নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৈশাচিকতা নয় শিশুদের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী চাই

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৫

শীতের সকাল। একদল ছেলেমেয়ে ইউনিফর্ম পরে বইপত্রের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে স্কুলে এসেছিল। তাদের কেউ কেউ নাশতা না করেই সু্কলের পথ ধরেছিল। মায়েরা আদর মিশ্রিত অভিযোগের সঙ্গে ছোট্ট টিফিন বক্সে করে ব্যাগে ভরে দিয়েছিল নিজের হাতে তৈরি খাবার। শিক্ষার্থীদের মা-বাবার পেশা, সামাজিক অবস্থান ও সামরিক-বেসামরিক পরিচয়ভেদে হয়তো পরস্পরের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য ছিল। তবে তাদের অভিন্ন পরিচয়, তারা প্রত্যেকেই ছিল শিশু এবং সবার চোখে এক বিশাল অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্ন ছিল। আমরা জানি না, এই স্বপ্ন দেখা শিশু-কিশোরদের কারো কারো মধ্যে হয়তো এমন সম্ভাবনা লুকিয়ে ছিল, যা পাকিস্তান নামের ব্যর্থ রাষ্ট্রটিকে অন্ধকারের অতল গহ্বর থেকে টেনে তুলতে ভূমিকা রাখতে পারত। কিন্তু টিফিন পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে, এমনকি ক্লাসের নিয়মিত পড়াশোনা শুরু হওয়ার আগেই ধর্মান্ধ হত্যাকারীর দল দেয়াল টপকে ঢুকে পড়েছিল স্কুলের চত্বরে। তাদের নির্মম আগ্নেয়াস্ত্র সব স্বপ্ন ও সম্ভাবনা শেষ করে দিয়ে মেতে উঠেছিল শিশুহত্যার উৎসবে।

সন্তানহারা মা-বাবার আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের বাতাস আর শোকে-বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে বিবেকবান বিশ্ব। ঘটনার দিন বিকেলে আমাদের বন্ধু চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার তনুজা চতুর্বেদী মুম্বাই থেকে লিখেছেন, 'তারা চেচনিয়ায় সাড়ে তিনশ শিশুকে হত্যা করেছে/পেশোয়ারে তারা উপড়ে ফেলেছে একশ সাঁইত্রিশটি ফুলগাছ/নিষ্ঠুরভাবে/আর কখনোই ফুটে উঠবে না/বাঁচার আনন্দে হেসে উঠবে না...'

অন্যদিকে তেহরিক-ই-তালেবানের বিবেকবর্জিত নেতারা সদম্ভে ঘোষণা করেছে, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হামলার প্রতিশোধ নিতেই চালানো হয়েছে এ হামলা।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পাকিস্তানিদের সহযোগী দালাল-রাজাকার-আলবদরসহ যেসব বিশ্বাসঘাতক বাঙালি ও অবাঙালি মুসলমান দেশের অভ্যন্তরে থেকে গিয়েছিল তাদের কখনোই বাংলাদেশের মানুষের প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়নি। বরং রাজাকার-আলবদরদের শিশুসন্তানরা বাংলাদেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠে, বাংলাদেশের খাদ্য-পানীয়, চর্ব-চোষ্যে পরিপুষ্টি লাভ করে, বাংলাদেশের স্কুল-কলেজে শিক্ষা লাভ করে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে, একের পর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এ দেশের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশের মানুষ যদি বিবেকহীন প্রতিশোধের উন্মত্ততায় পরিচালিত হতো তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায়, যে ৯৩ হাজার পাকিস্তানির নাকে দড়ি পরানো হয়েছিল, তার একটিও শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারত না। এখানেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাঙালির ক্ষমা ও ধৈর্যের মহত্ত্বের বিপরীতে পাকিস্তানি প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোবৃত্তির পরিচয়। এ কারণেই বাঙালির কবি দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করতে পারেন, 'এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি...।'

কবির কাঙ্ক্ষিত শিশুদের জন্য বাসযোগ্য সেই পৃথিবী ক্রমেই দূরবর্তী স্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। গত দুই দশকে দুনিয়ার অনেক দেশেই শিশুদের ওপর নৃশংসতার অনেক ঘটনা ঘটেছে। তবে সেসব নৃশংস ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে পেশোয়ার হত্যাকাণ্ড। এখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধের পাশাপাশি বড় হয়ে উঠেছে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী চেতনা। হত্যাযজ্ঞ শেষে বেঁচে যাওয়া একাধিক ছাত্রছাত্রীর বর্ণনায় জানা গেছে, গুলি চালানোর আগে প্রতিবারই এই ধর্মান্ধের দল 'আল্লাহু আকবার' ধ্বনি দিয়ে তাদের পৈশাচিকতা আড়াল করে ধর্মীয় বোধে উজ্জীবিত হওয়ার চেষ্টা করেছে।

আমাদের একমাত্র পৃথিবীকে শিশুদের বাসযোগ্য করে তোলার পূর্বশর্ত হিসেবে সুকান্ত ভট্টাচার্যই লিখেছেন, 'প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল।' এ মুহূর্তে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে বিশ্বের সব বিবেকবান, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে যে যার অবস্থান থেকে জঞ্জাল সরানোর কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। ধর্মন্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ও জাতিগত বিদ্বেষের মতো জঞ্জাল ও ধর্মের নামে যেকোনো ধরনের কূপমণ্ডূকতা ও পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সম্মিলিত বৈশ্বিক প্রতিরোধ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করে পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের আছরমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান, জিহাদের নামে বিভ্রান্তি ছড়ানো জঙ্গিবাদ এবং নারীশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের বিরোধী শক্তিসহ সব ধরনের অশুভ চক্রান্ত সমূলে বিনাশ করা সম্ভব না হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও শিশুহত্যার মতো তালেবান নৈরাজ্য ঘটলে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৪

ভরকেন্দ্র বলেছেন: ভালো লাগলো....।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৮

ফরিদুর রহমান বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ!

২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬

সাঈফ শেরিফ বলেছেন: এর জন্য ধর্মকে নিষিদ্ধ করতে হবে

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৫

ফরিদুর রহমান বলেছেন: আপনার সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। এ জন্য ধর্মকে নয়, ধর্মের নামে যারা সাম্প্রদায়িকতা বা জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করছে, নিষিদ্ধ করতে হবে তাদের তৎপরতা। জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে ইসলামের নামে হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ চালিয়েছে, আর বর্তমানে জামায়ত শিবিরসহ তাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠেছে বিভিন্ন নামের জঙ্গি সংগঠন। অতএব নিষিদ্ধ করতে হবে 'ইসলাম' নামধারী সকল সাম্প্রদায়িক জঙ্গি সংগঠন।

৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৮

আমিনুর রহমান বলেছেন:




ভালো লিখেছেন।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৬

ফরিদুর রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

৪| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪১

নিও ০০৭ বলেছেন: সাঈফ শেরিফ বলেছেন: এর জন্য ধর্মকে নিষিদ্ধ করতে হবে

জনাব সাঈফ শেরিফ এজন্য ধর্মকে কেন নিষিদ্ধ করতে হবে? পৃথিবীর কোনো ধর্মই জঙ্গীবাদ সমর্থন করেনা।

আপনার মত সাধারণ মানুষদের ধর্মের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার জন্যই ধর্মীয় ছদ্ববেশধারী কিছু নরপশু এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। যেন তার দায়ভার গিয়ে পড়ে ধর্মের উপর।

কোনো প্রকৃত ধার্মিক ব্যাক্তির দ্বারা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড হতে পারে না।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৭

ফরিদুর রহমান বলেছেন: আপনার বক্তব্যের সাথে একমত। ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.