নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিতর্ক করি ও খেতে ভালোবাসি।

আনাছ আল জায়েদ

আনাছ আল জায়েদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন

০৫ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২০



বঙ্গভঙ্গের মাত্র ৩ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন । বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘’ চরিতাভিধান’’ গ্রন্থে পল্লীকবি জসীম উদ্ দীনের জন্ম সাল ও তারিখে বলা হয়েছে ১লা জানুয়ারি ১৯০৩ সাল। ‘ জসীম উদ্ দীন’ গ্রন্থের লেখক সুনীল মুখোপাধ্যায়ও তাই মনে করেন । পল্লীকবি জসীম উদ্ দীনের সাহিত্যকর্ম নিয়ে সমালোচনা করেছেন সাহিত্যিকদের মাঝে তিতাশ চৌধুরী , সেলিমা খালেক, শিশিরকুমার দাশ মনে করেন পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন জন্মসাল ১৯০৪ সাল।


পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন এর জন্মস্থান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় । যে জেলায় জন্মগ্রহণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) । ফরিদপুর জেলা থেকে ২ মাইল দূরে তাম্বুলখানা গ্রামে অবস্থিত নানাবাড়ি জন্ম নেন ।


কবির পিতার নাম মৌলানা আনছার উদ্দীন মোল্লা আর মায়ের নাম আমেনা খাতুন । পারিবারিক সদস্য বলতে বাবা-মা, দাদা, আর ৪ ভাই । মফিজ উদ্ দীন, সইদউদ্ দীন, নূর উদ্ দীন মোল্লাগিরি ছিল কবিদের পারিবারিক পেশা। যদিও কবির পিতা শিক্ষকতা করেছেন। তাম্বুলখানা গ্রামে হিন্দু- মুসলমান পাশাপাশি বাস ছিল। পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন ছোটবেলায় যে স্কুলে পড়তেন সেখানে শতকরা ৯৫ জন হিন্দু ছিল। কিন্তু গ্রামের মানুষদের মাঝে কোন ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না। গ্রামের মানুষদের মাঝে অর্থনীতিক সচ্ছলতা ছিল না কিন্তু পারস্পারিক ভালোবাসা ছিল। এই সবুজ-শ্যামল গ্রামবাংলার পরিপূর্ণতা কল্পনা করে পরে তিনি নক্সী-কাঁথার মাঠ ও সোজনবাদিয়ার ঘাট রচনা করেন। কবি জসীম উদ্ দীনের কবি প্রতিভার উন্মেষ ঘটেছিল দাদার হাত ধরে। দাদার কাছে কবি গল্প, গান ও কাহিনি শুনতেন। কবি তাঁর লেখায় বলেছেন ‘ শিশু বয়সে যেমন মাতৃস্তন্যে দেহের পুষ্টি হইয়াছিল, তেমনি মনের কুসুম ফুটিয়াছিল আমার দাদাজানের মুখে অসংখ্য রূপকথা, শ্লোক, আর ছড়া শুনিয়া”

ছোটবেলা থেকেই জসীম উদ্ দীনের মন রঞ্জিত হয়ে উঠেছিল লোকসংস্কৃতির নানা শব্দে। অবধারিতভাবে এর প্রভাব তাঁর সাহিত্যকর্মে। তিনি জানিয়েছেন, ‘’বেদের মেয়ে’’ নাটকে যে গান আছে ‘ও বাবু! সেলাম বারে বারে’’ টা অষ্ট-গানের সুরেই লিখা। জসীম উদ্ দীন ছোটবেলায় কবিগান, পুথিপাঠ, শ্যামাসঙ্গীতের সাথে পরিচিত হন।


প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনে কবি তাঁর পিতার স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। তিতাশ চৌধুরী ও সেলিমা খালেক তাদের বইয়ে বলেছেন, জসীম উদ্ দীন ২য় বিভাগের সাথে ১৯২১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করেন। সুনীল মুখোপাধ্যায় অন্যদিকে মনে করেন ১৯২৪ সালে জসীম উদ্ দীন ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করেন।

ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে প্রাচীন কলেজ ‘ রাজেন্দ্র কলেজ (১৯১৮)’। এই কলেজ থেকে তিনি সংস্কৃত, যুক্তিবিদ্যা ও ইতিহাস নিয়ে আই এ পাস করেন।

নজরুলের যেমন ‘ বিদ্রোহী’ জীবনানন্দের ‘ বনলতা সেন’ তেমনি পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন এর ‘কবর’ কবিতা।‘কবর’ কল্লোল পত্রিকার ৩য় সংখ্যা, আষাঢ় ১৩৩২- , ১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয়। পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন যখন বি. এ. ক্লাসের ছাত্র তখন দীনেশচন্দ্র সেনের কাছ থেকে চিঠি পেলেন যে তাঁর কবিতাটি ম্যাট্রিক ক্লাসে পাঠ্য হয়েছে। পল্লীকবি জসীম উদ্ দীনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালি’। ১৯২৯ সালে তাঁর বিখ্যাত ‘’ নক্সী-কাঁথার মাঠ” প্রকাশিত হয়। সেই বছরে কবির স্নাতক শেষ হয়। কবি ফরিদপুর থেকে কলকাতায় চলে আসেন। ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে শিক্ষক হিসেবে পান দীনেশচন্দ্র সেনকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পড়া অবস্থায় একবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সরাসরি নাটক দেখেন এবং শে রে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের সাথে দেখা করেন। শে রে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের সাহায্য নিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন। ১৯৩১ সালে তিনি ২য় শ্রেণিতে ৮ম স্থান অর্জন করে এম এ পাশ করেন।

১৯৪৩ সালে মহসীন উদ্দীনের মেয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মমতাজ- এর সাথে কবির বিয়ে হয়। তারপর থেকে মমতাজ জসীম উদ্ দীন । তাঁর ডাকনাম ছিল মণিমালা।

১৯৩৮-৩৯ সাল জসীম উদ্ দীনের জন্য স্মরণীয় কারণ নক্সী-কাঁথার মাঠের মিসেস মেরি মিলফোর্ড কৃত ইংরেজি অনুবাদ ‘’ The Field of the Embroidered Quilt” ১৯৩৯ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক ভেরিয়ার এলউইন । তিনি লিখেন, ‘ It is impossible to read this deeply-moving tale and continue to feel superior or indeffirent to the villager who is capable of such passionate love & such deep sorrow’

২৫ ডিসেম্বর ১৯৪৩ সালে তিনি পিতাকে হারান। তিনি পিতা-মাতার খুব অনুগত সন্তান ছিলেন।পাশাপাশি ভীষণ সংসারীও ছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় সরকারের পাবলিসিটি বিভাগে অফিসার পদে যুক্ত হন। জসীম উদ্ দীন ভাষা-আন্দোলন, আইয়ুব খানের শাসন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কবিতাও লিখেছিলেন।তিনি আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়ার বিভিন্ন সাহিত্য সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৬৯ সালে কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট ডিগ্রি পান। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি পদক পান , ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন।


জসীম উদ্ দীন ১৩ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাকে তাঁর নিজ গ্রাম গোবিন্দপুরে দাফন করা হয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৩

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: অনেক কিছু জানা গেল। তথ্যপূর্ণ পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩১

আনাছ আল জায়েদ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.