নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ও আসন্ন সংকট

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫১

বিরোধীদের নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা এবং লাগাতার হরতাল ও অরোধের মধ্যেও শেষপর্যন্ত সারা দেশে ১৩৯টি আসনে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলা ও অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, এবং নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও ভোটাদের উপর দুর্বৃত্তদের আক্রমণসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২১ জন। এ সব ঘটনায় পাঁচ শতাধিক কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্র দখল ও জালভোটের অভিযোগে নির্বাচন বয়কট করেছেন। অভিযোগ উঠেছে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রার্থী পেশীশক্তি প্রদর্শন করে বিজয় নিশ্চিত করেছেন। নির্বাচনের পূর্বেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্টতা পাবার পরেও এ সব ঘটনায় আওয়ামী লীগের অনুদার রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষমতা দখলের কোনো সুযোগই হাতছাড়া না করার মানসিকতা আরও একবার প্রকাশিত হয়েছে। এমনিতেই নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ এই নির্বাচনে বরং দু চারজন ভিন্ন মতাবলম্বী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে পারলে তা সামান্য পরিমাণে হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা যুক্ত করতে পারতো।



অনেকেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের সাথে তুলনা করে এটিকে একটি অগ্রহণযোগ্য, অগণতান্ত্রিক এবং প্রহসনের নির্বাচন হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না থাকায় একতরফা এই নির্বাচনটি সর্বজনগ্রাহ্য হয়নি এ কথা মেনে নিয়েও বলা যায় ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের সাথে এর বেশ কিছু মৌলিক ও গুণগত পার্থক্য রয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতা ছাড়াও অনির্বাচিত এবং আনপ্রেডিক্টেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে একটি শূন্যতা সৃষ্টি করা হলে প্রকারান্তরে তা মৌলবাদী সন্ত্রাসী এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সহযোগীদের শক্তি বৃদ্ধিতেই সহায়ক ভূমিকা পালন করতো। বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত এনজিও কেন্দ্রীক বুদ্ধিজীবী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হতে আগ্রহী বিশিষ্টজনদের বক্তব্য একটু মনোযোগের সাথে লক্ষ করলে তাঁদের এই মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশিষ্টজনদের সিংহভাগই নির্বাচন স্থগিত করার ব্যাপারে বিপুল আগ্রহ প্রকাশ করলেও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও দিনের পর দিন হরতাল অবরোধ দিয়ে জন জীবন বিপন্ন করে তোলার ব্যাপারে টুঁ শব্দটি করেননি। স্মরণকালের মধ্যে নির্বাচন প্রতিহত করার জন্যে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের ধুয়া তুলে বাসে আগুন দিয়ে অরাজনৈতিক নিরিহ মানুষ হত্যা, এবং রেল লাইন উপড়ে ফেলে যোগাযোগ বিছিন্ন করার মতো সন্ত্রাসী ঘটনা এদেশে আর কখনো ঘটেনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির আহবানে এবং জামাত শিবিরের সক্রিয় অংশগ্রহণে দেশব্যাপী জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী এই সহিংস তৎপরতা ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সাথে এর পার্থক্য চিহ্নিত করে দিয়েছে।



বিশিষ্টজনদের গোলটেবিল আলোচনা থেকে মনে হতে পারে, শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নির্বাচন স্থগিতের মধ্যেই রয়েছে সকল সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান। কিন্তু সত্যিই কি তাই! আসলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন জামায়াতের জন্য একটি ইস্যু মাত্র। দীর্ঘদিন ধরেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রতিহত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর জন্যে তারা যে অজুহাত খুঁজছিল এই নির্বাচন তার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তাদের প্রধান সহযোগী বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের সমর্থন হারানোর ভয়ে প্রকাশ্যে একাত্তরের ঘাতক দালালদের পক্ষ নিয়ে কথা না বললেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বিচারের রায় কার্যকর করার ক্ষেত্রে তারাও এখন একটি বড় বাধা। নির্বাচন ইস্যুতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে কোনো নাম পরিচয়ে একটি তৃতীয় শক্তির উত্থান নিশ্চিত করা গেলে বিএনপির কাঁধে ভর করে জামায়াত ক্রমান্বয়ে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে অগ্রসর হতে পারে। সেই কারণে ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় বিএনপির ডাকা হরতাল অবরোধে জনসমর্থন না থাকা স্বত্ত্বেও জামায়াত শিবিরের জঙ্গিরা সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে ট্রাক ড্রাইভার, ভ্যান ও অটোরিক্সা চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বাসযাত্রী নারী ও শিশুসহ একের পর এক মানুষ হত্যা করে চলেছে।



মাঝে দিন কয়েক বাসে ট্রাকে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনায় কমে আসায় জনজীবনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছিল। ঠিক সেই সময়, নির্বাচনের আগের দিন একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে পরিবেশিত তথ্য অনুসারে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতকে পুনরায় ‘এ্যাকশন’ শুরু করার অনুরোধ জানিয়েছেন। ইংরেজি পত্রিকার ‘এ্যাকশন’-এর বাংলা করলে যা দাঁড়ায় তার ফলে একজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী, পেঁয়াজের ট্রাকের চালক ও তার সহকারী, কালিয়াকৈরের আরও একজন ট্রাক ড্রাইভার, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাসহ নিহত হয়েছেন মোট ২৯জন মানুষ। গত কয়েকদিনে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া হয়েছে, রাস্তা এবং গাছ কেটে ভোটকেন্দ্রের পথে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ধ্বংস করা হয়েছে যানবাহনসহ নির্বাচনের সরঞ্জাম। তবে এতো কিছুর পরেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করা যায়নি।



সঙ্গত কারণেই নবনির্বাচিত এই সরকার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যতো কম সময়ের জন্যেই শাসনভার গ্রহণ করুক না কেন, সরকারকে কঠিন চ্যালেঞ্জ এবং নানামুখি সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে বিরোধীদের হরতাল ও অবরোধসহ নাশকতামূলক তৎপরতা বন্ধ করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা এখন সরকারের প্রধান কাজ। বিদেশিদের, বিশেষ করে উন্নয়ন সহযোগীদের আস্থা অর্জন করাও নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের জন্য কঠিন হবে। কাজেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের মানুষ ও বিদেশিদের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।



দলীয় মনোনয়ন লাভের সুযোগে ইতিমধ্যেই যে সকল দুর্নীতিবাজ ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী নির্বাচিত হয়ে গেছেন তাঁরা যেনো নতুন মন্ত্রীসভায় অনুপ্রবেশ না করতে পারেন সে ব্যাপারে শুরুতেই কঠোর অবস্থান নেয়া প্রয়োজন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চলমান প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চার করে বিচারের রায় কার্যকর করতে হবে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের জামায়ত প্রীতির নীতির মূলোৎপাটন করে এই সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যকলাপ অনতিবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। গত কয়েক মাসের ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি-শিল্প-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতি ফিরিয়ে এনে সচল রাখতে হবে অগ্রগতির চাকা। এ জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে গণবিরোধী নাশকতা ও নৈরাজ্য বন্ধ করতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বনে সরকারের দ্বিধান্বিত হবার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়াও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার সাথে সাথে শিশু ও নারীদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। সর্বোপরি, সংবিধান রক্ষার বুলি শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার না করে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।



অতি দ্রুত সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে জন্যে জনগণ শেষপর্যন্ত এই সরকারকে সীমিত মেয়াদেও ক্ষমতায় অবস্থান করতে দেবে না। ৫ জানুয়ারির প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন স্বল্প পরিসর নির্বাচনেও বেশ কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও নীতি নির্ধারক পর্যায়ের প্রার্থীর পরাজয় সুস্পষ্টভাবে সেই ইঙ্গিত বহন করে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৩

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: ৪২ বছরে ১ম বার সঠিক নির্বাচন হয়েছে।

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০১

মদন বলেছেন: সরকারের সন্ত্রাস রোধে ভূমিকা রাখার নৈতিক অধিকার আছে শামীম ওসমানের মতো খুনীকে সংসদে এনে?

৩| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩১

মেনন আহমেদ বলেছেন: ৪২বছর পর এটাকে যদি আপনি একমাত্র সঠিক নির্বাচন বলেন তাহলে বলতে হয় ৪২বছর পর আবার কেউ কোন পাকিস্তানি কুলাংগারের মতো সরাসরি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বললো।@ঘাতক১৯৭১

৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪০

মদন বলেছেন: একমত @ মেনন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.