নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিজান আহামেদ

কালের সময়

সকলে ভালো থাকুন

কালের সময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভূমিকম্পনে সতর্কতা হনঃ

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৭



বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলসমূহ, ১৯৬৩-১৯৯৮
গত এপ্রিলে নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর গতকাল সোমবার ভোররাতে আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল বাংলাদেশ। ৬ দশমিক ৭ মাত্রার এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৩৫২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ভারতের মনিপুর রাজ্যে। ভারতের স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে সৃষ্ট এই ভূমিকম্পে মনিপুর রাজ্যে অন্তত ছয়জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার এবং বেশকিছু ভবনের দেয়াল, সিঁড়ি ও ছাদ ধসে পড়েছে খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গা থেকেই এ ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে ঢাকা, রাজশাহী এবং লালমনিরহাটে তিনজনের প্রাণহানি এবং তাড়াহুড়ো করে বিল্ডিং থেকে বের হতে গিয়ে সারা দেশে অন্তত ৬০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার বংশাল থানার একটি ছয়তলা ভবন হেলে পড়েছে; ফাটল দেখা দিয়েছে শাঁখারীবাজারের একটি বাড়িতে।

গত ২৫ এপ্রিল নেপালের ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানী কাঠমান্ডু লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। নেপালে নিহত হয়েছিলেন দুই হাজারের বেশি মানুষ। ঐ ভূমিকম্পের সময় বাংলাদেশে ভয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ও ঘরের দেয়াল ধসে সারা দেশে ৫ জন মারা গিয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন আট শতাধিক। এর পরদিনই আরেকটি ভূমিকম্পের সময় সাভারের একটি তৈরি পোশাক কারখানা থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে আসতে গিয়ে পদদলিত হয়ে নিহত হন আরো তিনজন। ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা প্রতিরোধ করার উপায় মানুষের আয়ত্তে আসেনি। এমনকি ঝড়-বাদলের মতো এর পূর্বাভাস দেয়াও সম্ভব হয় না। তাই একে এড়ানোর কোনো উপায় নেই, শুধু ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখার চেষ্টাই করা যায়। সে লক্ষ্যেই নানামুখী সাবধানতা ও প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা ও কৌশল আবিষ্কৃত হচ্ছে, গৃহীত হচ্ছে, বিশেষ করে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়।

বিশ্বজুড়ে টেকটোনিক পাতের গতিপথ।
ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান প্লেটের ঘর্ষণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রায়ই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সিলেট অঞ্চল দিয়ে যাওয়া ডাউকি ফল্টের কারণে বাংলাদেশও বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে ভূতত্ত্ববিদরা সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু আমরা কতটা সতর্ক সেটাই বড় প্রশ্ন। এ দেশে নির্মাণকাজে নিয়ম লঙ্ঘন ঘটছে অহরহ, ভূমিকম্প সহনীয় বাড়িঘর নির্মাণেও রয়েছে অনীহা। অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে চলছে নগর। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর উদ্ধার তৎপরতায়ও আমাদের সক্ষমতা নাজুক। নেপালের বিপর্যয় এবং এরপর কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার ভূকম্পন আমাদের জন্য সতর্ক সংকেত হিসেবে নেয়া খুবই জরুরি। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখার জন্য দরকার আমাদের ভূ-প্রকৃতি অনুযায়ী উপযুক্ত নিয়মনীতি মেনে স্থাপনা নির্মাণ এবং পরিকল্পিত নগরায়ন নিশ্চিত করা; ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা ও আবাসন চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। এসব ক্ষেত্রে গাফিলতি ও দুর্নীতি প্রশ্রয় থাকলে তার পরিণাম হবে আত্মঘাতী, এটা সবারই বুঝা দরকার। পাশাপাশি ভূমিকম্পের সময় করণীয় সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিও জরুরি। কারণ এখনো পর্যন্ত এ দেশে ভূমিকম্পের সময় হতাহতের ঘটনা যা ঘটেছে তা মূলত আতঙ্ক ও আতঙ্কজনিত হুড়োহুড়ির কারণে। উদ্ধার তৎপরতায় সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।

বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের তীব্রতার ভিত্তিতে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। (তথ্যসূত্র:GSB)
জোন ১হলঃ
পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্পূর্ণ অংশ, এবং ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের অংশবিশেষ।
জোন ১ঃ
জোন-১ এর অবস্থিত বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্পজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। কারণ সিলেট সুনামগঞ্জ ও ভারতের শিলংকে বিভক্ত করেছে ডাওকি নদী আর এই ডাওকি নদী ডাওকি চ্যুতি (Dauki fault) বরাবর অবস্থান করছে আর ভূতাত্ত্বিক চ্যুতিগুলোই বড় ধরণের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।সিলেটের সীমান্ত এলাকাবর্তী এধরণের চ্যুতিগুলোর কোনো কোনোটিতে সাব ডাউন ফল্ট রয়েছে, যেগুলো ভূমিকম্প ঘটালে বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড় সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। কারণ এতে করে পাথারিয়া অন্তর্চ্যুতি (Patharia anticline) নিচের দিকে মোচড় দিতে পারে।

জোন ২হলঃ
রাজশাহী, নাটোর, মাগুরা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী এবং ঢাকা।
জোন ২ঃ

জোন২এর অবস্থিত রাজশাহী জেলা ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রীয় ভূমিকম্প এলাকায় অবস্থিত এবং তাই ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সক্রীয় ভূমিকম্প এলাকায় থাকার কারণে এই অঞ্চলও যেকোনো সময় মারাত্মক ভূমিকম্পের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হতে পারে। তবে ঢাকা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর অঞ্চলে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হবার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা রয়েছে। সরকারি তথ্যসূত্র মতে ঢাকায় রাতের বেলায় ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে অসংখ্য লোক হতাহত হবে। দিনের বেলায় হলেও হতাহতের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুনে যেয়ে দাঁড়াতে পারে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলের ৩,২৬,০০০ ভবনের উপর পরিচালিত সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে এমন তীব্রতার ভূমিকম্পে প্রায় ৭২,০০০ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে, আরও ৮৫,০০০ ভবন মাঝারি ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু দালান ভাঙার কারণে ক্ষয়ক্ষতি হবে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য সম্পদ। এমনকি ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ পরিচালিত রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট টুলস ফর ডায়াগনসিস অফ আরবান এরিয়াস এগেইন্সট সাইসমিক ডিযাসটার (রেডিয়াস) জরিপে ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকাও অন্যতম।তাছাড়াও জাপানের টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (টিআইটি)-র সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত এক সাম্প্রতিক (২০১০) গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার ভূমিতে বিভিন্ন প্রকারের মাটি লাল মাটি, নরম মাটি ইত্যাদি রয়েছে। ঢাকার সম্প্রসারিত অংশে জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা আবাসন এলাকা রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় নরম মাটি ও ভরাট করা এলাকার মাটি ভূমিকম্পের কম্পন তরঙ্গকে বাড়িয়ে দেয়, ফলে ভূমিকম্পের তীব্রতা বাড়ে। মাটির বৈশিষ্ট্যের সাথে যোগ হয় ভবনের বা স্থাপনার কাঠামো। এই দুইয়ের সম্মিলনে ভূমিকম্পের তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাব্যতা বাড়ে-কমে। গবেষকরা তাই ঢাকার বর্ধিতাংশের আলগা মাটিসমৃদ্ধ জনবসতিকে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন


জোন-৩
বরিশাল, পটুয়াখালী, এবং সব দ্বীপ ও চর।

তাছাড়াও বুয়েটের গবেষকদের প্রস্তুতকৃত ভূ কম্পন এলাকাভিত্তিক মানচিত্রে দেখা যায় বাংলাদেশের ৪৩% এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে জোন-১ ৪১% এলাকা মধ্যম ও জোন ২ এবং ১৬% এলাকা নিম্ন ঝুঁকিতে জোন ৩ রয়েছে। যেখানে ১৯৯৩ সালের ভূ কম্পন মানচিত্রে ২৬% উচ্চ ৩৮% মধ্যম এবং ৩৬% নিম্ন ঝুঁকিতে ছিলো। নতুন মানচিত্র অনুযায়ী মাত্রাভেদে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার অবস্থানও ভয়াবহ

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ডাওকি ফল্ট কয়েকশত বছর জাবৎ স্থির। নিরাপদ বলা যায় না এখনো

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০৫

কালের সময় বলেছেন: হুম ঠিক বলছেন আমরা বলতে গেলে পুরোপুরি জুঁকিতেই আছি ।

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫২

নক্‌শী কাঁথার মাঠ বলেছেন: দেখা যাচ্ছে উত্তর অথবা দক্ষিন মেরুতে গিয়ে বসবাস শুরু করলে ভালো হবে।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০৭

কালের সময় বলেছেন: একেবারে ফেলে দেওয়ারমত কথা বলেন নাই ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.