নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশু বান্ধব সমাজ নির্মাণে গণমাধ্যম

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০১

সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের ঠিক পাঁচ দিন আগে নেপালের রাজধানী কাটমান্ডুতে ছোট আকারের আরো একটি শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়েছে। ‘ওয়াদদাদা নিউজ ফর কিডস সামিট-২০১৪’ শিরোনামের এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বের সতেরটি দেশের ৩৬ জন প্রতিনিধি- যাদের প্রায় সকলেই টেলিভিশনের সাংবাদিক, টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাতা অথবা গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ। গণমাধ্যমে শিশুদের জন্য পরিবেশিত সংবাদ এবং গণমাধ্যমে শিশুদের উপস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বিস্তর আলাপ আলোচনা, কর্মশালা এবং ’কাটমা-ু ঘোষণা’ নামে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও নেপালের পত্র পত্রিকায় এর তেমন কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। তবে নেপাালের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল নেপাল টেলিভিশন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সংবাদ গুরুত্বের সাথে প্রচার করেছে, তার কারণ হয়তো নেপালের তথ্য মন্ত্রী ড. মিনেন্দ্র রিজাল ছিলেন এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি।

বাংলাদেশে গণমাধ্যম, বিশেষ করে সরকারের মুখপাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সমাজের নানামুখি ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে এসেছে এবং এখনো রাখছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শিশু অধিকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক শিশুদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে প্রায় সকল মাধ্যমেই। তারপরেও নির্দ্বিধায় বলা যায় অনেক সময় এই প্রধান দুটি বিষয়সহ শিশু অধিকারের অন্য সকল বিষয়ে মিডিয়ার তৎপরতা কেবল মাত্র দিবস ভিত্তিক। জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষিত কোনো দিবসকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় শিশুদের জন্য সংবাদ। অন্য সময় অপহরণ, খুন, ধর্ষণের মতো কিছু স্পর্শকাতর বিষয় অথবা সড়ক দুর্ঘটনা বা পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর খবর ছাড়া পত্রিকার পাতায় এবং বেতার টেলিভিশনের সংবাদেও শিশুদের বিষয় তেমন একটা স্থান পায় না।

ইউনিসেফ পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে গণমাধ্যমে শিশুদের অংশগ্রহণ মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। টেলিভিশনগুলোতে বিনোদন এবং শিক্ষামূলক কিছু অনুষ্ঠানে শিশুদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে শিশুরা তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেদের মতামত তুলে ধরার সুযোগ প্রায় কখনোই পায় না। গবেষণায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত এবং টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদে শিশুদের উপস্থিতি শতকরা ৩ ভাগ বা তারচেয়েও কম।
শিশুদের জন্য বা শিশুদের বিষয় সম্বলিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এ সব খবর বা তথ্য প্রায়শ অপরিকল্পিত এবং তাৎক্ষণিক কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে পরিবেশিত। সাধারণত কোনো গবেষণা বা গভীর অনুসন্ধান ছাড়াই এ সব প্রতিবেদন প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়ে থাকে। ভারসাম্যহীনতা ছাড়াও প্রতিবেদন ও পরিবেশিত সংবাদের আরো একটি বড় দুর্বলতা বিষয় বৈচিত্র্যের অভাব। অথচ চারিদিকে একটু চোখ মেলে তাকালেই রাজনৈতিক সামাজিক ও পারিবারিক পর্যায়ে শিশু অধিকার লঙ্ঘন ও শিশু নির্যাতনসহ যে ব্যাপক অব্যবস্থা ও অসামঞ্জস্য দেখা যায় পত্রিকার পাঠক ও টেলিভিশন দর্শকের কাছে তার সামান্য অংশই তুলে ধরা হয়। অন্যদিকে, শুধুমাত্র নিরপেক্ষতা ও সততার সাথে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেই গণমাধ্যমগুলোর তাদের দায়িত্ব শেষ করতে চাইলে তা কেবলই বড়দের চোখে দেখা ছোটদের বিষয় হয়ে প্রতিকারহীন প্রচারণার আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। শিশুদের সাথে সম্পৃক্ত ঘটনা বা পরিস্থিতিতে নিরেট সংবাদের পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি এবং সরকার ও সমাজের নেতৃস্থানীয় মানুষের মতামত ও প্রতিক্রিয়া একটি ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছাবার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

শিশু অধিকারের বিষয় নিয়ে জনমত সৃষ্টির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় এবং বাণিজ্যিক টেলিভিশনগুলোর উচ্চমান সম্পন্ন আলাপ আলোচনা কিংবা পেশাদার প্রচার প্রচারণার ব্যাপারে খুব বেশি আশাবাদী না হয়ে বলা যায়, ছোটদের নিজস্ব ভাবনা থেকে উৎসারিত বিষয়সমূহ নিয়ে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে যুক্ত করে ‘ইর্ন্ট্যাাকটিভ মিডিয়া’, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং শিশুদের জন্য সংবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিইটউট ফর ইয়্যুথ এ্যান্ড এডুকেশনাল টেলিভিশন পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে পেশাদরদের সাংবাদিকের পরিকল্পনায় অথবা বড়দের ইচ্ছে মতো বিষয় নির্বাচন ও পরিবেশনার চেয়ে শিশুদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ দর্শকের সামনে খুলে দিতে পারে শিশু অধিকারের যেকোনো বিষয় সম্পর্কে নতুন ভাবনার দিগন্ত।

ছোটদের মনোজগতে ক্রিয়াশীল যেকোনো তথ্য, সংবাদ, কাহিনি ও বিনোদন শিশু কিশোরদের ভবিষ্যত গঠনে অত্যন্ত জরুরি। একটি শক্তিশালী শিশুবান্ধব গণমাধ্যমের নিয়মিত পরিবেশনার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠতে পারে জীবন ও জগত সম্পর্কে শিশুদের ধারনা, মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গী। কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সম্পর্কে শিশুদের সংবাদ, সম্পর্কিত তথ্য উপাত্তসহ সংবাদ বিশ্লেষণ এবং শিশুদের মতামত পাল্টে দিতে পারে সহপাঠিনী সম্পর্কে একজন কিশোরের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গী। এভাবে মেয়ে শিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, নারীর প্রতি সহিংসতা, ও ধর্ম বর্ণ জাতি গোষ্ঠি নির্বিশেষে সকল শিশুর প্রতি সহমর্মিতার ক্ষেত্র সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারে শিশুদের নিজস্ব চিন্তা চেতনা সমৃদ্ধ সংবাদ। একই সাথে শিশুদের সম্পৃক্ত করে সংবাদ সংগ্রহ, প্রতিবেদন তৈরি ও টেলিভিশন মাধ্যমে প্রচার ভবিষ্যতের সংবাদ কর্মী ও সাংবাদিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। নতুন প্রজন্মের এই সাংবাদিকেরা হবে মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, অসাম্প্রদায়িক,ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠিসহ সমাজের পিছিয়েপড়া মানুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে সরব এবং সকল অন্যায় ও অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।

বাংলাদেশের মতো একটি দেশ যেখানে বিপুল সংখ্যক শিশু এখনো স্কুলে শিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত, যেখানে অসংখ্য শিশু কিশোর ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত হতে বাধ্য হচ্ছে, যেখানে শিশু পাচার শিশু অপহরণের মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ, যেখানে মা বাবার নিম্ন আয়ের সুযোগে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে নানা ধরণের রাজনৈতিক প্রচার প্রচারণা ও অপরাধ মূলক কাজে, সেখানে এসব অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে শিশুদের নিজস্ব কণ্ঠস্বর এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। অবশ্যই যারা আমাদের ভবিষ্যত এবং আগামীর বাংলাদেশ তথা সবচেয়ে আগে শিশুদের কথা ভাবেন তাদের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া শিশুদের দাবীগুলো তাদের মতো করে তুলে ধরা এবং সেসব বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আগামীর শিশু-বান্ধব সমাজ বিনির্মাণ কখনোই সম্ভব নয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: একটি গুরত্বপূর্ন বিষয়ে লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার লেখাটি ভালো লেগেছে। কিছুক্ষন পরে আলোচনার জন্য আবার ফিরে আসছি।

২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬

নাহিদ হাকিম বলেছেন: াপনার লেখাটি ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.