নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শঙ্খচিল

রুপন হাবিব রহমান

রুপন হাবিব

রুপন হাবিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গিবাদ ঃ মদতদাতাদের ধরার আগে ব্যক্তির চ্যাপ্টার শেষ করা চলবে না

২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৪

১ জুলাই ২০১৬ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো দিন হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে জঙ্গি আছে, আইএস নেই। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের একের পর এক এমন মন্তব্যের মধ্যেই ঢাকার গুলশানে হলি অটিজন রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলা হলো। এতে নৃশংসভাবে নিহত হন ১৮ বিদেশী নাগরিক, দুই জন দেশী ও দুই পুলিশ অফিসারসহ ২২ জন। এছাড়া, ৬ জঙ্গিও কমান্ডো অভিযানে নিহত হন। জঙ্গিরা নিহত হবার আগেই তাদের হাতে নিহত নিরীহ মানুষগুলোর ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত লাশের ছবি প্রকাশ করে আইএস। তাই এটা ভাবা মোটেই অযৌক্তিক হবে না যে, হামলাকারী জঙ্গিদের সাথে আইএস’র প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। নজিরবিহীন এই জঙ্গি হামলায় বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

দেশের এই খারাপ ইমেজের প্রেক্ষিতে এবং ভবিষ্যতে আবারও সম্ভাব্য জঙ্গি হামলা মোকাবেলায় সরকার দৃশ্যত বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাম্প্রতিক নারায়নগঞ্জ অভিযানে জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরীসহ ৩ জন নিহত এবং এর আগে ঢাকার কল্যাণপুরে আরেক অভিযানে ৯ তরুণ নিহত হয়। পুলিশের দাবি, এই দুই অভিযানে নিহতরা সবাই জঙ্গি। এদের কাউকেই জীবিত ধরা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে কল্যাণপুরের ঘটনায় নিহতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়। এদের সবারই শরীরের পেছন দিক থেকে গুলি লেগেছিল। এতে অনেকেরই ধারনা, পালাতে গিয়েই ঐ ৯ জনের মৃত্যু হয়। তাদের জীবিত আটক করার ব্যাপারে পুলিশের আন্তরিকতা নিয়েও তাই অনেকে প্রশ্ন তুলেন। অপরদিকে, পুলিশের দাবি, এদের গ্রেফতারে অভিযান চালাতে গেলে তারা পুলিশের উপর গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ে মারে। ফলে পুলিশ বাধ্য হয়ে অস্ত্র চালালে জঙ্গিরা নিহত হয়। পুলিশের এসব অভিযানে সরকার এবং বিদেশীরা আশ্বস্ত হলেও এ ধরনের অভিযান দেশে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধে কতটুকু কার্যকর এবং তাতে কি জঙ্গিদের মূলোৎপাটন সম্ভব -এ প্রশ্ন থেকেই যায়। সাধারণ মানুষের মনে এ ধরনের প্রশ্ন আসায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যোগ্যতা ও ট্রেনিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এ ধরনের অভিযান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জঙ্গি তামিম চৌধুরী চ্যাপ্টার শেষ হয়েছে, অচীরেই আরও দুই জঙ্গি সেনাবাহিনী থেকে বহিস্কৃত মেজর জিয়াউল হক জিয়া ও চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নূরুল ইসলাম মারজানকেও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের চ্যাপ্টারও শিগগির শেষ হবে। কিন্তু সচেতন মহল মনে করেন, এভাবে চ্যাপ্টার শেষ করা হলে জঙ্গিদের মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। তাদেরকে জীবিত ধরতে হবে। জানতে হবে, কেন - কি কারণে তারা এ পথে, তাদের মদতদাতা কারা ? এসব তথ্য জানা সরকারের জন্য খুবই জরুরী। সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষকে এসব তথ্য জানতে দিতে হবে।
সরকারের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মান্ধ নয়, তারা শান্তি প্রিয়। তাদের আস্থায় নিয়েই জঙ্গি বিরোধী প্রচারণা-পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই তরুণ সমাজের কাছে কেউ ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা পৌছাতে পারবে না। এখানে উল্লেখ্য, গুলশানে হামলাকারীরা প্রায় সবাই স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান এবং নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। এদিকে, গত দুই মাসে পৃথক অভিযানে ১২ জন তরুণীকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এদের অধিকংশই বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিক্যালের শিক্ষার্থী। তারা যে এভাবে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয়ে পড়বে তা ছিল ভাবনারও অতীত। তাই অর্থ-বিত্ত ও খ্যাতির পেছনে ক্রমাগত না ছোটে অভিভাবক ও শিক্ষকদের এখন থেকেই তাদের সন্তান ও ছাত্রদের প্রতি আরও দায়িত্বশীল এবং যত্নশীল হতে হবে। সময় দ্রুতই বয়ে যাচ্ছে। তাই পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবার আগেই অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজকে করণীয় ঠিক করতে হবে। নতুবা ভবিষ্যত প্রজন্ম যদি সুশিক্ষা ও মানবিক আদর্শে গড়ে না উঠে তা হলে আমাদের সব অর্জনই বৃথা যাবে। - লেখক : সাংবাদিক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.