নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি আপনার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি কিন্তু আপনার কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে জীবনও উৎসর্গ করতে পারি”

রুপম হাছান

‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’

রুপম হাছান › বিস্তারিত পোস্টঃ

- ভোগান্তির যানজটে অসহায় জনগণ -

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৫

যানজট নিয়ে সবারই কমবেশি মাথাব্যাথা করে। কারো কারো রাতে ভালো ঘুমই হয় না টেনশনে। কোনো কারণে যদি একটু দেরি হয়ে যায় তাহলে অফিসের সময় কোন ফাঁকে চলে যায় তা টেরও পাওয়া যায় না। আর তখন বসের গালি শুনতে শুনতে সারা দিন এমনিতেই মাটি হয়ে যায়। রাজনীতিবিদেরা প্রায়ই বলেন, জনগণ নাকি সব ক্ষমতার উৎস। কথাটি 5ই জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে প্রযোজ্য ছিলো বলে মনে হয়। তবে জনগণই যদি সব ক্ষমতার উৎস হয়ে থাকে তাহলে বিনা ভোটে 153জন কিভাবে নির্বাচিত হলেন!? যাক রাজনীতি নিয়ে বেশি মাতামাতি করে লাভ হবে বলে মনে হয় না। যানজট নিয়ে লিখতে বসেছি তা লেখাই ভালো। যানজটকে ভালোবাসেন এমন লোক বাটি চালান দিয়েও খুঁজে পাওয়া এই সমাজে দুষ্কর। আমার কাছে বিষ আর যানজট একই রকম মনে হয়। কারণ বিষ পান করলে তিলে তিলে কষ্টের যাতনায় যেমন মরতে হয়, ঠিক তেমনি যানজটের কবলে পড়ে অসুস্থ রোগীকে কাতরাতে কাতরাতে রাস্তায়ই মরতে হয়। যানজট যে আবার, সবার কাছে খারাপ লাগে তা কিন্তু নয়। যারা বিএমডব্লিউ, ল্যান্ডক্রুজার, ল্যান্ড রোভার, মার্সিডিজ কিংবা নিত্য নতুন নামিদামী ব্র্যান্ডের এসি গাড়িতে চড়েন তাদের খারাপ লাগে বলে মনে হয় না।

আসতেছে গরমের সময় এবং প্রতি বছর গরমের সময়ে যেখানে আমরা শরীরের জামা খুলে ফেলে দিতে চাই, সেখানে তারা কোর্টপ্যান্ট পরে আরামে বসে থাকেন। যানজটের ভেতরে গণপরিবহনে যারা যাতায়াত করেন তারা বোঝেন যানজট কী জিনিস। তাদের শরীরের ঘাম ঝরতে ঝরতে কাপড়চোপড় ভিজে পায়ের গোড়ালী বেয়ে নিচে নেমে আসে। গতকাল শনিবার অফিসের কাজে বের হলাম, যাওয়াটা যেমন তেমন হলেও আসার সময় সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে বাসে বসে ছিলাম পৌনে এক ঘন্টার পথ! এই শীতের সময়েও জান যাই যাই অবস্থা। অন্যদিকে গণপরিবহনের হেল্পার-ড্রাইভারদের তো চামড়া গন্ডারের চামড়ার চেয়ে শক্ত। বাসের ভেতরে যায়গা না থাকলেও সিট খালি বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে যাত্রী উঠিয়ে সিটিং গাড়ির ভাড়া আদায় করা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তাও দেখভালের যেনো কেউ নেই।

আসলে সাধারণ মানুষ যেন অপয়া। তা না হলে যেখানে সাধারণ মানুষের গাড়ি চলে না, সেখানে কী করে প্রচন্ড যানজটের ভেতরে কারো কারো গাড়ি চলাচলের জন্য পথ করে দিতে হয়। দেশের রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী রাস্তায় বের হলে সবাইকে ছেড়ে দিতে হয় এই পথ। কিন্তু তাতে গায়ে ব্যাথা লাগলেও মানিয়ে নিতে হয়। সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে পুলিশের অফিসাররা সাইরেন বাজিয়ে একশ কিলোমিটার বেগে চলে যেতে পারেন; কিন্তু সাধারণ মানুষ চলে যেতে পারেন না। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বাসে সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও দেখেছি মমতা ব্যাণার্জী সরকারী প্রোটোকল ব্যবহার না করে সাধারণ জনগণের মতো রাস্তা চলতে। কিন্তু আমাদের দেশের মন্ত্রী-এমপিরাও জনগণের জন্য একটু যানজটমুক্ত পথও করে দিতে পারেন না। যানজট সারা বছরের সমস্যার মধ্যে একটি প্রধান সমস্যা। সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই, এটি রাজধানীবাসীর জন্য বিরাট এক বিড়ম্বনার নাম। প্রতিদিনই মহাসড়কগুলোতে লেগে আছে মহাযানজট। দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছ এই ভয়াবহ যানজট। এই যানজটের কারণে আমাদের যে সময় নষ্ট হচ্ছে তা অর্থনীতির বিচারে খুবই ভয়াবহ। রাষ্ট্র কোনোভাবে এর দায় আড়োতে পারে না। এই যানজট দিন দিন দেশের রফতানি বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। দেশের বিরাজমান যানজটের কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের রাঝধানীকে যন্ত্রণার দৃষ্টিতে দেখছেন। তার ফলে অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। রাজধানীর ফুটপাত ও রাজপথ অবৈধ দখলমুক্ত না হলে যানজটের কালো থাবা ঠেকানো যাবে বলে আমার মনে হয় না। যেখানে-সেখানে পার্কিং বন্ধ ও চলাচলের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকে সবচেয়ে বেশি উদ্যেগী হবে হবে। রাজধানীর ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করা সম্ভব হলে যানজট অন্তত নব্বেই ভাগ নিরসন করা সম্ভব হবে বলে মনে করি। কিন্তু ফুটপাথ অবৈধ দখলের সাথে রাজনৈতিক টুউট, বাটপার, মাস্তান ও প্রশাসনের উৎকোচভোগীদের স্বার্থ থাকায় এ ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা রয়েছে।

যানজট আজ জাতীয় অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদনের জন্য যে সময় ব্যয় হওয়ার কথা ছিল, তা গিলে খাচ্ছে এ সর্বনাশা যানজট। অসহনীয় এই যানজটে 30 মিনিটের পথ যেথে কখনো কখনো সময় লেগে যায় দুই-তিন ঘন্টারও বেশি! রাজধানীবাসী অতীতের যেকোনো সময় থেকে এখন যানজটে বেশি সময় আটকে থাকছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, শুধু রাজধানীতে যানজটের কারণে মানুষের কর্মক্ষমতা ও জ্বালানি বাবদ অপচয় হয় বছরে 20 হাজার কোটি টাকা। রাস্তায় বের হলে যানজট নিরসনে পুলিশের বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা দেখার চেয়ে বোকামির কান্ডই চোখে পড়ে বেশি। এ জন্য মহাপন্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। রাজধানীর শাহবাগের মধ্য দিয়ে কাঁটাবন কিংবা বাংলামোটরের দিকে যারা চলাচল করেন তারা একটু হলেও টের পান। এ দেশের 16কোটি মানুষের করের টাকায় পুলিশের বেতন হয়। জনগণের কল্যাণে পুলিশ বাহিনী নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্তু আমরা সেভাবে পুলিশের সেবা এই ছয় বছরে পেয়েছি বলে মনে হয় না। পুলিশ রাস্তায় দাঁড়ায় যানজট কমানোর জন্য। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে; পুলিশের অব্যবস্থাপনার কারণে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। পুলিশের ইচ্ছামাফিক পরিচালিত হয় সব সিগন্যাল। কী লাল বাতি আর কী সবুজ বাতি সবই যেন একাকার হয়ে গেছে। লাল বাতি যখন জ্বলে তখন গাড়ি চলার কথা না থাকলেও চলে- এ রকম দৃশ্য কমবেশি সবারই চোখে পড়ে!

সকালে যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যেত বিকেলে তা বন্ধ। আবার বিকেলে যে রাস্তাটি জনসাধারণের জন্য উম্মক্ত ছিল তাও আবার সন্ধ্যায় বন্ধ। বিনা নোটিশে ইচ্ছামাফিক রাস্তা বন্ধ করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে পারলে যানজট একটু হলেও কমনে বৈ বাড়বে না। যানজট নিরসনের জন্য অনেক নতুন নতুন ফ্লাইওভার বানানো হয়েছে। তাতে করে কি যানজটের কবল থেকে আমরা রেহাই পেয়েছি? উত্তর হলো-না। এই ফ্লাইওভারে জনগণের কল্যাণের চেয়ে একটি অসৎ উপায়ী গোষ্ঠীর কল্যাণ বেশি হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে এক কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে যে পরিমাণ টাকা ব্যায় হয়, আমাদের দেশে এক কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে ভারতের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি টাকা ব্যায় হচ্ছে; কিন্তু কেন!? এ প্রশ্নের উত্তর কি একটি বারের জন্য হলেও জানার চেষ্টা করছে দায়মুক্তির দুদক। এই ভয়াবহ যানজটের ভেতরেও পুলিশ চেকিংয়ের নামে মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজি থামিয়ে মাসোয়ারা নিচ্ছে, তাতে যানজট আরো বেড়ে যাচ্ছে। এই বিশাল রাজধানী ঢাকা শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ঠেঙ্গানোর জন্য যদি পুলিশকে ব্যবহার করা যায়, তাহলে যানজট নিরসনের প্রয়োজনে দ্বিগুণ পুলিশ কেন ব্যবহার করা যাবে না!? আমরা সরকারের কাছে সকালের নাশতা যেমন চাইনা, তেমনি রাতের খাবারও চাই না। আমরা চাই ভোগান্তির এই যানজটের হাত থেকে একটু মুক্তি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.