নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জরীফ উদ্দীন

জরীফ উদ্দীন

মন জোগাতে নয় জাগাতে

জরীফ উদ্দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈশাখী পূর্ণিমাঃ সিদ্ধার্থের জন্ম, বুদ্ধুত্ব লাভ পরলোকগমণ

০৩ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৭

আজ ররিবার। বৈশাখী পূর্ণিমা। সিদ্ধার্থের জন্ম, বুদ্ধুত্ব লাভ পরলোক গমণ দিবস। বৌদ্ধ ধর্ম মতে, আজ থেকে দুই হাজার ৫৫৮ বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বৌদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় ‘বৌদ্ধ পূর্ণিমা’।
এক রাতে রাজা শুদ্ধোদনের স্ত্রী রানী মহামায়া সোনার পালঙ্কে ঘুমিয়ে ছিলেন রাতে স্বপ্নে দেখলেন, স্বর্গ থেকে চারজন দিব্যকান্তি দেবতা এসে মায়াদেবীর পালঙ্ক তুলে নিয়ে গেলেন হিমালয়ে। সেখানে এই সময় এলো একটি সাদা হাতি যার কপালে টিপ, কচিদুটি দাঁত, শুঁড়ে শ্বেতপদ্ম। হাতিটি রাণীর কোলে এনে দিন পরম যত্নে। রাণীর স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল। সব খুলে বললেন রাজাকে। জ্যোতিষী গণনা করে জানালেন রাণীর কোল আচ্ছে যশস্বী, জগৎদুর্বল, জীবের দুঃখহারী, মহাজ্ঞানী এক মহাপুরুষ। ছাপ্পান্ন বছরের শুদ্ধোদন খুশিতে প্রজাদের মুক্ত হস্তে দান করতে লাগলেন।
সিদ্ধার্থের জন্মের পূর্বে মায়াদেবী বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য রাজা শুদ্ধোধনের কাছে অভিলাষ জ্ঞাপন করলেন। রাজা যাওয়ার জন্য অনুমতি দিলে কপিলাবস্তু থেকে রানীর পিতৃগৃহ দেবদহনগর রথে চড়ে সাড়ম্বরে বাপের বাড়ি যেতে লাগলেন। পথে লুম্বিনী কাননে শালবৃক্ষ তলে সিদ্ধার্থের জন্ম হলো। মায়াদেবীর আর রথে চড়ে বাপের বাড়ি যাওয়া হলো না। সেখান থেকে কপিলাবস্তু নগরীতে ফিরে আসলেন। শুদ্ধোধন ও মায়াদেবীর সন্তান-সন্ততি লাভের দীর্ঘ অাকাঙ্ক্ষার ফলশ্রুতি হলো এই রাজকুমার। সন্তান লাভে আশা বা উদ্দেশ্য সিদ্ধ হওয়া কিংবা পরিতৃপ্তির অপরূপ ব্যঞ্জনায় রাজকুমারের নামকরণ করা হয় সিদ্ধার্থ।
জন্মের সপ্তম দিবসে সিদ্ধার্থ মাতৃহারা হলে তাঁর বিমাতা রাণী গৌতমী কর্তৃক শিশু সিদ্ধার্থ লালিত-পালিত হওয়ায় তিনি সিদ্ধার্থ গৌতম নামেও পরিচিতি লাভ করেন। এই সিদ্ধার্থ গৌতমই পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্ব ইতিহাসে গৌতম বুদ্ধ নামে অভিষিক্ত হন।
চিন্তাশীল, মেধাবী ও ধ্যানী প্রকৃতির শিশু সিদ্ধার্থ গৌতম যথানিয়মে বেড়ে উঠতে থাকেন। ক্রমেই তার চারিত্রিক মাধুর্য বিকশিত হতে শুরু করে, তাঁর মধ্যে অপরিমেয়
মানবীয় গুণাবলি প্রকাশ পেতে থাকে। এক সময় রাজা পুত্রের বিয়েরও ব্যবস্থা করেন। এতসব আয়োজন সত্ত্বেও সিদ্ধার্থ গৌতমের মনে সুখ নেই, শান্তি নেই। এক পর্যায়ে রাজকুমার উদ্যান ভ্রমণে গিয়ে প্রথম দিন এক
বুড়ো লোক, দ্বিতীয় দিন এক অসুস্থ লোক, তৃতীয় দিন শবাধারে শায়িত এক মৃতব্যক্তি ও চতুর্থ দিন এক শান্ত দান্ত সৌম্যকান্তি সন্যাসী দেখলেন। এই দৃশ্যগুলো অবলোকন করে ও বিশদ অবহিত হয়ে তিনি বুঝতে পারলেন সন্ন্যাস জীবন অবলম্বনই মনে প্রশান্তি এনে দিয়ে জীবন দুঃখের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারে। জীবন-ঘনিষ্ট দুঃখ দেখে গৃহত্যাগ করে জীবন-দুঃখের ইতি টানতে সিদ্ধার্থ গৌতম স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অতপর তিনি পিতা, মমতাময়ী বিমাতা, প্রিয়তমা স্ত্রী মহিয়সী গোপা, আদরের আত্মজ রাহুল, প্রিয় রাজ্যরাজপ্রাসাদ ইত্যাদি
পরিত্যাগ করে গভীর রাতে গৃহত্যাগ করেন।
গৃহ হত্যাগের পর বহু ঋষির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেও দুঃখমুক্তির যথার্থ খোঁজ পেতে অসমর্থ হন সিদ্ধার্থ গৌতম। পরে তিনি একাকী কঠোর তপশ্চর্যায় নিয়োজিত থেকেও কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হন। এভাবে প্রায় ছয় বছর অবহিত হয়। অবশেষে তিনি মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেন। এক পর্যায়ে অভীষ্ট সাধন কিংবা শরীর পতন মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ভারতের বিহার রাজ্যের গয়ার নিকটস্থ এক অশ্বত্থবৃদ্ধ (বোধিবৃক্ষ) মূলে বসে সাধনায় রত থাকেন। তিনি ৩৫ বছর বয়সে জ্ঞান লাভ করেন। জ্ঞান লাভ করার পর তাঁর নাম হয় বুদ্ধ বা গৌতম বুদ্ধ।
বুদ্ধ বলেছেন, মানব জীবন দুঃখময়। এই দুঃখের প্রকৃত কারণ তৃষ্ণা। এর নাম অার্যসত্য।
১ম অার্যসত্য : জগতে দুঃখ বিদ্যমান। দ্বিতীয়
আর্যসত্য : দুঃখ সমুদয়। তৃতীয় আর্যসত্য : দুঃখ নিরোধগামী। দুঃখ। চতুর্থ আর্যসত্য : দুঃখ নিরোধগামিনী প্রতিবাদ। দুঃখ নিরোধের
উপায় আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ। এই আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ হলো : সৎ দৃষ্টি, সৎ সংকল্প, সৎ বাক্য, সৎ কর্ম, সৎ জীবিকা, সৎ মানসিকতা, সৎ স্মৃতি ও সৎ সমাধি।
এই অষ্টাঙ্গিক সোনালী পথ পরিক্রমার জন্য চাই মনের প্রশান্তি। এর জন্য চারটি ভাব থাকার দরকার। মৈত্রী, করুণা, মুদিতা, উপেক্ষা।
বুদ্ধ তার ভক্তদের পষ্ণশীল মেনে চলতে বলেন
(১) প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকা।
(২) কাজ করার সময় স্বার্থকে মনে স্থান না দেওয়া।
(৩) মিথ্যা না বলা। চুরি না করা।
(৪) বুদ্ধি লোপ পাওয়ার মত কিছু না খাওয়া। এবং
(৫) মন ও শরীর উভয়কে পবিত্র রাখা।
বুদ্ধ প্রবর্তিত ধর্মগ্রন্থ'র নাম ত্রিপট। এতে শুধু বৌদ্ধধর্ম নয়, সমকালীন প্রধান ধর্মগুলোর আলোচনা সহ বুদ্ধ'র বিভিন্ন সময়ের নানা উক্তিতে ও বিশ্লেষণএ তাঁর ধর্মের ব্যাখ্যা করেছেন। এটি পালি ভাষা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
বুদ্ধ সুদীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছর তাঁর উপলব্ধ জ্ঞান সকল প্রাণীর হিত সুখে নিৎশেষে অকারতে দান করে আশি বছর বয়সে খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দের বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে ভারতের উত্তর প্রদেশের কুশীনগরে
পাড়ি জমালেন পরপারে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.