নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

আইজ্যাক আসিমভ্‌

আমি কার, কে আমার !

আইজ্যাক আসিমভ্‌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষা (ছোট গল্প )

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১০



রহমত ক্ষেতের পাশে গরু দুটাকে বাঁধল। কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ল। আকাশ মেঘে ঢেকে গেছে। সাদা মেঘের দল জটলা পাকিয়ে সারা আকাশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে না। মেঘলা আকাশের নিচে ক্ষেতে কাজ করতে রহমতের অনেক ভয় হয়। কখন বাজ পরে মাথাটা ছাই করে দেয়। বর্ষাকালে এই একটা সমস্যা। তবুও কাজ করে যেতে হয় তাকে।

করিমকে পানি আনতে পাঠিয়েছে খানিক আগে। গরু গুলার জন্য অনেক পানি আনতে হয়। সময় লাগে সেটা আনতে। এক সপ্তহ যাবত নলকূপটা খারাপ হয়ে আছে। পানি উঠে না। যন্ত্রটায় সমস্যা। সামনের সপ্তাহে গঞ্জ থেকে মিস্ত্রি নিয়ে আসবে ঠিক করেছে।

করিম রহমতের ছোট ভাই। বয়সের ব্যবধান বছর দশেকের। ছোট ভাইটাকে নিয়ে রহমতের মাঝে মাঝে ভয় হয়। ছোটটা নেহাত সহজ সরল। গেও-গ্রামের চারদিকে শয়তানরা ঘুর ঘুর করে। কবে না জানি তার একটা ক্ষতি করে বসে।

" কিরে বাবারা, একটু ঠাণ্ডা হয়ে বয়। একটু বাদেই পানি চলে আসবে নে।" গরুটার গায়ে হাত বুলাতে থাকে রহমত। আবলা প্রাণীগুলা তেষ্টায় ছটফট করছে। " একটু সবুর কর বাবা।" রহমতেরও পানি পিপাসা পেয়েছে। " করিমটা যে কি করতেছে কে জানে"-গরুটার দিকে তাকিয়ে রহমত কথাগুলা বলল। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে ঠিক করল। এরপর মোবাইলে ওকে কল দিবে।

মেঘলা আকাশ রোদকে ভূতলে আসতে বাঁধা দিয়ে রেখেছে। গরমটা তাই তুলনামূলক কম। ক্ষেতের এধারে দুইটা বড় বড় বটগাছ লাগান ছিল। বেশ ছায়া দিত। কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে সেগুলা বিক্রি করে দেয়। গাছ বেচার টাকা ও আর জমান কিছু টাকা দিয়ে ঠিক করেছে একটা ট্রাক্টর কিনবে। তবে তার বউ গাছগুলা বেচতে মানা করেছিল। বউয়ের ইচ্ছা ছিল গাছগুলা বড় মেয়ের বিয়েতে কাজে লাগাতে।

রহমতের দুই ছেলেমেয়ে। বড়টা মেয়ে নাম সোমা। আর ছোটটার নাম সুমন। দুই ছেলে মেয়ে যথেষ্ঠ চালাক চতুর। মেয়েটা হবার পর অনেক দিন তাদের কোন সন্তান হয় নি। এই যুগে সবাই ন্যূনতম দুইটা সন্তান চায়। তারা ভেবেছিল আর বুঝি সন্তান হবে না। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে দীর্ঘ বার বছর পর ছেলেটা হয়।
রহমতের ভয় ছিল ছেলেটা না জানি কাকার মত বোকাসোকা হয়। না শেষ পর্যন্ত সেটা হয় নাই। দুই ছেলে মেয়েই যথেষ্ঠ বুদ্ধিসম্পন্ন - এটা ভেবে মাঝে মাঝে নিজেকে রহমতের নিশ্চিন্ত লাগে। চারিদিকে তো শয়তান ঘুরঘুর করে। শয়তানকে ঠেকানোর জন্য বুদ্ধিসম্পন্ন মস্তিষ্ক খুব জরুরী। এই শয়তানরাই তার ফসল কেড়ে নিতে চায়, জমি কেড়ে নিতে চায়, মুখের ভাত হাভাতে পরিণত করতে চায়। এই শয়তানেরাই বছর বছর বিভিন্নরূপে আসে। কখনও আসে গ্রামের মাতবর হয়ে , কখনও আসে অসৎ আত্মীয়ের বেশে, কখনও আসে শহুরে ব্যাবসায়ী হয়ে। এই তো কিছুদিন আগের ঘটনা। একশহুরে ব্যাবসায়ী এসে বলল যে জমিটা সে ইজারা নেবে বছর তিনেকের জন্য। ইটভাটা বানাবে। জমির উর্বর মাটিকে শক্ত হৃদয়হীন ইটে পরিণত করবে। প্রথমেই না করে দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটা নাছোড় বান্দা। সে নিবেই। শেষমেশ না পেরে একটা জাল দলিল কোথা থেকে উড়িয়ে এনে জুড়ে বসাল। অবশেষে কোর্ট-কাচারি। সে কি অবস্থা! তার নভিশ্বাস উঠে যায় আরকি। জজ সাহেব অবশ্য শেষতক রহমতের পক্ষেই রায় দিয়েছিল। তবে সেই ন্যায্য রায় পাবার জন্য শত দৌড়া দৌড়ি করে মনকে মন, টনকে টন মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে।

সেই সব দিনের কথা মনে করলে রহমত এখনও শিউরে উঠে। যদি তার বাপের জমিটা হাতছাড়া হয়ে যেত। যদি পথে বসতে হত। জজকোর্টের বেঞ্চে বসে রহমত রায়ের জন্য অপেক্ষা করত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন। তার দাদার নাকি এরকম আরো দুইটা জমি ছিল। কিন্তু তিনি শয়তানদের হাত থেকে সেগুলাকে উদ্ধার করতে পারেনি। তার বাবাও হয়ত অপেক্ষায় থাকত কখন ন্যায্য রায় আসবে। কিন্তু সেই অপেক্ষাটা ছিল অনেক খারাপ অপেক্ষা। রায় তাদের পক্ষে আসে নি।

রহমত মোবাইল বের করে করিমকে ফোন দিতে যাবে এমন সময় তার দৃষ্টি দূরে আটকে গেল। কেউ দৌড়িয়ে আসছে। আরো একটু সমনে আসতেই রহমত বুঝল সুমন আসছে। হাতে এক বোতল পানি। কি বৃত্তান্ত !

সুমন এসে হাঁপাতে লাগল। পানির বোতল বাবার দিকে এগিয়ে দিল। রহমত কিছু না বলে বোতল থেকে পানি পান করতে লাগল। ছেলেটা হাঁপিয়ে নিক। এরপর সব জানা যাবে।

সুমন স্কুল ইউনিফর্ম পরা। আধ-ময়লা সাদা শার্ট আর নেভি-ব্লু প্যান্ট। খালি পা। প্যান্টাটা আধ-ময়লা কিনা সেটা গাঢ় রঙের কারণে বুঝা যাচ্ছে না।

“ কিরে বাপ আজ ইশকুল বন্ধ দিল নাকি?”

“ না আব্বা। বিষুদবার তো, হাফ ক্লাস।”

“তা তোর কাকায় কই? ওরে তো পানি আনাতে পাঠাইছিলাম। “

“ কাকায় গরুর পানি নিয়া আইতাছে। কইল তোমার নাকি পিয়াস লাগছে,আমারে দিল যাতে একটু তাড়াতাড়ি পানির বোতলটা পৌঁছান যায়।”

“ ও আচ্ছা।”

রহমত আবার বোতল থেকে ঢক ঢক করে পানি খায়। ভাইটা বোকা-সোকা হলেও আজকে একটু বুদ্ধিমানের কাজ করেছে। এটা ভেবে রহমতের একটু ভাল লাগল। আজকে একটু বেশিই তেষ্টা পেয়েছে যেন। বোতল থেকে কিছু পানি নিয়ে গরুগুলার মুখে ছিটিয়ে দিল। বেচারারা অবলা প্রাণী, বোতলের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

“ সুমন বাপ তুই ভাত খাইছিস?”

“ না আব্বা। আম্মা ভাত রানতেসে।”

“ তুই তাহইলে যা। আমি দেড়টার দিকে খেতে যাব নে।”

সুমন যেভাবে দৌড়ে এসেছিল, ঠিক সেইভাবে দৌড়ে চলে গেল। তার যাবার পথের দিকে রহমত ঠায় তাকিয়ে থাকল। রহমত অপেক্ষায় আছে কবে ছেলেটা বড় হবে। তখন ক্ষেতের কাজ তার উপর দিয়ে রহমত বিশ্রামে যাবে। তাদের বংশে কেউ পড়ালেখায় উন্নতি করে নাই। কাজেই তার ছেলে মেয়েরা পড়া লেখা করে বাবু সাহেব হবে এমনটি রহমত আশা করে না। তার পরেও রহমত জানে ভাগ্যের লিখন তার হাতে নাই। খোদাতাআলার কর্মকান্ড বড়ই বিচিত্র। রহমত আপেক্ষায় আছে ছেলেটা বড় হবার আর মেয়েটার ভাল দেখে একটা বিয়ে দেবার । অপেক্ষা আর অপেক্ষা। এই অপেক্ষা রহমতকে ক্ষণে ক্ষণে জর্জরিত করে। এই অপেক্ষা রহমতকে ভয় দেখায় আবার আশার আলো দেখায়। অপেক্ষা আর অপেক্ষা।

একটু দূরে আবার রহমতের দৃষ্টি আটকে যায়। করিম ভ্যান চালিয়ে আসছে। পিছনে একটা বড় গামলা। সেটায় নিশ্চয় গরু গুলার জন্য পান করার পানি। রহমত আবার স্নেহ ভরা দৃষ্টিতে গরুগুলার দিকে তাকায়। এই গরুগুলা মানুষের মত ভদ্র ভাবে পেশাব-পায়খানা করতে পারলে সে সেগুলাকে নিজের ঘরে রেখে দিত- চিন্তাটা আসতেই রহমত নিঃশব্দে হেসে উঠল।

ভ্যানটা সামনে এসে থামল। দুভাই মিলে গামলাটা নামিয়ে গরু গুলার সামনে দিল। বেচারারা সাথে সাথে মুখ ডুবিয়ে পানি পান করতে শুরু করল।

“ কিরে, তোর এত দেরী হইল যে ?”
“ কলুদের পুকুরের পাশে যে চাকাটা ফাইস্যা গেল।” করিম সামনের চাকার দিকে তর্জনী দিয়ে নির্দেশ করল। করিম ভ্যানের পেছনে রাখা পলিথিন থেকে ভূষি বের করে গামলার পানিতে মিশাতে লাগল। পানি খেতে বিঘ্ন ঘটায় একটা গরু বিরক্তিভরে হাম্বা রবে ডেকে উঠল।

“তুই তাইলে বাড়ি চলে যা। তোর ভাবীরে বল গিয়ে আমার জন্য ভাত বাড়তে। আমি একটু পরে আসতেছি। আর ভ্যানটা নিয়ে যা। গামলাটা এখানেই থাকুক। ভাঙাচুরা মাল ওইটা, চুরি যাবার সম্ভাবনা নাই। আর গেলেও কিছু যায় আসে না।”

করিম আর কথা বাড়াল না। খালি বলল “ ঠিক আসে ভাইজান।” করিমেরও বেশ ক্ষিদা পেয়েছে। কয়েকটা ভাত পেটে গেলে তার দুদণ্ড শান্তি হয়।

ভ্যান চালিয়ে করিম চলে যায়। তার চলমান দেহটা ধীরে ধীরে ক্ষীয়মাণ হয়ে আসে। সেই দৃশ্যপট রহমতের ভেতরে একটা মনখারাপ ভাবের উদ্রেক করে। এই বিশাল দুনিয়ায় তার ভাইটার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। তার বিয়ের বয়স সেই কবে পার হয়ে গেছে। এরপরও বিয়ে থা নিয়ে টু শব্দটি করে না। এমনকই গ্রামের কোন মেয়ের দিকে কখনও চোখ তুলে তাকায় না। তার এই সরলতা গ্রামের অনেক মহাজনের নজরে পড়ে। মেম্বার সাহেবের ছোট ছেলে মাঝে মাঝেই করিমের কথা বলে। “ রহমত ভাই। করিমরে একটু হিসাব নিকাশ ভাল ভাবে শেখাতে পারলে ও আব্বার জমিজমার হিসাব নিকাশের কাজে লাগতে পারে। বুঝই তো, ভাল হিসাবনিকাশ পারা মানুষের তো অভাব নাই কিন্তু সততার বড়ই অভাব আজকাল।” রহমত , মেম্বারের পোলার কথা মাথা নীচু করে চুপ করে খালি শোনে। কোন কথা বলে না। মেম্বাররা কত সততার আঁধার সেটা তার খুব ভাল করে জানা। বাবা যখন মারা যায় তখন রহমতের বয়স সতের আর করিমের সাত। পাঁচ বছর পরে মা’ও ইহলোকের মায়া ছাড়েন । অভাবের ভয়ে মাঝে মাঝে বাড়ীর পাশের আম গাছটায় ফাঁস নিতে মন চাইত। অবাধ্য মনটাকে অনেক বুঝিয়ে -সুঝিয়ে ঠান্ডা করত। বাপ-মা তো তাদের একদম রাস্তায় ফেলে চলে যায় নাই। থাকার জন্য একটা ঘর আর হাল চাষের একটা জমিতো আছে। সর্বোপরি একটা আপন ছোট ভাই তো আছে। একই মায়ের জঠর থেকে তারা উৎগত। খোদা তা’আলা তাকে তো আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে নি। আর আত্মহনন তো মহাপাপ।

ছোট ভাইটা দৃষ্টির আড়াল হতেই রহমত গরুগুলার দিকে ফিরে তাকায়। সেগুলা ভূষি মেশান নূন পানি চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। গরু গুলার বাঁধন একটু পরীক্ষা করে রহমত হেঁটে হেঁটে জমির মাঝখানে এসে ধপ করে বসে পড়ে। নিচে নরম তুলতুলে মাটি। লাঙল চালিয়ে জমিটাকে সে মাখনের মত নরম করতে চাইছে। এরপর সেখানে বুনবে বীজ। এরপর ভাল করে দেখাশুনা করা আর অপেক্ষায় থাকা যে কখন বীজ ফুরে গাছ বের হবে। এরপরের অপেক্ষা হল কখন সেই গাছ বড় হয়ে পাকবে। তখন মাঠ জুড়ে সোনা ফলবে। হ্যাঁ সোনা ধরা ফসল। এই সোনার খনি, ধাতব সোনা থেকেও বেশি উজ্জল। এই উজ্জলতা প্রাণের উজ্জলতা , জড়তার নয়। ধাতব সোনা, সে তো জড় বস্তু, মানুষের ক্ষুধা মেটায় না , খালি অহংকার বাড়ায়। সেই অহংকারের তেজে রক্ত মাংসের দেহটা ছোট হয়ে যায়। মানবতা হারিয়ে যায়।

রহমত তার বাম থেকে ডানে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত চোখ বুলায়। গ্রামের মাঠ ,ঘাট, পরিবেশ , প্রকৃতি তার ভেতরের ভাবুক মনটায় আরো অজানা ভাবনা ভরে দিতে লাগল । তবে সেই ভাবনা কোন দুশ্চিন্তার উদ্রেক করে না। রহমত এরপর মেঘ যুক্ত আকাশটার দিকে তাকায়। নীলাকাশ সাদা হয়ে আছে । মৃদুমন্দ ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। রহমত চোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নেয়। আর অপেক্ষায় থাকে বৃষ্টির। হ্যাঁ শীতল মায়াময় আবেশ জড়ান বৃষ্টির। রহমতের ঘুম পেতে থাকে। কিন্তু তাকে বাড়ি যেতে হবে। সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। হ্যাঁ সবাই অপেক্ষা করছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: নিজের জীবনে দঃখ কষ্টের শেষ নেই। তাই আনন্দময় গল্প পড়তে চাই।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০৩

আইজ্যাক আসিমভ্‌ বলেছেন: জনাব, আমার বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য যে জীবনে দঃখ কষ্টের শেষ নেই। তবে আমার মনে হয়, নিজের দুঃখকষ্টের জন্য আপনা বাদে আশে পাশের মানুষগুলাই বেশি দায়ী।

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৪২

মা.হাসান বলেছেন: সুন্দর গল্প, স্বার্থক নামকরণ।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০৪

আইজ্যাক আসিমভ্‌ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:১০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো লাগলো ।
নিখুঁত প্রকাশ।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০৫

আইজ্যাক আসিমভ্‌ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.