নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি আপনার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি কিন্তু আপনার কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে জীবনও উৎসর্গ করতে পারি”

রুপম হাছান

‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’

রুপম হাছান › বিস্তারিত পোস্টঃ

-জঙ্গি জম্ম নেয় না বরং সৃষ্টি করা হয়!-

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:২৩

গত কয়েকদিনের বিভিন্ন মিডিয়ায় আলোচনার বিষয় বস্তু ছিলো ইসলাম এবং জঙ্গিবাদ নিয়ে। এর সাথে যোগ হয়েছে প্রখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ ডাঃ জাকিরের পিসটিভি বন্ধ এবং দেশের সকল ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসনের নজরদারী। মূলত গুলশান এবং শোলাকিয়া জঙ্গি হামলায় যারা অংশগ্রহণ করেছিলো তাদের মধ্যে একজন জঙ্গি, ডাঃ জাকিরকে অনুসরণ করতো বলে তার ফেসবুকে উল্লেখ করেছে। যদিও পিসটিভি বন্ধের কথা শুনে বেশির ভাগ ধর্মভীরু মানুষের দেশের মানুষ হিসেবে সত্যি আমরা অবাকই হয়েছি। এবং এই ধরণের অনেক অনুষ্ঠানে পিসটিভিতে আমরা দেখেছি, ডাঃ জাকিরের ইসলামিক বক্তব্যগুলো শুনে অনেক ব্যাক্তি ভালো কাজের উৎসাহ খুঁজে পেয়েছেন, এবং ভালো পথে আসতেছেন আবার কেউ কেউ প্রতিজ্ঞা করেছেন যে তারা কিংবা তাদের সন্তানরাও যেনো ডাঃ জাকিরের মত একজন প্রখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ হতে পারেন, সে চেষ্টা করবেন। তাদের মধ্যে কেউ যদি তার নিজের চিন্তা-ভাবনা কে সৎভাবে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হয় এবং কুপরামর্শ গ্রহণ করে কারো ক্ষতি করতে আগ্রহী হয়ে উঠে এতে ডাঃ জাকিরের দোষ হবে কেনো!? ভালো কিংবা খারাপ করবে, এটা তো একান্ত নিজের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল যে, তিনি নিজেকে কি হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করতে চান।

কথা উঠেছে পিসটিভি নাকি জঙ্গিদের জন্য অনুসরনীয় এবং অনুকরণীয় রসদ দানকারী একটি চ্যানেল! তাহলে সারা পৃথিবী যেখানে জঙ্গিদের নির্মূলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যায় করতেছে সেখানে ডাঃ জাকেরর পরিচালিত পিসটিভি কিভাবে এতটা স্বগৌরবে সকলের কাছে জনপ্রিয়তা পেতে পারে; তা ভেবে পাই না। মূলত পৃথিবীর আদি থেকে চলমান বর্তমান পর্যন্ত ইতিহাস পড়লে বুঝা যায় যে, ইসলাম এবং দুনিয়া একে অপরের বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। কারণ এই ইসলামের পথ অনুসরণ করতে গিয়ে আদি নবী থেকে বর্তমান পর্যন্ত যারাই দ্বীন প্রচারক হিসেবে কাজ করে গেছেন এবং এখন পর্যন্ত করছেন, সবাই কম বেশি দুনিয়ার শাসক শ্রেণীর ক্ষমতাবানদের দ্বারা কিংবা তাদের অনুচর দ্বারা কিংবা দুনিয়ার ক্ষমতালোভী দ্বারা নিগৃহীত এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কেউবা আবার এই ইসলামের জন্য জীবনও দিয়েছেন। হয়েছেন ইসলামের ইতিহাসে স্বরণীয়। যেমন-দ্বীনের নবী হযরত জাকারিয়া (আঃ) কে করাত দিয়ে দ্বিখন্ডিত করা হয়েছিলো ইসলাম প্রচার করার কারণে। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে আগুনে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছিলো এবং আমাদের সকলের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে দন্ত মোবারক ভেঙ্গে দিয়েছিলো, শরীর থেকে অজস্র রক্ত বের করে দিয়েছিলো দ্বীন বিমূখী শাসক শ্রেণী, ক্ষমতালোভী এবং দুনিয়ালোভী অসাধু মানুষ। তারপরেও ইসলাম তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি। কেউ ইসলামে থাকুক আর না থাকুক এতে ইসলামের কিছু যায় আসে না; বরং যারা ইসলামকে নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখবে মূলত তারাই দোজাহানের সফলকামী হবেন। এটা কোরআন আর হাদিসের কথা।

ইসলাম কাউকে বিনা অপরাধে বিচার করার সুযোগ দেয় নি। কাউকে বিনা অপরাধে হত্যা করার সুযোগ দেয় নি। কাউকে অহেতুক নির্যাতন কিংবা হয়রানি কিংবা সম্মান হানি করার সুযোগ দেয় নি। ইসলাম কাউকে আক্রমণ করতে উৎসাহ দেয় নি বরং তা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করার কথা বলা হয়েছে। ইসলামে প্রতিবেশীর হক রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে, হরণ করার কথা বলা হয়নি। আবার যারা বিনা প্ররোচনায় কিংবা বিনা কারণে নিজের কিংবা নিজের দ্বারা কারো ক্ষতি করে থাকে; তাদের ব্যাপারেও কোরআনে স্পষ্ট বলা আছে যে, তার নিজের জীবনও কিন্তু তার নয়; এটা তার কাছে আমানত। আর যারা আমানতের খেয়ানত করে তারা তো মুসলমান নয়। অর্থাৎ ইসলামের অনুসারী নয়।

এখন দেখার বিষয় হচ্ছে কারা এমন জঘণ্য কাজ করে, কেনো করে এবং এদের জম্ম কোথা থেকে? এর কারণ হিসেবে আমরা হয়তো চারটি দিক দেখতে পাবো। প্রথমতঃ নিজের অধিকার ক্ষন্ন হচ্ছে ভেবে এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তার প্রতিকার না পাওয়ার কারণ। দ্বিতীয়তঃ কোনো পক্ষ একক ভাবে দেশ কিংবা পৃথিবীজুড়ে নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করার মানসে অবৈধ মন-মানসিকতা থেকে সৃষ্ট সমস্যার কারণ। এবং তৃতীয়তঃ অতিমাত্রায় ধর্মভীরুতা প্রদর্শন করতে যাওয়ার কারণ। চুতুর্থতঃ পণ্য ও উপকরণের ( দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ) উপর হস্তক্ষেপের কারণ।

মূলত এই চারটি সমস্যার যে কোনো একটির কারণে সৃষ্টি হতে পেরেছে, পুরো পৃথিবী জুড়ে আজকে সন্ত্রাস আর ত্রাসের রাজত্ব। এমন মুহুর্তে কেউ কারো সমস্যার সমাধান নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না বরং সমস্যা সৃষ্টি করে দিতে চায়। তাই বলবো আমাদের দেশে সবকিছু অতিমাত্রায় ঘটার আগে আমাদের সঠিক এবং ভালোর পথে আসা উত্তম। তা না হলে চলমান সংকট একটি জাতি কিংবা দেশকে স্বমূলে ধ্বংস করে দিতে পারে। যেমন প্রকৃতির মাধ্যমে ধ্বংস হয়েছিলো, আদ, সামুদ জাতি। কারণ পৃথিবীর সৃষ্ট সমস্যা যদি পৃথিবীর মানুষ কর্তৃক সমাধান না হয়; তবে প্রকৃতি তার নিজ ক্ষমতায় সমস্যার সমাধান করে।

যদিও বর্তমানে সন্ত্রাস এ শতাব্দীর যুদ্ধ ইস্যু হচ্ছে- পণ্য ও উপকরণ এবং ক্ষমতার অবৈধ মন-মানসিকতার প্রতিপালন। এর গুরুত্ব পশ্চিমাদের মতো ভারতের কাছেও রয়েছে। সব বেআইনি ও অনৈতিক যুদ্ধে শক্তিধররা সন্ত্রাসকে পুঁজি করে মানুষ মেরেছে। স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্ব খেয়েছে। দেশ দখল করে বাণিজ্য লুটেছে। তেল হাতিয়েছে; প্রাকৃতিক সম্পদ দখলে নিয়েছে। আফগান, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়া যুদ্ধের পর এই উপমহাদেশে বাংলাদেশ যদি টার্গেট হয়ে আঞ্চলিক ও বিশ্ব রাজনীতিকে নতুন সবক দেয়ার গরজ সৃষ্টি হয়, সে ক্ষেত্রে নিশা দেসাই ও সুষমা স্বরাজ যে আপাতত এক পক্ষে খেলবেন, সেটা বোঝার জন্য সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট। এই ঋজু মূল্যায়ন মাথায় রেখেই আমাদের সামগ্রিক রাজনীতি এবং সন্ত্রাসের নামে ভূতের বাপের বাসা বদল নিয়ে চিন্তা করাই শ্রেয়। কারণ জনগণ এখন টের পায় না, তাদের চোখের সামনেই সন্ত্রাস, জঙ্গিপনা ও চরমপন্থী তৎপরতার ধরণ ও প্রকৃতি পাল্টে গেছে। সন্ত্রাসীরা মাতৃভূমিকেও এখন সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য ভেবে দেদারসে তাদের জঙ্গিপনা করে যাচ্ছে। শাসক ও রাষ্ট্রশক্তির মধ্যে ফারাক না বুঝেই রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে’ নেমে পড়ছে। দেশটা মৃত্যু উপত্যকার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। তাইতো এরিখ মাগোলিস অনেক আগেই বলে রেখেছিলেন-অত্যাচার, অনাচার, অবিচার, শোষণ, বঞ্চনা, অধিকার হরণ, জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়ন, ছদ্মবেশী আগ্রাসন ও দুঃশাসনের পেট থেকেই সন্ত্রাসের জম্ম হয়। মত প্রকাশের স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ, অন্যায় ভাবে মজলুমের প্রতি নিপীড়ন করার ফলে চরমপন্থীর উদ্ভব ঘটে। যার সম্পূর্ণ দায় কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিকদের।

বর্তমানে রাজনীতিবিদদের আচরণও আগের মতো নেই। রাজনৈতিক সঙ্কট ও সমাজিক অস্থিরতার উদর থেকে জম্ম নেয়া অনেক অসঙ্গতি এখন আর কারো দৃষ্টি এড়ায় না। এ অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছতে এক দশকের বেশি সময় লাগেনি। ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যার আদলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সাথে যোগ হয়েছে অচেনা সন্ত্রাসের নৈরাজ্য। কুপিয়ে হত্যা আর টার্গেট কিলিং মিশন যেনো চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলেছে। এখন নিরাপদ নেই বিদেশী, এমনকি পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও। এখনো আমরা উপসর্গকে রোগ বলছি, রোগকে রাজনৈতিক প্রলেপ দিয়ে উপশমের সান্তনা খুঁজছি, সেই সাথে ব্লেম গেইম চলছে সমানতালে। সন্ত্রাসের উৎস ও আসল কারণ চিহ্নিত করছি না। অথচো কোনো ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এসকল সমস্যার কারণ বলে চিহ্নিত করা মূলত শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশ উল্লেখিত চারটি কারণ থেকে বের হয়ে যত দ্রুত সমস্যা বুঝে উঠতে চেষ্টা করবে তত দ্রুত এই দেশ থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের যবনিকা ঘটবে বলে আশা করছি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.