নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি আপনার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি কিন্তু আপনার কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে জীবনও উৎসর্গ করতে পারি”

রুপম হাছান

‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’

রুপম হাছান › বিস্তারিত পোস্টঃ

-একদিনের অভিজ্ঞতা-

২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:০৮

গত দুই দিন ধরে আমার শরীরটা একটু খারাপ যাচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে আসার পর পরই এমনটা লক্ষ্য করছি। যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এবং করতেছি, শরীরের খারাপ অবস্থার দিকে মগজটাকে ব্যবহার না করে অন্য কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তায় ব্যাস্ত রাখলে হয়তো তুলনামূলক শারীরিক অবস্থার একটু উন্নতি অনুভব করা যাবে। যাই হোক-তখন থেকে প্রতিনিয়ত নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলাম। যার ফলে প্রতিদিন অফিস থেকে বের হতে নিয়মের তুলনায় প্রায় দুই-তিন ঘন্টা পরে বের হচ্ছি।

গতকালকে অফিস থেকে বাসায় যেতে না যেতেই দাদা ফোন করে বললেন (দাদা বাসার বাহিরে ছিলেন), মেহমান (মহল্লার এক বড় ভাই, তার বাসাতে মেহমান আসার কারণে; যায়গা না হওয়ায় তিনি আমাদের বাসায় রাতটি থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছেন) আসবে; তাই মনে হয় সামান্য ভাত রান্না করতে হবে। আমি পরিধেয় পোশাক পরিবর্তন করে গোসলখানায় যাওয়ার আগে সামান্য ভাত চুলায় দিয়ে দিলাম। অতঃপর গোসল সেরে টিভি দেখার মাঝে ভাতও রান্না হয়ে গেলো। যথাসময়ে মেহমান আসলেন এবং আমরা খেতে বসলাম। কিন্ত মেহমান ভাত খাবেন না বলে পত্রিকা পড়ায় মনযোগ বাড়িয়ে দিলেন। আমার বুড়ো দাদা তো, তাকে না খাইয়ে ছাড়বেন না। যথারীতি মেহমান খেলেন এবং কিছুক্ষণ টিভি দেখে ছোফায় ঘুমিয়ে গেলেন।

এখন দাদা তাকে মাথায় হাত দিয়ে মৃদু ঘুম ভাঙ্গিয়ে খাটে ঘুমাতে বললেন। মেহমান গায়ের শার্ট খুলে যথারীতি দাদার খাটে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন এবং ঐ শার্টটি ছোফায় রেখে গেলেন, যা আমার শয়নকক্ষের গেইটের পাশে। এদিকে আমার তো আর ঘুম আসছেনা কারণ ফ্যান চালালে লাগে শীত, আর বন্ধ করলে লাগে গরম। বুঝতে পারছিলাম শরীরে জ্বরের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। তাই রাত ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে ফার্মাসি থেকে ২টা নাপা ট্যাবলেট আনলাম এবং একটা খেলাম। খাওয়ার পরে শরীরটা ঝাকুনি দিয়ে মনে হলো জ্বর আসবে। একটু পরে ঘরের বাতি বন্ধ করে বাহিরে বের হলাম এবং রাত ১টা পর্যন্ত হাঁটাহাঁটি করলাম। তারপর ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘরে এসে বিছানায় গা ভাসালাম।

ঠিক তখনি আবিষ্কার করলাম ড্রিল মিশিনের ভৌঁ ভৌঁ শব্দ! (জ্ঞাতার্থে বলছি : বাসার চার তলায় নতুন ভাড়াটে আসছে গত পরশুদিন আর গত কালকে রাত প্রায় দুইটা পর্যন্ত বিভিন্ন দেয়ালে ড্রিল মিশিনের কাজ করেছিলো)। তখন দাদা এবং আমি মিলে অনেক উচ্চবাচ্য করেছি-চার তলার উদ্দেশ্যে। পুরো দিনের ক্লান্তি নিয়ে যখন মানুষ ঘুমাতে যাবে ঠিক তখন যদি এমনটি হয় তা কার ভালো লাগবে? তারপরে আমার শরীরটাও খারাপ। যাই হোক, ঘুমাতে গিয়ে একবার এদিক তো কিছুক্ষণ পর আবার ঐদিক। ভালো লাগছিলো না। এমনটি করতে করতে কখন যে ঘুম এসে গেলো বুঝতে পারি নি। রাত যখন ২:৩৮ মিনিট, হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো ইঁদুরে চালের বস্তা কাটার শব্দে! ঘুম থেকে উঠে যখন চালের বস্তার দিকে যাচ্ছি তখন আবিষ্কার করলাম এটা ইঁদুরের চালের বস্তা কাঁটা না, আমাদের মেহমানের দাঁত কাঁটার শব্দ! হা হা হা। এত উচ্চস্বরে শব্দ হচ্ছিল যে, ঘুমই ভেঙ্গে গেলো। এমনি মুহুর্তে দাদা বলতে লাগলেন, বাগানের সব সুপারি কেঁটে খেয়ে নিচ্ছে মেহমান! হা হা হা।

এবার মেহমানকে একটু দাঁত কাটার বিরতিতে পাঠিয়ে (আমাদের কথাবার্তায় মেহমান জেগে গেছে) আবার শুইতে গেলাম। তার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হলো মেহমানের ফোনে কল আসা। যখনি ফোন আসে তখনি একটা ইংলিশ গান বেজে উঠে …ওয়েলকাম ওয়েলকাম … … …। আর যাই কই!? মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আবার উঠে মেহমানের শার্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে সাইলেন্ট মোড়ে দিয়ে রেখে দিলাম এবং ঘুমাতে গেলাম। দাদা কিছুক্ষণ হাসলো আর বলল যাই হোক অন্তত তোমার অসুস্থতা কিছুক্ষণের জন্য হলেও তো কমেছে!

আজ সকাল ৭:২১ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে বীজ রোপনকৃত গাছের টবে পাণি দিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করলাম। অতঃপর গোসল সেরে ভাত খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হবো। এমনি দাদা বললেন, অফিসে যাওয়ার আগে আমাকে একটু পেঁয়াজ বেটে দিও গোস্ত রান্না করবো। কি আর করা। দাদার অনেক বয়স হয়েছে, তাই এসব ব্যাপারে সহযোগিতা করতেই হয়। এমনি এক ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন অফিসের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হলাম, ঘরের সামনে থেকে ছোট গাড়ীর জ্যাম! আমার বাসার পাশেই এ্যাপেল ট্রি ইংলিশ মিডিয়ম স্কুলের দুটি শাখা এবং পল্লবীর বড় স্কুলটি। সদর রাস্তায় এসে ঠাঁই দাঁড়িয়ে কম করে হলেও ১০-১৫ মিনিট, গাড়ী নেই। শেষ পর্যন্ত বিহঙ্গ পেলাম। গাড়ী যখন শেওড়াপাড়া পার হচ্ছে তখন আরেক বেসুরো আওয়াজ কানে আসতে থাকলো পেছন থেকে। তাকিয়ে দেখি মোটা এক লোক সামনের দিকে মাথা ঝুঁকে দিয়ে উচ্চস্বরে নাক ডাকছে। সবাই লোকটির দিকে তাকিয়ে হাসছে কিন্ত কেউ কেউ বিরক্তও হচ্ছে। একদিকে জ্যাম অন্যদিকে রোদ্রের প্রখর তাপে পুরো শরীর ঘামে ভিজে গড়িয়ে পড়ছে পায়ে, তার সাথে যোগ হয়েছে নাক ডাকা!

কোনো মতে চীনমৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র অতিক্রম করছি, তারপর যেনো গাড়ী আর সামনে যাবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। যখন বিজয় স্বরণীতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি তখন অলরেড়ী দশটা বেজে ১১ মিনিট! এরপর আস্তে আস্তে সামনে আসছে। প্রাত্তন রেংক্স ভবন মোড়ে এসে গাড়ী যখন উত্তরদিকে টার্ণ নিলো তখন ট্রাফিক ডেক্লেয়ার হলো এখন প্রধানমন্ত্রী যাবেন! রাস্তায় পুলিশ নেমে এলো। আর আমরা সূর্য চেঙ্গিতে শুটকি হচ্ছি! অতিরিক্ত গরমের কারণে অস্থিরতা যেনো সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেলো। কিন্তু অন্যান্য দিকে গাড়ী চলছে শুধু ভিতরের রোড়ের গাড়ী চলছেনা না। অদ্ভুত এক আচরণ সাধারণ জনগণের সাথে।

এক যায়গায় আমাদের গাড়ীগুলো প্রায় ১৯ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলো। প্রধানমন্ত্রী আসলেন, দেখলেন কিনা জানি না এবং চলে গেলেন। তিনি কি বুঝতে পারেন না যে, সাধারণ মানুষগুলো আমাদের আনীত বিভিন্ন দেশের ঋণের সমুদয় অর্থ পরিশোধের জন্য এই গরমের মধ্যে বাসের ভেতরে বসে আছেন!? কত কষ্টই না পাচ্ছেন। আর আমরা রাস্তায় ফ্রি জানজটে চলার জন্য তাদের কত কর্ম ঘন্টায় না নষ্ট করে দিচ্ছে! যারা মাথার ঘাম পায়ে পেলে আমাদের আনীত ঋণের বোঝা পরিশোধের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নিচ্ছে!

অথচো সেই দিনের কথা উঁনারা একবারের জন্যও চিন্তা করেন না যে, এইভাবে চলার জন্য আমাকে আবার তাদের কাছেই যেতে হবে। একবার ভাবুন তো, এত গরমের মধ্যে গাছপালা বিহীন রাস্তায় এক যায়গাতে যদি গাড়ীর ভেতর ১৯ মিনিট বসে থাকতে হয়, তাহলে আমরা কাদেরকে আমাদের জাতীয় জীবনে একটু সুখ পাওয়ার জন্য ক্ষমতা দিতে উৎসাহ যোগাচ্ছি। উনারা কেনো বিশ্বের উন্নত দেশগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এই জাতির দুঃখ-কষ্ট মোচনে ভুমিকা নিতে পারেন না। কেনো পারেন না সাধারণ মানুষের মতো তাদের মাঝে চলাফেরা করতে? ঘরে এসির বাতাস আর কারেন্টের বাতি বন্ধ করে একদিন কুফি জ্বালিয়ে হাত পাখার বাতাস আর অন্ধকারে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে দেখতে পারেন, সাধারণরা কতই না কষ্ট করে আপনাদের এসির বাতাস, ফ্রি জানজট আর ভালো ভালো খাবারের যোগান দিতে বেগ পাচ্ছে। প্লিজ একটু ভাবুন।

আমি অসুস্থ, তাই আজকে আমার খুব রাগ হয়েছিলো। গতরাত থেকে খুবই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে আমার একটি দিন শেষ হতে চলেছে। কিন্তু শারীরিক সুস্থতার কমতি রয়েই গেলো। চাহিদা মোতাবেক প্রাপ্যতা আর জানযটমুক্ত পরিবেশ না থাকার কারণে অসুস্থতা দিনকে দিন আমাদের বেড়েই চলেছে। আমরা আশা করছি, সাধারণ নাগরিকদের জন্য উম্মুক্ত রাস্তা আর যানযট নিরসনে জাতীয়ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করে একটু সুখ আর শান্তি নিশ্চিতে ভুমিকা রাখবেন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:১৩

রুপম হাছান বলেছেন: লেখাটি গত বুধবারের লেখা। কিন্তু আপ দিতে ভুলে গেছি-অফিসের কাজের চাপে। তাই আজকে অফিসে এসেই প্রথম কাজটি করেই দিলাম।

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:১৮

করুণাধারা বলেছেন: অনেক ভ্রান্তি দূর হল। এই পাথর মারার বিধান নিয়ে ইসলাম বিরোধীদের কত লাফালাফি! আমার সব সময় মনে হয়েছে আল্লাহ এমন কোন বিধান দিতেই পারেন না যাতে কোন মানুষ অন্যায় ভাবে কষ্ট পায়।

এবার তিন তালাকের (.একসাথে) বিধান নিয়ে কিছু লিখুন। প্লিজ।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪১

রুপম হাছান বলেছেন: ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা অভিব্যক্তি লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য।

ভাই করুণাধারা, আমি ব্যক্তিগত ভাবে একজন সাধারণ মানুষ এবং সাধারণ স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি তে পড়ালেখা করা ছেলে। মাদ্রাসা লাইনে আমার বিন্দুমাত্রও জ্ঞান নাই। তাই ধর্মের নিয়ম-কানুন এর ব্যাপারে হয়তো আমার মতো লোকের লেখনিতে প্রকাশ করা যুক্তি সংগত হবে না। কারণ সেখানে অনেকাংশে ভুল তথ্য থাকতে পারে।

যাই হোক, আপনি এব্যাপারে কোনো হাক্কানি মুফতি’র দ্বারস্ত হতে পারেন। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.