথাযোগ্য শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।



পাকিস্তানের অনুগত সামান্যসংখ্যক রাজাকার আল বদর, তাদের রাজনৈতিক দোসর ও উচ্ছিষ্টভোগীরা ছাড়া সারাদেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে ১৯৭১-এর মতোই একতাবদ্ধ।



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৪

েফরারী এই মনটা আমার বলেছেন: @ফরিদুর রহমান বলেছেন:" জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব উ থান্ট ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি তুলে আনার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায় তবে দুই ক্ষমতাধর সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিরোধীতার কারণে তাঁর কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি। "


জামাতে ইসলাম নয়,এরা জামাতে মওদুদী বলেই আমেরিকা সহ ইহুদীসংঘ তাদে রক্ষা করতে চায় । তারা এদের মাধ্যমে তাদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে থাকে। ।
Click This Link

২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:০৫

নিয়েল হিমু বলেছেন: পাকিস্তান রাস্ট্রে ঘটা এই ঘটনা গুলোর আগে কি কশাই কাদের চাচারে নিয়া সংসয় ছিল নাকি ?

৩| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:২৯

রাফা বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন।বাঙ্গালী মাথা নত করে বাচার জন্য দেশ স্বাধীন করে নাই।৩০ লক্ষ শহীদ আর চার লক্ষ মা বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই অর্জন।
আমরা ভালো করেই জানি কি করে আমাদের স্বাধীনতা আমরা রক্ষা করবো।
বাশের লাঠি দিয়ে পিটিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু হোয়েছিলো।আর এখনতো মোকাবেলা করার জন্য আমাদের রয়েছে সুশিক্ষিত বাহিনি।আর আমরা সাধারণ জনতাতো রয়েছি-কার সাধ্য আমাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়?
জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু।

৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:৩৩

রাফা বলেছেন: জামাত-কে রক্ষা করতে চায় , কারন এদের হাত ধরেই জঙ্গীবাদের প্রসার ঘটিয়ে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের রাস্তা সুগম হয়।বিশ্ব মোড়লদের।

৫| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৬

েফরারী এই মনটা আমার বলেছেন: @রাফা বলেছেন: জামাত-কে রক্ষা করতে চায় , কারন এদের হাত ধরেই জঙ্গীবাদের প্রসার ঘটিয়ে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের রাস্তা সুগম হয়।বিশ্ব মোড়লদের।

সহমত।
কসাই কাদের মোল্লা কতটুকু ইসলামী আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলো ?
Click This Link

৬| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৩

ফরিদুর রহমান বলেছেন: আমাদের এখন সবচেয়ে আগে প্রয়োজন জামাত শিবির, রাজাকারমুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এরপর দুনীর্তিবাজ, লুটেরা, অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী, গণতন্ত্রহরণকারী- সকল রাজনীতিবিদের বিচার আমরা বাংলাদেশের মাটিতে করতে চাই। তারজন্যে কোনো তালেবানে বাংলা, মিনি পাকিস্তান বা বাংলাস্তানে রাজাকারদের প্রয়োজন নেই।
যাঁরা লেখাটি কষ্ট করে পড়েছেন এবং যাঁরা মতামত দিয়েছেন- সকলকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.