নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাকিম৩

হাকিম৩ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কারা কাদের স্বার্থে বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করেছিল ? পর্ব (১)

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:৫২


পরিস্থিতি এমনই ছিল যে বাংলার ভাগ্য বাংলার জনগণের উপর নির্ভর করছিল না নির্ভর করছিল সম্পূর্ণ ভাবে বাইরের তিনটে শক্তি উপর, আর তাদের মধ্যে আপস এবং চুক্তির উপর। আমরা দেখবো এই তিনটি শক্তির মধ্যে দুটি শক্তি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ এবং মুসলিম লীগ নেতৃত্ব প্রস্তুত ছিল বাংলাকে হিন্দুস্থান ও পাকিস্তানের বাইরে অবিভক্ত রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকার করতে । কিন্তু স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিল না অন্য শক্তিটি অর্থাৎ কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এবং তাদেরই চাপে বাংলাকে করা হয় দ্বিখণ্ডিত ।ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা কংগ্রেস যখন কার্যত নাকচ করে দেয় তখন নতুন ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন এবং তার ব্রিটিশ সহকর্মীরা একটি পরিকল্পনা রচনা করেছিলেন। তার বিস্তৃত আলোচনার এখানে অবকাশ নেই।"See Ghosh, India and the Raj,II.297-8. For a brief discussion of the plan" শুধু উল্লেখ করবো যে এই পরিকল্পনায় প্রত্যেক প্রদেশের প্রতিনিধিদের অধিকার দেয়া হয়েছিল স্থির করার যে তারা হিন্দুস্থানে যাবেন, না অন্য প্রদেশের সঙ্গে মিলে আলাদা গ্রুপ তৈরি করবেন অথবা স্বাধীন থাকবেন। বাংলা এবং পাঞ্জাবের প্রতিনিধিদের অধিকার দেয়া হয়েছিল তিনটি সম্ভাবনার মধ্যে একটি বাছাই করে নেওয়ার। এই তিনটি সম্ভাবনা ছিলঃ

১। সমগ্র বাংলা ও পাঞ্জাব, হিন্দুস্থানে অথবা পাকিস্তানে যোগদান করতে পারে;
২। বাংলা ও পাঞ্জাব,বিভক্ত হতে রাজি হয়ে এক অংশ হিন্দুস্থানে এবং অন্য অংশ পাকিস্তানে যেতে পারে; এবং
৩। বাংলা ও পাঞ্জাব, ঐক্যবদ্ধ থেকে পৃথক রাষ্ট্র হতে পারে।

তৃতীয় বিকল্পের বিরুদ্ধে নেহেরুর জোরালো আপত্তিতে এই পরিকল্পনাও নাকচ হয়ে যায় TOP.X, 756, 762-3 । রিফর্মস কমিশনার ভি. পি. মেননকে ভার দেওয়া হয় নতুন পরিকল্পনা রচনা করার। এই পরিকল্পনার রূপরেখা আগের ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে প্যাটেলের সঙ্গে পরামর্শ করে মেনন তৈরি করেছিলেন।Menon to Patel, 10th May 1947. Durga Das (ed.) op cit., V, 113-7:Menon, op cit., 358-9 তাতে ওই তৃতীয় সম্ভাবনাকে বাদ দেওয়া হয়। অর্থাৎ বাংলাকে ও পাঞ্জাবকে হয় সমগ্রভাবে হিন্দুস্থানে বা পাকিস্তানে যেতে হবে আর নয়তো দ্বিখণ্ডিত হতে হবে। হিন্দুস্থান ও পাকিস্তানের বাইরে ঐক্যবদ্ধ বাংলার বা পাঞ্জাবের অস্তিত্ব থাকবে না। অন্য প্রদেশগুলিকে হয় হিন্দস্থানে নয় পাকিস্তানে যেতে হবে। এই মেনন প্যাটেল পরিকল্পনাই মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা নামে খ্যাত।

এর আগে ১৯৪৭সালের ৪ঠা মার্চ ভারত সচিবের একটা স্মারকলিপিতে তিনটি রাষ্ট্রের উদ্ভবের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল: (১) উত্তর-পশ্চিম ভারতে পাকিস্তান (২) আসাম-সহ হিন্দুস্থান (৩) বাংলা।ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার ভারত এবং বর্মা কমিটি প্রদেশগুলিকে, বিশেষ করে বাংলাকে, যদি তারা চায় তাহলে হিন্দুস্থান এবং পাকিস্তান থেকে পৃথক থাকার অধিকার দিতে প্রস্তুত ছিল। ১৯৪৭সালের ১৭ই মে তারিখের একটি স্মারকলিপিতে ভারতসচিব লিস্টওয়েল বলেছিলেন “ঐক্যবদ্ধ থাকার ও নিজের সংবিধান নিজে রচনা করার অধিকার নিশ্চয়ই বাংলাকে এবং সম্ভবত পাঞ্জাবকেও দেবার পক্ষে যুক্তি আছে।” TOP. IX, 842: X, 834, 876-8) ।

২৩শে মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এটলী বলেছিলেন যে “যুক্ত নির্বাচকমণ্ডলীর দ্বারা নির্বাচিত সংযুক্ত সরকারের ভিত্তিতে উত্তর-পূর্বে বাংলা ঐক্যবদ্ধ থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার উজ্জ্বল আশা আছে।” ইতিমধ্যে শরৎ বোস আবুল হাশিম কর্তৃক স্বাক্ষরিত বাংলার কংগ্রেস-লীগ নেতাদের চুক্তি প্রকাশিত হয়েছিল। একই দিনে ডোমিনিয়ন প্রধানমন্ত্রীদের কাছে প্রেরিত টেলিগ্রামে এটলী “উপমহাদেশে দুটি বা সম্ভবত তিনটি রাষ্ট্রের উদ্ভবের” সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন।ibid., 964 ।

মাউন্টব্যাটেন নিজেও কিছুদিন ধরে হিন্দুস্থান ও পাকিস্তান থেকে পৃথক ঐক্যবদ্ধ বাংলার কথা চিন্তা করেছিলেন। ২৬শে এপ্রিল সুরাবর্দি বাংলাদেশের জাতীয় নেতা সোহরাওয়ার্দীকে পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা এই অপনামে ডাকে সাম্প্রদায়িকতা থেকে বামরাও মুক্ত হতে পারলনা।অথচ ইংরেজিতে তার নামের বানান হচ্ছে Suhrawardy সম্পাদক যখন মাউন্টব্যাটেনের কাছে ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন বাংলার প্রস্তাব করেন এবং বলেন যে “যথেষ্ট সময় পেলে তিনি বাংলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হবেন বলে বিশ্বাস করেন” তখন এই প্রস্তাবের পক্ষে মাউন্টব্যাটেনের সমর্থন ছিল ibid., 459 ।

ওই দিনেই তিনি জিন্নাকে সুরাবর্দির সোহরাওয়ার্দী কথা জানান এবং জিন্নার সম্মতি পেয়েছিলেন ibid.,452। ২৮শে এপ্রিল মাউন্টব্যাটেন বারোজকে জানালেন যে, তার এবং তার ব্রিটিশ সহকর্মীদের “পরিকল্পনা পাকিস্তান ও হিন্দুস্থান থেকে পৃথক অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত রেখেছে। জিন্না কোনো আপত্তি করবে না”ibid.,472 । পৃথক স্বাধীন দেশ হবার সম্ভাবনা যাতে বেশি হয় সেইজন্য ১লা মে মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব দিলেন বাংলা থেকে নির্বাচিত সংবিধান সভার সদস্যরা প্রথমে ভোট দিয়ে ঠিক করবেন যে তারা স্বাধীন বাংলার পক্ষে, না হিন্দুস্থান বা পাকিস্তানে যোগদান করতে চান। পরে তারা বাংলা ভাগ হবে কিনা সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন ibid., 511-2, 539,551।

২রা মে বারোজকে মাউন্টব্যাটেন জানালেন বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য আর একটা বিকল্প হিসাবে বাংলায় সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সমস্ত ভোটদাতাদের মতামত গ্রহণ করার উপর জোর দেওয়া যেতে পারে ibid., 554-5। ৩রা মে কিরণশঙ্কর রায় যখন মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে দেখা করলেন তখন সংবিধান সভার সদস্যদের ভোটভুটির মাধ্যমে অথবা গণভোটের মাধ্যমে বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীন থাকার অধিকার দেবার যে পরিকল্পনা মাউন্টব্যাটেন করেছিলেন তার কথা কিরণশঙ্করকে বললেন। মাউন্টব্যাটেনের কাছ থেকে কিরণশঙ্কর যখন শুনলেন যে সোহরাওয়ার্দী যুক্ত নির্বাচকমণ্ডলী এবং সংযুক্ত মন্ত্রিসভাতে সম্মত তখন তিনি উল্লসিত হলেন ibid., 586। ৪ঠা মে বারোজ মাউন্টব্যাটেনকে চিঠির মাধ্যমে ও টেলিগ্রাম করে জানালেন বাংলার জনগণের মতামত নেবার জন্য গণভোট হতে পারে, তার জন্য কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে ibid., 615, 714। তখন স্থির ছিল যে ব্রিটিশরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে ১৯৪৮সালের জুনের মধ্যে। অতএব বাংলায় গণভোট সম্পূর্ণ সম্ভব ছিল। বাংলা ঐক্যবদ্ধ থাকবে না বিভক্ত হবে এই প্রশ্নটি শুধু সেদিনের ৬ কোটির কিছু বেশি বাঙালীর কাছেই নয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পক্ষেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।৭ই মেতেও মাউন্টব্যাটেন বলেছেন যে সোহরাওয়ার্দী তাকে জানিয়েছেন যে জিন্না স্বাধীন বাংলাতে রাজি আছেন ibid., 657। মাউন্টব্যাটেন তখন ওই প্রশ্নে গণভোট বা সাধারণ নির্বাচনের কথা ভাবছিলেন। কিন্তু তার পরেই মাউন্টব্যাটেনের মত সম্পূর্ণ বদলে গেলো। ৮ই মে তে তিনি তার চিফ অব স্টাফ লর্ড ইসমে Lord Ismay কে লন্ডনে টেলিগ্রাম করে জানালেন, ভি. পি. মেননের মাধ্যমে প্যাটেল ও নেহরু জানিয়েছেন যে যতদিন না নতুন সংবিধান সম্পূর্ণ তৈরি হচ্ছে ততদিনের জন্য তাঁরা ডোমিনিয়ন স্টেটাস ডোমিনিয়ন স্টেটাসের আর কোনো শোভন নাম নেই নির্দিষ্ট সময়ের আগে চান। ক্ষমতা হস্তান্তরের তারিখ এগিয়ে দিতে হবে। মাউন্টব্যাটেন লিখলেন,, “এ পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পক্ষে যত সুযোগ এসেছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা অবশ্যই প্রশাসনিক বা অন্য কোনো বাধা মানবো না”ibid.,699-emphasis added।


৯ই মে এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব আমেরিকার প্রতিনিধিকে প্যাটেল বললেন তারা চান শীঘ্র ডোমিনিয়ন স্টেটাস দেওয়া হোক ibid., 716-emphasis added। ১০ই মে মাউন্টব্যাটেন ও তার সহকর্মীদের এক বৈঠকে নেহরু বললেন ডোমিনিয়ন স্টেটাসের ভিত্তিতে যত শীঘ্র সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক ibid.,732-emphasis added।
ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি ডোমিনিয়ন অবশ্য পরিবর্তিত নামে থাকবে এই ইচ্ছা জানিয়ে নেহরু এবং প্যাটেল যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন তাতে মাউন্টব্যাটেনের উল্লাসের কারণ ছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে চাইছিল যে ভারত ডোমিনিয়ন বা ‘কমনওয়েলথ’এর সদস্য থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক মারাত্মক পর্যায়ে ১৩ই এপ্রিল ১৯৪৩ এ ভারতসচিব লিওরপাল্ড এমেরি Leopold Amery প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে লিখেছিলেন “আগামী দশ বছর ভারতবর্ষকে কমনওয়েলথের মধ্যে রাখা আমাদের সামনে সব থেকে বড় কাজ… এবং ব্রিটিশ কূটনীতির সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত”TOP.III, 895-7-emphasis added।
একই মর্মে এমরি ১৯৪৩সালের ৯ই মে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইডেনকেও লিখেছিলেনibid.,955। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ওয়াভেল এবং ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার ভারত-বর্মা কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল “ভারতকে কমনওয়েলথ-এর মধ্যে রাখা আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে”ibid., IV,333-4। এ থেকে কিছু আভাস পাওয়া যায়, ব্রিটিশ শাসকরা ভারতকে ব্রিটিশ কমনওয়েলথের মধ্যে রাখার উপর কী গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। তারা এবং তাদের সামরিক বাহিনীর প্রধানরা কমনওয়েলথের কাঠামোর অপরিহার্য অঙ্গ “the linchpin in the structure of the Commonwealth” বলেই ভারতকে গণ্য করেছিলেন। তারা এ কথা বারবার বলেছেন ibid.,VIII,224;VI.561,659-60,666:passim.Emphasis added।মাউন্টব্যাটেনকে ভারতের ভাইসরয় মনোনীত করে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রী এটলি তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন : সম্ভব হলে ব্রিটিশ কমনওয়েলেথের মধ্যে ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলি নিয়ে এককেন্দ্রিক একটি সরকার “a unitary Government” হবে সেটাই ব্রিটিশ সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। প্রথমত ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে ভাঙন যাতে না হয় তার এবং সমগ্র ভারতবর্ষের ভিত্তি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বজায় রাখার বিরাট গুরুত্বকে আপনি ভারতীয় নেতাদের উপলব্ধি করানোর চেষ্টা করবেন। দ্বিতীয়ত ভারত মহাসমুদ্র অঞ্চলের নিরাপত্তার ব্যাপারে সহযোগিতার ক্রমাগত প্রয়োজন যার জন্য দেশের মধ্যে একটা চুক্তি হতে পারে তার কথাও আপনি বলবেন ibid., iX, 972, 973-4-emphasis added।
অনেকে মনে করেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের প্রত্যক্ষ শাসনের অবসানের আগে ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করতে চেয়েছিল। এ নিছক অনুমান ও ভুল।
কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা গোপনে আরও জানিয়েছিলেন সাময়িক কিছু সময়ের জন্য ডোমিনিয়ন স্টেটাসের কথা বললেও তাদের ভারতবর্ষ কখনো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বা কমনওয়েলথ ত্যাগ করবে না। তবে তাদের এই আশ্বাস গোপন রাখতে হবে, না হলে কংগ্রেস সংগঠনকে ডোমিনিয়ন স্টেটাসে রাজি করানোতে অসুবিধা হবে। মাউন্টব্যাটেনের মত এটলিও খুবই খুশি হয়ে ডোমিনিয়ন প্রধানমন্ত্রীদের সেই সংবাদ জানিয়েছিলেন ibid.,X, 974-5-emphasis added

মাউন্টব্যাটেন ১১ই মে টেলিগ্রাম করে লন্ডনকে জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাদের অবশ্যই ১৯৪৭ সালের মধ্যে ডোমিনিয়ন স্টেটাস দিতে হবে। তারপর তার ফলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কি কি লাভ হবে তা তিনি উল্লেখ করেছেন ibid., 774।অতএব মাউন্টব্যাটেন ঠিক করলেন যে, বাংলার জনমত জানার জন্য গণভোট বা সাধারণ নির্বাচন হবে না, এমনকি বাংলার আইনসভার সদস্যরা বাংলা অবিভক্ত পৃথক রাষ্ট্র থাকবে তার পক্ষে ভোট দেবার অধিকার পাবে না। সমগ্র বাংলা যাবে হিন্দুস্থানে বা পাকিস্তানে, অথবা দু’টুকরো হবে এবং এক টুকরো যাবে হিন্দুস্থানে ও অন্য টুকরো যাবে পাকিস্তানে শুধু এর উপরেই আইনসভার সদস্যরা ভোট দিতে পারবেন। সাম্রাজ্যের স্বার্থের যূপকাষ্ঠে বাংলার কোটি কোটি মানুষের স্বার্থকে বলি দিতে হবে।
বাংলা ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং হিন্দুস্থান ও পাকিস্তান থেকে পৃথক রাষ্ট্র হবে তাতে মুসলিম লীগ নেতাদের সম্মতি ছিল। ২৬শে এপ্রিল মাউন্টব্যাটেন যখন জিন্নাকে (সোহরওয়ার্দী) স্বাধীন ঐক্যবদ্ধ বাংলার প্রস্তাবের কথা বললেন তখন জিন্না একটুও ইতস্তত না করে বলেছিলেন, “আমি আনন্দিত হবো… তারা ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীন থাকুক সেটাই ভালো হবে” ibid.,452।

২৮শে এপ্রিল মাউন্টব্যাটেনের প্রধান সচিব মিয়েভিল Mieville এর সঙ্গে আলোচনার সময় লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী খাঁ বলেছিলেন,
বাংলা কখনও বিভক্ত হবে না এই তার বিশ্বাস তাই তিনি বাংলা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। তিনি মনে করেন যে বাংলা হিন্দুস্থানে বা পাকিস্তানে যোগদান করবে না এবং পৃথক রাষ্ট্র থাকবে ibid.,479। জিন্না ও লিয়াকত তাদের এই সম্মতি বারবার জানিয়েছেন ibid., 472, 512, 554-5, 625, 657।


কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বরাবর বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। আমরা দেখেছি, পাকিস্তান হোক আর না হোক, তবু বাংলাকে ভাগ করতে হবে এই ছিল তাদের অন্যতম দাবি। তারা চেয়েছিলেন বাংলাকে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্ত দিক থেকে পঙ্গু করতে। বিড়লা প্রমুখ মাড়োয়ারী বড় মুৎসুদ্দিদের ঘাঁটি কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গকে তারা কখনো হাতছাড়া করতে প্রস্তুত ছিলেন না।
উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল যে বাংলা বয়স্ক ভোটাধিকার, যুক্ত নির্বাচকমণ্ডলী, সম্মিলিত মন্ত্রিসভা, নিজস্ব সংবিধানসভা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকবে, তার সংহতি অটুট থাকবে এবং বাকি ভারতের সঙ্গে সে তার সম্পর্ক নির্ধারণ করবে। এই নতুন বাংলায় সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে লড়াইয়ের পরিবর্তে সাম্রাজ্যবাদ ও তার পদলেহীদের উৎখাতের জন্য ঐক্যবদ্ধ লড়াই শুরু হবে, অগ্রগতি ও বিকাশের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। কিন্তু এই সম্ভাবনা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব বিনষ্ট করে দিল এবং অন্তহীন ট্রাজেডির শিকার হতে বাংলাকে বাধ্য করলো।

চলবে..................
তথ্যসূত্র ইন্টারনেট সংগ্রহ,
লিখেছেনঃ সুনীতি কুমার ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট বাম তাত্ত্বিক ।



মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০১

শূণ্য পুরাণ বলেছেন: ১৯৪৭ এ বঙ্গভঙ্গের জন্য কংগ্রেসের মনে হয় নি দেবীকে ভাঙ্গছে ১৯০৫ এর মত?
বঙ্গবন্ধু অাত্মজীবনীতে এ বিষয়গুলো উল্লেখ অাছে।

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৩৮

হাকিম৩ বলেছেন: ধন্যবাদ ।

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


আজকের পাকিস্তান ও আজকের বাংগালী দেখে কি মনে হয় না যে, বাংলার মুসলমানেরা হিন্দুদের সাথে থাকতে চাহেনি? বাংগালীদের মাঝে পড়ােখা ছিল না, হিন্দুরা মোটামুটি পড়ালেখা করার দিকে ছিলো; সেটা এ,কে, ফজলুল হককে ভীত করে দেয় যে, বাংলার মুসলমানেরা হাল চষবে, হিন্দুরা দেশ চালাবে; সেখান থেকে আলাদা; কারো স্বার্থ ছিলো না।

৩| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫১

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: ব্রিটিশ শাসনামলে বেশ ক'বার হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হয়। এই প্রেক্ষাপটে মুসলিম নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনেক দাবি দাওয়া করে তার মধ্যে অন্যতম হলো মুসলিম সংখা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে অালাদা প্রদেশ। এর অন্যতম ফল হলো ১৯০৫ সালের বঙ্গোভঙ্গো।তবে বঙ্গোভঙ্গের পিছে অন্য অারেকটি কারণও কাজ করে বলে অনেকে ধারণা করেণ, তাহলে ব্রিটিশ সরকার বিরোধী অান্দোলনে বঙ্গো প্রদেশের অগ্রণী ভূমিকা পালন।

অপরদিকে, পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশ পাকিস্তান একত্রে অালাদা প্রদেশ হয় ধর্মের উপর ভিত্তি করে।

৪| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৩

টারজান০০০০৭ বলেছেন: "পরিস্থিতি এমনই ছিল যে বাংলার ভাগ্য বাংলার জনগণের উপর নির্ভর করছিল না নির্ভর করছিল সম্পূর্ণ ভাবে বাইরের তিনটে শক্তি উপর, আর তাদের মধ্যে আপস এবং চুক্তির উপর।"------------- এখনো পরিস্থিতি এমনি আছে ! শুধু খেলোয়াড় চেঞ্জ হইছে !

৫| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৭

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট।

৬| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০২

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: আমরা যতই সাম্প্রদায়িকতা বলিনা কেন, পৃথিবীতে ধর্ম আর অর্থনীতির উপর ভিক্তি করেই সমস্ত ভাগাভাগি হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.