নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(বলা যায়, এই গল্পটার একটা প্রিকুয়াল আছে। আগ্রহীরা পড়তে পারেন এখান থেকে । তবে না পড়লেও এই গল্পটা বুঝতে কোন অসুবিধা হবে না। )
১
আয়নার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজেকে আর চিনতে পারে না মল্লিকা । অকস্মাত আয়নায় এ কোন অচেনা অবয়ব? সারাটাদিন ঠোঁটের বামপাশে ভালোমানুষী হাসিটা ঝুলিয়ে রেখে, ‘ভালো আছি’ উপটান মেখে এই এখন সাদামাটা শুন্য রাতে মুখোশের পর মুখোশ, প্লাস্টারের পর প্লাস্টার তুলে দ্যাখে- বিস্বাদ এক বিষাদে ডুবে যাচ্ছে নিরন্তর। কিংবা হয়তো যাচ্ছে না, আজকাল কেন জানি অনুভূতিগুলো খুব ঘোলাটে ঠেকে, গুবলেট পেকে যায় মাঝে মাঝেই, কখন কেমন বোধ হচ্ছে সে ব্যাপারে বোধ থাকে না। মল্লিকা বোঝে- বেশ অনেকগুলো অবান্তর অবাস্তব স্বপ্ন দেখে ফেলেছিল পারিপার্শ্বিক নিয়ে, পারিপার্শ্বিকের মানুষগুলোকে নিয়ে, অট্টালিকাদের ছায়া নিয়ে। তাদের কোনটাই সত্য হয়নি।
টেবিলের বাম পাশে বিছানা, বিছানার বাম পাশে কোলবালিশ, মাথার কাছে বালিশের কোল ঘেষে এলোমেলো কয়েকটা বই, কয়েক ফোঁটা চোখের জলও আছে কোথাও কোথাও, পাশে একটা টেডি বিয়ার-ইশতিয়াকের দেয়া; মুখস্ত প্লেসিং, স্থবির। কি যে অন্যমনস্ক বোধহীনতার ভূত! তাকিয়ে থেকে থেকে কোনকিছুই আর আপন মনে হয় না মল্লিকার। মনে হয়, অন্য কোন মল্লিকার জীবন; সে দর্শকের মত দেখে যাচ্ছে কেবল। এই বিছানা, এই বালিশ, দর্পণের উল্টোপাশের মানুষটা, কোনটাই আসলে সে না, অন্য কেউ, প্রচন্ড অচেনা অবাস্তব দূরের মনে হয় সবকিছু। জানালার ওপারে কিছু অন্ধকার, দূরে কোথাও কয়েকটা কুকুর কাঁদছে।
প্রতিবিম্বে বিস্ময়, হতাশা, এবং এই যে নিজস্বতা হারিয়ে ফেলা বিভ্রম, সব মিলিয়ে কেমন শূন্য শাদা একটা অনুভূতি করোটিতে মেখে এইসব নিঃশব্দ ভূতুড়ে রাতে মল্লিকার মনে হয়- সে একইসাথে ভালো আছে এবং নেই। এবং নিশ্চিত জানে -ইশতিয়াক ভালো আছে, আজহার ভালো নেই।
২
যেখানেই যাও তুমি, যেখানেই যাও
সঙ্গে যায় আরো একজন;
যদিও অদূরে তবু তার দূরত্ব ভীষণ।
যেকোন অনির্ধারিত নির্জনতম অন্ধকারেও মল্লিকা তার তৃতীয় চোখ দিয়ে দিব্য দ্যাখে-আজহার তাকিয়ে আছে তার দিকে। আজহার তার কথা ভাবছে। আজহারের দৃষ্টি শীতল, পলক পড়ে না সচরাসচর। যখন পড়ে, তখন মনে হয় চোখের পাতাগুলো রাজ্যের ভার বয়ে এসে ক্লান্ত, কোমলভাবে লেপ্টে যায় চোখের সাথে। আজহার নিজেকে ধ্বংস করে আনন্দ পায়, আজহার একই সঙ্গে প্রজাপতিরঙ ফুল এবং ব্লাডশেড নিয়ে স্বপ্ন দ্যাখে। আজহারকে দেখলে মাঝে মাঝে মনে হয়, সে এখনো আশি সালেই পড়ে আছে, একবিংশ শতাব্দীর সাথে মেলালে মনে হয়- যুবকটি নব্বইয়ের মাঝামাঝিতেই মারা গিয়েছিলো, একটা লাশ কেবল টেনে বেড়াচ্ছে।
বিপরীতে ইশতিয়াকের শাদা মনন, সাবলীল জীবন, সিল্কের মত মোলায়েম ভবিষ্যত; ইশতিয়াক স্মুথ। মল্লিকা তার কাছে আজন্ম অধিকার, তার নিজস্ব এসেট। টেবিল থেকে নিজের অজান্তেই খেয়ালবশে মুঠোফোন হাতে তোলার মত করে সে মল্লিকার হাত মুঠোয় পোরে। নিজের হাতগুলোর দিকে তাকিয়ে মল্লিকা তাদের স্বাধীনতা নিয়ে ভাবে, সম্ভবত দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে ওদের, কার অধীনে যে কখন থাকে।
মল্লিকা জানে-ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তিত্বের পাঞ্জায় ইশতিয়াকের সাথে প্রতিযোগিতায় নামার মত যোগ্যতা আজহারের নেই। তবু মাঝে মাঝে আজহারের ব্যক্তিগত সমুদ্রটার কথা জানতে ইচ্ছে করে, জানতে ইচ্ছে করে হঠাত হঠাত আর্কটিক টার্ন এর মত উড়ে গিয়ে কতটুকু অরণ্য সে ঘুরে এলো।
আয়নার সামনে দাঁড়ালে আজকাল প্রায়ই নিজেকে আর চিনতে পারে না মল্লিকা। তখন তার প্রশ্ন জাগে, সে ইশতিয়াককেই বা কতটুকু চেনে, কতটুকুই বা চেনে আজহারকে।
৩
যন্ত্র শহর, সশব্দ যান, একটা সকাল।
সকাল পেরোলে হলুদ আলো, কয়েকটা কাক, একটা দুপুর।
বিকল বিকেল, ছায়া।
বিমর্ষ সন্ধ্যা, মায়া।
ক্যানাইনে হেমলক সলিটায়ার, ছুটে আসছে কালো জাগুয়ার, একটা রাত।
দিন যায়;
লিপ গ্লসে আটকে পড়ে থাকে দীর্ঘশ্বাস, মল্লিকা একই সাথে ভালো আছে এবং নেই। ইশতিয়াকের ভালোবাসার শেকলে বাঁধা আছে মল্লিকার সময়। আশ্চর্য এই, ইশতিয়াকের সঙ্গ আজকাল তেমন আর ভালো লাগে না। রুটিনের চক্রে ঘুরছে গোলাপ, রক্তজবা, টেডি বিয়ার সব। মাঝে মাঝেই নিজেকে খুব বন্দী মনে হয়, বড়সর একটা খাঁচায় আটকে গ্যাছে আকাশী বাজরিগার। কবিতার বইয়ের পৃষ্ঠা খোলা পড়ে থাকে – “কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।
কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না...”
সপ্তাহ যায়, মাস যায়, অনেকগুলো ঋতু পেরিয়ে আসে বসন্ত। গাছের ডালে আর শহরের পীচে তুলির আঁচর, বাসন্তী রঙ। সেই বসন্তের কোন এক বিকেলে মল্লিকা একা হেঁটে কোথাও যায়। আজহার আসছে, টের পায়- স্যান্ডেল ঘষে ঘষে আজহার এমনভাবে হাঁটে আজহার যেনো মনে হয় হাতির মত দু’টো পা তুলতে হয় তাকে।
মল্লিকা শুনতে পায় খুব কাছে এসে আজহার খুব নরম করে ডাকে- “এই মল্লিকা!!” মল্লিকা পেছন ফেরে- “আরে আজহার যে, কি খবর ?” আজহার কোন জবাব দেয় না; এমনভাবে তাকিয়ে থাকে যেনো চিনতে পারছে না, সম্মোহিত। আজহারের ঠোঁট একটু কাঁপে, কোন শব্দ বের হয় না। মল্লিকা তাগাদা দেয়- “আরে, কি বলবি বল। চুপ হয়ে গেলি কেন ?”
আজহার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে দৃষ্টিটা ওপরের দিকে তাক করলে মল্লিকা দ্যাখে- দীপ্ত, ক্ষীপ্র একটা ভুবনছিল উড়ছে অনির্দিষ্ট উচ্চতায়, নিরাসক্ত, নিস্পৃহ; ডানায় পিছলে যাচ্ছে কয়েকটি রোদের সরলরেখা। পাশে কিছু ছাই মেঘ, মেঘেদের মেলাঙ্কোলি। মল্লিকা অপ্রত্যাশিত হারিয়ে যায় মেঘ ও চিলের দৌড়ের মাঝে।
কিছুক্ষণ পর সম্বিত ফেরে, মনে পড়ে- আয়নার সামনে দাঁড়ালে আজকাল প্রায়ই নিজেকে আর চিনতে পারে না সে। চিনতে পারে না ইশতিয়াক কিংবা আজহার, কাউকেই।
২৮ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: হুম্মম্ম, আপনাকেও।
২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৬
মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লাগলো নিজেকে দেখার আর আত্ম অনুসন্ধানের গল্প । সুন্দর বর্ণনায় মুগ্ধ ।
২৮ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:২১
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই।
ঈদের শুভেচ্ছা জানবেন।
৩| ২৮ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:০৫
শান্তির দেবদূত বলেছেন: কাব্যিক বর্ননা ভালো লেগেছে, যদিও একটু দুর্বোধ্য ছিল। ঈদের শুভেচ্ছা।
২৮ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:২৮
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ শান্তির দেবদূত।
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা।
৪| ২৯ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:৫৭
কিছুটা অসামাজিক বলেছেন: এগুলো ক্ষেত্রে ৩ নাম্বার চলে আসে একদিন হুট করেই। ভাষার ব্যাবহার বেশ সুন্দর লাগলো , আপনাকে ধন্যবাদ, ঈদ মুবারক
২৯ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৫০
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: আরে !! ধন্যবাদ তো আমি দিবো বস !!
ঈদ মোবারক। শুভেচ্ছা
৫| ২৯ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:২২
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: প্রিকুয়াল পড়ে আসি। আপাততঃ ঈদের শুভেচ্ছা নেন
২৯ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:০৩
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: আশা করি নিরাশ হবেন না
ঈদ মোবারক প্রোফেসর
৬| ২৯ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২৪
বৃতি বলেছেন: ভাল লাগলো বেশ।
২৯ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:০৪
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: ধন্যবাদ বৃতি।
ঈদের শুভেচ্ছা
৭| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: একাকী আয়নায় প্রতিবিম্ব খামচে ধরে চিল, মুছে দেয় মেঘেরা। মল্লিকা কাদের দেখে? কী দেখে?
সুন্দর।
৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:০৪
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: মল্লিকা ঘোরের মাঝে আছে। কী যে দ্যাখে !!!
ঈদ মোবারক হাসান ভাই।
৮| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৪৭
একটু স্বপ্ন বলেছেন:
অনেকদিন পর পড়লাম আপনাকে। সুন্দর লিখেছেন।
ভাল হোক
৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:০৬
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: থ্যাঙ্কস ম্যান।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
৯| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৪১
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: চমৎকার!! অনবদ্য!! সেই তাল, ছন্দে নিজেকেই খুঁজে ফেরা। ভুবনচিলের ডানায় পিছলে পড়ে রোদ......................
৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:০৮
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: প্ল্যান ছাড়াই ধুমধাম সিকুয়াল নামায়া দিলাম বস।
থ্যাঙ্কস ফর দা কমপ্লিমেন্ট
১০| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮
শহিদুল ইসলাম বলেছেন: যেখানেই যাও তুমি, যেখানেই যাও
সঙ্গে যায় আরো একজন;
যদিও অদূরে তবু তার দূরত্ব ভীষণ।
আআহ ! বস ! এই সান্ধ্যবিকেলটাকে অনবদ্য করে দিলেন ... একটা বিষণ্ণতা ... একটা ঘোর
যেন সল্ট লেকে ঝরে পরছে দিনের শেষ সূর্য রেখা...
বস আরো গল্প চাই... নিয়মিত
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৫৫
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: হুম্মম, শুধু লেনেকা ধান্ধা !!
আপনার উপ্রে কিঞ্চিত অভিমান খাইসি বস !! আপনার লেখা পড়ার জন্য আর কতো বছর ওয়েট করবো বস !!
ঠিক না, এইসব একদম ঠিক না।
ভালো থাকবেন শহিদুল ইসলাম
১১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৩১
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
বেশ লাগলো।।
০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪৩
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: থ্যাঙ্কস ম্যান
১২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫৮
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: টানাপোড়েন সবসময়ই বড্ড ভোগায় মানুষকে!
আশা করি ঈদ ভালো কেটেছে তোমার
০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪৪
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, পুরো ঈদের দিন প্রায় না খেয়ে ছিলাম।
ক্ষুধাটুকু বাদ দিলে অবশ্য ভালোই কাটসে, অনেক।
শুভেচ্ছা
১৩| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪০
ডানাহীন বলেছেন: আপনার গল্প পড়লেই মনে হয় গল্পের আসলে দরকার নেই ..
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৬
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: আম্মম, প্রশংসাই করেছেন ধরে নিলাম। কিন্তু, গল্পের যদি দরকারই না থাকে তাহলে আর লিখলাম কেনো?
যাই হোক, অনেক ধন্যবাদ ডানাহীন। শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩
ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।