নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সরবরে সৌরভ জাগ্রতচিত্তে! !
স্বাধীনতার মাসে পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তাররা সমবেত হয়েছে চারটা দাবি নিয়ে:
১. পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তারদের মাসিক বেতন ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার এ উন্নীতকরণ ও নিয়মিত প্রদান।
২. FCPS, RESIDENT, NON-RESIDENT ডাক্তারদের বকেয়া ভাতা পরিশোধ।
৩. BSMMU এর অধীনে ১২ টি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের RESIDENT এবং NON-RESIDENT ডাক্তারদের ভাতা পুনরায় চালু এবং বকেয়া ভাতা পরিশোধ।
৪. স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন চালু ও বাস্তবায়ন।
সবার জ্ঞাতার্থে বলছি ৫ বছরের কঠিনতম ডিগ্রি MBBS শেষ করার পর, পোস্ট গ্রাজুয়েশন করছে চান্স পেতেও কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। FCPS/MS/MD/POST GRADUATION-DIPLOMA কোর্সে অংশগ্রহণকারী এমন অনেক ডাক্তার আছেন যারা ১০-১২ পরীক্ষা দিয়ে এমন Course এ আসেন। এর মানে এই নয় যে তারা মেধাবী নন। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে পড়ালেখাও তাদের কাছে বিলাসিতা হয়ে দাঁড়ায়।
তারপরও অনেকে সাহস করে এই কোর্সে আসেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হয়ে যেন রোগীদের আরেকটু ভালোভাবে সেবা দিতে পারেন সাথে নিজেকেও প্রতিষ্ঠিত দেখতে পারেন।
চারটা দাবি নিয়ে কথা বলার আগে বলতে চাই FCPS/MS/MD/POST GRADUATION-DIPLOMA Course এ আসা এই ট্রেনিদের বয়স কত জানেন? ন্যূনতম ৩০ ছুই ছুই, অনেকেই বিবাহিত, বাচ্চা আছে। সামনে ঈদুল ফিতর। নয়টা মাস তারা ভাতা পান না। ছয়টা মাস ভাতা বাকি আছে রেসিডেন্ট, নন রেসিডেন্টদের। কতটা মানবতার জীবনযাপন করে তারা কেউ কি খোঁজ নিয়েছেন আপনারা? এই ত্রিশোর্ধ বয়সে যদি শুনতে হয়,আমাদের পেনশনে থাকা বাবা বলছে, "আর কত দিনে শেষ হবে তোর? কবে তোর নিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখব আমরা?"
একটা কথা মনে রাখবেন বাংলাদেশের ১০-১৫ ভাগ ডাক্তাররা উচ্চবিত্ত থাকতে পারে, কিন্তু বাকি জুনিয়র ডাক্তারদের সবার অবস্থাই কিন্তু এক। এই ডাক্তারদের পেটে ভাত নাই, তিনবেলার খাবার একবেলা খেয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কোর্সের অমানবিক জাতাকলে পিষ্ট হয়ে এইসব কোর্স শেষ করেন তারা। আর কোর্স শেষ করার পর কেউ কেউ মানুষ নয় নির্বিকার রোবট হয়ে কর্মক্ষেত্রে ফিরেন।
সেদিন এক ভাই বলল, "তার বাচ্চার দুধ কেনার টাকা নাই, আর কত ধার করবে।" আর কতবার এই ত্রিশোর্ধ বয়সে বাবার কাছে চাইবে। নয়টা মাস বেতন ভাতা ছাড়া এই জীবন কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছেন? অথচ এই কোর্সে থাকা অবস্থায় বাইরে রোগী দেখা যাবে না, বাইরে ইনকাম করার কোন সুযোগ নাই। এ কেমন নিয়ম?
অথচ BCPS/BSMMU আমাদের টাকা দিবে এটা জেনেই কিন্তু আমরা কোর্সে এসেছিলাম। যত্রতত্র মেডিকেল কলেজ তৈরি হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ টাকা উদ্বৃত্ত থেকে আবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত যাচ্ছে। উপরের চেয়ারে বসে থাকা ঐ আমলারা কি দেখেনা, কি মানবতার জীবনযাপন করছে এই দেশের ফ্রন্টলাইন ফাইটাররা! আমাদের দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে এই ৫০ হাজার টাকা কি খুব বেশি কিছু? আপনি যদি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দেখেন তাহলে বাকি দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের ডাক্তারদের চাওয়া এই টাকা কিন্তু সর্বনিম্ন। সুদূর লন্ডনে ডাক্তাররা তাদের মাসিক বেতন ৬০০০ পাউন্ড করার জন্য আন্দোলন করছে আর বাংলাদেশে সেই আন্দোলন হচ্ছে মাত্র ৩৬০ পাউন্ড(৫০০০০ টাকা) পাবার আশায়।
একটা শ্রেণি পেশার মানুষ, ডাক্তারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা এমনভাবে ছড়াচ্ছে, পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সের এই জার্নিটা এতটা কন্টকাকীর্ণ করছে, যেন মনে হচ্ছে একটা শ্রেণি চায় না দেশে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে স্পেশালিস্ট ডক্টর তৈরি হোক। মানুষ যেন সামান্য মাথা ব্যথার জন্যও যেন দেশের বাইরে গিয়ে দেশের টাকা বিলিয়ে আসে,এই ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্ত তৈরি করছে আমাদের দেশের কিছু আমলারা।
এত এত বেকার MBBS Doctor তৈরি করে চাকরি না দিতে পেরে এদেশের আমলারা কি এই ডাক্তারদের রেমিটেন্স যোদ্ধা বানাতে চান? যেন এরা এদেশের পোস্ট গ্রেজুয়েশন জার্নি এর এই হ্যাসেল দেখে দেশ ছেড়ে বাইরে চলে যায়। এবং বাইরে দেশের সুযোগ সুবিধা নিয়ে সেই দেশে সেটেল হয়। তারপর দেশে রেমিটেন্স পাঠায়। দেশের এই পরিস্থিতির কারণে কিন্তু দেশের মেধা পাচার বেড়ে গেছে। দেশের মেধাবী মানুষগুলো যদি চলে যায় তবে বাংলাদেশ এর সেই ক্ষতি কিন্তু হবে অপূরণীয়।
কেন আপনারা নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ তৈরির অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লেগেছেন। এত এত বেকার এমবিবিএস ডাক্তারদের যেখানে জব দেয়ার ,সিকিউরিটি দেয়ার সুযোগ আপনাদের নেই ,তাহলে কেন এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
আমি জানতে চাই, আপনাদের কাছে যদি এই তথাকথিত পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি বিলাসী বলে মনে হয়, তবে বলে দিন এই দেশে এই কোর্স লাগবে না, আমাদের পাঁচ বছরে অর্জিত সব থেকে কঠিন ডিগ্রী এমবিবিএস দিয়েই আমাদের কাজের ব্যবস্থা করে দিন।
সব সময় শুনি গ্রামে ডাক্তার থাকে না। যেসব MBBS ডাক্তার বেকার আছেন তাহলে তাদের চাকরি দিয়ে দিন ,গ্রামে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিন। তৈরি করুন ইনফ্রাস্ট্রাকচার। যেন একটা এক্সরে/ আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার জন্য আমাদেরকে রোগীদের বাইরের কোন প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার কথা বলতে না হয়।
আইনজীবীদের নিয়োগ যদি BCS এর বাইরে আলাদা "বাজুস" এর মাধ্যমে হয়ে থাকে ,তাহলে পেশাজীবী মন্ত্রণালয় তৈরি করে চিকিৎসকদের জন্য আলাদা নিয়োগ কাঠামো তৈরি করুন। তাহলে আমরা বেশ কিছু ডাক্তাররা আর এই পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সের মরন ফাঁদে পা দেবো না।
MBBS পাশের পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রত্যাশী ডাক্তাররা তাদের ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে Bailey Love আর Davidson বই এর অন্ধ প্রেমে পড়ে তাদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ হারাচ্ছেন। আর এই বিশাল ফাঁকা মাঠে সুযোগ নিচ্ছেন হাতুড়ে ডাক্তাররা,কারণ হাতুড়ে ডাক্তারদের কিন্তু FCPS করতে হয়না তাদের MBBS ও লাগে না।
মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে এই দেশের স্পেশালিস্ট ডক্টরদের নামে। ভুয়া চেতনা নাশক ওষুধ তৈরি করে আমাদের সম্মানিত Anesthesiologist ও Surgeon দের বিপদে ফেলা হচ্ছে। রোগীর মৃত্যু স্বজন হারানোর ব্যথা কেউ কি ভুলতে পারে? একজন চিকিৎসক হিসেবে কোন চিকিৎসক চায় না তাদের রোগী তাদের হাতে মারা যাক। আমরা রোগীদের দুঃখে তাদের সাথে সমব্যথী ।
তাই মনে হচ্ছে একটা সংঘবদ্ধ চক্র মিলে যেন আমাদের বিরুদ্ধে লেগেছে তারা চায় বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভঙ্গুর করতে।
কিছু হলেই চিকিৎসকের দোষ, ভুল চিকিৎসার দোহাই দিয়ে সে চিকিৎসককে নিগৃহীত করা হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে। আমরা যদি চিকিৎসা বন্ধ করি ,ওটি বন্ধ করি তাহলে কিন্তু আর কিছু করার থাকবে না। চিকিৎসকেরা যদি রোগীদের অসভ্যতার ভয়ে অপারেশন করা বন্ধ করেন তাইলে কিন্তু সেই ক্ষতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। Surgeon রা কিন্তু সর্বোচ্চ রিস্ক নেন রুগীকে সুস্থ করার আশাতেই। কিন্তু এত বেশি প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করলে তারা কিন্তু আর সেই রিস্ক নিবেন না অপারেশন ও বন্ধ হয়ে যাবে ।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।
বারোটা প্রাইভেট ইনস্টিটিউশন এর ট্রেইনি চিকিৎসকদের এর বেতন হঠাৎ করে বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ যদি করতেই হয় তাহলে কেন সেটা আগে করা হয়নি। কেউ সেখানে আর কোর্সে আসতো না। সবাই কোর্সে আসার আগে জানে যে তারা বেতন পাবে। কিছু মাস বেতন পাওয়ার পর তারা শোনে যে তাদের বেতন-ভাতা আর পাবে না। এটা কি মানা সম্ভব?
কেন প্রতিবার বেতনের জন্য আমাদের লাইনে দাঁড়াতে হবে। আমাদের কাজ কি রোগী সেবা দেয়া ,পড়াশোনা করা আর বেতনের জন্য আন্দোলন করা। গত বছর মার্চে আমরা শুরু করেছিলাম আমাদের কার্যক্রম আজও চলছে। আমরা আমাদের বেতন ভাতা নিয়মিত করণ হোক এটা চাই। যে ভাতা বাকি আছে সেটা অবিলম্বে প্রদান করা হোক, এটাও চাই।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির পথ সুগম করুন। তাহলে দেশ এর ভালো, দশ এর ভালো হবে।
ডাঃ মোঃ হেদাইয়াত ইসলাম সৌরভ
সমন্বয়ক
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,খুলনা।
২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৪৩
হ্যা সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।
২| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৬:৫৮
ফিনিক্স পাখির জীবন বলেছেন: খুব খারাপ লাগছে এই অবস্থা দেখে। চিকিৎসক হিসেবে আমরা শুধু রোগীর চিকিৎসার জন্যই সময় দিতে চাই। আর সেজন্য আমাদের দায়িত্ব তখন রাস্ট্র নেবার কথা, যাতে জনগন নির্বিঘ্নে সর্বোচ্চ সেবাটা পায়।
আমাদের নিজেদের সংসার চলে না, নিজের পরিবার-পরিজনের চিকিৎসা করানোর টাকা নাই, এই অবস্থায় কি খুব ভাল চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব?
কেন যেন চিকিৎসকদের ওপর সবার রাগ!
২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৪৫
হ্যা সৌরভ বলেছেন: সাধারণ মানুষেরা এগুলো বুঝে নাহ। আশা করি একদিন তারা বুঝবে।
৩| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:০০
শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার দাবির সাথে সম্পুর্ণ একাত্ত্বতা পোষণ করছি।
তবে লেখার শিরোনামটা প্রথমে পড়ে একটু আবাক হয়েছিলাম। ডাক্তারদের পোস্ট গ্রাজুয়েশন নিঃসন্দেহে একটা প্রয়োজন। একে বিলাসিতা বলার প্রশ্নই ওঠেনা।
২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৪৫
হ্যা সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।
৪| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:১১
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ট্রেইনি ডাক্তারদের এটা বেতন নয়। এটা একটা সম্মানী।
সম্মানী অবশ্যই সম্মানজনক হওয়া উচিত
২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৪৫
হ্যা সৌরভ বলেছেন: একদম সঠিক বলেছেন।
৫| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:০৭
হ্যা সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।
৬| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:২২
রাজীব নুর বলেছেন: সহমত।
২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৪৬
হ্যা সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।
৭| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৪৮
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: একটা অশুভ চক্র এদেশের শিক্ষা আর চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। এরা অনেকটা সফল।
২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৪৬
হ্যা সৌরভ বলেছেন: আমাদের চোখ কান খোলা রেখে যতদূর সম্ভব প্রতিবাদ করতে হবে।
৮| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:১৩
করুণাধারা বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৬:২৫
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
সহমত।