নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন কারখানা

uব্লগিং করলে নাকি জাতে উঠা যায় !জাতে ওঠার তীব্র আকুলতায়

কাকপাখী

Better to reign in Hell than to serve in Heaven"

কাকপাখী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি প্রেম ও একটি ঘামের গল্প

২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৪৭







প্রেমের গল্প :



শহুরে বৃষ্টির তেমন আবেদন নেই ।ইট আর কক্রিটে আস্তরিত সুউচ্চ অট্রালিকা যেখানে মেঘ সমেত সমস্ত আকাশ ঢেকে ফেলে, চার দেয়ালে বন্দী কবির সেখানে কবিত্ব জাগে না ।ঠান্ডা বাতাসের সাথে ঝিরঝিরে বৃষ্টি ষোড়শীর মনে নি:সঙ্গতার ঝড় তোলে না,হাত দিয়ে বৃষ্টির ফোটা ছুতে গেলে কিশোরীর ঠান্ডা লেগে যায় ।শহুরে বৃষ্টির কাদাপানি থাকে না,উচ্ছল কৈশোরের চঞ্চল দুরন্তপনা নেই ।আছে কেবল নগরায়নের প্রমান বয়ে বেড়ান উচ্ছিষ্ট কালো বর্জ্য আর ব্যাস্ত মানুষের একখন্ড শীতল অবসর। শহুরে বৃষ্টি নগর জীবনে কেবল ভুনা খিচুরির এক উপলক্ষ মাত্র ।প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিমোহিত যুবকের হাতের কদম ফুলটি এখানে মুখ্য নয় ।



মুগ্ধর সাথে রিয়ার পরিচয় এমনই এক বর্ষার কালো সন্ধ্যায় ।বৃষ্টির হাত থেকে বাচতে দুজনই আশ্রয় নিয়েছিল রাস্তার পাশের চায়ের টং ঘরে ।শত সহস্র ছিদ্র ওয়ালা ছাউনি থেকে অবিরত ধারায় ঝরা বৃষ্টির ফোটা গুলো সামান্য হাত দিয়ে ঠেকানোর ব্যার্থ চেষ্টার দৃশ্যটি ছিল চমতকার ।বিদ্যুত ছিল না,নিভু নিভু মোমবাতির নিয়ন আলোতে রিয়ার মুখ খানি দেখতে ঠিক যেন ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা কোন সৌন্দর্যের দেবী ।মুগ্ধ রিয়াকে এখনও দেবী বলে ডাকে । আজও সেই বৃষ্টিতে মুগ্ধ ঘর ছেড়ে বের হল ।



রিয়া খুব করে চাইছে আজ যেন কোন মতেই তার দেরী না হয় ।গত চার বছরে এমন একদিনও হয়নি যেদিন রিয়া মুগ্ধর আগে গিয়ে পৌছেছে ।সব সময় দেখা যেত মুগ্ধ তার আগে এসে ৪/৫ টি সিগারেট শেষ করে বসে আছে ।মাঝে মাঝে রিয়া বিরক্ত হতো ।মুখে কৃত্তিম রাগ ফুটিয়ে বলত “তোমার কি কোন কাজ টাজ নেই,সব সময় আগে এসে বসে থাক কেন ?মুগ্ধর সেই প্রাত্যহিক উত্তর ছিল “ এই মুহুর্তে তোমার থেকে গুরুত্বপুর্ন কোন কাজ আমার নেই ।কপোট অভিমান দেখিয়ে রিয়া বলতো “পুরুষ মানুষ হয়েছ,কাজ থাকবে না কেন?



আজও রিয়া মুগ্ধর আগে পৌছুতে পারেনি ।বিয়ে বাড়ীতে অনেকের চোখ ফাকি দিয়ে আসতে হয়েছে বলেই দেরী হয়েছে ।বলার মতো যৌক্তিক কারন ছিল কিন্তু দেবার কোন প্রয়োজন ছিল না ।আজ রিয়ার বিয়ে ।হলুদের মেহেদী এখনও হাতে দগদগে স্পষ্ট ।বৃষ্টির পানি তা ধুয়ে দিতে পারেনি ।



: মুগ্ধ ভালো আছো ?

-হমম

:কিছু বলবে আমাকে?

-না

:কিছুই বলার নেই তোমার ?

-আছে !

:কি ?

- তোমাকে ভালোবাসি

:আর কিছু ?

-না

:তোমার ব্যাস্ততা কমেছে ?

-না,আমি অনেক ব্যাস্ত ।

:তোমার হাত দুটো দেবে আমাকে এক মুহুর্তের জন্য

-না,তোমার মেহেদী পড়া হাতে আমাকে ছোবে না ।

:যাই তাহলে,ভালো থেকো ।



রিয়া বৃষ্টির ভিতর হাটতে থাকে ।তার চোখের পানি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে মুছে একাকার । তীব্র অভিমান বুকে নিয়ে মুগ্ধ দাড়িয়ে আছে ।তার চোখে অশ্রু নেই ।সব কান্না চোখ দিয়ে ঝড়ে না,হৃদয়ে কান পেতে শুনতে হয় ।আজ থেকে মুগ্ধর আর কোন ব্যাস্ততা নেই ।অফুরন্ত অবসর ।চায়ের টং ঘরের বিদ্যুত চলে গেছে ।নিভু নিভু মোমবাতির আলোতে সে আজ কোন দেবী নয়, এক অনিশ্চিত ভবিস্যত দেখতে পায় ।



একটি ঘামের গল্প :





জাবেদ আলী ষাটোর্ধ বৃদ্ধ ।স্ত্রী সহ বসবাস করেন রামপুরা বস্তির এক রুমের ছোট্ট কামরায় ।জানাল বিহীন এক দরজার ঘরে আলো বাতাসের মতো সুখ সাচ্ছন্দও কখনও প্রবেশ করেনি । স্ত্রী মোমেনা বেগম, প্যারালাইজড, চোখে ছানি পড়ে দু হাত দুরের জিনিসও অষ্পষ্ট দেখেন ।দীর্ঘ ৪২ বছরের পরিচিত মানুষটাকে এক গ্লাস পানি মুখে তুলে দেবারও সামর্থ হয়ে ওঠে না ।বৃদ্ধ স্বামীর ঘরে শুয়ে বসে মৃত্যু কামনা করেই তার দিন কাটে ।



আকাশ ছোয়ার স্পর্ধায় বেড়ে ওঠা সুরম্য অট্টালিকার পাশে বস্তিটা যেমন চাদের কলঙ্কের মতো লাগে, শহুরে লাল নীল চাকচিক্যের জীবনের পাশে তাদের যাপিত জীবনটাও বড্ড বেমানান ।যমুনার ভাঙ্গনে স্বপ্নের সাথে বসত ভিটেও হারিয়েছে । ৩০ বছর আগে রাজধানীর ব্যাস্ততায় মিশে গেছেন ।এই ত্রিশ বছরে কোলের ছেলে দুটো বড় হয়ে অমানুষ হয়েছে ।তাদের অমানুষ করতে তিনি নিজে ছোট থেকে আরো ছোট হয়ে এখন কুজো হয়ে কঙ্কালসার হাতে রিকসার হ্যান্ডেল ধরেন ।হাড়ের উপর লেপটে থাকা চামড়া সমেত জীর্ন শীর্ন পায়ে জোর করে প্যাডেল চাপেন ।তীব্র গরমে কখনও কখনও হা করে দুষিত কার্বন টানেন ।বৃক্ষহীন ঢাকার সুউচ্চ অট্রালিকার ছায়ায় গামছা বিছিয়ে জিরিয়ে নেন ।



জাবেদ আলীর রিকসা ডাব বিক্রেতার ভ্যানের পাশে এসে দাড়ায় ।তৃষ্মার্ত চোখে কচি সবুজ ডাব গুলোর দিকে তাকিয়ে আপনাতেই মুখ হা হয়ে আসে ।মানুষের ফেলে দেয়া খোলস গুলোর দিকে তাকায় ।সেই খোলসের থেকে উচ্ছিষ্ট দু এক ফোটা জল পিচ ঢালা তপ্ত রাস্তা শুষে নেয় ।কপালের ঘাম আর চোখের জল মিলে অবহেলায় বেড়ে ওঠা দীর্ঘ দাড়ি লেপ্টে থাকে ।বুকের সব সাহস এক করে বিক্রেতার কাছে জানতে চায় একটা ডাবের দাম কত ?ক্রেতা হিসাবে জাবেদ আলী মোটেই উপযুক্ত নয় সেটা বিক্রেতা তার মলিন মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছে ।অবহেলা মিশ্রিত স্বরে বলে ৫০ টেকা !দাম শুনে জাবেদ আলী আতকে ওঠে ।অসুস্থ স্ত্রীর মুখটা ভেসে ওঠে ।কাশের ঔষধটা আজকে নিতেই হবে ।দীর্ঘ ত্রিশ বছরের হাড় ভাঙ্গা অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও তিনি একজন ডাবের ক্রেতা হতে পারলেন না । সারা জীবনের জমিয়ে রাখা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার রিকসার প্যাডেলে পা চালায় ।ডাব বিক্রেতার ভ্যানের সাথে তার রিকসার দুরত্ব বাড়তে থাকে ।শহরের সাথে তারও ।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:২২

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
আসলেই অনেক পাঠক বঞ্চিত হল মুগ্ধকর গল্পদ্বয় পাঠ না করে ৷ অনেক ভাল লাগল খন্ডিত নয় পুরো অংশ জুড়েই ৷ হয়ত অনেকের নজর এড়িয়ে গেল ৷

১৷ সব কান্না চোখ দিয়ে ঝড়ে না,হৃদয়ে কান পেতে শুনতে হয় ।

২৷ দীর্ঘ ত্রিশ বছরের হাড় ভাঙ্গা অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও তিনি একজন ডাবের ক্রেতা হতে পারলেন না



৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৫৫

কাকপাখী বলেছেন: হয়ত লেখা গল্পটি নজর এড়িয়ে গেল তবে বাস্তব গল্পগুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় ।আশেপাশেই তৈরি হচ্ছে এমন হাজারো গল্পের প্লট ।ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য ।

২| ৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:২৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাইরে ও ভাই কি লিখছেন ? আপনার এই জীবন বোধ খুব নাড়া দেয় মাঝে মাঝে।

৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৫৭

কাকপাখী বলেছেন: দুর্ভাগ্যজনক ভবে এই জীবন বোধ গুলো কেবল আমাদের বিবেক নাড়া দিয়েই হারিয়ে যায় ।কোন পরিবর্তন আনে না ।

ধন্যবাদ ভাই ।

৩| ৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৫৬

নাহিদ শামস্‌ ইমু বলেছেন: অসাধারণ লেখনী!
দু'টো ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ভিন্ন গল্প। তবু অনেকভাবেই মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দু'টো গল্পই কিন্তু শেষপর্যন্ত ভালোবাসার গল্প। জাবেদ আলী ডাবের ক্রেতা হতে পারেন নি। যখন ভীষণ ডাব খেতে ইচ্ছে হল, তখন তার দাম শুনেই নিজের স্ত্রীর মুখটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে জাভেদ আলীর। অসুস্থ স্ত্রী। ওষুধ কিনতে হবে তার জন্য। হয়তো তিনি সেই টাকাটা বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন। নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসেন বলেই...
তবে মুগ্ধের কোন কাজ নেই, কিংবা বলা চলে কোন ব্যস্ততা নেই। অন্যদিকে জাভেদ আলীর ব্যস্ততা অসীম। দীর্ঘ ত্রিশ বছরের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম তাঁর।
সত্যিই চমৎকার! কিছু জায়গায় বানানগত ভুলগুলো একটু শুধরে নিলে আরো চমৎকার হয়ে উঠবে!
শুভকামনা রইলো। প্রিয়তে নিলাম...

৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৫৯

কাকপাখী বলেছেন: এত সুন্দর বিশ্লেষনের জন্য ধন্যবাদ ।বানানগত ভুল গুলো অচিরেই শুধরে নিব আশা করি ।দোয়া করবেন ।

কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

৪| ৩০ শে মে, ২০১৪ ভোর ৬:১৫

মিনুল বলেছেন: এই প্রেমের গল্পে সমাজ, বাস্তবতা সবকিছুই স্পষ্ট। অনেক ভালো লাগলো।

৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:০১

কাকপাখী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

৫| ৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:৫০

সকাল হাসান বলেছেন: ঘামের গল্প গুলো সত্যিই খুব হৃদয়স্পর্শী গল্প।

ভুলভ্রান্তি কিছু রয়েছে গল্পে - আশা করি পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যাবে তা।

++

৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:০৩

কাকপাখী বলেছেন: এই ক্ষুদ্র মস্তিস্কে গল্প লেখার সাহস করেছি কিছু ভুল ভ্রান্তি হয়েছে ।আশা করি পরবর্তীতে শুধরে নিতে পারব ।

ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।

৬| ৩০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭

ডি মুন বলেছেন: শহুরে বৃষ্টি নগর জীবনে কেবল ভুনা খিচুরির এক উপলক্ষ মাত্র ।প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিমোহিত যুবকের হাতের কদম ফুলটি এখানে মুখ্য নয় ।

৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:০৪

কাকপাখী বলেছেন: কদম ফুলটি আসলেই মুখ্য নয় ।


ধন্যবাদ :)

৭| ৩০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৫৯

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: হৃদয়গ্রাহী, চমৎকার +

৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:০৫

কাকপাখী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

৮| ৩০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৫২

আহমেদ জী এস বলেছেন: কাকপাখী ,




ছোট গল্প, গতানুগতিক কাহিনী । কিন্তু সবল লেখনীর কারনে তা ই যেন অনন্য হয়ে উঠেছে ।

দুটো গল্পেই যে ভাব, তা আপনার এই লাইনগুলোর মতোই সত্য ..শহুরে বৃষ্টির কাদাপানি থাকে না,উচ্ছল কৈশোরের চঞ্চল দুরন্তপনা নেই ।আছে কেবল নগরায়নের প্রমান বয়ে বেড়ান উচ্ছিষ্ট কালো বর্জ্য.......

আর সে কারনেই মানুষের মাঝে আর মানুষ নামের প্রানীটি থাকেনা । সকল অনুভূতি কেবল শেষ গল্পের শেষটুকুর মতো ......ভ্যানের সাথে তার রিকসার দুরত্ব বাড়তে থাকে । শহরের সাথে তারও .... যেন মানুষের সাথে মানুষের ।

শুভেচ্ছান্তে ।

৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:০৭

কাকপাখী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

৯| ৩০ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: বাস্তবতা ছোঁয়ানো গল্প ভাল লাগলো -----অনেক বেশি ভাল লাগলো

৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:০৮

কাকপাখী বলেছেন: )

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.