নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি আপনার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি কিন্তু আপনার কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে জীবনও উৎসর্গ করতে পারি”

রুপম হাছান

‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’

রুপম হাছান › বিস্তারিত পোস্টঃ

- শিক্ষায় সংশ্লিষ্ট হোক হৃতগৌরবের নদীসম্পদ এবং ঘোষণা করা হোক জাতীয় নদী -

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৩

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ কথাটি সামগ্রিক অর্থেই সত্য। সভ্যতার ক্রমবিকাশ, যোগাযোগ ও অর্থনীতির মূল ভিত্তি রচিত হয়েছে নদীকে কেন্দ্র করে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও মূল ভিত্তি নদী নির্ভরতা। আমাদের সাহিত্য, গান, নাটক, চলচ্চিত্রে নানাভাবে উঠে এসেছে নদী প্রসঙ্গ। আজকের এই বাংলাদেশের জম্মলগ্নে 1969 থেকে 1971-এর মার্চ পর্যন্ত শত-সহস্র বাঙ্গালির কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল ‘পদ্মা’ ‘মেঘন’ ‘যমুনা’ তোমরা আমার ঠিকানা।

ঐতিহ্য আর গৌরবের নদী ও নৌপথ আজ বিপন্ন। নদীনির্ভরশীলতা, গুরুত্ব, ঐতিহ্য বিবেচনা করে ভারতের জাতীয় নদী গঙ্গা। পাকিস্তান ও সিন্ধু নদীকে ‘কওমি দরিয়া’ বা জাতীয় নদী ঘোষণা করে প্রতি বছর 24ই জানুয়ারী সিন্ধু দিবস পালন করে। এ দেশের ওপর দিয়ে সাত শ’র অধিক নদ-নদী ও উপনদী প্রবহমান রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক নদীর সংখ্যা 57টি। এর মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে 54টি নদী। সর্বজনীন সিদ্ধান্তে একটি নদীকে বাংলাদেশের জাতীয় নদী ঘোষণা করা সমীচীন হবে বলে মনে করি। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম নগর বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল সিন্ধুনদের অববাহিকায় এবং গুজরাটের কয়েকটি অঞ্চলে। নদ-নদীর প্রবল ভাঙ্গনে নদ-নদীতে চলে যাচ্ছে বসতভিটা, আবাদি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা। এই 54টি নদীর অববাহিকায় বাঁধের ফলে ভাটির এই দেশের ভূউপরিস্থ পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গবেষণায় যা বলা হলো, সেচের প্রধান উৎস হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। কিন্তু সে তুলনায় পানি পূরণ না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। গত চর দশকের ব্যবধানে দেশে সেচযন্ত্র গভীর ও অগভীর নলকূপের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় 35লক্ষ। আর অন্য দিকে সেচের ফসলি জমি বেড়ে দাঁড়িয়েছে 20 লক্ষ হেক্টর। এসব জমিতে সেচের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে দদেশের বড় নদী, শাখা নদী, উপশাখা ওপ্রশাখাগুলোর সাথে যুক্ত অসংখ্য খাল, হাওর, বিল প্রভৃতির পানির উৎস থেকে পানি সরবরাহ করা হতো। যেকেনো নদীর ওপর বাঁধ মানেই হলো ভাটির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা আর তা সরাসরি ওই নদীকেন্দ্রিক সেচব্যবস্থার ওপর আঘাত হানা। ভারতের এই নদী রাজনীতি প্রত্যক্ষভাবেই বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থাকে অচল করে দিচ্ছে। ফলে নানা প্রকল্প ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কেবল সেচের পানির অভাবে দেশের 50 লক্ষ হেক্টর তিন ফসলি জমি এক ফসলি জমিতে রুপান্তরিত হয়ে গেছে!

শুধুই কি তাই, কৃষি জমি সঙ্কুচিত করার পাশাপাশি এই দেশের পরিবেশ, নৌপথ এবং প্রায় 250 প্রজাতির মাছ এখন হুমকির মুখে। এছাড়া, পদ্মা মেঘনা যমুনা কর্ণফুলী শীতলক্ষ্যা বুড়িগঙ্গাসহ প্রভৃতি নদীতীরবর্তী এলাকায় নদী পরিশোধানাগার ছাড়াই বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এভাবেই অদূরদর্শী শিল্পায়ন ডেকে আনছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় নদ-নদীর। একটি খবরে পড়লাম, কলকারখানাসহ শিল্প থেকে প্রতি বছর প্রায় 30-50 কোটি টন ভারী ধাতু, তরল বর্জ্য, বিষাক্ত ছাই এবং অন্যান্য উপজাত পদার্থ পরিবেশকে ধুষিত করে। যেসব শিল্পে জৈব পদার্থ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেখানে সবচেয়ে বেশি দূষণ ঘটে; বিশেষ করে খাদ্যসংক্রান্ত শিল্পগুলো। এসব শিল্প উন্নত দেশগুলোয় শতকরা 40ভাগ আর উন্নয়শীল দেশে 54 শতাংশ দূষণ ঘটায়। রেল, সড়ক, বিমানপথ প্রভৃতির দিকে বিশেষ ঝোঁক পড়ায় নৌপথ চরমভাবে অবহেলিত। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানি মেপে ভয়াল মেঘনা পাড়ি দিতে হচ্ছে ছোট-বড় নৌযানকে। বাংলার ‘সুয়েজখাল’ বলে পরিচিত ঘাশিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা সঙ্কটে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা ছাড়াও খুলনা ও নওয়াপাড়া নদীবন্দরের সাথে সারা দেশের সরাসরি নৌ-যোগাযোগ ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। গাবখান চ্যানেলেরও একই পরিণতি। এ দু’টি চ্যানেলের মাধ্যমেই মংলা, খুলনা ও নওয়াপাড়া বন্দরগুলোর সাথে সারা দেশের নৌ-যোগাযোগ পরিচালিত হয়।

দেশের নদ-নদীগুলোর অবস্থা বেশ করুণ। নদী দেশের প্রাণপ্রবাহ। বিশুদ্ধ পানি ও প্রতিবন্ধকহীন প্রবাহ ছাড়া বাস উপযোগী দেশ কল্পনা করাও কঠিন। বাংলাদেশের প্রায় সব নদী ভারত, মিয়ানমার ও চীনের সাথে মিশে আছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত 54টি অভিন্ন নদীর প্রায় সবগুলোতেই উজানে পানি প্রত্যাহার এবং পানির অসম বন্টনের কারণে ভাটির বাংলাদেশে পানি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির কবলে। প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় নদ-নদীগুলোতে অসংখ্য চর জেগেছে। নৌ চলাচল, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

নৌপথের ব্যবস্থাপনার জন্য দেশে গত 30-40 বছরে কয়েকটি মহাপরিকল্পনা প্রণীত হলেও কোনোটিই বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। অনিয়ম ও দুর্নীতির গহ্বরে ঢুকে গেছে বড় বড় মহাপরিকল্পনা। নাব্যতাসঙ্কট নিরসনে ড্রেজিং খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও কাজ তেমন হয়নি। একের পর এক নৌপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খবরে আরো যা পড়লাম, 90এর দশকে ফ্রান্স ও জার্মানির কারিগরি সহায়তায় সরকার প্রায় 70কোটি টাকা ব্যায়ে কূলকানিদ রিভেটমেন্ট টেস্ট স্ট্রাকচারটি নির্মাণ করে। গত পাঁচ বছরে যমুনার বাম তীরের ভাঙ্গন রোধে 417 কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প গ্রহন করে। এর বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত দুই বছরে যমুনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে টেস্ট স্ট্রকাচারটির দুই-তৃতীয়াংশ বিলীন হয়ে গেছে নদীর গর্ভে। ফসলি জমি যমুনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য যদিও 365 কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছর মেয়াদি তীর সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিলো কিন্তু পরে ব্যয় 417 কোটিতে উন্নীত করা হয়।

বিদেশীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যেমন বাংলার নদী বাঁচানো সম্ভব নয়, তেমনি দেশীয় প্রযুক্তি ও জন সম্পৃক্ততার মাধ্যমে নদী রক্ষায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে নদী সমস্যার সমাধান করতেই হবে। নৌযান চলাচলের চ্যানেলগুলো যথাযথভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রবহমান রাখা গেলে দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব হবে বলে মনে করি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নদীর পানি বা মাটির নিয়ন্ত্রণ বা পরিচর্যা করতে হলে গবেষণ পরিচালনা করতে হবে। অথচ নদ-নদী, খাল-বিলসহ জলাভূমি সম্পর্কিত অধ্যায়নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো আমাদের দেশে গড়ে উঠেনি। নদী বিজ্ঞানের লেজার, আল্ট্রাসনিক, আইসোটোপ প্রভৃতির সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম মানদন্ড নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা ও এই দেশে নেই। নদীশাসন, গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতি তৈরি ও রক্ষণবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মীবাহিনী সৃষ্টি করতে হবে। ইনস্টিটিউট অব রিভার টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তি সন্নিবেশের মাধ্যমে নদীপথের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.