নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ ব্যাংকের বজ্র অাঁটুনি

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৪৫

গত মাসে সপ্তাহখানেকের জন্য থাইল্যান্ডে যাওয়ার আগে একটা আশঙ্কা মনের মধ্যে কাজ করছিল। সামরিক শাসনের অধীনে একটা দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক চেহারা কেমনভাবে বদলে যায়, বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আইয়ুব থেকে এরশাদ পর্যন্ত বহুবার তা দেখার দুর্ভাগ্য আমাদের হয়েছে। সেনা শাসকদের নিয়মনীতির কড়াকড়ির ফলে সাধারণ কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে বিদেশি পর্যটকদের অবাধ চলাচলে বাধানিষেধ আরোপিত হবে, হোটেল-রেস্টুরেন্ট পানশালায় রাত-বিরাতের আনন্দ আয়োজনে ব্যাঘাত ঘটবে এবং চূড়ান্ত বিচারে পর্যটনশিল্পে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এটিই স্বাভাবিক। স্বল্প সময়ে থাইল্যান্ডের জনগণের মনোভাব বোঝা সম্ভব নয়, তবে খোলা চোখে দেখে ব্যাংকক ও রাজধানীর বাইরে সর্বত্রই থাইল্যান্ডকে আগের মতোই ব্যস্ত ও প্রাণোচ্ছল মনে হয়েছে। অন্যদিকে এই ভ্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত যেসব সমস্যা-সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছে, তার সবটাই ঘটেছে বাংলাদেশে।



ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ব্যাংকক শহরে ও শহরের বাইরে ক্রাবি ও কাঞ্চনবুড়ির হোটেল বুকিং দুই মাস আগে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। আমার মনে হয়েছিল সব কিছুই এখন এভাবে সহজেই শেষ করা যাবে। কিন্তু ব্যাংকক থেকে ক্রাবি যাওয়ার জন্য একটি সস্তা বিমান সংস্থার টিকিট বুকিংয়ের সময় বিপত্তি দেখা দিল। দলের আটজন যাত্রীর নাম, ঠিকানা, পাসপোর্টের বিবরণসহ জীবনবৃত্তান্ত ও ফ্লাইট ডিটেইলের আটটি দীর্ঘ ছক অনলাইনে পূরণ করার পর টিকিটের মূল্য পরিশোধের সময় 'সাবমিট' বোতামে চাপ দিয়ে দেখা গেল তা কাজ করে না। কিছুক্ষণ পরেই আমার ক্রেডিট কার্ড সরবরাহকারী ব্যাংক থেকে ফোন করে জানানো হলো, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কোনো এয়ারলাইনসের টিকিট কেনা যাবে না। কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানালেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আছে। বলা নিষ্প্রয়োজন- কেন নিষেধাজ্ঞা, কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা, কাদের জন্য নিষেধাজ্ঞা, এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর জানার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।



প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা ভালো, বিশ্বব্যাপী 'বাজেট এয়ার' বা অত্যন্ত কম মূল্যে বিমান ভ্রমণ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রকৃত যাত্রার দেড়-দুই মাস আগে অনলাইনে খোঁজখবর নিয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অবিশ্বাস্য কম দামে বিমানের টিকিট কেনা সম্ভব। মালয়েশিয়াভিত্তিক একটি বাজেট এয়ারের বিজ্ঞাপন 'নাউ এভরি ওয়ান ক্যান ফ্লাই' কথাটির যথার্থতা প্রমাণ করে, আমাদের প্রত্যেকের জন্য ব্যাংকক-ক্রাবি-ব্যাংকক টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছিল জনপ্রতি ৪৪ ডলার। আটজনের জন্য মাত্র সাড়ে ৩০০ ডলার ক্রেডিট কার্ডে পরিশোধ করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ব্যাংকক যাওয়ার দুই সপ্তাহ আগে পরিচিত এক ট্রাভেল এজেন্টের শরণাপন্ন হতে হলো। প্রতিটি টিকিটের জন্য আমাদের ৯০ ডলার অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি দিতে হলো। বৈধভাবে যা সাড়ে ৩০০ ডলার ছিল, অবৈধভাবে তা এসে দাঁড়াল ৭২০ ডলারে।



আটজন যাত্রীর পাসপোর্ট বৃত্তান্ত পাঠিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে টিকিটের কনফার্মেশন পাওয়ার জন্য বেশ কিছুটা সময় ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে বসে থাকতে হলো। এই সময়ের মধ্যে টেলিফোনে দুজন যাত্রীর একজন ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা ও অন্যজন ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক-ঢাকা টিকিট বুক করলেন। এঁরা দুজনই সেদিন রাতের ফ্লাইটে যাত্রা করে পরদিনই ফিরে আসবেন। ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় করে এক রাতের জন্য যাঁরা সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক যাতায়াত করেন, তাঁদের বাণিজ্যটা কী জানার ব্যাপারে কৌতূহল হলো। আমাদের ট্রাভেল এজেন্ট জানালেন, প্রতিদিনই কয়েক ডজন যাত্রী ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, দুবাই, ব্যাংকক, মুম্বাই এবং কলকাতা যাতায়াত করে থাকেন। এঁদের সঙ্গে থাকে লাখ লাখ টাকার ডলার, পাউন্ড, রিয়াল, দিরহাম, রিংগিত, বাথ অথবা ভারতীয় রুপি। যখন যেখানে যে মুদ্রার দাম কম সেখান থেকে তাঁরা কিনে আনেন এবং যেখানে দাম বেশি সেখানে বিক্রি করে দেন।



আমি অর্থনীতির ছাত্র নই। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে এসব বৈধ-অবৈধ পথ ও পন্থা দেশের অর্থনীতির জন্য কতটা লাভজনক অথবা ক্ষতিকর তাও আমার জানা নেই। তবে এটুকু বুঝতে পারি, এসব অবৈধ লেনদেন নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ নেই, অথবা থাকলেও তাদের কোনো কার্যকর ভূমিকা কোথাও নেই। আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করি, এরা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করে কিভাবে- তা ছাড়া ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এক রাতের যাত্রীদের সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে কোনো ব্যবস্থা নেয় না কেন? ট্রাভেল এজেন্ট নির্দ্বিধায় জানান, সব জায়গায় এদের লোকজন আছে। এরা বিমানের সিটে বসার পরে এদের কাছে ডলার-পাউন্ড-রিংগিতের বান্ডিল পৌঁছে যায় আবার ফিরতি পথে এদের টাকা নিয়ে আসার ব্যবস্থাও আছে।



নিশ্চয়ই অবৈধ মুদ্রা ব্যবসায়ীদের জন্য বাণিজ্য ক্ষেত্রেও একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে- যা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জানা নেই। কুয়ালালামপুর থেকে কনফার্মেশন এসে যাওয়ার পরে টিকিটের প্রিন্ট আউট নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আমার শেষ প্রশ্ন ছিল, 'মুদ্রা লেনদেনের এই ব্যাপারটা কি বাংলাদেশ ব্যাংকের জানা নেই- তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না কেন?' আমার ট্রাভেল এজেন্ট হাসতে হাসতে তাঁর আঞ্চলিক ভাষায় যে উত্তর দিলেন তার প্রমিত বাংলা করলে দাঁড়ায়- বাংলাদেশ ব্যাংক সামনে দিয়ে সরিষাও পার হতে দেয় না, কিন্তু পেছন দিক দিয়ে বেল চলে গেলেও তাদের চোখে পড়ে না।



















- See more at: Click This Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০২

ঢাকাবাসী বলেছেন: দুনিয়াতে সবচাইতে অপদার্থ অদক্ষ অযোগ্য অকর্মন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক হল বা,ব্য!

২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২২

আলী খান বলেছেন: চোর সব চোর...............

৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬

ভোরের সূর্য বলেছেন: আপনার সাথে সহমত এবং সহানূভুতি প্রকাশ করছি। আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থা এমন যে সামনে দিয়ে সুঁই গেলে সেটা চোখে লাগে আর পিছন দিক দিয়ে হাতি গেলেও টের পায়না। আমাদের এই ৫০০/১০০০ ডলার খরচ করবো এয়ারের টিকিট কাটার জন্য অথচ সেটার জন্য কত কাহিনি কিন্তু লক্ষ্য লক্ষ্য ডলার যে প্রতিদিন চোখের সামনে দিয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে সেদিকে কোন খেয়াল নাই। মানুষের হাজার কোটি টাকা মেতে দিচ্ছে কিন্তু কিছুই করতে পারছেনা। মজা লাগে যে অনলাইনে হোটেলের বিল পে করতে পারছি সেটা ৩০০ডলারের বেশীও হতে পারে কিন্তু ঠিক একইভাবে অনলাইনে এয়ারের টিকিট কিনতে পারছিনা!!!!!!!!!

তবে আপনি যেই কাজটা যাবার ২সপ্তাহ আগে করেছিলেন মানে ৪৪ডলারের টিকিট ৯০ ডলারে কিনেছিলেন(এয়ার এশিয়া) সেটা আপনি ৪৪ডলারেই কিনতে পারতেন যখন দেখলেন অনলাইনে টিকিট কাটতে পারছিলেন না তখন ট্রাভেল এজেন্সিই আপনাকে একই দামে কিনে দিত। কেননা আপনি যখন কিনলেন তখন সেই প্রমোশনাল অফারটা ছিলনা। আর এখন বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সি থেকে সারা বিশ্বের টিকিট কাটা যায়।যত আগে কাটবেন তত কমে টিকিট পাবেন।


সবশেষে আরেকটি তথ্য দিতে চাই সেটা হল,খুব সম্ভবত আপনার ক্রেডিট কার্ডটি ছিল ডুয়াল কারেন্সি কার্ড যেটি আসলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড নয়।ডুয়াল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ডে অনেক লিমিটেশন থাকে। আপনার যদি ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কিংবা ডেবিট কার্ড থাকতো তাহলে কোন সমস্যা হতনা টিকিট কাটতে এবং কোন লিমিটেশন নাই।

৪| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:২০

ফরিদুর রহমান বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আসলে আমার বন্ধুদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে টিকেট কেনার ক্ষেত্রে আমরা অহেতুক দেরি করেছি, ফলে বেশি দামে টিকেট কিনতে হয়েছিল। আর ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপারেও আপনার ধারণা সঠিক। আমর ক্রেডিট কার্ডটি ডুয়াল কারেন্সি কার্ড। পাশাপাশি একটি ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড থাকলেও সেটি ব্যবহার করা যেতে পারে তা আমার জানা ছিল না। আপনার পরামর্শের জন্য আবারও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.