নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

. সোশ্যাল সাইন্সে এম এস এস .ছোটকাল থেকে সাংস্কৃতিক কর্ম কান্ডের সাথে যুক্ত . লেখা লেখি শুরু স্কুল জীবনে . পেশাগত জীবনে সাংবাদিক হলেও ব্লগিং - লেখা লেখি আমার নেশা - ভালোলাগা. যুক্তি -তত্ব -বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানবতার জাগরণই আমার উদ্দেশ্য .

মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ

মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাগরিকত্ব আইন :কতটুকু প্রবাসী বান্ধব !!!

৩০ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬

প্রাকআধুনিক তথা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে মানুষ নিজেকে একটি দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেই পছন্দ করতো। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে সাথে এই ধারণার পরিবর্তনও হতে থাকে। বিশ্ব রাজনীতি এবং মানুষের জীবনযাপনের ধরনে এবং প্রত্যাশায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। জীবিকার প্রয়োজনে অথবা নিরাপদ ও উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় পাড়ি দিচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে। উন্মুক্ত বিশ্ব বা ভিসাবিহীন যাতায়াত নিশ্চিত করা না গেলেও মানুষের চলাচল এবং বসতি স্থাপনে এসেছে আমূল পরিবর্তন। বর্তমানে চলছে বিশ্বায়নের রমরমা অবস্থা। মানুষ আজ এখানে থাকলে কাল কোথায় থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর এইসব কারনেই গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাজার অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রই দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদান এবং অর্জনকে উৎসাহিত করতে শুরু করে।

একজন মানুষ যে কয়েকটি উপায়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব অর্জন করে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো কোন অভিবাসী সেই দেশের দেশভুক্ত নাগরিক হওয়া। এ ক্ষেত্রে তার পূর্ববর্তী অর্থাৎ যে দেশে সে জন্ম গ্রহণ করেছে সেই দেশের নাগরিকত্বও বহাল থাকে। দ্বিতীয়ত: কোন অভিবাসীর সন্তান হিসেবে বা জন্ম সুত্রে নাগরিকত্ব অর্জন। তৃতীয়ত: একজন মানুষ অন্য কোন দেশের নাগরিককে বিয়ে করার মাধ্যমে সে দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সে তার পূর্বের দেশের নাগরিক হিসেবে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অধিকার রাখে যদি না কোন আইন দ্বারা তা নিষিদ্ধ করা হয়।

সাম্প্রতিককালে ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট তাদের একটি পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে যে বিশ্বের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ দেশ বিভিন্ন উপায়ে দ্বৈত-নাগরিকত্ব প্রদান করছে। সাধারণত: ধনী দেশ গুলোর মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি পরিমানে লক্ষ্য করা যায়। ইউরোপ, আমেরিকা এবং ব্রিটেন সহ বিশ্বের উন্নত দেশ গুলো অন্য দেশের মেধাবী অথবা তাদের শ্রম কাজে নিয়োজিত ভিনদেশী নাগরিকদের বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকত্ব প্রদান করে আসছে। অতি সম্প্রতি এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর সহ অন্যান্য উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ গুলো কিছুটা ভিন্ন উপায়ে হলেও পশ্চিমা দেশ গুলোর দেখানো পথেই হাঁটছে। এতে করে তারা অর্থনৈতিক ভাবে যেমন সমৃদ্ধশালী হচ্ছে তেমনি সাংস্কৃতিক ভাবেও লাভবান হচ্ছে।

তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার এখনো এই ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়নি।এমনকি মোট জনসংখ্যার কি পরিমান লোক অন্যদেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেছে এবং জন্মসুত্রে প্রবাসে নাগরিকত্ব প্রাপ্তদের কোন সঠিক পরিসংখ্যানও সরকারের কাছে নেই। অথচ বাংলাদেশ প্রতি বছর বিলিয়ন ডলারের ফরেন রেমিটেন্স নিয়ে গর্ব করছে। প্রবাসীরা বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে, আর এজন্যই প্রবাসীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

১লা ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ”নাগরিকত্ব আইন ২০১৬” নামে একটি বিলের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। বিদ্যমান “নাগরিকত্ব আইন ১৯৫১” এবং “বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (সাময়িক) অধ্যাদেশ ১৯৭২” এর সমন্বয় ও হালনাগাদ করার মাধ্যমে নতুন আইনের এ খসড়া প্রণীত হয়েছে। যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবেই অনুমিত হতে পারতো। কিন্তু বিধিবাম| প্রস্তাবিত আইনটি পর্যবেক্ষণে এর দুর্বল খসড়া এবং অনিচ্ছাকৃত একাধিক ভুলের বিষয়টি এরই মধ্যে আইনজীবীসহ বিভিন্ন সচেতন মহলের গোচরীভূত হয়েছে। এ আইনে ৬ অধ্যায়ে ২৮টি ধারা রয়েছে। এতে নাগরিকত্ব লাভ, নাগরিকত্ব পেতে অযোগ্যতা ও নাগরিকত্ব বাতিলের বিধান রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি ধারার উপর পাঠকদের মতামত কিংবা আলোচনার স্বার্থে দৃষ্টিপাত করা যেতে পারে-
প্রস্তাবিত আইনের ৫ নং ধারায় বলা হয়েছে ‘যদি কোন ব্যক্তি এই আইন কার্যকর হবার পূর্বে প্রবাসে অবস্থিত পিতা-মাতার ঔরশে জন্ম গ্রহণ করে তাহলে সে বাংলাদেশের নাগরিক বলে বিবেচিত হবে। তবে তাকে অনুর্দ্ধ দুই বছরের মধ্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের যে কোন দূতাবাসে রেজিস্টার্ড হতে হবে। এই ধারার সবচেয়ে ভীতিকর যে দিকটি পরিলক্ষিত হয় তা হলো “যদি কেউ দুই বছরের মধ্যে রেজিস্টার্ড না হতে পারে তাহলে সে বাংলাদেশের নাগরিক বলে বিবেচিত হবেনা।” এক্ষেত্রে ভাবী প্রজন্মের অনেক যোগ্য ও মেধাবী নাগরিকের সেবা থেকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের বঞ্চিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে, যা আমাদের মতো উন্নতি সাধনে সচেষ্ট দেশের জন্য প্রয়োজনীয়।

ধারা ৬ অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি অন্যদেশের নাগরিকত্ব অর্জনের ফলে জন্মসুত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারিয়ে ফেলে এবং পরবর্তীতে আবার নাগরিকত্ব ফিরে পেতে চায় তাহলে তাকে সরকারের কাছে যথাযথভাবে আবেদন করতে হবে এবং সরকার সে বিষয়ে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। যার ফলে ওই ব্যক্তির নাগরিকত্বের সিদ্ধান্তটি সময়সাপেক্ষ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কবলে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে উদ্বিগ্ন হবার বিষয় হলো দ্বৈত নাগরিকত্বের ফলে কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, সংসদ সদস্য, বিচারপতি এমনকি স্থানীয় কোন নির্বাচনেও অংশ গ্রহণ করতে পারবেনা, যা উক্ত আইনের ১৩ নং ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আইন কার্যকরের ফলে শুধুমাত্র ভোট প্রদান এবং বাংলাদেশে বসবাসের অধিকার ছাড়া প্রবাসীদেরকে অনেকটা Secod Class Citizen অথবা দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসেবেই গণ্য করা হবে।


দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থাকলেও তাতে একটি আত্মঘাতি বিষয় জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাহলো-দ্বৈত নাগরিকরা বাংলাদেশ সরকারের কোনো চাকরি করতে পারবেন না। জাতিসংঘের সদ্য বিদায়ী স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. এ কে আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই যুগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সূত্রে আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। তার সুদীর্ঘ প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতাকে উজাড় করে দিয়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে কাজ করেছেন। শান্তি মিশনে বাংলাদেশের সর্বাধিক সৈন্য সরবরাহের পাশাপাশি হেলিকপ্টারসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী ভাড়া দিয়েও এখন কোটি কোটি ডলার বাংলাদেশের আয় হচ্ছে। বাংলাদেশের সমূদ্র বিজয়সহ জাতিসংঘে বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের পিছনে সক্রিয়ভাবে দিনরাত কাজ করেছেন ড. মোমেন। বিশ্বজুড়ে ড. মোমেনের মতো আরো অনেক বিশিষ্টজন আছেন। নিউইয়র্ক, লন্ডন, টরেন্টো, সিডনি, রোম, প্যারিসসহ বিশ্ব জুড়ে সপ্তাহে প্রবাসীদের যে অন্তত ১শ অনুষ্ঠান হয় তার প্রতিটিতেই আলোচনার বিষয় থাকে বাংলাদেশ। কানাডা অধিবাসী প্রয়াত রফিকুল ইসলাম যদি দাবী না তুলতেন তাহলে ২১ শে ফেব্রুয়ারী কখনোই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেতো না। কাজ করার সুযোগ পেলে সকলেই দেশের জন্য কাজ করতে রাজি আছেন। কিন্তু নতুন এই আইনে প্রবাসীদের দেশে ফিরে যাবার পথ রুদ্ধ হবার অথবা দেশকে নিয়ে ভাবনার সুযোগকে সংকোচিত করার একটি প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আপাত: দৃষ্টিতে আইনটি পাশের উদ্যোগকে সময়ের দাবী পূরণ মনে হলেও বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে এর সুস্পষ্ট বৈপরীত্য লক্ষনীয়| বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ এ বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান| উপরন্তু সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রকে তার নাগরিকের জন্মস্থান অনুযায়ী বিবেচনা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রকে চাকুরীক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ প্রদানের বিধান নিশ্চিত করেছে। প্রস্তাবিত বিলটি যদি সত্যিই আইনে পরিনত হয় তাহলে ইহা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে বলেই বিশিষ্ট আইনজীবীসহ সচেতন মহল ধারণা করছে। এমনকি আইনগত এসব দুর্বলতা এবং নীতিগতভাবে প্রবাসীদের সুবিধাবন্চিত করার নিমিত্তে উচ্চ আদালতে আইনটিকে চ্যালেন্জ করে রিট হবার সমূহ সম্ভাবনাও রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমান সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য হতে হলে তাকে অন্যদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে শপথ নিতে হবে। এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে বর্তমান বিধি-বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোন আইন বলবৎ করতে হলে হয় পুরনো আইনটি সংশোধন করা নতুবা তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি যুগোপযোগী কাযর্করী আইন প্রনয়ন করতে হবে – যা তার সকল নাগরিকদের সমান সুযোগ ও অধিকার প্রদান করবে।
সরকার যদি প্রস্তাবিত বিলটিকে আইনে পরিনত করে তাহলে প্রবাসী বিনিয়োগকারী কিংবা মেধাবী প্রজন্মকে দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা। তাই সরকারের উচিত প্রবাসীসহ সর্বমহলের সাথে আলোচনা করে একটি সময়োপযোগী আইন প্রনয়ন করা। যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাংলাদেশমুখী করে দেশের বিভিন্নস্তরে বিনিয়োগ ও অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়ে একটি শক্তিশালী ও সুন্দর দেশ গঠনে সহায়ক ভুমিকা পালন করতে সাহায্য করবে। আর না হলে মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময়ে দেশের ক্রান্তিলগ্নে প্রবাসীরা যে অবদান রেখেছিলেন প্রকারান্তরে তাকে অপমান করা হবে।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক ও ব্লগার

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মে, ২০১৬ সকাল ৯:৩৫

বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকএ নিরবাচনে দাড়াতে পারবে না এই আইন হোক, তাহলে জয়, তারেক এরা এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে। সরকারী চাকরীর সুযোগ রাখা হোক, কারণ যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে তাদের বেশিরভাগইই দক্ষ। এটাও দেশের জন্য কাজে লাগানো দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.