নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসলামি চিন্তাবিদ

ইসলামি চিন্তাবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাজহাব মানা ও না মানা বিতর্কের চির অবসান (৪র্থ পর্ব)

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:২২



আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন, অয়াস সালাতু অয়াস সালামু আলা রসুলিহিল করিম। ভালভাবে বুঝতে পূর্বের পর্বগুলো একবার চোখ বুলিয়ে নিন। তাই ১মেই নিচে সেগুলোর লিংক দেয়া হল-
https://www.somewhereinblog.net/blog/Islamichintabid/30143600
https://www.somewhereinblog.net/blog/Islamichintabid/30156982
https://www.somewhereinblog.net/blog/Islamichintabid/30200301

যদিও ১ম দিকেই আলোচনা করা হয়েছে মাজহাব বলতে আসলেই কি বুঝায় ? আর শুধু মাঝহাব এর সংজ্ঞা নিয়েই লা মাজহাবী ও মাজহাবীদের মধ্যে ছিল বড় ধরনের মতভেদ যার প্রাথমিক সমাধান উপরে উল্লেখ আছে তবুও সংক্ষেপে আসলেই মাজহাব বলতে যা বুঝায় তা হল- প্রতিটা ক্ষেত্রেই দ্বীনের উপর চলতে গেলে কুরান হাদিস অনুযায়ি এমন সব তরিকা বের হয় যেসব তরিকা সরাসরি শাব্দিক অর্থে কুরান বা হাদিসে উল্লেখ নেই কিন্তু মূলসূত্র রুপে ঠিকই উল্লেখ আছে, আর তা বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে এমনকি বিভিন্ন ব্যাক্তিভেদেও হতে পারে বিভিন্ন রকম। যেহেতু এসব তরিকা যারা বের করে তারা কেউই আম্বিয়াদের(আঃ) মতন ওয়াহী প্রাপ্ত নন তাই মাজহাবেও ভুল থাকতে পারে বলে একজনের ফতোয়া অন্য বিজ্ঞ কেউ এসে পরিবর্তন বা ভুল প্রমান করতে পারে কিন্তু আল্লাহ(সুবঃ)প্রেরীত ওয়াহীতে(কুরান+হাদিস) কোন ভুল নেই। যেহেতু কুরান হাদিসে কোন ভুল নেই তাই বেশীরভাগ লা মাজহাবীরা শাব্দিক অর্থে কুরান হাদিসে যা যা উল্লেখ আছে, বেশী না বুঝে শুধু তাই-ই মানার পক্ষপাতি অর্থাৎ মাজহাবীদের মত বেশী বুঝে মাজহাব মানার মোটেও পক্ষপাতি নয়। আর এদিকে বিশেষ করে সুন্নিদের চার মাজাহাবীরা মনে প্রানে বিশ্বাস করে যে মাজহাব ছারা চলা একেবারেই অসম্ভব বা পথভ্রষ্টতা। কিন্তু সত্যিকার্থে এই দুই দলের মতবাদেই রয়েছে অজানা এমনসব ভুল যা তাদেরকে ক্ষমার অযোগ্য শিরকেও নিপতিত করে থাকে যেমন- লা মাজহাবীরা যেহেতু শুধুমাত্র শাব্দিক অর্থেই কুরান হাদিসের নির্দেশনা মানে তাই তারা কুরান হাদিসের সত্যিকারের মর্মবানী অনেক ক্ষেত্রে বুঝতেই অক্ষম হয়। এক্ষেত্রে লা মাজহাবীদের কিছু সম্প্রদায় মনে করে থাকে কুরান-সুন্নাহতে শাব্দিকভাবে যতটুকু নির্দেশনা দেয়া আছে ততটুকুই মানতে হবে আর এর বাইরে আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন সুতারাং বাদবাকী ক্ষেত্রে যে যেভাবে নিজের ইচ্ছানুযায়ি স্বাধীনভাবে চলবে আর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু মুসলিম মানেই হল আত্মসমর্পনকারী বা আল্লাহ(সুবঃ) এর কাছে সে পরাধীন তাই ব্যাক্তিপর্যায় হতে সামগ্রিক পর্যায়ের প্রতিটা ক্ষেত্রেই আল্লাহ(সুবঃ) এর বিধি-বিধান সমর্থ অনুযায়ি মেনে চলতে হয় তাই স্বজ্ঞানে কোন ১টি পর্যায়েও যদি স্বাধীন ভেবে নিজের মন মত চলা হয় তবে তাও শিরকের পর্যায়ে চলে যায় কেননা আল্লাহ সুবঃ বলেন- তারা কি নিজের প্রবৃত্তিকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? ২য়ত নবী সাঃ দুয়া করতেন – আমাকে একটি মূহুর্তের জন্যও নিজের নফসের উপর ছেড়ে দিয়েন না।

আবার কুরান হাদিস অনুযায়ি চলার পথে প্রতিটা ক্ষেত্রে দ্বীনের বিধান মানতে যেসব পন্থা বের হয় যা নবী সাঃ এর যুগে হুবহু ঐরকমই ছিল না তাকে বিদয়াত(নব্য সৃষ্ট) মনে করে লা মাজহাবীদের কিছু সম্প্রদায় । এক্ষেত্রে তারা দুটি হাদিসের শাব্দিক অর্থ ধরে যেকোন ইজতিহাদী বিষয়কেই বিদয়াত আখ্যা দেয়। যেমন- ১) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় সংযুক্ত করবে যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে[বুখারী, মুসলিম] এছারা বুখারীর অন্যত্রে অতিরিক্ত বলা হয়েছে যে এমন করলে আল্লাহ এবং সকল ফেরেশতা,মানুষের অভিশাপ আর এমনকি তার তওবা এবং ফিদইয়াও কবুল হবে না।
উপরোক্ত হাদিস হতে প্রতিয়মান হল যে বিদাত খুবই মারাত্বক আর দ্বীন ইসলাম যেহেতু পরিপূর্ন একটি দ্বীন তাই এখানে এতটূকুও সংযোজন বা বিয়োজনের অবকাশ নেই কিন্তু এই একই দ্বীনই কিন্তু কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত বলবৎ থাকবে অর্থাৎ এর পরে আর কোন নতুন দ্বীন নিয়ে কোন নবী আগমন করবেন না অথচ দেখা যায় কুরান এবং হাদীস সমূহই এই দ্বীনের প্রধান ভিত্তি এবং দলীল। কিন্তু নবী সাঃ এর মৃত্যুর সাথে সাথেই কুরান নাজিল এবং ব্যাখ্যা হিসেবে হাদিস ইত্যাদি আসমানি ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে যায় শুধুমাত্র মুমিন ব্যাক্তির সত্য স্বপ্ন/সুসংবাদ ছারা। এছারাও আরো দেখা যায় যে কুরান এবং হাদিসে নবী সাঃ এর মাধ্যমে আল্লাহ(সুবঃ) যা নাজিল করেছেন তার বেশীরভাগই শুধুমাত্র তৎকালীন ২৩ বছরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়বস্তুর উপর দিক নির্দেশনা, অতীতের মূল গুরুত্বপূর্ন ঘটনাসমূহ এবং ভবিষ্যতে ঘটমান বিষয়ের রুপক বর্ননা ও নির্দেশনা সমূহ। কিন্তু এই দ্বীন মানতে হবে সমগ্র মানব জাতিকে আর তা নবী সাঃ এর ২৩ বছরেরও পর হতে শুরু করে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত চলতে হবে। সুতারাং কুরান হাদিস পড়লে খুব সহজেই বুঝা যায় যে এতে প্রতিটা স্বতন্ত্র ব্যাক্তির সকল বিষয়ের এবং সর্বকালের জন্যই দিক নির্দেশনা এমনভাবে দেয়া আছে যে যার অধিকাংশ নির্দেশনাগুলোই যে কেউ সহজেই সরাসরি খুজে পাবে শাব্দিকার্থেই, বাদবাকী কিছু নির্দেশনা নিজের জ্ঞান খাঁটিয়ে বুঝে নিতে হবে আবার অনেক কিছু এমন নির্দেশনাও আছে যা বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং পরিবেশের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রকম হবে, কিন্তু মূল সুত্র বা দ্বীনের মূল কাঠামো একই থাকবে বা কোন পরিবর্তন হবে না । আর এধরনের নির্দেশনাগুলোই ফিকহ শাস্ত্র হিসেবে অনেক মুসলিমরা মান্য করে থাকে যা কুরান হাদিসের ন্যায় একশতভাগ নির্ভুল না হলেও বিদাত কিন্তু নয় বা দ্বীনের মাঝে নতুন কিছু আবিস্কারও নয় বরং দ্বীন ইসলামেরই আরো বিস্তারিত যুগোপযোগী ব্যাখ্যামূলক নির্দেশনা মাত্র। কিন্তু লা মাজহাবীরা এসব ফতোয়া বা ব্যাখ্যাকেও বিদাত বা নব্য আবিস্কার ভাবে।

লা মাজহাবীরা ফিকহের বিরোধীতা করতে আরেকটি হাদিস পেশ করে যেমন-২) আবূ আব্দিল্লাহ্ আন্-নু‘মান ইবনু বশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি নিঃসন্দেহে হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, আর এ দু‘য়ের মধ্যে(তৃতীয় আরেকটি) রুপক/বহুল অর্থজ্ঞাপক/অস্পষ্ট কিছু বিষয়(মুতাশাবিহাত) আছে যা অনেকে জানে না। অতএব, যে ব্যক্তি রুপক/বহুল অর্থজ্ঞাপক/অস্পষ্ট বিষয় হতে নিজেকে রক্ষা করেছে; সে নিজের দ্বীনকে পবিত্র করেছে এবং নিজের সম্মানকেও রক্ষা করেছে। আর যে ব্যক্তি রুপক/বহুল অর্থজ্ঞাপক/অস্পষ্ট বিষয়ে পতিত হয়েছে; সে হারামে পতিত হয়েছে। তার অবস্থা সেই রাখালের মত যে নিষিদ্ধ চারণ ভূমির চারপাশে (গবাদি) চরায়, আর সর্বদা এ আশংকায় থাকে যে, যে কোন সময় কোন পশু তার মধ্যে প্রবেশ করে চরতে আরম্ভ করবে। সাবধান! প্রত্যেক রাজা-বাদশাহর একটি সংরক্ষিত এলাকা আছে। আর আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে তাঁর হারামকৃত বিষয়াদি। সাবধান! নিশ্চয়ই শরীরের মধ্যে একটি মাংসপিণ্ড আছে; যখন তা ঠিক থাকে তখন সমস্ত শরীর ঠিক থাকে, আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন গোটা দেহ নষ্ট হয়ে যায় - এটা হচ্ছে কলব (হৃদপিণ্ড)। [বুখারী, মুসলিম:] উপরোক্ত হাদীস ভালভাবে পর্যবেক্ষন করলে যে কেউই খুব সহজেই বুঝতে পারবে যে এটি একটি সতর্কতামূলক হাদীস মুসলিমদের জন্য যার মাধ্যমে নবী সাঃ সাবধান করছেন।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এই হাদীসটির মাধ্যমে নবী সাঃ আসলে সূরা আল ইমরানের ৭নং আয়াতের ব্যাখ্যা করছেন, কেননা এই হাদিসটি মদীনায় বর্নিত হয় এবং তা সুরা আল ইমরানের ৭ নং আয়াত নাজিলের পরে।
সূরা আল ইমরানের ৭নং আয়াতে মহান আল্লাহ সুবঃ বলেন-" তিনিই তোমার প্রতি নাজিল করেছেন কিতাব তাতে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনামূলক(মুহকামাত)আয়াত সেগুলোই উম্মুল কিতাব আর অন্যগুলো রুপক/বহুল অর্থজ্ঞাপক/অস্পষ্ট বিষয়(মুতাশাবিহাত) সুতারাং যাদের হৃদয়ে কুটিলতা রয়েছে তারা অনুসরন করে ফিতনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে তন্মধ্যেকার রুপকগুলোর আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যাতীত কেউ জানে না এবং যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলে আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি এসবই আমাদের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে আর বোধ সম্পন্নরা ছারা কেউ উপদেশ গ্রহন করে না ।"

এই আয়াত এবং উপরোক্ত হাদিসে একটি কমন আরবী শব্দ এসেছে আর তা হল- মুতাশাবিহাত। "শাবাহা" অর্থ একই ধরনের আর মুতাশাবিয়াত অর্থ রুপক, সাদৃশ্যপূর্ন, সামজ্জস্যশীল, বহুল অর্থজ্ঞাপক, ভবিষ্যৎবানীমুলক, সাধারন জ্ঞানে ধরে না বা ধরলেও একই ধরনের অথচ অন্য শব্দ মনে হয় অথবা অপ্রকাশ্য বা অস্পষ্টও বলা যায়। কিন্তু এর সরল অর্থ উক্ত বাক্যের ক্ষেত্রে “সন্ধেহজনক” অর্থ করা কখনই ঠিক হবে না কারন এটা হতেই পারে না যে আল্লাহ সুবঃ তাঁর বান্দার জন্য পথ প্রদর্শন করতে গিয়ে কুরানে কিছু সন্দেহজনক আয়াত নাজিল করবেন আর এতে করে বান্দারা দ্বন্দের মাঝে পরে। কিন্তু প্রায় সব লা মাজহাবীরাই হাদিসের জায়গায় তো অবশ্যই এমনকি অনেকে কুরানের অনুবাদেও মুতাশাবিহাত এর অর্থ "সন্ধেহজনক" করেছে । তাদের এমন ভুল অর্থ করার পেছনে লম্বা ইতিহাস জড়িত যা শেষের দিকে বিস্তারিত আলোচনা হতে বুঝা যাবে এখন শুধু সংক্ষেপে বলা হচ্ছে যে তারা আসলে কেন এই অর্থ করেছে- এর কারণ কুরান এবং হাদিসে শাব্দিকভাবে যতটুকু নির্দেশনা বুঝে আসে শুধুমাত্র ততটুকুকেই লা মাজহাবিরা পরিপূর্ন দ্বীন ভাবে কিন্তু কুরান হাদিসের মর্মার্থের মাঝেও যে অসংখ্য জটিল সব সমস্যার সমাধান সুত্রাকারে আল্লাহ সুবঃ নাজিল করেছেন তাকে তারা দ্বীনের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত বা বিদ্বাত ভাবে অর্থাৎ তাদের ধারনা- হালাল হারামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা শুধু্মাত্র শাব্দিক অর্থের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। আর তাদের সবচেয়ে বড় ভুলধারনা হল- কুরান-হাদিসের মর্মার্থের মাধ্যমে হালাল হারামের স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায় না বলে তা হল অস্পষ্ট সুতারাং এগুলোকে সন্দেহজনকই বলা যায় আর এই কারনেই তারা কোন ইজতিহাদি ফিকহ মানে না। অতএব যারা ফকিহ তাদের দৃষ্টিতে তারাও বিদ্বাতি আর উপরের হাদিসে নবী সাঃ যে বলেছেন হালাল হারাম সুস্পষ্ট তার মানে হল শাব্দিক অর্থে যতটুকু বুঝা যায় তাই সুস্পষ্ট এর বাইরে মর্মার্থের দিকে গেলেই সে সন্ধেহজনক বিষয়ে পতিত হয় আর একেই বলে মুতাশাবিহাত বা সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হওয়া যা করতে নবী সাঃ নিষেধ করেছেন। আর এভাবেই লা মাজহাবিরা ১ম দিকে মুতাশাবিহাত এর কাছাকাছি অর্থ "অস্পষ্ট" করেছিল এখন আবার "সন্ধেহজনক" অর্থ করা শুরু করেছে এই ভেবে যে- যাহা অস্পষ্ট তাহাই সন্ধেহের উদ্রেগ করে সুতারাং উক্ত শব্দের আসল অর্থ হওয়া উচিত সন্ধেহজনক বিষয়। কিন্তু উপরের কুরানের আয়াত এবং হাদিস ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় কুরানে আল্লাহ সুবঃ বলছেন যে- মুতাশাবিহাত বাদে মুহকামাত আয়াতই হল উম্মুল কিতাব অর্থাৎ মুহকামাত আয়াতের মাধ্যমেই তিনি সমস্ত হালাল হারামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দান করেছেন আর সমস্ত ফকিহগন শুধুমাত্র এসব মুহকামাতের উপরই ইজতিহাদ করে নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে দ্বীনের মাসলা বের করেছেন যা কখনই কুরান সুন্নাহর মুলসূত্র এবং নির্দেশনার পরিপন্থি নয়। কিন্তু তারা যখন দেখল, কুরান-হাদিসে শাব্দিকভাবে যে নির্দেশনা দেয়া আছে শুধুমাত্র তাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে মুজতাহিদগন কুরান হাদিসের শাব্দিক অর্থের পাশাপাশি মর্মার্থ বুঝেও আরো বেশি মাসায়ালা বের করছে এবং আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করছে তখন ঐসব মাসায়ালা বা বিশদ তাফসির তাদের জ্ঞানে না ধরে মাথার উপর দিয়ে গেল এবং তাদের কাছে তা এমন ভাবে অস্পষ্ট মনে লাগল যে ঐসব মাসায়ালা সত্যি সত্যিই দ্বীনের মাঝেই পরবে কিনা এই নিয়ে তারা অনিশ্চয়তায় ভুগতে লাগল। কেননা যারা এমন ফতোয়া দিচ্ছেন তারা তো আর নবী সাঃ এর মত অহীপ্রাপ্ত নয়। কিন্তু লা মাজহাবীরা যদি সাহাবী রাঃ দের জীবন ভালভাবে লক্ষ্য করত যে তিনারা কিভাবে নবী সাঃ এর উপর আনিত দ্বীন হতে মাসয়ালা নিতেন তবে তারা এমন সন্দেহে থাকতে পারত না যেমন- আবু বকর রাঃ এর সময় অনেক হাফিজে কুরান শহীদ হলে উমর রাঃ যখন কুরান সংকলনের জন্য বললেন তখন কিছু সাহাবী বললেন- নবী সাঃ যে কাজ নিজে করে জাননি আবার স্পষ্টভাবে নির্দেশনাও দিয়ে যাননি একাজ কিভাবে আমরা করব (তা কি বিদ্বাত হবে না)? তখন উমর রাঃ বললেন নিশ্চয় এটা উত্তম কাজ( এতে কল্যান আছে) এরপর কিন্তু তাই করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে যদি আজকের লা মাজহাবিরা থাকত তবে তারা কুরান হাদিসের কোথাও স্পষ্ট করে কুরান সংকলনের নির্দেশনা দেয়া নেই মনে করে কুরান সংকলন করা থেকে বিরত থাকত আর বর্তমান আমরা হয়ত কুরানকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পেতাম ।
সবচেয়ে বড় কথা হল, লা মাজহাবীরা ইজতিহাদকৃত ঐসব মাসলা মাসায়েলকে সন্দেহজনক বা মুতাশাবিহাত ভাবে যা আসলে মুহকামাতের অন্তর্ভুক্ত। আর মুজতিহাতগন কিন্তু মুতাশাবিহাত আয়াত হতে ইজতিহাদ করে মাসয়ালা বের করেন না বরং উনারা মুহকামাত আয়াত হতেই ইজতিহাদি মাসায়ালা বের করেন তাছারা মুতাশাবিহাত আয়াতগুলো হালাল হারামেরও কোন বিষয় না দ্বীন মেনে চলার ক্ষেত্রে বরং এর সঠিক তাবির একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন সুতারাং কেউ মুতাশাবিহাত আয়াত নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হাদিস অনুযায়ি তা হারামের অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু লা-মাজহাবীরা উক্ত হাদিস হতে যা বুঝে তা অনেকটাই এরকম- হালাল হারাম সুস্পষ্ট এছারা বাদবাকী যা আছে তাই সন্দেহজনক তাই এসব হতে দূরে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে সুতারাং খেজুর খাওয়া, আঙ্গুর খাওয়া, ঘোড়া ও ঊটে চরা সুস্পষ্ট হালাল কিন্তু আম খাওয়া জাম খাওয়া গাড়ি ও প্লেনে চরা এসব ব্যাপার অনুল্লেখিত তাই এগুলো সন্দেহজনক এবং বেশিরভাগ লা-মাজহাবীদের ধারনা এসব হতেই দূরে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হাদিসে কিন্তু উপরে বেশ ভালভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে যে বুখারী-মুসলিমের উক্ত হাদিসে কিন্তু কুরানের মুতাশাবিহাত আয়াতের কথা বলা হচ্ছে যেগুলোর অর্থ একমাত্র আল্লাহ সুবঃ ই ভাল জানেন। অন্যদিকে আম-জাম কাঁঠাল খাওয়া বা গাড়ি ও প্লেনে চরা এগুলো কিন্ত মোটেও মুতাশাবিহাত আয়াত নয় বরং এগুলো মুহকামাত আয়াতের মাঝেই ঠিকই হালাল হারামের মূলনীতি দেওয়া আছে সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও। তবে লা-মাজাহাবীদের ঠিকই আম-জাম কাঁঠাল খেতে বা গাড়ি ও প্লেনে চরতে দেখা যায়, তারা আসলে এসব করে দ্বীনের বাইরে গিয়ে নিজেদের সুবিধামত চলার স্বার্থে অর্থাৎ দ্বীনের মাধ্যমেই এগুলো হালাল না হারাম তা তারা ধরতে পারে না এবং চেষ্টাও করে না কিন্তু মাজহাবীরা আবার ঠিকই ইজতিহাদের মাধ্যমে এগুলোকে হালাল বা হারাম ধরেই পালন করে অর্থাৎ তারা দ্বীন মানার মাধ্যমেই একই কর্ম করে নেকী অর্জন করে কিন্তু লা-মাজহাবীরা এসব করে দ্বীনের বাইরে গিয়ে এবং মনে করে এসব অনুল্লেখিত বিষয়গুলো ভুল শুদ্ধ যাইহোক আল্লাহ ক্ষমা করবেন, আর তাদের এমন ভুল ধারনার উদ্ভব হয়েছে নিচের একটি হাদিসের ভুল বুঝার কারনে যা নিচে তাহকীকসহ উল্লেখ করা হচ্ছে।

এখন লা-মাজহাবীদের একমাত্র সম্বল নিয়ে আলোচনা করা হবে- নিম্নে বর্নিত একটি হাদিসের শাব্দিক অর্থই হল বর্তমান যুগের লা-মাজহাবীদের দ্বীনের উপর চলার মূল ভিত্তি বা একমাত্র সম্বল। হাদিসটি বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে কয়েকভাবে বর্ননা করা হয়েছে যেমন- ১) সালমান আল-ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ঘি, পনির ও বন্য গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাঁর কিতাবে যেসব জিনিস হালাল করেছেন তা হালাল এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে যেসব জিনিস হারাম করেছেন তা হারাম। আর যেসব জিনিস সম্পর্কে তিনি নীরব থেকেছেন তা তিনি ক্ষমা করেছেন। তিরমিযী ১৭২৬, গায়াতুল মারাম ২, ৩, মিশকাত ৪২২৮। সুনান ইবনু মাজাহ ।
২) নবী (সাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাবে যা হালাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা হালাল আর আল্লাহর কিতাবে যা হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা হারাম। আর যে সব বিষয়ে অনুল্লেখিত রয়েছে সেগুলো তার ভুলে যাওয়া নয়, সেগুলো তার ক্ষমা। সেগুলো নিয়ে তর্ক করো না। বায়হাকিঃ ১০/১২২ • দারে কুতনী ৪/১৯৯ হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ
৩)আবূ সা'লাবাহ্ আল-খুশানী জুরসূম ইবন নাশিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘আলা ফরযসমূহকে অবশ্য পালনীয় করে দিয়েছেন, সুতরাং তা অবহেলা করো না। তিনি সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, সুতরাং তা লঙ্ঘন করো না। এবং কিছু জিনিস হারাম করেছেন, সুতরাং তা অমান্য করো না। আর তিনি কিছু জিনিসের ব্যাপারে নিরবতা অবলম্বন করেছেন-তোমাদের জন্য রহমত হিসেবে; ভুলে গিয়ে নয়-সুতরাং সেসব বিষয়ে বেশী অনুসন্ধান করো না।"হাদীসটি হাসান (সহীহ্), আদ্-দারা কুতনীঃ ৪/১৮৪
এখন কথা হল, সম্পূর্ন কুরান এবং আরও অসংখ্য সহী হাদিস বাদ দিয়ে শুধুমাত্র এই ১টি হাদিসই লা-মাজহাবীরা চলার মূলমন্ত্র করে ফেলেছে তবু এক্ষেত্রেও মর্মার্থ না বুঝে শুধুমাত্র শাব্দিক অর্থ নিয়ে তারা যা বুঝে তা হল- কুরান ও হাদিসে শাব্দিক অর্থে যতটুকু হালাল-হারাম উল্লেখ আছে এর বাহিরে কিছুই বুঝা যাবে না অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহই যেখানে নিরব থেকেছেন এবং নবী সাঃ বেশী অনুসন্ধান করতে নিষেধ করছেন তাই ইজতিহাদ করে ফিকহের মাসআলা বের করাও বিদ্বাত এবং বাড়াবাড়ি, বরং পন্ডিতী করে ইজতিহাদ না করে যদি কুরান-হাদিসের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে পাপও করা হয় তবু আল্লাহ ক্ষমা করবেন।

এখন দেখতে হবে আসলেই এই হাদিসে নবী সাঃ উম্মতকে কি বুঝিয়েছেন? প্রথমতঃ যদিও এই হাদিসের সরাসরি শাব্দিক অর্থ নিলে কুরান এবং অনেক সহী হাদিসের বিরুদ্ধে যায় তাই এমনও হতে পারে এই হাদিসের কিছু সনদ সহী হলেও হয়ত নবী সাঃ হুবহু উক্ত হাদিসে যেভাবে বর্ননা করা হয়েছে সেভাবে বলেননি অথবা তিনি মুতাশাবিহাত আয়াতের কথা বুঝাতে বুখারি-মুসলিমে উল্লেখিত হাদিস বর্ননা করেন কিন্তু পরবর্তীতে উক্ত হাদিসই বিকৃত হতে হতে এইরকম ভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে অথবা এইরকম বর্ননা তিনি কখনই করেননি বা পুরোটাই জাল হাদিস কেননা কিছু হাদিস বিশারদ এই হাদিসের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন যেমন- “আলবানীর তাহকীকে ইহা হাসান সহী হাদিস হলেও ১. উক্ত হাদিসের রাবী ইসমাইল বিন মুসা সম্পর্কে আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন তিনি সত্যবাদী তবে শীয়া মতাবলম্বী এবং আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন ও তার রাফিদী মতাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৪৯১, ৩/২১০ নং পৃষ্ঠা) ২.উক্ত হাদিসের রাবী সায়ফ বিন হারুন সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আহমাদ বিন শু'আয়ব আন-নাসায়ী ও ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি দুর্বল। ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি দুর্বল ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২৬৭৯, ১২১২/৩৩২ নং পৃষ্ঠা)” তবু যদি সত্যি সত্যি নবী সাঃ নিজেই এই রকম বর্ননা করে থাকেন তবে হয়ত এই হাদিসটি তখনই বর্ননা করা হয়েছে যখন কিনা কিছু মুসলিম মুতাশাবিহাত আয়াতের ভূল ব্যাখা শুরু করে আর তখনই আল্লাহ সুবঃ সূরা আল ইমরানের ৭নং আয়াত নাজিল করেন এবং ব্যাখ্যা স্বরুপ নবী সাঃ উপরে উল্লেখিত সহী বুখারী-মুসলিমের উক্ত হাদিস বর্ননা করেন যদিও এই হাদিসে সরাসরি মুতাশাবিহাত আয়াতের কথা উল্লেখ না থাকলেও বুখারী মুসলিমের হাদিসটির সাথে বর্ননার অনেক সাদৃশ্য রয়েছে তাই এ থেকেও মনে হয় এই হাদিসটি হয়ত নবী সাঃ ই বলে গেছেন অর্থাৎ এটি কোন জাল হাদিস নয়, আল্লাহই ভাল জানেন।
২য়তঃ স্বাভাবিক ভাবে শাব্দিক অর্থে যে কেউই উক্ত হাদিস অধ্যয়ন করলে তার মনে হবে যে তাহলে কুরান-হাদিসে যতটুকু শাব্দিক অর্থে নির্দেশনা আছে হুবহু শুধু তাই মানতে হবে এর বাইরে ইজতিহাদ করে ফতোয়ার মাধ্যমে চলার ব্যাপারে নিষেধ করা হচ্ছে কিন্তু এই একটি হাদিস ছারাও আরও সহী হাদিস পড়লে আবার উল্টোটা মনে হবে যেমনঃ- ১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিচারক যখন ফায়সালা করে এবং ইজতিহাদ করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছে যায়, তার জন্য দুইটি পুরস্কার রয়েছে। আর ফায়সালা করতে গিয়ে সে যদি ভুল করে ফেলে তবুও তার জন্য একটি পুরস্কার আছে। হাদিসের মানঃ সহিহ। সহীহ ইবনু মা-জাহ ২৩১৪ । সূনান আত তিরমিজী
২) মহানবী (সা) হযরত মু’আয ইবনে জাবালকে (রা) ইয়ামনের বিচারক নিয়োগ করে পাঠাবার প্রাক্কালে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নিকট মোকদ্দমা পেশ করা হলে তুমি কিভাবে বিচার-ফায়সালা করবে? তিনি বলেন, আমি আল্লাহর কিতাব অনুসারে ফায়সালা করবো। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তা যদি আল্লাহর কিতাবে না পাও? মু’আয (রা) বললেন, আমি নবীর সুন্নাতের অনুসরণ করবো। রাসূলুল্লাহ (সা) পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, তা যদি নবীর সুন্নাতেও না পাও? মু’আয (রা) উত্তর দিলেন, তাহলে আমি আমার বুদ্ধি-বিবেচনা প্রয়োগ করে ইজতিহাদ করবো এবং তাতে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করবো না। (একথা শুনে) রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর বুকে মৃদু করাঘাত করে বললেন, সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য যিনি তাঁর রাসূলের দূতকে তাঁর রাসূলের মনোপূত যোগ্যতা দান করেছেন। (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, দারেমী বিঃদ্রঃ এই হাদিসটি সহী হবার পরও লা-মাজহাবীদের ধর্মের ক্ষেত্রে শুধুই শাব্দিক অর্থ নেওয়ার পথে বড় বাধা হল এই হাদিসের নির্দেশনা তাই তারা এই হাদিসকে জাল,দূর্বল বানানোর জন্য অনেক চেষ্টা করে যেমন তারা বলে- এই হাদিস বর্ননা স্বয়ং সাহাবী না করে কিছু মানুষ করেছে অথচ হাদীসটি কোন একজন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেননি বরং ‘‘হিমস’ এর অধিবাসী হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.)এর একাধীক সঙ্গীগণ বর্ণনা করেছেন এক কথায় বড় একটি জামাত বর্ণনা করেছন তাছারা বুখারী মুসলিম সহ অনেক সহী হাদিসই এমন আছে যে যেখানে একজন বর্ননা না করে অনেকজন বা একটি জামাত বা একটি গ্রামের লোক বর্ননা করেছে তারপরেও এসব সহী হিসেবেই গৃহীত হয়েছে তাছারা এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হলেন- হারেস ইবনে আমর আবূ দাঊদ, তিনি সাহাবী মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) এর ভাই সুতারাং এই হাদিসটি লা-মাজহাবীদের মনপুত না হলেও ভাল সনদের সহী হাদিস এবং অনেক পূর্ব হতে এই হাদিসের উপর সলফে সালেহীনগনের আমল চলে আসছে)।
তাহলে উপরোক্ত দুটি সহী হাদিস হতে জানা গেল যে ইজতিহাদের কথা স্বয়ং নবী সাঃ ই বলে গেছেন। আর ইজতিহাদ কি তা ১ম দিকে উল্লেখ করাই হয়েছে যে, কুরান-হাদিসে সরাসরি শাব্দিক অর্থে কোন সমাধান খুজে না পাওয়া গেলে কুরান-হাদিসেরই মর্মার্থ হতে সূত্র বের করে বুদ্ধি-বিবেচনার মাধ্যমে সমাধান বাহির করার প্রচেষ্টার নামই ইজতিহাদ। উপরের হাদিস পড়ে মনে হবে হয়ত ইজতিহাদ করাই যাবে না আবার নিচের হাদিস দুটি পড়ে মনে হবে ইজতিহাদ করা যাবে তাহলে নবী সাঃ এর মুখ হতে তো আর পরস্পর বিরোধী নির্দেশনা আসতে পারে না, আসলে উভয় হাদিসে পরস্পর বিরোধী কোন কিছু নেই বরং উপরের হাদিসের সঠিক মর্মার্থ বুঝতে ব্যার্থ হলে এমন ধারনা হতে পারে। এখন দেখতে হবে উপরের হাদিসে কি মর্মার্থ? ১ম হাদিসটি লক্ষ্য করলে দেখা যায় নবী সাঃ এমন কথা বলার আগে কিছু সাহাবী তাঁকে কয়েকটি ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলেন যেমন- তারা প্রশ্ন করেছিল ঘি, পনির ও বন্য গাধা সম্পর্কে তখন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে নবী সাঃ উক্ত নির্দেশনা দেন যাতে তারা আল্লাহ যতটুকু নাজিল করেছেন তার মাঝেই সন্তুষ্ট থাকে এবং সমাধান খুঁজে নেয় অহেতুক বেশি প্রশ্ন না করে। এখন কেন তিনি তাদের উদ্দেশ্যে এমন নির্দেশনা দিলেন ?
এর প্রধান কারন হতে পারে ১মতঃ- বনী ঈসরাইলরা বেশী বেশী নবী-রসুলদের অযথা প্রশ্ন করত ফলে তারা সহয জিনিসকে নিজেরাই জটিল করে তুলত আর আল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়ে বিধানকে আরও কঠিন করত, এই ঘটনা কুরানেই উল্লেখ রয়েছে তারা একটি গাভী কেমন হবে, কি রঙ এর , কি বয়সের ইত্যাদি প্রশ্ন করে নিজেরাই দ্বীনকে কঠিন করে তুলে। আল্লাহ সুবঃ এই নবীর উম্মতকে বুঝার জন্য খুব সহয-সরল দ্বীন দিয়েছেন তাই নবী সাঃ চাইতেন না যে তার সাহাবীরা বনী ঈসরাইলদের মত বেশী বেশী প্রশ্ন করে দ্বীনকে কঠিন করে ফেলুক কেননা কিছু সাহাবী যখন নবী সাঃ কে ঘি, পনির ও বন্য গাধা সম্পর্কে প্রশ্ন করছিল তখনই তিনি উক্ত নির্দেশনা দেন, তাই এটিও একটি বড় কারন হতে পারে নবী সাঃ এর এমন নির্দেশ দেবার। তাছারা নবী সাঃ তাহাজ্জুদ এর সলাত জামাতে পড়াও অনেক পূন্যের তা সত্ত্বেও তিনি ৩ দিন জামাতে পড়ে আবার ত্যাগ করেন যাতে উম্মতের উপর তা ফরয না হয়ে যায় কেননা ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মতই তাহাজ্জুদেও অনেক লোক সমাগম হওয়া শুরু করেছিল তাই আল্লাহ আবার তাহাজ্জুদ ফরয না করে দেন সেজন্য তিনি জামাত ত্যাগ করেন, এসব থেকেও বুঝা যায় আল্লাহরই কৃপায় নবী সাঃ সর্বদাই চাইতেন উম্মতের জন্য দ্বীন যেন সহয হয় তাই নবী সাঃ এর তাহাজ্জুদের জামাত ত্যাগের ঘটনাকে যেমন শাব্দিক অর্থে বুঝা ভুল হবে ঠিক একইভাবে ঐ হাদিসের পুরো নির্দেশনাকেও শাব্দিক অর্থে নেয়া ভুল হবে। অর্থাৎ ঐ হাদিসে আসলে নবী সাঃ ইজতিহাদ ও গবেষনা করতে নিষেধ করেননি বরং সহয সরল দ্বীনকে জটিল না করার স্বার্থে অহেতুক প্রশ্ন ও দ্বীন নিয়ে বিতর্ক করতে নিষেধ করেছেন।
২য়তঃ- নবী সাঃ এর ঐ হাদিসে এমন নির্দেশনা দেওয়ার আরেকটি বড় কারন হতে পারে দূর্বল ঈমানদ্বার ও আম মুসলিমদের দ্বীন নিয়ে বেশী বিতর্ক বাড়াবাড়ি না করাই ভাল। এই ব্যাপারটি ভালভাবে বুঝতে হলে আরও একটি সহী হাদিস জানা জরুরী যেমন- হাদিসটার মূল বর্ননা অনেকটাই এমন “একদা কিছু সাহাবী নবী সাঃ কে কোনটা হালাল কোনটা হারাম এসব খুঁটিনাটি জানার জন্য প্রশ্ন করছিল আর তখন নবী সাঃ তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, কোনটা পাপ আর কোনটা পূন্য তা জানার জন্য(নবী সাঃ নিজের বুকে চাপর দিয়ে বলেন) এইখানটায় জিজ্ঞেস কর, এইখানে যা খারাপ লাগবে তাই পাপ আর এইখানে যা ভাল লাগবে তাই পূন্য”। এই হাদিসের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে কিছু সাহাবীদের সামনে নবী সাঃ ফতোয়া বের করার মূলসূত্র খুব সহজভাবে বলে দিচ্ছেন আবার সেই তিনিই ঐ হাদিসের দ্বারা কিছু সাহাবীদের আল্লাহর কর্তৃক নাজিলকৃত হালাল-হারামের মাঝে সীমাবদ্ধ থেকে বেশী অনুসন্ধান করতে নিষেধ করছেন। এর কারন এইখানকার প্রশ্নকারী সাহাবীগন আর ঐখানকার প্রশ্নকারী সাহাবীগনের কোয়ালিটির মাঝে হয়ত অনেক পার্থক্য রয়েছে যেমন- ক্বলবের মাঝে যা খারাপ লাগবে তাই পাপ, এই কথা তিনি সেসব সাহাবীর সামনেই বলেছিলেন যারা খাঁটি মুমিন ও সরাসরি জান্নাতি ছিলেন কেননা কে জান্নাতি আর কে জাহান্নামী ওহীর মাধ্যমে তিনি ভালভাবেই জানতেন সুতারাং যেকোন পাপ কাজই জান্নাতি মুমিনের ক্বলবে খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু জাহান্নামীদের আবার উল্টো অনুভুতি হবে। এর থেকে এটাও বুঝা যায় যে লা-মাজহাবীদের ঐ হাদিসটি তিনি যেসব লোকদের সামনে বলেছিলেন তারা হয়ত সকলেই খাঁটিমুমিন ছিল না অথবা সকলেই আম শ্রেনীর মুসলিম ছিল তাই তাদের জন্য নির্দেশনা একটু ভিন্ন ধরনের দেন যে- আল্লাহ যা হালাল-হারাম করেছে তোমরা এগুলোই মানতে থাক বেশি তর্ক-অনুসন্ধানে যেও না কেননা এতেই তাদের মঙ্গল , কিন্তু তারমানে এই নয় যে তারা আম মুসলিম বলে ইজতিহাদই করতে পারবে না এবং খাঁটি মুমিনরাই শুধু ইজতিহাদ করতে পারবে বরং আম মুসলিমরাও ইজতিহাদ করতে পারবে তবে তা অবশ্যই আল্লাহ যা হালাল ও হারাম করেছেন তার মাঝেই সীমাবদ্ধ থেকে, নাজিলকৃত বিধানের বাইরে গিয়ে বেশী ঘাটাঘাটি তাদের জন্য নিষেধ কিন্তু যাদেরকে পূর্ব হতেই জান্নাতি হিসেবে আল্লাহ সুবঃ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন তাদের সামনে কোন হারাম বা খারাপ কাজ হতে দেখলে তাদের একটু হলেও খারাপ লাগবে যদিও কুরান-হাদিসের জ্ঞান ঐ বিষয়ের উপরে তার জানা নাও থাকে তবু সে অনুভব করতে পারবে যে নিশ্চয় এটি মন্দ কাজ। তাই নবী সাঃ এইধরনের লোকদের জন্য কুরান-হাদিসের দলীল ছারাই শুধুমাত্র নিজেদের অনুভুতির মাধ্যমেই হালাল-হারাম নির্ধারন করার শর্টকাট পদ্ধতিও শিখিয়ে দিয়েছেন ফলে তাদের জন্য আরও সহজ হয়েছে আবার আম মুসলিমদের উক্ত হাদিসের নির্দেশনার মাধ্যমে কুরান-হাদিসের দলীলের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতে বলেছেন যা তাদের জন্য মংগলের কেননা আল্লাহ সুবঃ সবাইকে সমান জ্ঞান-বুদ্ধি দেন নাই আর যাকে যেমন যোগ্যতা দিয়েছেন তাকে সে অনুযায়িই বিচার করা হবে তাই যাদের চিন্তা শক্তি কম তাদের জন্য হয়ত নবী সাঃ শাব্দিক অর্থে কুরান-হাদিসের যতটুকু বুঝে আসে তাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে বলেছেন ফলে তাদের উপর যোগ্যতার পরিমাপে অতিরিক্ত বোঝা চাপানো হয়নি যা তাদের জন্য সহজতর হয়েছে।তাছারা যাদের যোগ্যতা জ্ঞান-বুদ্ধি কম তারাও যে একেবারেই ইজতিহাদ করতে পারবে না এবং শুধুমাত্র মুজতিহাদদের অন্ধ তাক্বলিদ করবে ব্যাপারটি এমনও নয় বরং তারাও প্রয়োজনে নিজেদের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ইজতিহাদ করে চলতে পারবে। আর যাদের আল্লাহ সুবঃ জ্ঞান-বুদ্ধি বেশী দিয়েছেন এবং ইজতিহাদের যোগ্যতাও বেশি তারা ঠিকই তাদের যোগ্যতাকে কাজে লাগাবে। কিন্তু বর্তমান লা-মাজহাবীরা এই হাদিসের দলীলের ভিত্তিতে নিজেরা আলাদা একটি মাজহাবেই পরিনত হয়েছে, যাদের মূলমন্ত্রই হল সবকিছুকেই শাব্দিক অর্থে বুঝা ও মানা আর ইজতিহাদকারীদেরকে বিদ্বাতী পথভ্রষ্ট ভাবার পাশাপাশি নিজেদেরকেই একমাত্র সহী ভাবা যা কিনা চরম বিপথগামীতা। তাছারা এদের বড় ভ্রষ্টতা হল এরা কুরান-হাদিসে যতটুকু নির্দেশনা আছে শাব্দিক অর্থে ততটুকুই দ্বীন মনে করে মানে কিন্তু এর বাইরে আম-জাম কাঁঠাল খাওয়া বা গাড়ি ও প্লেনে চরার ব্যাপারগুলোকে তারা দ্বীনের বহির্ভূত ভেবে মানে অথচ এগুলোও দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত ছিল ফলে তারা কিয়ামত পর্যন্ত পূর্নাংগ দ্বীনুল ইসলামকে শুধুমাত্র আধ্যাত্বিকতার একটা নির্দিষ্ট গোন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে আর বাদবাকী বিষয়ে তারা ইহুদি-খ্রীষ্টানদের উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হচ্ছে, আর এই ব্যাপারটি হিজাজে বৃটিশদের দালাল সৌদ-ওহাবী রাজবংশ ক্ষমতায় আনার পর হতে আরও বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে, মুসলিমদের ক্বিবলা মক্কা-মদীনা হতে তাদের এসব ফিতনা পুরো মুসলিম বিশ্বে ছোবল দিচ্ছে এবং ইসলামের কেন্দ্র হতে এসব ভ্রষ্টতা দলীল সহকারে আসায় অনেকেই ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে । সুতারাং এই হাদিসের ব্যাখ্যা তারা যা বুঝছে এবং অপরকে যা বুঝাচ্ছে তা অবশ্যই ভুল।
৩য়তঃ- এমনও হতে পারে উক্ত হাদিসের নির্দেশনা নবী সাঃ সাহাবীদের দিয়েছিলেন মাদানী জীবনের ১ম দিকে, কেননা তখন যেহেতু নবী সাঃ বর্তমান ছিল আর মুসলিমরা কোন সমস্যায় পরলেই আল্লাহ সুবঃ ওহী মারফত সমাধান দিতেন তাই সমস্যাগুলোর সমাধান এমনিতেই হয়ে যেত। পরবর্তীতে হয়ত পুংক্ষানুপুংক্ষ সমাধান বাহির করতে স্বয়ং আল্লাহ সুবঃ ই নবী সাঃ মাধ্যমে ইজতিহাদ করার বিধান দেন যার বর্ননা সহী হাদিসে পাওয়া যায় এবং নবী সাঃ এর ওফাতের পর খুলাফায়ে রাশেদাসহ বেশিরভাগ সাহাবীদের মাঝেও ইজতিহাদের প্রচলন দেখা যায়। তাছারা উক্ত হাদিস যখন বর্ননা করা হয় তখন হয়ত ইজতিহাদের নির্দেশ সাহাবীদের সরাসরি দেওয়া হয় নাই কেননা এই হাদিস ১ম দিকে বর্ননা করা হয় যেমন- উক্ত হাদিস নবী সাঃ তখনই বর্ননা করেন যখন কিছু সাহাবী জানতে চাচ্ছিলেন বন্য গাধা হালাল না হারাম সে সম্পর্কে কিন্তু নবী সাঃ তাদেরকে হালাল হারাম তখন কিছু বলেন নাই কিন্তু আমরা ঠিকই জানতে পারি যে পরবর্তীতে বন্য গাধা হালাল এবং গৃহপালিত গাধা হারাম করা হয় অর্থাৎ এই ধরনের নির্দেশনা পরবর্তীতে আসে তাই উক্ত হাদিসের নির্দেশনা হয়ত ১ম দিকে দেওয়া হয় প্রাথমিক সমাধান হিসেবে সুতারাং এই হাদিসটি মাদানী জীবনের ১ম দিকের নির্দেশনা তবু তা হতে পারে কিছু সাহাবীদের উদ্দেশ্য করে মাত্র। আর উক্ত হাদিসের মর্মার্থ আর শাব্দিক অর্থ যদি একই হয়ে থাকে তবে পরবর্তী হাদিস হতে জানতে পারি যে ঐ হাদিসের নির্দেশনা নবী সাঃ নিজেই পরিবর্তন করেছেন বলে এখন আর ঐ হাদিস হুবহু মানা যাবে না ।
৪র্থতঃ- উক্ত হাদিসের মর্মার্থ হয়তো সর্বদাই বলবৎ থাকবে কিন্তু শাব্দিক অর্থ নয় কারন শাব্দিক অর্থ নিলে অনেক সহী হাদিসের বিরুদ্ধে যাবার পাশাপাশি অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয় না তথা ইসলামকে পরিপূর্ন দ্বীন হিসেবে মানাই সম্ভব না উদাহরনস্বরুপ- কুরান হাদিসে কোথাও আম, কাঁঠাল খাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় নাই তাই বলে কি উপমহাদেশের লোক এগুলোকে হারাম ভেবে খাওয়া হতে বিরত থাকবে? আর এসব দেশে খেজুরও ভাল উৎপাদন হয় না,আবার গাড়ি বা প্লেনে চরারও কো দলিল কুরান-হাদিসে উল্লেখ নেই, সুতারাং এমন আরও অনেক নিত্য নতুন সমস্যার সমাধান কুরান হাদিসে সরাসরি শাব্দিক অর্থে উল্লেখ না থাকলেও মূলনীতি বা সূত্র হতে ইজতিহাদ করে চলতে হয় নচেৎ দ্বীন ইসলাম পূর্নাংগ দ্বীন একথা বলা যায় না। তাহলে লা-মাজহাবীদের প্রাণপ্রিয় সেই হাদিসে আসলে কি মর্মার্থ আছে তা এখন দেখতে হবে, দেখা যায় এখানে নবী সাঃ বলেন- কিছু জিনিস তিনি উল্লেখ করেননি সেগুলো তাঁর ভুলে যাওয়া নয়। এই কথার মর্মার্থ এটাই হতে পারে যে আসলে অনেক কিছুই তিনি কুরানে শাব্দিক অর্থে উল্লেখ করেন নাই ইচ্ছে করেই কারন এভাবে সকল কিছু উল্লেখ করলে কুরান হয়ে যেত বিশাল এক কঠিন কিতাব, তাই তিনি বুদ্ধিমান প্রানী মানুষের উপর এমনভাবে হালাল হারামের নির্দেশনা দিয়েছেন যে সেগুলো অধ্যয়ন করার পর তা হতে মূলনীতি নিয়েই মানুষ বাদবাকীর ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে। এরপরও কিছু মানুষ ইজতিহাদে ভূল করতে পারে কিন্তু নিজে চেষ্টা করার পরও সঠিক সিদ্ধান্তে না পৌছাতে পারলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন সুতারাং ইজতিহাদ একেক জনের একেক রকম হলেও একাধারে সকলেরটাই বিভিন্ন হারে সঠিক হতে পারে আবার কারও সঠিক কারও ভুলও হতে পারে তবু আল্লাহ সুবঃ রহম করবেন ভুল হলে ক্ষমাও করবেন কিন্তু বিভিন্ন রকম ইজতিহাদ হওয়ায় সেটা নিয়ে তর্ক বা নিজেরটাই ঠিক অপরেরটা ভুল অথবা নিজেরা একেকটি মাজহাবকে ফিক্সড ধরে মানতে গিয়ে নিজেদের মাজাহাবের ইজতিহাদই ঠিক, বেশী ভাল, অন্যের ইজতিহাদী মাসলা ভূল বা নিম্নমানের ভাবতে গিয়ে বাড়াবাড়ি নিষেধ করা হয়েছে । তাই হতে পারে উক্ত হাদিসের শেষের দিককার বর্ননার মর্মার্থও এটাই। কিন্তু দেখা যায় লা- মাজহাবীরা উক্ত হাদিসের শাব্দিক অর্থকে নিজেদের চলার মূলমন্ত্র করে ফেলেছে ফলে পূর্নাংগ দ্বীন ইসলাম তাদের কাছে হয়ে গেছে অপূর্নাংগ দ্বীন এবং শুধুই আধ্যাত্বিক কর্মকান্ডের বিষয়।
যাইহোক ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে লা মাজহাবীরা জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই দ্বীন অনুযায়ি চলতে পারে না, তাই তারা কিছু ক্ষেত্রে অনেক আমল হতে তো বিরত থাকেই এমনকি যেসব ক্ষেত্রে কোনভাবেই বিরত থাকা সম্ভব হয় না নতুবা জীবন ধারন করাই দুস্কর হয়ে পরে সেসব ক্ষেত্রে তারা নিজের মন মত বা আশপাশে প্রচলিত অনইসলামিক কোন একটি রীতিমত অথবা ইহুদি খ্রিষ্টান পশ্চিমাদের বিধান মাফিক চলতে বাধ্য হয় অর্থাৎ বিধানদাতা হিসেবে তাদেরও মানা হয় যা কিনা শিরকের অন্তর্ভুক অথচ দ্বীন ইসলাম কিন্তু প্রতিটা ক্ষেত্রেই জীবন বিধান দিয়েছে কিন্তু তারা শুধুই শাব্দিক অর্থে সীমাবদ্ধ থাকায় কুরান সুন্নায় তা খুজে পায় না। তাছারা বর্তমানে অনেক লা মাজহাবীরা এখন আবার শুধু শাব্দিক অর্থের মাঝেই না পরে থেকে কয়েকটি সহী হাদিসে ইজতিহাদের অস্তিত্ব আছে জানতে পেরে তারাও বেশ কিছুদিন ধরে ইজতিহাদ শুরু করেছে কিন্তু তাদের ইজতিহাদ গুলোও হয় নিজেদের স্বার্থসিদ্ধীর জন্য তাই বেশিরভাগ ফতোয়াই হয় ভুল এবং নির্দিষ্ট কিছু গোন্ডীর মাঝেই সীমাবদ্ধ যেমন- তারা ১মত ইমাম তাইমিয়া ২য়ত ইমাম ওহহাব ৩য়ত সৌদীদের মদদপুষ্ট শায়েখদের ফতোয়াকেই সর্বচ্চভাবে মেনে চলে এক্ষেত্রে তারা স্পষ্ট সহী হাদিসের বিরুদ্ধে যেতেও দ্বিধা করে না যেমন- মক্কা-মদীনার মসজিদুল হারামের মাঝে নামজরত মুসুল্লিদের সামনে দিয়ে মানুষ চলাচলকে পর্যন্ত হালাল ফতোয়া দিয়ে তা তারা অনেকদিন হলেই অব্যাহত রেখেছে যা সরাসরি হাদিস বিরোধী চরম পাপের এমনি ভুল ফতোয়া যে এতে ক্ষমা পাওয়া যায় না কারন ফতোয়া সঠিক হলে দ্বিগুন সোওয়াব ভুল হলে একগুন সোওয়াব বা ক্ষমা এই হাদিস দ্বীনের সকল ক্ষেত্রেই চলবে না কেননা দ্বীনের এমন কিছু অকাট্য বিষয়ও আছে যেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত এমনভাবে দলীল দ্বারা সার্বজনীন করা হয়েছে যে এই বিষয়গুলোতে ফতোয়া তো দূরে থাক ইজতিহাদের চিন্তা করাও পাপ যেমন-১) কালিমার উপর বিশ্বাস না থাকলে কোন ইবাদতই কবুল হবে না ২) প্রাপ্তবয়স্করা প্রত্যহ অন্তত ফরজ ছলাত আদায় না করলে সে কাফের ৩) মুহাম্মদ সাঃ ই শেষ নবী ৪) মুতা বিবাহ(অল্প সময়ের জন্য বিয়ে) কিয়ামত পর্যন্ত হারাম, ৫) মহিলা পুরূষদের ইমাম হতে পারবে না বা মুসলিম দেশের শাষক হতে পারবে না এমনকি সে যদি পাক্কা নামাজী দরবেশ টাইপ সতী পর্দানশীলা মহিলাও হয়, শুধু তাই নয় কোন মাতা বা নারী মুসলিম পরিবারের প্রধান কর্তাও হতে পারবে না ইত্যাদি আরো অনেক কিছু বিষয় আছে যেগুলো সরাসরি কুরান হাদিসে শাব্দিক অর্থে যেভাবে আছে কিয়ামত পর্যন্ত ঠিক ঐভাবেই বলবৎ থাকবে এখানে ইজতিহাদের চিন্তা করাও হারাম। আর সম্ভবত এইসব কিছু কারন দ্বীনের মাঝে থাকার দরুন লা মাজাহাবীরাও ভুল বুঝে কুরান-হাদিসের সকল বিষয়কেই শাব্দিক অর্থে মানার পক্ষপাতি যা একটি চরম পথভ্রষ্টতা অথচ তারাই আজকে ইজতিহাদ করার পক্ষে সহী হাদিস পেয়ে ভুল ইজতিহাদ তো করছেই এমনকি এমন সব ব্যাপারে ইজহাদ করছে যা কখনই ইজতিহাদ করা যাবে না, শাব্দিক অর্থেই মানতে হবে । ঠিক একইভাবে স্বইচ্ছায় স্বজ্ঞানে নামাজীর সামনে যাওয়া কবিরা গুনাহ, এটিও কিয়ামত পর্যন্ত হারাম থাকবে এটাতেও কোন ইজতিহাদ চলবে না সেটা মসজিদে হারাম এড়িয়ার মধ্যেই হোক বা অন্য এড়িয়ায় হোক । লা মাজহাবীদের ইজতেহাদী অবস্থা দেখে মনে হয় তারা সম্ভবত তাদের পূর্বের স্বভাব অনুযায়ি উক্ত ইজতিহাদের হাদিসগুলোরও মর্মার্থ না বুঝে শাব্দিক অর্থেই মানা শুরু করেছে যারফলে দ্বীন ইসলামের কোন বিষয়গুলোর ইজতিহাদ করতে হবে আর কোনগুলোকে শাব্দিক অর্থে সরাসরি মানতে হবে তার মর্মার্থও তারা বুঝতে ব্যার্থ হচ্ছে ।
আর তাদের একটি বড় ভুলের সংশোধনী নিচে দেওয়া হল –
" অন্যের কাছে কুরান হাদিস পৌছানোর ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র শাব্দিক অর্থে তা হুবহুই পৌছাতে হবে কিন্তু যখন তা আমলে আসবে বা দৈনন্দিন জীবনে মানার জন্য প্রয়োগ করতে হবে তখন আর শুধু শাব্দিক অর্থ নিলেই হবে না বরং পাশাপাশি এর মর্মার্থও দেখতে হবে যে আসলে এখানে কি করতে নির্দেশ দেওয়া আছে আর কি পরিস্থিতিতে তা মান্য করতে হবে?"। অর্থাৎ তারা যে বলে- শুধুই শাব্দিক অর্থে না থাকলে বিকৃতি হবে এটি শুধুমাত্র দলীল হিসেবে অপরকে পৌছানোর ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হবে কিন্তু বাস্তব জীবনে মানার ক্ষেত্রে শুধুই শাব্দিক অর্থে থাকাও এক ধরনের বিকৃতি এবং বোকামীর পরিচায়ক”।

এবার আলোচনা করা হবে মাজহাবীদের নিয়ে, লা মাজহাবী ছারা মাজহাবীরাও রয়েছে স্পষ্ট ভ্রান্তের মধ্যে, কারন এভাবে নির্দিষ্ট যেকোন একটি ফিক্সড মাজহাব মানা অবশ্যই ভুল।
সাধারনত মাজহাবী বলে যারা পরিচয় দেয় তাদের বেশীরভাগই নির্দিষ্ট কোন একক ব্যাক্তির ফতোয়াকে সর্বচ্চ আসনে স্থান দিয়ে থাকে আর সেই ব্যাক্তির নামানুসারে মাজহাবের নামকরন করে মুসলিম উম্মার মাঝে আলাদা দলে বিভক্ত হয় এমনকি কিছুক্ষেত্রে মৌলিক আক্বিদাগত ব্যাপারেও। আর তারা এমন করে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি ফিকহ মানার স্বার্থে। সুন্নী মুসলিমদের মাঝে বর্তমানে চারটি মাজহাব বেশী প্রসিদ্ধ হয়েছে বিশেষ করে মিশরের জামেয়া কর্তৃক শুধুমাত্র চারটি মাজহাবকেই স্বীকৃত দেয়ার পর হতে তাছারা ইত্যাদি আরও অনেক কারনে শুধুমাত্র চার ইমামের ফিকহসমূহই বেশি সংরক্ষিত হয়েছে। একসময় বিশেষ করে উসমানীয় খিলাফতকালে সুন্নীদের মাঝে চার মাজহাব নিয়ে বিভক্তি এমন পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিল যে মক্কার ক্বাবা শরীফে চার মাজহাবের জন্য আলাদা আলাদা চারটি মুসল্লাই তৈরী হয় আলাদা হয়ে নামাজ পড়ার জন্য, এক মাজহাবের লোক অন্য মাজহাবের ইমামের পিছনে নামাজ পড়ত না, তাই মুসল্লাগুলোতে চার মাজহাবের জন্য চার ইমাম নিয়োগ করা থাকত যারফলে ফরজ নামাজগুলোও একই সময়ে আলাদা আলাদা মুসল্লায় নিজ নিজ ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করত অর্থাৎ ক্বাবার চারপাশে একসাথে চার মাজহাবের চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হত একই সময়ে, মুসলিম উম্মার জন্য এর চাইতে বড় বিভক্তির সদৃশ্য উদাহরন আর পেশ করা সম্ভব নয় যদিও মুসলিমদের এসব বিভিন্ন বিভক্তির সুযোগে বৃটিশদের ছত্রছায়ায় ওহাবী মতবাদীরা সৌদদের হাতে মক্কা- মদীনাকে ইসলামিক রাষ্ট্র হতে পৃথক করে এর কিছুদিন পর সৌদী রাজা ফয়সালের সময় হতে আবারও ক্বাবা শরীফে এক ইমামের পেছনে নামাজ শুরু হয় । এছারা ইসলামের মৌলিক জিনিস নামাজ পড়ার ক্ষেত্রেও দেখা যায় চার মাজহাবের নামাজ ৪ রকম আর দ্বীনের বিভিন্ন হুকুম আহকাম এবং মাসলা মাসায়েলের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এক মাজহাবে যা বলা হয়েছে অন্য মাজহাবে সম্পূর্ন তার বিপরীতটা বলা হয়েছে এমনকি এক মাজহাব মতে যা হালাল অন্য মাজহাব মতে তা সম্পূর্ন হারাম।
যদি মাসলা মাসায়েল সংক্রান্ত বিষয়ে মতবাদের বিভিন্নতা থাকত বা রকমভেদে একটু আলাদা ইজতিহাদ হত তবে সমস্যা ছিল না কিন্তু দেখা যায় যে বেশিরভাগ ইজতিহাদগুলোই হচ্ছে মাজহাব ভেদে সম্পূর্ন বিপরীত আর সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হল স্পষ্ট হাদিসে সমাধান দেয়া থাকলেও যদি কোন মাজহাবে হাদিসের বিপরীত মত পূর্বে উল্লেখ থাকে তবে মাজহাবীরা হাদিসের সমাধান বাদ দিয়ে মাজহাবের মতটাই গ্রহন করে অর্থাৎ তারা হাদিসই প্রত্যাখ্যান করে কোন কোন ক্ষেত্রে কুরানের আয়াতও অথচ নবী সাঃ বিদায় হজ্বের ভাষনে বলে গেছেন যে আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি এদুটি জিনিস আঁকরে ধরলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না আর তা হল কুরান এবং সুন্নাহ(হাদিস) । এখানে পূর্বেই বলা হয়েছে যে চার মাজহাবের ইমামগন যখন ফতোয়া দিতেন সেই সময়ে তিনারা বর্তমানের মত এত বেশী সহী হাদিসের ভান্ডার এত সহজেই পেতেন না(সহী হাদিস সংকল শুরু হয় আরও পরে) তাই তাদের কাছে যতটুকু হাদিস সংগ্রহে ছিল তা দিয়ে তারা বিভিন্ন বিষয়ের সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেছেন আর মানুষ মাত্রই ভুলের ঊর্ধে নয় তাই তাদের ইজতিহাদে কিছু ভুলও ছিল আর এমন ভুল থাকতে পারে তা তারা নিজেরাও জানতেন বলে তিনারা বার বার বলে গেছেন যে -যখন তোমরা সহী হাদিস পাবে আর যদি দেখ আমার ফতোয়া হাদিসের সাথে সাংঘর্সিক তবে আমার ফতোয়াকে তোমরা দেওয়ালের উপরে ছুরে ফেলে হাদিসের নির্দেশনা গ্রহন করবে। কিন্তু মাজহাবীদের দেখা যায় বিশিষ্ট ফকিহগনকে অন্ধ অনুসরন করে তাদের দেয়া ফতোয়াকে নবী রাসুলের প্রতি নাজিলকৃত অহীর ন্যায় গন্য করে স্পষ্ট হাদিস এবং কুরানের আয়াতকেও প্রত্যাখ্যান করে।

আর মাজহাবীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল- দ্বীনের নিত্য নতুন মাসলা মাসায়েল বের করতে তারা সরাসরি কুরান হাদিসের সরনাপন্ন না হয়ে এসব ব্যাপারে তাদের মাজহাবের ইমামগন যেসব ফতোয়া দিয়েছেন তাই তারা চোখ বন্ধ করে অনুসরন করে এবং কোন বাছবিচারও করে না যে তাদের এসব ফতোয়া কুরান হাদিসের মুল সুত্রের সাথে সাংঘর্সিক কিনা ? আর যদি কোন সমস্যার সমাধান সরাসরি তাদের ফিকহে না থাকে তবে তাদের মাঝে যারা মাজহাবের বড় বড় মুফতি তারা তাদের মাজহাবের ফিকহ সমূহকেই মূল সূত্র ধরে নতুন কোন ফতোয়া দিয়ে থাকে কিন্তু এক্ষেত্রেও তারা কুরান হাদিসের সরানপন্ন হয় না অথচ তাদের ইমামগন যে এত ফতোয়া দিয়ে গেছেন তা কিন্তু অন্য কারও ফিকহ পড়ে নয় বরং তারা কুরান হাদিস পড়েই এত বেশী ফতোয়া দিতে পেরেছেন । আর মাজহাবীরা মনে করে উনাদের মত যোগ্যতায় পৌছা সম্ভব নয় সুতারাং কুরান হাদিসে আমাদের ইমামগন যা বুঝেছেন তার চাইতে বেশী বুঝা আমাদের ঠিক হবে না অর্থাৎ আমাদের ফিকহের ইমামগনের অন্ধ তাক্বলিদ ছারা উপায় নেই অর্থাৎ সরাসরি কুরান হাদিস পড়ে বুঝা শুধু তখনকার ইমামদেরই সাজে, আমাদের মত নগন্য মাজহাবীদের নয়। মাজহাবীদের বক্তব্যনুযায়ি কুরান হাদিস সর্বসাধারনের জন্য আল্লাহ সুবঃ নাজিল করেননি, নাজিল করেছেন শুধুমাত্র বিজ্ঞদের জন্য আর সর্বসাধারন শুধুমাত্র বিজ্ঞদের অনুসরন করবে আর কুরান শুধুমাত্র না বুঝে পূন্যের উদ্দেশ্যে মন্ত্রের মত তেলায়ত করবে। আর এভাবেই অন্যান্ন ধর্মের ন্যায় মুসলিম উম্মাহর মাঝেও পুরোহিত প্রথা সর্বত্র আরও ছরিয়ে পরে যার জন্য বিশেষভাবে দায়ী করা যায় মাজহাবীদের যদিও আলোচনার ১ম দিকে পুরোহিত প্রথা মুসলিম সমাজে কিভাবে উৎপত্তি হয়েছে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আবার মাজহাবীদের মাঝে বড় সমস্যা হল- ফিকহের ইমামগন দ্বীন ইসলামের যেসব ফতোয়া দিয়ে গেছেন সেই মাজহাবের মুফতীরা সেসব ফতোয়ার আলোকেই ইসলামকে ব্যাখ্যা করে, এরপর পরবর্তী মাজহাবী মুফতীগনও শুধুমাত্র সেসব ব্যাখ্যার ভিত্তিতেই আরো বিস্তর ব্যাখ্যা করে থাকে, এভাবে দেখা যায় তারা শুধু একটি নির্দিষ্ট মতবাদ/ফিকহের মাঝেই ঘোরপাক খেতে থাকে এবং নির্দিষ্ট একটি মাজহাবের মাঝেই নিজেদের সীমাবদ্ধ করে ফেলে কিন্তু মাজহাবের ইমামগনের ন্যায় তারাও যদি সরাসরি কুরান হাদিসকে প্রধান দলীল হিসেবে নিত এবং পাশাপাশি ইমামগনের ইজতিহাদকে রাখত তবে তারা দ্বীন ইসলামের বাইরে গিয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধ করে একটি নির্দিষ্ট মাজহাবের মাঝে ঘোরপাক খেত না আর মুসলিম উম্মাহর মাঝেও আলাদা দল তৈরী করত না। কিন্তু সত্যি কথা বলতে শয়তানই তাদেরকে এভাবে ফিক্সড ১টি মাজহাবে নিমজ্জিত করে উম্মাহর মাঝে বিভেদ তৈরী করেছে যা তারা এখনও বুঝতে পারছে না কারন তারা তাদের বাপ দাদার অনুসরন করে আসছে অথবা কোন মাজহাবী মাদ্রাসা হতে এসবই অধ্যয়ন করেছে ফলে সরাসরি কুরান হাদিসকে সামনে রেখে ফতোয়া বের করার সমর্থও তারা হারিয়ে ফেলেছে। তাই তারা কোন মাসলা বের করতে সরাসরি ফিকহ শ্বাস্ত্রকেই সামনে রাখে আর কুরান-হাদিসকে রাখে পাশে অথচ উল্টোটা হওয়ার নিয়ম ছিল।

সাধারনত ১মেই কুরান-হাদিসকে সামনে রেখে কেউ যদি বিভিন্ন দ্বীনি মাসলা মাসায়েল বের করার চেষ্টা করে বা ইজতিহাদ করে তবে দেখা যাবে যে তার ৫ থেকে ১০% ভূল হবার সম্ভাবনা থাকে যা আল্লাহ সুবঃ এর কাছে ক্ষমাযোগ্য। আর এই কাতারে ছিলেন বিভিন্ন ফিকহ শ্বাস্ত্রের ইমামগন। এরপরে কেউ যদি উক্ত ফকিহকে বিশেষ বিজ্ঞ ভেবে শুধুমাত্র তারই ইজতিহাদকৃত বিষয়াদিকে সামনে রেখে অন্নান্য ক্ষেত্রে দ্বীনি মাসলা মাসায়েল বের করার চেষ্টা করে বা ইজতিহাদ করে তবে দেখা যাবে যে তার ২০ থেকে ৩০% ভূল হবার সম্ভাবনা থাকে এরপরে কেউ যদি ২য় ব্যাক্তির ইজতিহাদকৃত বিষয়াদিকে সামনে রেখে অন্নান্য ক্ষেত্রে দ্বীনি মাসলা মাসায়েল বের করার চেষ্টা করে তবে দেখা যাবে যে তার ৪০ থেকে ৫০% ভূল হবার সম্ভাবনা থেকে যায় এভাবে কুরান-হাদিসকে দূরে রেখে যতোই মানুষের জ্ঞানকে প্রাধান্য দেয়া হবে ততোই ভূল হবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে আর এভাবেই মাজহাবীরা ভূলের মাঝে হাবুডুবু খেতে থাকে। আবার যদি ভুল খুব অল্পও হয় তবু আল্লাহর কিতাব এবং রসুলের হাদিসকে ১মে স্থান না দেয়ায় তাকে ক্ষমা করা হবে না কারন কুরানে আল্লাহ সুবঃ বার বার বলেছেন – অনুসরন কর আল্লাহকে(কুরান) এবং তার রসুলকে(হাদিস) এছারা আল্লাহ সুবঃ আর কারো অনুসরন করতে বলেননি। তবে কেউ যদি কুরান-হাদিসকে সামনে রাখার পরও ইজতিহাদকৃত ফতোয়ায় ৫০% ভুল করে বসে তবুও আল্লাহ সুবঃ তাকে ক্ষমা করে দিবেন, আর এক্ষেত্রে আরেকটি শর্ত হচ্ছে ফিকহ শ্বাস্ত্রের ইমামগনের মতন ঘোষনা দিতে হবে যে আমার ফতোয়াই চুরান্ত নয় বরং এর বিপরীতে সহী হাদিস পেলে সেটাই মানবে অথবা সঠিক ফতোয়া বের করবে। সুতারাং আল্লাহ ও তাঁর রসুল ছাড়া কারো অন্ধ অনুসরন করা ইসলামে জায়েজ নেই যেমন ইমাম আহমাদ বলেন- তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না, মালেকেরও অন্ধানুকরন করো না। অন্ধানুকরন করো না শাফেয়ীর আর না আওয়ারী ও ষত্তরীব বরং তোমরা সেখান থেকে গ্রহন কর যেখান থেকে তারা গ্রহন করেছেন। (ইলামুল মোয়াক্কিঈন ২/৩০২)
আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এই চার মাজহাবের ইমামসহ কোন ইমামই মাজহাব নামক কোন নির্দিষ্ট ফিকহের দল তৈরী করে যাননি বরং তাদের মৃত্যুর অনেক পরে বেশী বিখ্যাত হওয়ায় তাদের ফিকহের ভক্তকুলের মাঝে অন্ধ অনুকরন বাড়তে বাড়তে এক সময় আলাদা আলাদা ফিকহের অনুসারির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বিভিন্ন মাজহাবী দলের জন্ম হয় এসম্পর্কে যদিও বিস্তারিত পরে আলোচনা করা হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল মাজহাবীরা দ্বীন ইসলামের মুল ভিত্তি কুরান-হাদিসকে বাদ দিয়ে যেভাবে জীবনের সকল সমস্যার সমাধান নির্দিষ্ট কোন একটি মাজহাব হতেই নিয়ে থাকে তাতে মনে হয় মাজহাবীরা দ্বীন ইসলাম না মেনে দ্বীনে হানাফী/ দ্বীনে মালিকী/দ্বীনে শাফেই/দ্বীনে হাম্বলী মানছে তাই তাদের মৃত্যুর পর ক্ববরে যখন প্রশ্ন করা হবে মা দ্বীনুকা ? তখন কি তার জবাবে তারা বলবে যে- অমুক ইমামের ফিকহের মাধ্যমে আমার দ্বীন ছিল ইসলাম ? আর ইসলাম কি নির্দিষ্ট করে শুধুমাত্র কোন একটি ফিকহের অনুসরনের কথা বলে ? তাছারা অনেক আলেমগন বলেন যে- এভাবে ব্যাক্তির অন্ধ অনুসরনে মাজহাব মানা শিরকের পর্যায়েও চলে যেতে পারে। তবে যাইহোক ফিক্সড করে কোন মাজহাব মানা যাবে না কুরান হাদিসকে পেছনে ফেলে। আর কুরান হাদিসকে সামনে রাখলে কেউই কোন মাজহাবই ফিক্সড করতে সমর্থ হবে না বরং সে একাধারে সব মাজহাবই মানবে আবার একই সাথে সব মাজহাবের অনেক কিছুরই সে বিরোধীতা করতেও বাধ্য হবে সুতারাং এমন হলে সে আসলে কুরান-হাদিস বা দ্বীন ইসলামই মানছে কোন মাজহাব নয়। মাজহাব মানলে যেকোন একটিই মানতে হবে এগুলো আসলে মাজহাবী আলেমদের বানোয়াট যুক্তি, এর পেছনে না আছে কুরান হাদিসের কোন দলীল আর না আছে কোন মাজহাবের ইমামের উক্তি । তবে যাইহোক এতদ্বসত্তেও উপরে উল্লেখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে ফিকহ নিয়ে কোন গোঁড়া মাজহাবী বা লা মাজহাবীরা পরিপূর্ন বুঝতে সক্ষম নাও হতে পারে তাই এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাহ আল্লাহ।
(চলবে)

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৫৫

Realanswer বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারলাম

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:১৫

ইসলামি চিন্তাবিদ বলেছেন: ধন্যবাদ লেখাটি ধৈর্যের সাথে পড়ার জন্য

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:০৩

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: মাজহাবের ইতিহাস পক্ষপাত ছাড়া সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন ও ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করুন।

খেলাফত মানা না মানার বিষয়ে আলাদা পোস্ট দিলে উপকৃত হতাম। কারণ সাধারণ দৃষ্টিতে খেলাফত ২য় খলিফার পর থেকে কার্যকর থাকেনি, নানান ফেৎনা ও বিভক্তিতে বাস্তবতা হারিয়েছে। আর পরবর্তীতে যাদের আমরা খেলাফত বলি তা মূলত রাজতন্ত্রকে জনগোষ্ঠির কাছে গ্রহণযোগ্যে করার ছদ্মনামকরণ। তাদের অধিকাংশের কাছে দীনের চেয়ে হারেম প্রিয় ছিল। যে রাস্ট্রব্যবস্থা সাহাবাদের সময়েই চালু রাখা সম্ভব হয়নি, তা কেয়ামত পর্যন্ত কীভাবে আমরা বাস্তবায়নের বৃথা চেষ্টা করতে পারি? আল্লাহর রাসুল খেলাফত সন্বন্ধে স্পষ্ট কিছু বলে গেলে তার ওফাতের পরে খলিফা নির্বাচন করতে কেন বিলম্ব ও টেনশন দেখা গেল - সেটা বিবেচ্য। এমন কি হতে পারে, যে কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, মুসলমানদের ঐক্য সমুন্নত রাখবে, কোরআন-হাদিসের বিরুদ্ধাচারণ করবে না, তা-ই ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা হিসাবে আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হবে? হতে পারে তা রাজতন্ত্র, হতে পারে তা গণতন্ত্র অথবা একনায়কতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র! আর এটাও জানার যে, দীন পালনে সাধারণভাবে বাধা না থাকলে সেই খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র কার্যক্রম, বিশেষত সাধারণ মানুষ যেখানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তা করে জায়েজ কিনা?

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৪৬

ইসলামি চিন্তাবিদ বলেছেন: ১মেই আপনাকে ধন্যবাদ দেয়া পূর্বক বলি আল্লাহ সুবঃ আপনার দুয়া কবুল করুন- আমিন । আর আপনি অল্প কথায় যা জানতে চেয়েছেন তা বলতে অনেক কিছুই লিখতে হয় তবু চেষ্টা করছি সংক্ষেপে কিছু বলার। ১মে আপনি যা বলেছেন তাতে অনেকটা এরকম মনে হয় যে , উত্তম কিছুর পরে আবারও খারাপী ছেয়ে যাবে এটাই ঈশ্বর কর্তৃক দুনিয়ার নিয়ম কিন্তু তাই বলে মুসলিমদের ঠিকই উত্তমের চেষ্টা করতে হবে অর্থাৎ সাহাবীদের জামানা হতেই ফিতনা শুরু হলেও ফিতনা বন্ধের জন্য ঠিকই চেষ্টা চালাতে হবে আর মুসলিমদের একজন নেতা না থাকা (হোক সে ভাল বা মন্দ) আরও বড় ফিতনার কারন । মুসলিমদের অনেক খলিফাই খারাপ ছিল আর এজন্য সে অবশ্যই পরকালে জিজ্ঞাসিত হবে কিন্তু মুসলিম হবার পরও যদি খলিফার হাতে বায়াত না করে মারা যায় তবে সে জাহিলিয়াতের উপর মৃত্যুবরন করবে এটা সহী হাদিসে এসেছে তাই খলিফা কেমন সেটা আমার দেখার বিষয় না । জনগন ভাল হলে শাষকও ভাল হবে আর জনগন খারাপ হলে আল্লাহ সুবঃ খারাপ শাষক বসান তাই খলিফা যদি কুরান সুন্নার মধ্যে আদেশ করে তবেই মানা ফরজ নয়তো যতটুকু এর বাইরে করবে ততটুকুর আনুগত্য না করারই নির্দেশ হাদিসে এসেছে।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫৮

ইসলামি চিন্তাবিদ বলেছেন: ২য়ত আপনি বলেছেন-আল্লাহর রাসুল খেলাফত সন্বন্ধে স্পষ্ট কিছু বলে গেলে তার ওফাতের পরে খলিফা নির্বাচন করতে কেন বিলম্ব ও টেনশন দেখা গেল ?
খলিফা নির্বাচন করতে বিলম্ব ও টেনশন দেখা গেলেও পরে ঠিকই যোগ্য খলিফাই নির্বাচন হয়েছিল , আর খলিফা নির্বাচনের মত এত বড় একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে অবশ্যই বিলম্ব ও টেনশন হবে আর এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন বিধায় তারা নবী সাঃ এর লাশ এর দাফনের চাইতে খলিফা নির্ধারনেই বেশী মনযোগী হন আর তিন দিনের মাঝেই খলিফা নির্বাচন হয়েছিল।
আর আল্লাহর রাসুল খেলাফত সন্বন্ধে এবং খলিফা নির্ধারনের পদ্ধতি সম্পর্কে অবশ্যই বলে গিয়েছিলেন কিন্তু এগুলো সর্বসাধারনের কাছে অজানা রয়েছে কিন্তু যারা দায়িত্বশীল তারা ঠিকই জানতেন। যেমন- মুসলিমদের মাঝে কুরাইশ বর্তমানথাকতে অন্য বংশ প্রাধান্য পাবে না । তাছারাও এর সঠিক পদ্ধতি হল- পরবর্তী খলিফা নির্ধারনের পদ্ধতি বর্তমান দায়িত্বশীল খলিফাই নির্ধারন করে দিয়ে যাবেন তার জামানার মুসলিমদের হালচাল বুঝে। ইসলামি নিয়মানুযায়ি খলিফাদের কিছু কিছু ক্ষমতা এমন দেয়া হয়েছে যে এরজন্য শুধুমাত্র সে একমাত্র আল্লাহ সুবঃ এর কাছেই দায়ী থাকবে আর কারো কাছে নয় আর পরবর্তী খলিফা নির্ধারনও তেমনি একটি ক্ষমতা। উদাহরনস্বরুপ- নবী সাঃ এর সময়ে মুসলিমরা ছিল সবচেয়ে ভাল এবং সচেতন তাই তিনি মুখে কারও নাম বলে জাননি কারন তাহলে হাদিস অনুযায়ি উম্মতে মুহাম্মদির - "তোমাদের নেতা তোমাদের মধ্য হতেই তোমরাই নির্বাচন করবে" এই মর্যাদাকে ছোট করা হয় কিন্তু তিনি মুখে না বলে গেলেও পরোক্ষভাবে ঠিকই বুঝেছিলেন এবং চাচ্ছিলেনও যে আবু বকর রাঃ ই খলিফা হোক তাই তিনি আবু বকর রাঃকে বিভিন্ন সময়ে ইমামতি করতে দিতেন আর খলিফা নির্বাচনের সময় উমর রাঃও এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই আবু বকর রাঃ এর হাতে ১ম বায়াত হয়ে খলিফা বানান। কিন্তু আবু বকর রাঃ এর সময় মুসলিমরা তো আর নবী সাঃ এর জীবদ্দশার মতন এত সচেতন ছিল না সেটা তিনি ভালভাবে বুঝেই উমর রাঃ এর মত শক্ত মানুষকে নির্ধারন করে যান। কারন তিনি ঠিকই জানতেন যদি নবী সাঃ এর মত মুখে কিছু না বলে যাই তবে উমর রাঃ খুব কঁড়া প্রকৃতির বলে তাকে মুসলিমরা কেউই নেতা নির্বাচন করবে না অথচ আবু বকর রাঃ ঠিকই বুঝতে পারছিলেন যে তখনকার মুসলিমদের সঠিক পথে আনতে উমর রাঃ ই একমাত্র যোগ্য ব্যাক্তি তাছারা নবী সাঃ বলে গেছেন আমার পরে যদি কেউ ইলহাম প্রাপ্ত হত তবে উমর রাঃই হত। সুতারাং উমর রাঃ কে যুবরাজ নির্ধারন না করে যদি তিনি মৃত্যু করেন আর অন্য নরম কেউ খলিফা হয় আর মুসলিমরা তার মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খায় তবে কিন্তু পরকালে ঠিকই আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করতে হবে কেননা স্বয়ং নবী সাঃও কিন্তু মুখে তার নাম না বলে গেলেও হাইলাইট ঠিকই করেছিলেন আর হাদিস হতেও আমরা জানি যে- নবী সাঃ আয়েশা রাঃ এর ঘরে বসে বলছিলেন আল্লাহ সুবঃ ই আবু বকর রাঃ ছারা কাউকে খলিফা হতে দিবেন না। আর উমর রাঃও মৃত্যুর পূর্ব মুহু্তে হলেও ৬ জন যুবরাজ নির্ধারন করে দিয়ে গিয়েছিলেন আর উসমান রাঃ সেই সুযোগটাও পাননি কিন্তু তারপরেও আলী রাঃ কেই নির্বাচন করা হয় আর তার খিলাফত কাল পুরোটাই কাটে ফিতনা দমনে কিন্তু হটাত করেই আলোচনার মারপ্যাচে মুয়াবিয়া রাঃ খলিফা হন আর আলী রাঃ সরে দাড়ান এরপর মুয়াবিয়া রাঃ কিন্তু যুবরাজ হিসেবে ঠিকই হাসান হোসেন রাঃ দের নির্ধারন করেন কিন্তু ইয়াযিদের চক্রান্তেই সম্ভবত তা আর সম্ভব হয়নি কিন্তু শীয়াদের প্রপাগোন্ডায় মনে হয় মুয়াবিয়া রাঃই এর জন্য দোষী। এর ইয়াজিদ হতে শুরু হয়ে পরবর্তী খলিফারা প্রায় সবাই একমাত্র নিজের ছেলেদের অথবা প্রিয়ভাজনদের খলিফা মনোনায়ন করা শুরু করে ফলে খিলাফত শুধু্মাত্র উমাইয়াদের মঝেই ঘোরপাক খেতে থাকে তবুও উমর ইবনে আব্দুল আজিজ এর ব্যাতিক্রম ছিলেন । যাইহোক খলিফা কে হল সেটার চাইতে গুরুত্বপুর্ন হল খলিফা একজন থাকা এবং সে কিভাবে পরিচালনা করছে সেটা । আর মুসলিমদের দায়িত্ব হল তার আনুগত্য করা খলিফার ভুলের জন্য অন্যদের পাকড়া করা হবে না , যার যার পাপের জন্য সে নিজেই দায়ী থাকবে আল্লাহ যাকে যতটুকু দায়িত্ব দিয়েছেন সেই অনুযায়িই তাকে হিসাব দিতে হবে।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:১৯

ইসলামি চিন্তাবিদ বলেছেন: খলিফা না থাকাবস্থায় বা হক্ব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র কার্যক্রম, বিশেষত সাধারণ মানুষ যেখানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তা ইসলামে জায়েজ নাই । আর আপনি বলেছেন -কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, মুসলমানদের ঐক্য সমুন্নত রাখবে, কোরআন-হাদিসের বিরুদ্ধাচারণ করবে না, তা-ই ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা হিসাবে আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হবে? হ্যা কোরআন-হাদিসের বিরুদ্ধাচারণ না করলে তো খলিফা থাকতেই হবে আর একটি রাষ্ট্র সরকার প্রধান ছারা চলবে কি করে সুতারং খলিফাই হবে সেখানকার সরকার প্রধান । আর যদি বলেন- খলিফা থাকবে না শুধুমাত্র বৃটিশ মদদপূষ্ট সৌদীদের মতন রাজা হয়ে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, মুসলমানদের ঐক্য সমুন্নত রাখবে । না এটা সম্ভব না কারন মুল জিনিসটাই তো থাকল না অথাৎ ইমামত আর ইমামত ছারা জামাত প্রতিষ্ঠা কিভাবে হবে একজন নেতা ছারা কাকে ঘিরে মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হবে ? ইমাম সাহেব ছারা কি জামাত হবে ? পশ্চিমারা হাজার বছর সাধনা করে মুসলিমদের খিলাফত ধংস করে মুসলিমদের মাথায় গেঁথে দিতে সমর্থ হয়ছে যে - মুরগী ছারাই ডিম সম্ভব অর্থাৎ খলিফা ছারাই ইসলামিক রাষ্ট্র সম্ভব । সুতারাং দেখা যাচ্ছে খলিফা না নির্ধারন করেই শতবছর যাবত মুসলিমরা ইসলামির রাষ্ট্রের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু মুরগী ছারা কি আর ডিম সম্ভব ? আর এজন্য বৃটিশরা ইসলামকে বিকৃত করে শিক্ষা ব্যাবস্থাও চালু করে দেয় সপ্তাদশ শতাব্দির দিকে আলিয়া মাদ্রাসা স্থাপন করে । পরবর্তীতে এরাই প্রচার করতে থাকে যে-রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র অথবা একনায়কতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র কেন্দ্রিক রাষ্ট্রের মাঝেও ইসলাম মানা যায় আর উদ্ভাবন করে ইসলামিক গনতন্ত্র নামক আরেকটি তন্ত্র যেখানে ইসলাম নিজেই একটি আলাদা তন্ত্র এবং উত্তম তন্ত্র । ইসলামের সাথে গনতন্ত্রের মিশানো অনেকটা দুধের সাথে গোবর মিশানোর মত আর সবচেয়ে বড় কথা হল গনতন্ত্রও একটি দ্বীন বা রাষ্ট্রীয় জীবন ব্যাবস্থা যা স্বইচ্ছায় মানা সরাসরি শিরক আর কেন শিরক তা ভালভাবে বুঝতে নিচের লিংকে যান।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৩

ইসলামি চিন্তাবিদ বলেছেন: ১মে Click This Link
২য়ত
http://www.somewhereinblog.net/blog/Islamichintabid/30156878

৩| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:০৯

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: আরেকটি বিষয়, সব পর্বেই লেখাটি বর্ণনামূলক, এক নাগাড়ে পড়ে যাওয়া কিছুটা ক্লান্তিকর। বিষয়ভিত্তিক কিছু সাব হেডিং যুক্ত করলে পড়তে সুবিধা হত। অনেকে এত বড় লেখা না পড়ে স্কিপ করে যাবে, সে ক্ষেত্রে ভার্টিক্যাল রিডিং সম্ভব হত। ধন্যবাদ।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৬

ইসলামি চিন্তাবিদ বলেছেন: ধন্যবাদ লেখাটি ধৈর্যের সাথে পড়ার জন্য এবং এডভাইসের জন্য।

৪| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:০৬

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: কষ্ট করে দীর্ঘ উত্তর দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। জাজাক-আল্লাহ।

৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৪৬

ইসলামি চিন্তাবিদ বলেছেন: পরের পর্ব -- Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.