নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

. সোশ্যাল সাইন্সে এম এস এস .ছোটকাল থেকে সাংস্কৃতিক কর্ম কান্ডের সাথে যুক্ত . লেখা লেখি শুরু স্কুল জীবনে . পেশাগত জীবনে সাংবাদিক হলেও ব্লগিং - লেখা লেখি আমার নেশা - ভালোলাগা. যুক্তি -তত্ব -বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানবতার জাগরণই আমার উদ্দেশ্য .

মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ

মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপরাধীরা জানে এটা বাংলাদেশ!!!!

২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:২৩


একটা সময় ছিল যখন আমার কাছে পহেলা বৈশাখ এর অর্থ ছিল আমের বিয়ে ৷ এপ্রিলের ১৪ তারিখ অর্থাৎ বৈশাখের ১ তারিখ আমের বিয়ে হয় (কার সাথে হয় সেটা তখনও জানতাম না, এখনও জানিনা)৷ আমের বিয়ে (পহেলা বৈশাখ) হওয়ার আগে আম খাওয়া যায় না, খেলে পেটে অসুখ হয় ৷ এ কারণে আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কখন পহেলা বৈশাখ আসবে, কখন আমের বিয়ে হবে আর কখন আমি আম খেতে পারব ৷
এরপর আরেকটু বড় হলাম, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে উচ্চবিদ্যালয়ে ৷ সবকিছুর সংজ্ঞা তখন পরিব্যাপ্ত হচ্ছে আমার কাছে ৷ পাঠ্যপুস্তক থেকে জানতে পারলাম পহেলা বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম দিন ৷ বাঙালি বলেই সবাই এতো ধুমধাম করে বাংলাবর্ষের প্রথমদিন উদযাপন করে, শতবর্ষ ধরে বাঙালিদের সাথে জড়িয়ে থাকা ঐতিয্যের সাথে ৷
পহেলা বৈশাখ মানে পান্তা-ইলিশ, মেলা, ব্যবসায়ীদের নতুন হালখাতা, দোকানে দোকানে মিস্টি বিতরন ৷ পহেলা বৈশাখের কয়েকদিন আগে থেকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি, চারদিকে সাজ সাজ রব দেখে আমারো মনে এসবের ছোঁয়া লাগত ৷ ইচ্ছে হতো বের হয়ে দেখি এমন উৎসবমুখর দিনে সবকিছু দেখতে কেমন লাগে ৷ ধীরে ধীরে পহেলা বৈশাখ আমার পরানের উৎসব হয়ে গেছে।


এবার মূল প্রসঙ্গে আসি ৷ ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা যা নিয়ে পত্র পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে, কতো আলোচনা সমালোচনা হয়েছে, সেটা হলো বর্ষবরণ উৎসবে নারী নির্যাতন ৷ শুরুতে আমার লেখা থেকে হয়তো বুঝতে পেরেছেন পহেলা বৈশাখ নিয়ে আমার আগ্রহ, নারি নির্যাতনের ঘটনায় আমি পুরুষ হিসাবে লজ্জিত ,নারীর চোখে অপরাধী , এতোগুলো মানুষের সামনে নারী নির্যাতন হয়েছে, এমনকি বাচ্চাদের সামনে মাকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করা হয়েছে এসবের কারণে তো রাস্তায় বের হতেও লজ্জা হয়৷ একটা পুরুষ মানুষকে দেখলেই নারীরা মনে করবে এটা যদি এসে গায়ে হাত দেয়! পুরুষগুলোর চেহারায় তো লম্পট আর ভালো মানুষের সীলমোহর লাগানো থাকেনা ৷ সামনে একজন পুরুষকে দেখলে মনে ঘৃণা জাগতে পারে কিন্তু বাস্তবে হয়তো সে কারো সুপুত্র, কারো চরিত্রবান ভাই, কারো বিশ্বস্ত স্বামী ৷ পরপুরুষ দেখলেই মনে ঘৃণা আর আতঙ্ক জেগে উঠা স্বাভাবিক ৷ কারন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাটা এমনই ৷ সেদিন টিএসসি চত্বরে যে মেয়েগুলোর উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছিল আমার মন বলছে সেখানে হয়তো আমার কোন বান্ধবী ছিল, কোন বোন ছিল, অস্বাভাবিক কিছু না ৷ আর যারা এ জঘন্য কাজ করেছে তারাও কারো ছেলে, কারো ভাই, কারো স্বামী আবার কারো বাবা ৷ কিন্তু তাদের পরিবারের কেউ হয়তো মনে স্থান দিতেই পারবেনা তাদের পরিবারের এই মানুষটা শুকরের চেয়েও নিম্মস্তরের জন্তুর মতো আচরন করেছে ৷ ব্যাপারগুলো এতোটাই পীড়াদায়ক ৷ কিন্তু এসব কেন হচ্ছে? কারন কি?
যখন কেউ কোন একটা কাজের ক্ষেত্রে নিশ্চিন্ত হয়ে যায় প্রতিবাদ করার, বিচার করার কেউ নেই এবং কোন ভয় থাকে না তখন সে ঐ কাজটা নির্ভয়ে করতে থাকে ৷ তার কোন অপরাধবোধ, ভয়, দ্বিধা কাজ করেনা ৷ যেমন সহজ একটা উদাহরণ দিই-
একটা প্রাইভেট টিউটর তার ছাত্রীকে পড়ানোর সময় বিভিন্ন অযুহাতে তার শরীর স্পর্শ করে ৷ ছাত্রীটা নিষেধ করেনা, কোন প্রতিবাদও করেনা ৷ তখন সে প্রতিদিন নির্দ্বিধায় তার কাজের পুনরাবৃতি করতে থাকে ৷ অথবা মেয়েটা বাঁধা দিলেও লজ্জায়, ভয়ে তার অভিভাবককে এ ব্যাপারে কিছু জানায় না ৷ অথবা জানালেও তারা বিভিন্ন কারণে প্রাইভেট টিউটরকে কিছুই বলেনা, তখন সে প্রশ্রয় পায় ৷ ভাবে "ধুর, একটু হাত দিলে কিছু হবেনা, ওরা আমাকে কিছু বলবেনা"৷

এখন আসি টিএসসি চত্তরের ঘটনায় ৷ সেদিন এতগুলো নোংরা মানুষ জনসম্মুখে তাদের কার্যসিদ্ধি করেছে, একটু ভাবুন তো তারা এ সাহস পেল কোথায়? শুধু প্রতিবাদ করলে, লেখালেখি করলেই কি শেষ? গলা চড়িয়ে যদি বলি শাস্তি চাই তাহলেই কি হয়ে গেল? সমস্যা সমাধানের জন্য সমস্যার উৎপত্তিস্থল খুঁজে বের করে সেটাকেই নির্মূল করতে হবে ৷ সমস্যার উৎপত্তি কিন্তু আমাদের দ্বারাই হচ্ছে, ঐ নর্দমার কীটগুলোকে আমরাই সৃষ্টি করেছি, আমরাই এখন লালন পালন করে বড় করে তুলছি ৷ ওরা আগে থেকেই এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত ছিল পহেলা বৈশাখে মেয়েগুলোকে ইচ্ছেমতো **** করলেও কেউ কিছু বলবেনা ৷ হয়তো কয়েকদিন খুব কথা হবে তারপরই সব চুপচাপ হয়ে যাবে ৷ আপনারাই বলুন এখন কি সেটা হয়নি? প্রথম কয়েকদিন সরগরম থাকলেও এখন আর এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না ৷ অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে আড়ালে ৷ বলতে বাধ্য হচ্ছি, অপরাধীরা জানে এটা বাংলাদেশ ৷ এখানে অপরাধ করে পার পাওয়া যায় ৷ এখানে বিচারের নামে প্রহসন হয় ৷ ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালীদের কাছে রুবেলের অপরাধ ঢাকা পড়ে যায় কারণ রুবেল মাঠে সবার নায়ক আর ভুক্তভোগী হ্যাপীর কপালে জোটে ক্যারেক্টারলেস এর খেতাব ৷ এটারও সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত ছিল ৷ রুবেল বা হ্যাপী যেই দোষী প্রমাণিত হয় তাকে শাস্তি প্রদান করা উচিত ছিল ৷ কিন্তু আমাদের দেশে যেকোন ব্যাপারই ঝড়ের মতো আসে আবার চলে যায়, সবকিছু শান্ত হয়ে যায় ৷ এরকম আরো অনেক ঘটনাই আছে যেগুলো ধামাচাপা পড়ে গেছে ৷ সুবিচার হয়না বলেই মানুষরুপী পশু গুলো দাপটের সাথে অন্যায় করে যাচ্ছে ৷ টিএসসি চত্তরে যা হয়েছে তার কারনও এটাই; ওরা প্রশ্রয় পাচ্ছে, সাহস বাড়ছে ওদের ৷ আর এটা একদিনে হয়নি ৷ অনেকদিন ধরেই এর ধারাবাহিকতা চলে আসছে ৷ আপনাদের মনে আছে কিনা জানিনা ইংরেজি নববর্ষেও চলেছিল এই নারী নির্যাতন ৷ উৎসবের ডামাঢোলে চাপা পড়ে গেছে নারীদের আর্তচিৎকার ৷ এসব কারনে উৎসবকে আর উৎসব মনে হয়না, মনে হয় যৌনাচারের টিকেট ৷ অতিসত্তর এগুলোর দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে জেনে রাখুন অদূর ভবিষ্যতে পশুগুলোর শিকার আমরা যে কেউই হতে পারি ৷ তাই আমাদের উচিত অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়া ৷ আর একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, এই টিএসসি'র ঘটনাকে নিয়ে কতো নাটক! সিসিটিভি ফুটেজে নাকি যৌননির্যাতনের কোন চিহ্ন পাওয়া যায় নি, ওটা নাকি গণধোলাইয়ের ভিডিও ৷ অথচ অপরাধীদের ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ পত্র-পত্রিকা, অনলাইন, সোসাল নেটওয়ার্ক গুলোতে একেক দিন একেক রকম নিউজ দেখা যায় ৷ ঘটনাকে ভিন্নধারায় প্রবাহিত করার কতো প্রচেষ্টা! এগুলো কি অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য নয়? এভাবেই তো জানোয়ার গুলোকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে ৷
সবশেষে আরেকটা দিক তুলে ধরছি ৷ পহেলা বৈশাখের একটা জনপ্রিয় গান হচ্ছে "মেলায় যাইরে" ৷ এই জনপ্রিয় গানটার একটা লাইন "বখাটে ছেলের ভীড়ে ললনাদের রেহায় নাই" ৷ মূদ্রার যেমন দুটো পিঠ আছে এই লাইনটারও দুটো অর্থ বের করেছি আমি ৷
এক- মেলায় বখাটে ছেলে থাকবেই এবং তাদের হাত থেকে ললনারা রেহায় পাবে না, এটারই স্বীকৃতি দিয়েছে গানটা ৷ অর্থাৎ মেয়েরা মেলায় গেলে বখাটে কর্তৃক লাঞ্চিত হবে এটাকে চিরন্তন সত্য বাণী করা হয়েছে এবং এটা অখন্ডনীয় ৷ অনেকটা "মাথা থাকলে মাথা ব্যথা হবেই" এ টাইপের ৷
দুই- এটা একটা সতর্কবাণী ৷ মেলায় বখাটে ছেলে থাকবে, তারা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করবে এবং মেয়েরা এদের হাত থেকে বাঁচতে পারবে না ৷ গানের এ লাইনটা দ্বারা মেয়েদের স্পষ্টভাবে সতর্ক করা হচ্ছে তোমরা মেলায় যেও না, গেলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে ৷
এখন কথা হচ্ছে, কেন? মেলায় বখাটে ছেলে থাকবে কেন? মেলা কি শুধু বখাটে ছেলেদের দৌরাত্ম করার স্থান? শুধু মেলা কেন, যেকোন এলাকায়, যেকোন স্থানে এমনকি এই দেশে কেন বখাটেরা থাকবে? ওদের তো শাস্তির আওতাধীন থাকা উচিত, লোকসম্মুখে নির্ভয়ে ওরা কেন ঘুরে বেড়াবে? আর এই বখাটেদের জন্য মেয়েরা ভয়ে বের হবেনা কেন? শালীনতা বজায় রেখে মেয়েরা যেকোন স্থানে যাওয়ার অধিকার রাখে ৷ ফ্রেন্ডদের সাথে, পরিবারের সাথে মেয়েরা উৎসবে শামীল হতেই পারে ৷ কিন্তু এই বখাটে দের জন্য মেয়েরা বাইরে কতোটা নিরাপদ? কোথাও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটলে আমরা প্রথমেই ধরে নিই নিশ্চয়ই মেয়েটা অশালীন পোশাক পরিহীতা ছিল, অথবা মেয়েটা উগ্র ছিল ৷ পর্দা করলে হয়তো এমন ঘটতো না ৷ কিন্তু আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি সম্পূর্ণ পর্দা করেও আমার পরিচিত অনেকে ইভটিজিং এর শিকার হয়েছে ৷ আসলে বিকৃত চরিত্রের পুরুষরা কে বোরখা পড়েছে আর কে পড়েনি সেটা দেখেনা ,মেয়ে দেখলে তাদের পশুত্ব জেগে উঠে। সাম্প্রতিক বাসে গনধর্ষনের তারই ধারাবাহিকতা

আমার উপলব্দী বলছে, বর্তমান পরিস্থিতে সর্ব স্তরের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টানো খুব জরুরী আর ভীষন জরুরী সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা ৷ তাহলে বখাটে, যৌন নির্যাতন এবং সামাজিক অপরাধগুলো একদিন সমাজ থেকে সমূলে উঠে যাবে ৷
আমার প্রার্থনা এই উপলব্ধি টা সবার হোক এবং এর শীঘ্রই বাস্তবায়ন হোক ৷

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.