নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

আইজ্যাক আসিমভ্‌

আমি কার, কে আমার !

আইজ্যাক আসিমভ্‌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ কাল চাক্তি (সায়েন্স ফিকশান)

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫০



(শূন্য)
১৯৬১ সালের ২৯শে অক্টোবর। সোভিয়েত রাশিয়ার নোভিয়া জামালেস্কি দ্বীপপুঞ্জ। সের্ভানি চার্চের কোণায় বিশপ অ্যালেক্সি চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। হাতে তাস্‌বি, সৃষ্টিকর্তার নাম জপছেন। চার্চের অন্যান্য সাথীদের অধিকাংশই গতকাল রাতে বাক্স পেটরা গুছিয়ে চলে গেছে। এখন গুটি কয়েকজন আছে; তবে তারাও চলে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশপ অনড় , তিনি কিছুতেই যাবেন না। সময় কম, তাই সবাই এই গোয়ার বৃদ্ধকে আর টানাটানি করছে না।

গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই রেড আর্মির ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট থেকে নোটিশটা আসে যে , সবাইকে সাত দিনের মাঝে বাধ্যতামূলক ভাবে সরে যেতে হবে। নোটিশের বলা হয়েছে , মহাকাশ থেকে বিরাট আকৃতির একটি উল্কা সোভিয়েত রাশিয়ার দিকে ধেয়ে আসছে। ৩০ অক্টোবর , সকালের মধ্যেই সেটা নোভায়া জেমালিস্কিতে আছড়ে পড়বে। কাজেই ক্ষয়ক্ষতি এড়াবার জন্য জনগ্ণকে উল্লেখ্য এলাকা থেকে ২৯ তারিখের মধ্যে সরে যেতে বলা হয়।

তবে মূল ব্যাপার সবার জানা, বলতে গেলে ওপেন সিক্রেট। ওই দিন বেশ শক্তিশালী একটা নিউক্লিয়ার বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটান হবে। ইতিমধ্যেই আরো বেশ কিছু বিস্ফোরণ ঘটান হয়েছে। টেস্ট সাইটগুলার আশপাশ থেকে নাগরিকদের সরাবার জন্য সহজপন্থা হিসেবে আকাশ থেকে উল্কা এসে পরার আজগুবি গল্প ফাঁদা হয়েছে। বলতে গেলে , নিকিতা ক্রুশ্চেভ মরিয়া হয়ে উঠেছে। যে কোন মূল্যে সর্বাধিক ক্ষমতা সম্পন্ন নিউক্লিয়ার বোম তার চাই ই চাই। স্নায়ু যুদ্ধে সোভিয়েত রাশিয়াকে সেরা হিসেবে প্রমাণ করতেই হবে।

" ফাদার আমরা চলে যাচ্ছি। আপনি আমাদের সাথে আসলে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করতাম। " ভৃত্য ভ্লাদিমির আলেক্সিকে বললেন।
আলেক্সি চোখ খুলে তাকাল। ভ্লাদিমির সহ পেছনে আরো কয়েকজনকে দাঁড়ান দেখা গেল। তিনি তাদের দিকে মৃদু হাসি দিলেন।

" আমি তো আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছি। বয়স আমার ৭৭ পার হয়েছে। দুনিয়াটা অনেক দেখেছি। আর কত! তোমারা যাও। তোমাদের প্রতি দোয়া রইল। পারলে আমার জন্যেও দোয়া কোর।"

এক ভৃত্য কাঁদকাঁদ গলায় বলল " ফাদার আমাদের ক্ষমা করবেন, কোন কারণে বেয়াদপি হয়ে থাকলে। আমরা খাবার , পানি , কিছু ঔষধ রেখে গিয়েছি। একমাস আপনার কোন সমস্যাই হবে না।"

অ্যালেক্সি মৃদু হাসলেন।"ক্ষমা করার প্রকৃত মালিক ঈশ্বরের । আমি কে ,বল ! আর আগামী পরশুই তো এই এলাকা ভেঙ্গে চূড়ে গুড়ে-বালি হয়ে যাবে। এত কিছু রেখে কি লাভ ! আমি বৃদ্ধ মানুষ , কতই আর খাই ,বল! খাবার , পানীয় তোমরা সাথে নিয়ে যাও। আমার জন্য অতি সামান্য রাখলেই চলবে।........................ তোমারা যাও। নিরাপত্তা ও সুখে তোমাদের আগামী দিনগুলো কাটুক।" - বলেই বিশপ নিজের দুই চোখ বন্ধ করলেন। ভৃত্যরা চলে গেল।


(এক)


সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। ফাদার গ্রেগরী চার্চের মূল দরজায় তালা লাগিয়ে দোতলায় নিজের রুমে চলে এলেন। লাইটের সুইচ চাপলেন, কিন্তু জ্বলল না। ইতিমধ্যে নিশ্চয় বিদ্যুত সরবরাহও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ম্যাচ বের করে মোমবাতি জ্বালালেন। একটা গ্লাসে কিছু ফলের রস ঢেলে বিছানায় চুপচাপ বসলেন। কালই ডেড লাইন, মানে বিস্ফোরণটা ঘটান হবে। এই ভয়াবহ অবস্থাতেও তিনি আশ্চর্য রকমের শান্ত রয়েছেন। ধীরে ধীরে ফলের রস পুরোটা খেলেন।

ধাম, ধাম , ধাম। ধাম ধাম ধাম। কেও বাইরের দরজা নাড়ছে ।

" ফাদার , আপনি কি আছেন ?" - খুব পরিচিত গলার আওয়াজ। অ্যালেক্সি চমকে গেল। উঠে জানালার বাইরে নজর দিতেই রাখ্‌মাতকে দেখতে পেল।

" কিরে তুই গেলি না?" একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলেন। কিছু না বলে রাখ্‌মাত হাসিমুখে আলেক্সির দিকে চেয়ে রইল। " দাঁড়া বাবা একটু , আমি আসছি ।"- আলেক্সি বলল।

আলেক্সি , রাখ্‌মাতকে নিজের রুমে নিয়ে এল। ঘরের কোণার টুলটায় রাখ্‌মাত বসল , সহাস্য মুখ।

" কিরে তুই গেলিনা ? " আলেক্সি জানতে চাইলেন।

" কোথায় আর যাব বলেন। এই গ্রামটাই তো আমার সব ।" - রাখ্‌মাত বিনয়ের সাথে উত্তর দিল। " আর যারা এলাকা ছেড়েছে তাদের বেশির ভাগই গিয়ে উঠবে নিজেদের আত্মীয়ের বাসায়। সেভার্নির বাইরে আমার তো সেরকম কেও নেই। আর রেড আর্মি ক্যাম্পে আশ্রয় নেবার চাইতে এইখানে উল্কার আগুনে ছাই হওয়া ঢের ভাল।"

" আকাশ থেকে উল্কা এসে পড়বে! তুই সেটা বিশ্বাস করিস ? " অ্যালেক্সি বিস্ময়ের সাথে প্রশ্নটা করল।

" ফাদার, সরকার থেকে তো সেটাই জানানো হয়েছে। আর নোটিশটা ওই আয়কর অফিসের সামনে বড় করে ঝুলান রয়েছে। বেশ মাইকিং-ও হয়েছে। এর আগেও তো কয়েকটা এলাকায় উল্কাপাত হয়েছে।" - রাখ্‌মাত বলল।

" তুই কি নিজ চোখে দেখেছিস ? " অ্যালেক্সি প্রশ্ন করল।

" আর্মিরা সেইসব পোড়া এলাকা ঘিরে রেখেছে। তা না হলে যেতাম হয়তো বা! সে কি বিকট শব্দরে বাবা।"- রাখ্‌মাত বলল।

" তোদের মসজিদ গুলোতে কেউ কি আছে রে ?"

" না , ফাদার। সবাই চলে গেছে। ওগুলা খুব সম্ভবত খোলাই রয়েছে। আর চুরি যাবার মত তো সে রকম কিছুই নাই। "

" ও …......। আচ্ছা , আমি এইখানে তুই জানলি কেমন করে ?"

" ভ্লাদিমিরের সাথে দেখা হয়েছিল সকালে। ওই বলল। আর আপনার খোলা জানালা দিয়ে মোমবাতির আলো দেখে পুরাপুরি নিশ্চিত হলাম। আচ্ছা ফাদার ,আপনি গেলেন না কেন ? "

ফাদার গ্রেগরী একটু মৃদু হাসল। " এখন আমার বয়স ৭৭। জন্মটা খালি হয়েছিল পোল্যান্ডে। বাকি সারাটা জীবই তো এই খানে। এই চার্চ , সামনের বাগান আর পাহাড়গুলাকে বড় ভালবেসে ফেলেছি রে। বাবা-মা, ভাই-বোন এমনকি কয়েকটা ভাগ্নে-ভাগ্নীর কবর ও তো ওই সামনের সেমিটারিতে আছে। তাদেরকে এখনও দেখে শুনে রাখছি। মৃত্যু ব্যাতীত আর অন্য কোন কারণে এলাকা ছেড়ে যেতে চাই না।” একটু থেমে অ্যালেক্সি জিজ্ঞাস করল “ আচ্ছা , তোর বয়স কত হয়েছে রে ?"

" গত আগস্টে সাতাশ পার হয়েছে। " - রাখ্‌মাত বলল।

" হুম্‌ । এত কম বয়সে মারা পড়বি! " একটু থেমে আবার বললেন " দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভেবেছিলাম দুনিয়াটা বুঝি শান্ত হবে। আর হচ্ছে উল্টাটাই। " হতাশ দৃষ্টিতে আলেক্সি মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল।

" ফাদার , সন্ধ্যা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি যাই , সন্ধ্যাকালীন ইবাদাত করতে হবে।" রাখ্‌মাত উঠে দাঁড়াল।

ফাদার মেঝের দিকেই তাকিয়ে আছেন। কিছু একটা গভীরভাবে ভাবছেন মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই রাখ্‌মাতের দিকে তাকালেন। " কাল সাকালে শেষ সতর্কতার সাইরেনটা কখন বাজবে ?

" বলা তো হয়েছে এগারটার দিকে।"- রাখ্‌মাত উত্তর দিল।

বিশপ সিরিয়াস ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়াল, ডান হাত দিয়ে রাখ্‌মাতের পিঠে আস্তে করে চাপড় দিয়ে বলল " শোন্‌ মন দিয়ে...............। তুই কাল সকাল আটটার মধ্য আমার এখানে চলে আসবি। কোন দেরী করবি না কেমন ।" জোর দিয়ে চেপে চেপে কথাগুলা বলল।

রাখ্‌মাত একটু বিস্মিত হল শুধু। এরপর খুব শান্তভাবে বলল, " জ্বি আচ্ছা আসবো নে। "

অ্যালেক্সি কিছু খাবার একটা পুটলিতে ভরে রাখ্‌মাতকে দিল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে পুটুলিটা নিল। এরপর অ্যালেক্সি , রাখ্‌মাতকে বিদায়
দিল।


(দুই)


পরদিন সকাল , সময় আটটা পনের। অ্যালেক্সি , রাখ্‌মাতকে নিয়ে চার্চের ছাদের কোণাটায় এসেন। তাদের সামনে পুরান বস্তা দিয়ে জড়ানো গোলাকার কিছু একটা জিনিস।
“এটা কি ?” রাখ্‌মাত প্রশ্ন করল।” এটা দিয়ে কি করবেন? “

" কথা বাদ দিয়ে এটা আগে নিচে নামা।" অ্যালেক্সি বলল

বস্তাগুলা সরিয়ে রাখ্‌মাত বেশ অবাক হল। প্রায় চারফুট ব্যাসের এবং ইঞ্চি দুয়েকের মত পুরুত্বের নিঁখুত গোলাকার একটা কাল পাথরের মত কিছু । সেটার অসম্ভব রকম মসৃণ পৃষ্ঠে হাত দিয়ে ভেতরে একটা অপার্থিব প্রশান্তি পেল রাখ্‌মাত।

" ফাদার এই ভারী জিনিসটা নামাতে তো নূন্যতম সাত-আট জন লাগবে।" রাখ্‌মাত বলল।

" তোকে সিঁড়ি দিয়ে নামাতে বলছি না । তুই ছাদ থেকে একটু ধাক্কা দিয়ে বাগানের ওপর ফেলবি খালি।" অ্যালেক্সি বলল।

বাধ্য ছেলের মত রাখ্‌মাত কাজ করল। " ধুউউউপপ্‌ " একটা ভোতা অথচ উঁচু আওয়াজ শোনা গেল । তারা দুই জান বাগানে নেমে এল ।
" যা , আমার ঘর থেকে তোশক , কম্বল -সব নিয়ে আস। সময় নষ্ট করিস না বাবা।"

রাখ্‌মাত চলে গেল। অ্যালেক্সি একটা কোদাল দিয়ে বাগানের মাটি খুঁড়তে শুরু করল। কিছু পরে রাখ্‌মাতও এসে যোগ দিল। " ফাদার , আমি তো মাথা মুন্ডু কিছু বুঝতে পারছি না। " মাটি খুঁড়তে খুঁড়তেই রাখ্‌মাত জিজ্ঞাস করল।

" আমার আসলে বড্ড ভুল হয়ে গেছে । কাজটা গতরাত থেকে শুরু করলেই ভাল হত। আদৌ নিজের জন্য এইসব করার কোন নিয়ত ছিল না। তুই এসেই ঝামেলাটা পাকালি। দেখি কোন ভাবে তোকে বাঁচতে পারি কিনা !”

“ কিন্তু , ফাদার ...” অ্যালেক্সি , রাখ্‌মাতকে থামিয়ে দিলেন।

একটুপর অ্যালেক্সি বলতে শুরু করল, " শোন তবে । এই পাথরটা আমি বলতে গেলে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। ওটা আমার বাবাকে দাদা দিয়ে গেছেন। দাদাকে বড় দাদা দিয়ে গিয়েছেন। এই ভাবে বহু শতাব্দী ধরে এটা আমার পূর্বপুরুষদের তত্ত্বাবধানে ছিল। প্রচলিত ছিল, এটা নাকি স্বর্গ ও নরকের মাঝের বর্ডার থেকে খসে পড়া একটা অংশ। তবে সেটা যে , কোন এক সময় আকাশ থেকে এসে পড়েছিল সেটা মনে হয় ঠিকই। আমার দাদার বিশ্বাস ছিল স্বর্গ ও নরকের দেয়াল যেরূপ অলংঘনীয় সেইরূপ ওই কাল পাথরের চাকতিটাও অভেদ্য , মানে ওটার ভেতর দিয়ে কিছুই যেতে পারবে না। আমার বাবা সেই বিশ্বাসটা লালন করতেন। তবে আমার কাছে কল্পকাথাই মনে হত। " ফাদার থামলেন।

" ফাদার আপনি বিশ্রাম নেন। বাকি যতটা পারি আমি খুঁড়তে থাকি।"

দশটা পঞ্চাশ নাগাদ খনন কাজ শেষ হল। মোটামুটি সিলিন্ডার আকৃতির চার ফুটের মত ব্যাসের এবং প্রায় আট ফুট উচ্চতার গর্ত খনন করা হয়েছে। পরিশ্রমের কারণে ঠান্ডার মাধ্যেও রাখ্‌মাত দর দর করে ঘামছে।



(তিন)


সাইরেন বাজছে। আকাশ বাতাস কাঁপানো সেই আর্তনাদ সাতাত্তর বছরের বৃদ্ধ বিশপকে মোটেও
ভীত করতে পারেনি। রাখ্‌মাতকে বহু কষ্টে ওই গর্তে ভরে উপর দিয়ে কাল চাকটি দিয়ে ঢেকে দিলেন। বেচারা রাখ্‌মাত , ফাদারকে গর্তের ভেতরে আনার জন্য কম পীড়াপীড়ি করে নাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধকে টলাতে পারে নাই। বলতে গেলে অ্যালেক্সিই রাখ্‌মাতকে চ্যাংদোলা করে গর্তের ভেতর পুরে দিয়েছে।
অ্যালেক্সি সামনের ছোটছোট পাহাড়ের সারির দিকে তাকিয়ে আছেন। সাইরেন থেমে গেল। অ্যালেক্সি খালি সামান্য একটা প্রচন্ড আলোর ধলক বুঝতে পারল শুধু..................।


(চার)


৩১ শে অক্টোবর সকালের দিকে সোভিয়েত আর্মির একটা টিম Tu-95V বিমান থেকে পর্যবেক্ষণের সময় , গ্রাউন্ড জিরো থেকে ৫৫ কি.মি. দূরের সেভারনি গ্রাম থেকে একজন যুবককে উদ্ধার করে। যুবক সেভার্নি গ্রামের একটি রাস্তা দিয়ে উদ্ভ্রান্তের মত হাঁটছিল। উদ্ধারের সময় তার সমস্ত দেহে সেকেন্ড ডিগ্রী বার্নের ক্ষত ছিল। যুবককে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে পাঠান হয়। পরবর্তীতে যুবকের ভাষ্য মতে আর্মির বিশেষ টীম একটি কালো চাকতি উদ্ধার করে । আর সেটা সায়েন্টিফিক রিসার্চ ফ্যাসিলিটি ১০১১-এ পাঠান। সমস্ত ব্যাপারা কঠোর গোপনীয়তায় সংরক্ষণ করা হয়।


(পাঁচ)

২০২০ , ২৯শে ডিসেম্বর। আল-রাশিয়ান সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট অফ টেকনিক্যাল ফিজিক্সে। কন্ডেস্‌ড ম্যাটার ফিজিক্সের জাদরেল প্রেফসর ড. ইয়েফ্রেমভের কক্ষে মেজর জেনারেল তাতিয়াভস্কি ও ডিফেন্সের চীফ স্ট্রাটেজিস্ট তাতিয়ানা বসে আছে। তাদের দুইজনের মুখই গোমরা।

" প্রফেসর , এই যে এই কাল চাকতি , আর এটা নিয়ে ভেতরে ভেতরে এত তোলপাড় হলো , এর রহস্য উৎঘাটনের জন্য সরকার এত অর্থ ঢালল , অথচ এত বছরে ও কিছু করা গেল না।" তাতিয়ানা ইয়েফ্রেমভের দিকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিল।

" আপনারা কি বুঝছেন না , এই ধরণের ম্যাটেরিয়াল বানাতে পারলে যুদ্ধ ক্ষেত্রে রাশিয়ার ট্যাঙ্ক গুলাকে ধ্বংস করা খুব কঠিন সাধ্য হবে ! আর স্পেস টেকনোলজিতে ব্যায়ের পরিমাণ কমে যাবে প্রায় ৪৭%। " সাথে সাথে মেজর যোগ করল।
ইয়েফ্রেমভ মেরুদন্ড সোজা করে একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে বললেন , " দেখুন , আমি তো আগেই বলেছি এটা কোন বিশেষ ধাতুর তৈরী নয়। এটা বিশেষ ধাঁচের সলিড অ্যালয়। এতে যে সব উপাদান আছে সেগুলা আপনারা পর্যায় সারণিতেই খুঁজে পাবেন।"

" তাহলে , বানাতে সমস্যাটা কোথায় , সেটার জন্য কেন পয়সা খরচ করে আসমানে আলাদা স্পেস স্টেশন বানাতে হবে , অ্যাঁ ? " মেজর ঘ্যাঁক করে উঠল।

" সেটা তো আমরা ডিফেন্স মিনিস্ট্রিকে আগেও অবগত করেছি। তরল অবস্থা থেকে কঠিনে পরিণত হবার সময় ওটার ক্রিস্টাল স্ট্রাকচার বিশেষভাবে গঠিত হয়েছে। আর সেই পরিবেশ পৃথিবীর কোন ল্যাবে তৈরী করা সম্ভব নয়। " প্রেফসর বললেন।

“ আচ্ছা প্রেফেসর আপনি কি তাহলে বুঝাতে চাচ্ছেন পৃথিবী পৃষ্ঠের ৯.৮ মাত্রার অভিকর্ষে সেটা সম্ভব না ? “ তাতিয়ানা জিজ্ঞাস করল।

" এই তো আপনি এখন ধরতে পেরেছেন। আপনাদের পক্ষ থেকে আমার টিমকে এই চাক্তি বিষয়ক গবেষণায় সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করতে বলা হয়েছে। তাহলে আমি কিভাবে এই গবেষণা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে করার জন্য বলতে পারি ? বলুন! গোপনীয়তা যেহেতু আপনাদের নাম্বার ওয়ান প্রায়োরিটি কাজেই নিজস্ব স্পেস স্টেশন নির্মাণ ছাড়া আমি দ্বিতীয় কোন রাস্তা দেখছি না । "
মেজর নীরব থেকে দুহাতের আঙ্গুল কিছুক্ষণ কচলালো। এরপর বলল ," হুম আপনার কথাটা এখন পরিষ্কার হল। ইন্টার ন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে তো চায়নিজ ও আমেরিকান বাঁদর গুলোও আছে। ওদের চোখ এড়িয়ে কাজটা করা সম্ভব হবে না।"

তাতিয়ানার দৃষ্টিতে কিছুটা চাঞ্চল্য দেখা গেল। " আচ্ছা , প্রফেরর আমি নিজেও জিনিসটা দেখেছি। এত মসৃণ চাপা সিলিন্ডার আকৃতির গঠন কিভাবে মহাকাশে গঠিত হল ! আমার কাছে ব্যাপারটা বিস্ময়কর ঢেকেছে কিন্তু। আপনার কি মত বলুন তো।"

" দেখুন আমার ফিল্ড ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স। আমার জানা মতে, এখনও আস্ট্রোফিজিক্স বা আস্ট্রো-বায়োলজির কোন বিশেষজ্ঞকে এটার খবর জানান হয় নি। সম্ভবতঃ তারাই উত্তরটা ভাল দিতে পারবে। দেখুন , যেহেতু এটার ক্রিস্টাল স্ট্রাকচার গঠিত হয়েছে লো গ্রাভিটিতে কাজেই সহজেই অনুমেয় সেটা পৃথিবীর বাইরে থেকে এসেছে। এই এতটুকুই বলতে পারব। তবে আপনি যেহেতু আমার মত জানতে চেয়েছেন সেক্ষেত্রে আপনাদের কাছে অদ্ভুত ঠেকলেও বলতে হবে যে , কোন উঁচু স্তরের বুদ্ধিমান সত্তার হস্তক্ষেপ ছাড়া এমন সুনিপুণ কাজ মাদার নেচারের পক্ষে করা বলতে গেলে অসম্ভব। "
কথাগুলা বলে ইয়েফ্রেমভ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

“ মানে আপনি কি ভিনগ্রহের প্রাণী মানে এলিয়েনের প্রসঙ্গ আনছেন?” তাতিয়ানার প্রশ্ন। প্রেফেসর একটু হাসলেন তবে কিছু বললেন না।

" তাহলে দেখি নিজস্ব স্পেস স্টেশন বানানোর জন্য সরকারকে কোনভাবে কনভিনসড্‌ করা যায় নাকি। ঠিক আছে, প্রফেসর আপানি আমাদের সময় দিয়েছেন বলে অনেক ধন্যবাদ।" বলেই মেজর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল , সাথে সাথে তিতিয়ানাও। ড. ইফ্রেমভ তাদেরকে বিদায় জানালেন।


তথ্যসূত্রঃ
তথ্যসূত্রঃ

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:২৮

খাঁজা বাবা বলেছেন: ইহা কি সত্য ঘটনা?
তথ্য সূত্র ও আছে

পড়ে ভাল লেগেছে। :)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:১৯

আইজ্যাক আসিমভ্‌ বলেছেন: চাক্তির ব্যাপারটা কাল্পনিক। জার বোমের ব্যাপারটা বাস্তবিক। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
পুনশ্চঃ শুভ নববর্ষ।

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১৪

কালীদাস বলেছেন: আগের একটা পোস্টে বলেছিলাম আপনি চমৎকার লিখেন। আবার বললাম এই পোস্টটা পড়ে। মনে হচ্ছিল এক্স ফাইলস বা এ জাতীয় কোন সিরিজের একটা এপিসোডের স্ক্রিপ্ট পড়ছিলাম। সেকেন্ড পার্টের সংলাপগুলোতে রহস্যটা আরও জমাট বেঁধেছে কালো জিনিষটা কি সে ব্যাপারে। একটাই খটকা লেগছে গল্পটায় অবশ্য সেটা আমার না জানার জন্যও হতে পারে। নোভাইয়া জেমলায়ার এক্সপ্লোশনটা আজতক পৃথিবীতে সংঘটিত সবচেয়ে শক্তিশালী নিউক্লিয়ার ব্লাস্ট, ৫৫কিমি দূরেও সার্ভাইভ করতে পারার কথা না। অবশ্য গ্রাউন্ড জিরোতে আর্মি টিম কবে গেছে সেটা আপনি সরাসরি উল্লেখ করেননি।

আপনার লেখার হাত চমৎকার :) চালিয়ে যান আপনার এক্সপেরিমেন্ট :)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৩৮

আইজ্যাক আসিমভ্‌ বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আসলে ৫৫ কিমি পর্যন্ত উত্তাপের কারণে ফাস্ট ডিগ্রী বার্ণ ঘটেছিল। এমনকি সুদূর নরওয়ে থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গিয়েছিল। আমি তথ্যগুলা উকিপিডিয়া(ইংরেজি ভার্সান) থেকে পেয়েছি। ইউটিউবে এ নিয়ে ডকুমেন্টারি আছে। এই রকম ভয়ঙ্কর কান্ড কারখানা যে কোল্ড ওয়ারের সময়ে হয়েছিল সেটা আমি নিজে কিছুকাল আগেও জানতাম না।
https://youtu.be/aMYYEsKvHvk (ছোট ভিডিওঃ ৪ মিনিট)
তবে কাল চাক্তির ধারণা পুরাই কাল্পনিক ।
পুনশ্চঃ শুভ নববর্ষ।

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:১৯

ফয়সাল রকি বলেছেন: চমৎকার লেখা। ভাল লেগেছে।
কথা হলো, "শূণ্য" দিয়ে শুরু করার কারণ কী?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.