নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিজান আহামেদ

কালের সময়

সকলে ভালো থাকুন

কালের সময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের সুন্দরবন দিত্বীয় কিস্তি

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৫


বাংলাদেশের সুন্দরবন প্রথম কিস্তি
উদ্ভিদবৈচিত্র্যের উদাহারন
সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী Heritiera fomes ও গেওয়া Excoecaria agallocha ও গরান Ceriops decandra এবং কেওড়া Sonneratia apetala । ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসাব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে সুন্দরবনে । প্রেইন এর প্রতিবেদনের পর সেইখানে বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ প্রজাতি এবং তাদের শ্রেণীকরণের এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে । বনজ প্রকৃতিতে খুব কমই আনুসন্ধান করা হয়েছে এসব পরিবর্তনের হিসেব রাখার জন্য । পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের বেশির ভাগ ম্যানগ্রোভে Rhizophoraceae, Avicenneaceae অথবা Laganculariaceae শ্রেণীর গাছের প্রাধাণ্য থাকলেও বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভে প্রাধাণ্য Sterculiaceae এবং Euphorbiaceae শ্রেণীর গাছের ।বদ্বীপিয় নয় এমন অন্যান্য উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনভূমি এবং উচ্চভূমির বনাঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে উদ্ভিদ জীবনপ্রবাহের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে । পূর্ববর্তীটির তুলনায় Rhizophoraceae এর গুরুত্বও কম । উদ্ভিদ জীবনচক্রের ভিন্নতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে উত্তর ও পূর্বে বিশুদ্ধ পানি এবং নিম্ন লবণাক্ততার প্রভাব ও পানি নিষ্কাশন এবং পলি সঞ্চয়ের ভিত্তিতে ।

সুন্দরবনকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে একটি আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি হিসেবে যা গড়ে উঠেছে সুগঠিত সৈকতে কেওড়া Sonneratia apetala এবং অন্যান্য সামুদ্র উপকূলবর্তী বৃক্ষ প্রধাণ বনাঞ্চলে । ঐতিহাসিকভাবে সুন্দরবনে প্রধাণ তিন প্রকারের উদ্ভিদ রয়েছে যাদের চিহ্ণিত করা হয়েছে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা ও স্বাদু পানি প্রবাহের মাত্রা এবং ভূপ্রকৃতির মাত্রার সাথে সম্পর্কের গভীরতার উপরেই ভিত্তি করে ।

সুন্দরবন পুরো অঞ্চল জুড়েই সুন্দরী এবং গেওয়া এর প্রাধাণ্যের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে ধুন্দল Xylocarpus granatum এবং কেওড়া Sonneratia apetala। ঘাস ও গুল্মের মধ্যে Poresia coaractata, Myriostachya wightiana, শন Imperata cylindrical নল খাগড়া Phragmites karka গোলপাতা Nypa fruticans রয়েছে সুবিন্যস্তভাবে । কেওড়া নতুন তৈরি হওয়া পলিভূমিকে নির্দেশ করে এবং এই প্রজাতিটি বন্যপ্রাণীর জন্য জরুরী বিশেষ করে চিত্রা হরিণের Axis axis জন্য । বনভূমির পাশাপাশি সুন্দরবনের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে নোনতা এবং মিঠা পানির জলাধার । আন্তঃস্রোতীয় পলিভূমি, , বালুচর, বালিয়াড়ি, বেলেমাটিতে উন্মুক্ত তৃণভূমি এবং গাছ এবং গুল্মের এলাকা জুড়ে ।পরম্পরা বলতে সাধারণত বোঝানো হয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দ্বারা কোন একটি এলাকার অনুক্রমিক অধিগ্রহণ । কোন একটা জমে উঠতে থাকা কাদা চরে । আদি প্রাজাতি ক্রমে বাইরে থেকে আসা নতুন প্রজাতি দ্বারা ধাপে ধাপে প্রতিস্থাপিত হতে থাকে । সর্বশেষে ওই আবহাওয়ায় উপযুক্ত এমন বিভিন্ন প্রাজাতির গাছের এক স্থানীয় শ্রেণী তৈরি হয । ট্রুপের মতে অনুক্রমিকতা সধারণত শুরু হয় নতুন পলি থেকে তৈরি হওয়া ভূমিতে । নতুন ভাবে গড়ে ওঠা এই ভূমিতে প্রথম পত্তন হয় গেওয়ার এবং এর সাথে Avicennia এবং গোল পাতা । পলি জমতে জমতে ভূমি যখন উঁচু হতে থাকে তখন সেখানে আসে অন্যান্য প্রজাতির গাছ । সবচেয়ে পরিচিত হলেও দেরীতে আসা প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটি হল গেওয়া Excoecaria agallocha । উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাঝে মাঝে স্রোতে ভেসে যাওয়া ভূমিটিতে এরপর আসা শুরু করে সুন্দরী Heritiera fomes ।


প্রাণীবৈচিত্র্য বিদ্যমান
সুন্দরবনে ব্যাপক প্রাণীবৈচিত্র্য বিদ্যমান । প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সুন্দরবনের কিছু কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ অভয়ারণ্যের মত যেখানে শর্তহীনভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যায়না এবং বন্য প্রাণীর জীবনে সামান্যই ব্যাঘাত ঘটে । যদিও এটা স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রাণী সম্পদ হ্রাস পেয়েছে এবং সুন্দরবনও এর বাইরে নয় । তারপরও সুন্দরবন বেশ অনেকগুলি প্রাণী প্রাজাতি এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রজাতিদের টিকিয়ে রেখেছে । তাদের মধ্যে যেমন বাঘ এবং শুশুককে প্রাধাণ্য দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে প্রানীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা এবং পর্যটন উন্নয়নের । ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সম্পূর্ণ বিপরীত পরিবেশে থাকা এই দুইটির অবস্থা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সামগ্রিক প্রাণীবৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী সূচক । ২০০৪ সালের হিসাব মতে সুন্দরবন ৫০০ টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের একক বৃহত্তম অংশ । সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান মৌলিক প্রকৃতির এবং যা বন্য প্রাণীর বিশাল আবসস্থল। বন্য প্রাণীর সংখ্যা এবং এর লালনক্ষেত্রের উপর মানুষের সম্পদ সংগ্রহ এবং বন ব্যবস্থাপনার প্রভাব অনেক । কচ্ছপ ও কেটো কচ্ছপ Betagur baska, সুন্দি কাছিম Lissemys punctata এবং ধুম তরুণাস্থি কাছিম Trionyx hurum গিরগিটি Yellow monitor Varanus flavescens এবং Water monitor Varanus salvator), অজগর Python molurus ও রয়েল বেঙ্গল টাইগার Panthera tigris tigris সুন্দরবনের স্থানীয় প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি সংরক্ষিত আছে । বিশেষ করে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংশোধিত আইন ১৯৭৪ P.O. 23 of 1973 দ্বারা ।
বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ Hog deer Axis procinus ও Swamp deer Cervus duvauceli মহিষ Bubalis bubalis জাভাদেশীয় গণ্ডার Rhiniceros sondaicus এবং ভারতীয় গণ্ডার Rhinoceros unicornis ও স্বাদুপানির কুমিরের Crocodylus palustris মত কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিরল হয়ে উঠেছে ২১ শতকের শুরু থেকেসাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিচিত্র জীববৈচিত্র্যের আধার বাংলাদেশের সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ ২৭০ প্রাজাতির পাখি ও ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাজাতির আবাসস্থল । তা থেকেই বোঝা যায় যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির একটি বড় অংশ বিদ্যমান যেমন ৩০ শতাংশ সরীসৃপ ও ৩৭ শতাংশ পাখি এবং ৩৭ শতাংশ স্তন্যপায়ী এবং এদের একটি বড় অংশ দেশের অন্যান্য অংশে বিরল Of these wildlife, Sarker has noted that two amphibians, 14 reptiles, 25 aves and five mammals are presently endangered.। সরকারের মতে এই প্রানীবৈচিত্র্যের মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং ৫ প্রজাতির স্তনপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে । পাখি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাখিবিজ্ঞানীদের জন্য সুন্দরবন এক স্বর্গ । ইতোমধ্যে বহুপ্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে যার মধ্যে আছে বুনো মহিষ ও পারা হরিণ, বুনো ষাঁড়, ছোট এবং বড় এক শৃঙ্গি গণ্ডার, বার শিংগা, চিতা বাঘ । আরো লুপ্ত হয়েছে সাদা মানিক জোড়া কান ঠুনি, বোঁচা হাঁস, গগন বেড়, জলার তিতিরসহ বিভিন্ন পাখি ।

মানুষখেকো বাঘের কথা
২০০৪ সালের হিসাব মতে সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ । এসব বাঘ উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, গড়ে প্রতি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ২৫০ টি মেরে ফেলার কারণে ব্যপকভাবে পরিচিত । মানুষের বাসস্থানের সীমানার কাছাকাছি থাকা একমাত্র বাঘ নয় এরা । বাঘের অভায়ারণ্যে চারপাশ ঘেরা বান্ধবগড়ে , মানুষের উপর এমন আক্রমণ বিরল । নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতীয় অংশের সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে একটিও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি । অন্যদিকে বাংলাদেশের সুন্দরবনে ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত কালপরিধিতে অর্ধাশতাধিকের বেশী বাঘ মানুষের হাতে মারা গেছে । স্থানীয় লোকজন এবং সরকারীভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাঘের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন । স্থানীয় জেলেরা যেমন বনদেবী বনবিবির প্রার্থণা এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে যাত্রা শুরুর আগে । তেমন মনে করি সুন্দরবনে নিরাপদ বিচরণের জন্য বাঘের দেবতার Dakshin Ray প্রার্থণা করাও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে জরুরি । বাঘ যেহেতু সবসময় পেছন থেকে আক্রমণ করে সেহেতু জেলে এবং কাঠুরেরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে । এই ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করলেও পরে বাঘ এই কৌশল বুঝে ফেলে এবং আবারও আক্রমণ হতে থাকে । সরকারি কর্মকর্তারা আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়দের প্যাডের মত শক্ত প্যাড পরেন যা গলার পেছনের অংশ ঢেকে রাখেন । এই ব্যবস্থা করা হয় শিরদাড়ায় বাঘের কামড় প্রতিরোধ করার জন্য যা তাদের পছন্দের আক্রমণের কৌশল ।

তথ্যঃ ইন্টার

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৯

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: দারুন গবেষনা মুলক পোস্ট। দয়া করে বলবেন কি সুন্দর বনে কয় প্রজাতির হরিন রয়েছে।

২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩১

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.