নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সাধ্যমত অসহায়দের সাহায্য করা

জল ও ছবি

এসো মহৎ হতে চেষ্টা করি, সাধু হই কিন্তু সাধু সেজে না থাকি। অপদার্থ মানুষকে অনুসরণ করে নিজের মনুষত্বকে বিকিয়ে না দেই। অর্থ আর বড় বড় অট্টালিকার সামনে মাথা নত না করি, জন্মেছি যখন লড়াই করেই বাঁচবো।

জল ও ছবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৯৭৫ সালের নভেম্বরের উত্তাল কয়েকটি দিন

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৮



বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই অভ্যুত্থান এবং পালটা অভ্যুত্থানের পেক্ষাপটটি তৈরী হয়েছিল বেশ আগে। অভ্যুত্থানের কারণ নিয়ে বেশ কিছু ব্যাখ্যা থাকলেও সেনাবাহিনীর তৎকালিন অনেক কর্মকর্তা মনেকরেন, ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকেই সেনাবাহিনীতে যে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরী হয়েছিল তার একটি ফলশ্রুতি হচ্ছে নভেম্বরের সেই ঘটনা প্রবাহ
সেসময় বাংলাদেশের প্রয়ত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থাকলেও বঙ্গভবন থেকে সেনাবাহিনীর অনেক বিষয় নিয়ন্ত্রন করছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সাথে জড়িত কয়েকজন মেজর। অবঃ ব্রিগেডিয়ার শাখাওয়াত হোসেন তখন ছিলেন ঢাকার ৪৬ ব্রিগেডের মেজর পদমর্যাদার স্টাফ অফিসার। তিনি বলেছেন, সেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সাথে যোগ হয়েছিল পারস্পরিক দ্বন্দ্ব। ১৫ আগস্টের পর তৎকালিন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহকে সরিয়ে দেয়ার পর মূলতঃ যে দ্বন্দ্বটি ছিল খালেদ মোশাররফ এবং জিয়াউর রহমানের মাঝ। অক্টবরের শেষ নাগাদই তারা অনেকটা খোলামেলা ভাবেই শুনতে পারছিলেন কিছু একটা হতে যাচ্ছে।
কে এম শফিউল্লাহ বলেন, ১৫ আগস্টের পর তিনি অনেকটা গৃহবন্দী হিসেবেই সেনাপ্রধানের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর মধ্যে যে একটি উত্তেজনা রয়েছে সেটি তিনি টেরপাচ্ছিলেন।
নভেম্বরের ৩ তারিখের প্রথম কয়েকটি প্রহরে বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেয়ারমতো দুটি ঘটনা ঘটে, একটি অভ্যুত্থান অপরটি ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি হত্যাকান্ড। মধ্যরাত পার হবার পরই খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থান তৎকালিন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে বন্দী করা হয়। অন্যদিকে সেই রাতেই কেন্দ্রীয় কারাগারে চলে একটি হত্যাকান্ড। কয়েকজন সেনাসদস্যের হাতে খুন হন ১৯৭১ সালের প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মেদ, তৎকালিন সরকারের অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান। শাখাওয়াত হোসেন বলেন ঐ জেল হত্যার ঘটনাটি তাৎক্ষনিক ভাবে জানাজানি হয়নি। ঘটনাটি অভ্যুত্থানকারী সেনা অফিসারের কাছে পৌছে ৪ নভেম্বর সকালে।

৩ নভেম্বরেই দিনভর খালেদ মোশাররফসহ অভ্যুত্থানকারী সেনাকর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠকের পর বঙ্গভবনে অবস্থানরত শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সাথে জড়িত মেজররা সপরিবারে দেশ ত্যাগ করেন।
এদিকে ৩ নভেম্বরের পরে কয়েকটি দিন কার্যকর দেখা যায় জাতীয় সমাজতান্তিক দল বা জাসদের গণবাহিনীকে। কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন এই গণবাহিনী পরবর্তী অভ্যুত্থানে একটি মূল ভূমিকা পালন করে।
কর্ণেল তাহেরের ভাই এই গণবাহিনীর তৎকালিন ঢাকা মহানগর প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেছেন, জিয়াউর রহমানের কাছথেকে অভ্যুত্থানের খবরটি জানতে পারেন কর্ণল তাহের। নভেম্বরের ৩ তারিখ কর্ণেল তাহের নারায়নগঞ্জ থেকে ঢাকা আসেন।
এরই মধ্যে তৎকালিন পেসিডেন্ট খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদকে গ্রেপতার করা হয় এবং ৬ নভেম্বর নতুন পেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। নভেম্বরের ৫ এবং ৬ তারিখে গণবাহিনী আরো সক্রিয় এবং সংগঠিত হয়ে উঠতে শুরু করে। কর্ণল তাহেরের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা চলতে থাকে। শাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, গণবাহিনী কিছু একটাযে করতে যাচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে ৬ তারিখ বিকেলে যখন ক্যান্টনম্যান্টের ভেতরে গণবাহিনী নামে একটি লিফলেট ছড়ানো শুরু হয়। তিনি বলেন লিফলেটে খালেদ মোশাররফসহ অভ্যুত্থানকারীদের ভারতের চর হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং গণবাহিনীর দাবী তুলেধরা হয়।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, গণবাহিনীর বিদ্রোহের মূল পরিকল্পনাটি হয় ৬ তারিখ সন্ধায়।
৭ নভেম্বর দিবাগত রাতেই শুরু হয়ে যায় পাল্টা অভ্যুত্থান। যার পুরোভাগে ছিল সেনাবাহিনীর জাওয়ানরা। সেই রাতেই মুক্ত করা হয় জিয়াইর রহমানকে। শাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, পরদিন সকালেই জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর কর্ণেল তাহেরের সাথে দেখা করেন, তাদের দুজনের মধ্যে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। কর্ণেল তাহের জিয়াউর রহমানকে শহীদমিনারে যেতে এবং রেডিওতে জাসদের দাবী মেনে নিয়ে একটি ভাষণ দিতে বললেও তিনি সেটিতে রাজি হননি। আগেই তার ভাষণ রেকড করে তিনি রেডিও স্টেশনে পাঠিয়ে দেন।
ব্রিগেডিয়ার শাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানের সময় জাওয়ানদের সাথে অনেক লোককে অস্ত্রসহ বেসামরিক পোষাকেও অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল। তবে ঐ অভ্যুত্থান গণবাহিনী তাদের বেসামরিক সদস্যদের অন্তভূক্ত করতে পারেনি বলেছেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন জাসদ যে উদ্দেশ্য নিয়ে বাদ্রোহে অংশ নিয়েছিল সেটি ব্যর্থ হবার এটিও একটি কারণ।
আনোয়ার হোসেন বলেছেন, জিয়াউর রহমানের রেডিও ভাষণের পর অভ্যুত্থানে গণবাহিনীর ভূমিকা চাপা পড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারনা জন্মে যে, এটি পুরোপুরিই জিয়াউর রহমানের অভ্যুত্থান। সেই অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতার কেন্দ্রাংশ চলে আসেন জিয়াউর রহমান।
৭ নভেম্বর সকালেই কর্ণেল কে এন গুদার সাথে ঢাকায় রংপুর থেকে আসা ১০ বেঙ্গল রেজিমেন্টের খালেদ মোশাররফ, কর্ণেল কে এন হুদা এবং ল্যাফটেনেন্ট কর্ণেল এ টি এম হায়দারকে হত্যার করা হয়।
এর কিছুদিন পর ২৪ নভেম্বর কর্ণেল তাহেরকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সামরিক আদালতে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোট এক রায়ে কর্ণেল তাহেরের সেই বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করেন।
১৯৮১ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধান, উপ-সেনাপ্রধান, সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরবর্তীতে পেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের মে মাসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে তাকে হত্যা করা হয়।

তথ্যঃ বিবিসি এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৫

হামিদ আহসান বলেছেন: ঘটনাবহুল সময় ..

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩০

জল ও ছবি বলেছেন: সত্যি ঘটনাবহুল নভেম্বর

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৩

কিরমানী লিটন বলেছেন: ঘটনার পিছনে ঘটনা,ইতিহাসের অন্তরালের সত্য ঘটনা-সুন্দর বর্ণনায়,চমৎকার পোষ্টের মাধমে সবাইকে জানার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অগুন্তি ভালোবাসা আর শুভকামনা জানবেন ...

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৯

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
১৫ অগাস্টের বিভৎস ঘটনাবলীর পরে এত ঘন ঘন অভ্যুত্থান (সফল এবং ব্যর্থ) ঘটতে থাকে যে, বিশ্বের কাছে এটি অভ্যুত্থানের দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

ওই পিরিয়ডটুকু যদি বাংলার ইতিহাসে না থাকতো, তবে অন্যরকম এক দেশকে আমরা দেখতে পেতাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.