নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি আপনার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি কিন্তু আপনার কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে জীবনও উৎসর্গ করতে পারি”

রুপম হাছান

‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’

রুপম হাছান › বিস্তারিত পোস্টঃ

- অকৃতজ্ঞ মানুষ –

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৯

আবু এন এম ওয়াহিদ ভাইয়ের স্মৃতির ডায়েরী থেকে। ক্যারাবিয়ান আইল্যান্ড সেইন্ট লুশার রডনি বে ভিলেজে কয়েকদিন। দেখতে গেলাম প্রথমবার। সাথে ছিলেন এক বড় ভাই।ঘুরে ফিরে দেখলাম এবং থাকলাম তিন দিন। সেখানে থাকা অবস্থায় যার সাথে সখ্য গড়ে ওঠে তার নাম ডেভিড। হঠাৎ একদিন বিচে বিছিয়ে রাখা চেয়ারে বসে আছে এবং পাশে আমি। কথা হয় দুজনের মধ্যে। সে ছিলো- পায়ে স্যান্ডেল, পরনে হাফ প্যান্ট, খালি গায়ে টাওয়াল জড়ানো। কথার এক পর্যায়ে সে বলল, চলো পানিতে নামি। আমি বললাম না, আমি নামবোনা। তুমি যাও। ডেভিড কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান অধ্যাপক। এদেশে অনেক দিন। এসেছে নর্থ ক্যারোলিনা থেকে। ডেভিডের সাথে মাত্র দুই দিনের পরিচয়। অত্যন্ত বন্ধুবৎসল ভদ্রলোক। ডেভিড সরাসরি গিয়ে পানিতে নামলো এবং আমি ঘণ চ্যাপ্টা পাতার একটি ঝাঁকড়া ছোট্ট শাল গাছের নিচে গিয়ে হেলান দিয়ে বসলাম একটি খালি বিচ চেয়ারে। চেয়ারগুলো হেলিয়ে পুরোদুস্তুর শোয়া যায়। বিচের দুই পাশেই খাড়া উঁচু পাহাড়। এদের প্রাকৃতিক সৌন্দয্য এবং বিচের তপ্ত বালুতে স্বপ্লবসনা অল্প বয়সী তরুন-তরুণীদের প্রাণ চাঞ্চল্য উপভোগ করার মতো।

সামনে সীমাহীন সাগর। দিগন্ত রেখায় আসমান মিশে গেছে দরিয়ার নীল পানিতে। অলস বসে বসে দেখছি। একটার পর একটা ঢেউ তীরে এসে আঁচড়ে পড়ছে। কোনোটার পানি ফুলেফেঁপে অনেকদূর ওপরে ওঠে আবার কোনটা নীচেই থেকে যায়। একই সময়, একই হাওয়া, মধ্যাকর্ষণের টানও ভিন্ন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ঢেউগুলোর শক্তিমত্তায় এই তারতম্য কেনো!? অনেক চিন্তা করেও জবাব পাই নি।

এরই ভেতরে ছোট বড় অসংখ্য নৌকা এলোপাতাড়ি ছোটাছুটি করছে। কোনটা ইঞ্জিনচালিত, কোনোটা চলছে পালের হাওয়ায়। কোনোটা আবার বৈঠা বাওয়া কাঠের নাও। একটু দূরে তাকালে দেখি দু-একটি জেলে নৌকা। দৃষ্টি আরেকটু প্রসারিত করলে বেশ দূরে দেখা যায় ক্রুজ শিপ। মনে হয় যেনো আস্ত বিল্ডিং দাঁড়িয়ে আছে কিংবা পানির ওপর দিয়ে হেঁটে যচ্ছে। গাংচিল গুলো কিচিরমিচির করে উড়োউড়ি করছে। স্মার্ট ফোন বের করে ভাবলাম কয়েকটি ছবি গুলবো এবং কিছুটা ভিডিও করার ও চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না! একে তোআনাড়ি ক্যামেরাম্যান তার ওপর এর ভালো ব্যবহার ও আমি জানি না/অভ্যস্ত নয়! কি আর করার। তম্ময় হয়ে সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া যেনো আমার তেমন আর কাজ ছিলোনা। এমন সময় মূহুর্তে আবিষ্কার করি, আমার বাঁ দিকে বালুতে বসে একটি লোক ছুরি দিয়ে ঝুনো নারিকেল কেটে কেটে পাখির বাসা এবং পাখি বানাচ্ছে। একটু ওপরে তাকিয়ে দেখি, সে তার পণ্যসামগ্রী শাল গাছের চ্যাপ্টা পাতার সাথে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে। তার বানানো পাখি আর পাখির বাসাগুলো বাতাসে দুলছে। দেখতেও বেশ ভালোই লাগছে। তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কি? উত্তরে সে বলল, মাইকেল।

কি জাতের পাখি বানাচ্ছো? –হামিং বার্ড। ঐ মুহুর্তে লোকটি কাজ ফেলে এক দৃষ্টিতে সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। প্রশ্ন করলাম, তুমি কি দেখছো? সে বলল, তুমি যা দেখছো আমিও তাই দেখছি। বললাম সাগর পাড়ে এসে তুমি কি দেখো? কি বোঝ? কি ভাবো? তোমার কি অনুভূতি হয়? মাইকেল বলল, তোমার ধৈর্য আছে? হ্যাঁ। তাহলে শোনবে আমার কথা? বললাম অবশ্যই শোনব।

মাইকেল বলল, আমার পাখির মুখ আছে ঠোঁটও আছে কিন্তু সে ডাকেনা। কিচিরমিচিরও করেনা! আর ঐ যে দেখছো বিশাল সাগর, সীমাহীন মহাসাগর, তার বুকে আছে অফুরন্ত জলরাশি কিন্তু তার তো কোনো মুখ নেই, অথচো একটু খেয়াল করে শোনো, কি ভয়ংকর কানফাটা তার গর্জনের আওয়াজ। সে আরো বলল, আমার পাখির দুটো ডানা আছে কিন্তু সে ওড়েনা, উড়তে পারেনা! আর সামনে চেয়ে দেখো, সাগরের অথৈ নীল পানি তার তো কোনো ডানা নেই, কিন্তু বাষ্প হয়ে সে দিব্যি ওপরে ওঠে যায়। বাতাসে ভেসে বেড়ায় পাখির মতো। চলে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে, দূর-দূরান্তরে! কে তার ঠিকানা রাখে! সময় হলে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির বেশে ঝরে পড়ে পৃথিবীর গায়ে। সিক্ত শীতল করে দেয় উষ্ণ ভূমিকে! ফুলে ফরে ভরে তোলে আমাদের এই মায়াবী পৃথিবীকে।

বললাম, বা! মাইকেল, তুমি তো চমৎকার বলেছো! এর ওপর আর কো কথা চলে না। মাইকেল এখানে থেমে থাকেনি, সে বলেই চললো। বলল, আমার পাখি গান করে না, ওড়তে ও পারে না, তবুও মানুষ তা টাকা দিয়ে কিনে নেয়! আমার ব্যবসা হয়, মুনাফও হয়! এতে আমার সংসার চলে। আর ঐ সাগরের নোনা পানি, যা না থাকলে তো আমরা ডাঙ্গায় মিষ্টি পানি পেতাম না। মানুষ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, গাছপালা, লতাগুল্ম সব মরে ছারখার হয়ে যেতো। অথচো এই সাগর যে তৈরী করল, পানি দিয়ে তার বুক ভরে দিলো, যে তামাম জীবকূল বাঁচিয়ে রাখলো; অনেক মানুষ আছে এর বিনিময়ে তো কিছু দেয় না! জীবনে হয়তো একটি বরও স্মরণ করে না! কালেভদ্রে একটা ধন্যবাদ ও দেয় না! কি হারামি না আমরা মানুষের জাত!? আচ্ছা বলতে পারো, মানুষ কেনো এতো অকৃতজ্ঞ হয়!!?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:০৭

লিট্রিমিসটিক বলেছেন: অকৃতজ্ঞতা বুদ্ধিমত্তার সাইড এফেক্ট। ধন্যবাদ ভাই। পড়ে ভাল লাগল।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭

রুপম হাছান বলেছেন: হা হা হা। আপনি কি আর কম যাচ্ছেন। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.