নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দয়া করে বাজারের অল্প দামের বই, ইজতিহাদ কারি মুফতি নয় বা আলেম নয় এমন কারো বই, বা ঢাকা আরিচায় পাওয়া বই পড়ে ইমান নস্ট করবেন না।

জ্বালো ইসলামের আলো

দয়া করে বাজারের অল্প দামের বই, ইজতিহাদ কারি মুফতি নয় বা আলেম নয় এমন কারো বই, বা ঢাকা আরিচায় পাওয়া বই পড়ে ইমান নস্ট করবেন না।

জ্বালো ইসলামের আলো › বিস্তারিত পোস্টঃ

শবে বরাত এর ফরেন্সিক রিপোর্ট ও ফলাফল

০১ লা জুন, ২০১৫ সকাল ৯:০২

শবে বরাত এর ফরেন্সিক রিপোর্ট
===========================
প্রথমে কিছু চ্যালেঞ্জ মুলক পয়েন্ট ছুড়ে দিতে চাই, যা একবার নিরপেক্ষ ভাবে চিন্তা করে দেখতে আপনার সহায়ক হবে। কুরান বা হাদিস এ মিলিয়ে নিতে পারেন, কারো কাছে শুনা কথা বা কারো একজনের বই পড়া কথা টা একশ ভাগ সত্য ভাবার প্রয়োজন নেই। কথায় আসি...

★ মধ্য শাবান ১৫ ই শাবান এর কথা হাদিসে আছে ঠিক এবং ক্ষমা করার কথা ও আছে। কিন্তু কোথাও নফল নামাজ পড়লে বা ইবাদত করলে ই ক্ষমা করা হবে এমন টা নেই।

★ হা কিছু হাদিস এ আছে হয়তো (অনেকে বলেন সহিহ না), জাহউক ধরে নেয়া যাক যে নামাজের কথা আছে, ধরে নিলাম হাদিস ও সহিহ, কিন্তু নির্দিষ্ট সুরা দিয়ে নামায, নির্দিষ্ট গোসল ইত্যাদি ইত্যাদি তো কোন জাল বা দুর্বল হাদিস এও নাই। তাহলে এটা নতুন ইবাদত।

★ ১ রাত নয়, সব রাত এর কথাই হাদিস এ পাওয়া যায়, ধরে নেওয়া যাক ১ রাত এ বেশি ক্ষমার কথা আছে। হা তবে এটা যেখানে আছে সেখানে এ রাতে হিংসা মুক্ত ও শিরক মুক্ত দের ক্ষয়া করে দেওয়া হয় বলা আছে। ইবাদত করবেন আবার তাও নিজেদের মত করে, রাসুল (স।) কে মানবেননা যে তিনি কি করতেন সেইটা করা দরকার। কখনোও জেনেছেন? তিনি শাবান মাসে ২০ বা ২৫ দিন রোজা রাখতেন। এটাই শাবান এর সুন্নাতি ইবাদত।

★ এই ফাকে জেনে নেওয়া যাক হিংসা হলো কারো ক্ষতি তে ব্যাথিত না হওয়া, আর শিরক হলো কাউকে দেখানর জন্য কোন কাজ করা, অথবা কাউকে কেয়ামতে শাফায়াত কারি মনে করা।

★ তাছড়া নফল তো ব্যক্তিগত ইবাদত, কেন এটা সমবেত ভাবে করতে হবে? সুন্নাত এটা বলে?

ওওওওহ অনেক বক বক করলাম, এবার মূল সনদ কুরআন ও হাদিস এর দিক হাটা যাক।।

================================

শাবানের মধ্যরজনীর সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
পর্যালোচনার সারকথা
শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীসগুলো উল্লেখ করা
হল। আমি মনে করি এ সম্পর্কে যত হাদীস আছে
তা এখানে এসেছে। বাকী যা আছে সেগুলোর
অর্থ বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত। এ সকল হাদীসের
দিকে লক্ষ্য করে আমরা কয়েকটি বিষয়
স্পষ্টভাবেই বুঝে নিতে পারি।
(১) এ সকল হাদীসের কোন একটি দ্বারাও প্রমাণিত
হয়নি যে, ১৫ শাবানের রাতে আল্লাহ তা'আলা আগামী
এক বছরে যারা ইন্তেকাল করবে, যারা জন্ম গ্রহণ
করবে, কে কি খাবে সেই ব্যাপারে ফায়সালা
করেন। যদি থাকেও তাহলে তা আল-কুরআনের
বক্তব্যের বিরোধী হওয়ায় তা গ্রহণ করা যাবে না।
কারণ আল-কুরআনের স্পষ্ট কথা হল এ বিষয়গুলির
ফায়সালা হয় লাইলাতুল কদরে।
(২) এ সকল হাদীসের কোথাও বলা হয়নি যে, এ
রাতে মৃত ব্যক্তিদের আত্মা তাদের গৃহে আসে।
বরং এটি একটি প্রচলিত বানোয়াট কথা। মৃত ব্যক্তির
আত্মা কোন কোন সময় গৃহে ফিরে আসার ধারণাটা
হিন্দুদের ধর্ম-বিশ্বাস।
(৩) এ সকল হাদীসের কোথাও এ কথা নেই যে,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও
সাহাবায়ে কিরাম এ রাতে গোসল করেছেন,
মাসজিদে উপস্থিত হয়ে নফল সালাত আদায়
করেছেন, যিক্র-আযকার করেছেন, কুরআন
তিলাওয়াত করেছেন, সারারাত জাগ্রত থেকেছেন,
ওয়াজ নাসীহাত করেছেন কিংবা অন্যদের এ রাতে
ইবাদাত বন্দেগীতে উৎসাহিত করেছেন অথবা
শেষ রাতে জামাতের সাথে দু'আ-মুনাজাত
করেছেন।
(৪) এ হাদীসসমূহের কোথাও এ কথা নেই যে,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা
সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) এ রাতের সাহরী খেয়ে
পরের দিন সিয়াম (রোযা) পালন করেছেন।
(৫) আলোচিত হাদীসসমূহে কোথাও এ কথা নেই
যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা
সাহাবায়ে কিরাম এ রাতে হালুয়া-রুটি বা ভাল খানা তৈরী
করে বিলিয়েছেন, বাড়ীতে বাড়ীতে যেয়ে
মীলাদ পড়েছেন।
(৬) এ সকল হাদীসের কোথাও নেই যে,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা
সাহাবায়ে' কিরাম (রাঃ) এ রাতে দলে দলে
কবরস্থানে গিয়ে কবর যিয়ারত করেছেন কিংবা
কবরে মোমবাতি জ্বালিয়েছেন।
এমনকি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া
সাল্লামের যুগ বাদ দিলে খুলাফায়ে রাশেদীনের
ত্রিশ বছরের ইতিহাসেও কি এর কোন একটা 'আমল
পাওয়া যাবে?
যদি না যায় তাহলে শবে বরাত সম্পর্কিত এ সকল
'আমল ও আকীদা কি বিদ'আত নয়? এ বিদ'আত
সম্পর্কে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে সতর্ক করার
দায়িত্ব কারা পালন করবেন? এ দায়িত্ব পালন করতে
হবে আলেম-উলামাদের, দ্বীন প্রচারক,
মাসজিদের ইমাম ও খতীবদের। যে সকল বিষয়ে
কুরআন ও সহীহ হাদীসের ইশারা নেই সে সকল
'আমল থেকে সাধারণ মুসলিম সমাজকে বিরত রাখার
দায়িত্ব পালন করতে হবে নবী-রাসূলগণের
উত্তরসূরীদের।
ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা সম্পর্কিত একটি হাদীস ও উহার
পর্যালোচনা
এ বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশের পর একজন বিশিষ্ট
আলেম আমাকে বলেছেন : "শবে বরাতে
সৌভাগ্য বা এক বছরের তাকদীর লেখা সম্পর্কিত
কোন হাদীস নেই" বলে আপনি যে দাবী
করেছেন তা সঠিক নয়। 'মিশকাত আল-মাসাবীহ'
কিতাবে এ সম্পর্কে হাদীস উল্লেখ করা
হয়েছে।
পাঠকগণের অবগতির জন্য উক্ত হাদীসটির
পর্যালোচনা নিম্নে তুলে ধরলাম। হাদীসটি হল :
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﻫﻞ ﺗﺪﺭﻳﻦ ﻣﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ؟ ﻳﻌﻨﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ
ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ .
ﻗﺎﻟﺖ ﻣﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ؟ ﻓﻘﺎﻝ : ﻓﻴﻬﺎ ﺃﻥ ﻳﻜﺘﺐ ﻛﻞ
ﻣﻮﻟﻮﺩ ‏(ﻣﻦ ‏) ﺑﻨﻲ ﺁﺩﻡ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺃﻥ ﻳﻜﺘﺐ
ﻛﻞ ﻫﺎﻟﻚ ﻣﻦ ﺑﻨﻲ ﺁﺩﻡ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺗﺮﻓﻊ
ﺃﻋﻤﺎﻟﻬﻢ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺗﻨﺰﻝ ﺃﺭﺯﺍﻗﻬﻢ .
ﻣﻦ ﻣﺸﻜﺎﺓ ﺍﻟﻤﺼﺒﺎﻳﺢ ﻓﻲ ﺑﺎﺏ ﻗﻴﺎﻡ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻋﻮﺍﺕ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ .
অর্থ : আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী কারীম
সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : তুমি কি
জানো এটা (অর্থাৎ মধ্য শাবানের রাত) কোন্ রাত?
তিনি জিজ্ঞেস করলেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ রাতে কি
রয়েছে? তিনি বললেন : এ রাতে এই বছরে যে
সকল মানব-সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে তাদের
ব্যাপারে লিপিবদ্ধ করা হয়, যারা মৃত্যু বরণ করবে
তাদের তালিকা তৈরী হয়, এ রাতে 'আমলসমূহ পেশ
করা হয়, এ রাতে রিয্ক নাযিল করা হয়।
আলোচ্য হাদীসটি আল-মিশকাতুল মাসাবীহ কিতাবে
'রামাযান মাসে কিয়াম' (রামাযান মাসের রাতের সালাত)
অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি লিখেছেন যে, ইমাম বাইহাকী (রঃ) তার 'আদ-
দাওআত আল-কাবীর' গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন। হাদীসটির পর্যালোচনা নিম্নে তুলে
ধরলাম :
(এক) উল্লিখিত হাদীসে 'অর্থাৎ মধ্য শাবানের রাত'
বাক্যটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের
কথা নয়। এ বাক্যটি পরবর্তী কালের বর্ণনাকারীর
নিজস্ব বক্তব্য বলে। আর আয়িশা (রাঃ) এমন কোন
অজ্ঞ মহিলা ছিলেন না যে তাকে তারিখ বলে দিতে
হবে।
(দুই) এ হাদীসে বর্ণিত 'অর্থাৎ মধ্য শাবানের রাত'
কথাটি আয়িশার (রাঃ) বক্তব্য নয়। কারণ তার বক্তব্য শুরু
হয়েছে 'তিনি জিজ্ঞেস করলেন' বাক্যটির পর।
তাহলে এ বক্তব্যটি কার? এ বক্তব্যটি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আয়িশা (রাঃ) ব্যতীত
অন্য কোন বর্ণনাকারীর নিজস্ব মন্তব্য, যা
মেনে নেয়া আমাদের জন্য যরুরী নয়।
(তিন) এ হাদীসের বিষয়বস্তুর দিকে তাকালে
বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, হাদীসে ভাগ্য লেখার
বিষয়টি লাইলাতুল কদরের সাথে সম্পর্কিত। কেননা
জন্ম, মৃত্যু, 'আমল পেশ, রিয্ক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়াবলী রামাযান মাসে লাইলাতুল কদরে স্থির করা
হয়। এ কথা যেমন কুরআনের একাধিক আয়াত দ্বারা
প্রমাণিত তেমনি বহু সংখ্যক সহীহ হাদীস দ্বারা
প্রমাণিত।
(চার) আল-মিশকাত আল-মাসাবীহর সংকলক বিষয়টি
ভালভাবে বুঝেছেন বলে তিনি হাদীসটিকে রামাযান
মাসের সালাত (কিয়ামে শাহরি রামাযান) অধ্যায়ে
উল্লেখ করেছেন। বুঝা গেল যে, তার মত হল
হাদীসটি রামাযান মাসের লাইলাতুল কদর সম্পর্কিত। যদি
তিনি বুঝতেন যে, হাদীসটি মধ্য শাবানের তাহলে
তিনি তা রামাযান মাসের অধ্যায়ে আলোচনা করবেন
কেন?
(পাঁচ) এ হাদীসটি আল-মিশকাত আল-মাসাবীহর সংকলক
উল্লেখ করার পর বলেছেন, তিনি হাদীসটি ইমাম
বাইহাকীর 'আদ-দাওআত আল-কাবীর' কিতাব থেকে
নিয়েছেন।
ইমাম বাইহাকী তার 'আদ-দাওআত আল-কাবীর'
গ্রন্থে শবে বরাত সম্পর্কে মাত্র দুটি হাদীস
উল্লেখ করেছেন। তার একটি হল এই হাদীস। তিনি
তার 'শুআ'বুল ঈমান' গ্রন্থে শবে বরাত সম্পর্কিত এই
বইয়ে আলোচিত ৫ নং হাদীসটি উল্লেখ করার পর
লিখেছেন :
ﻭﻗﺪ ﺭﻭﻱ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻣﻨﺎﻛﻴﺮ، ﺭﻭﺍﺗﻬﺎ ﻗﻮﻡ
ﻣﺠﻬﻮﻟﻮﻥ ، ﺫﻛﺮﻧﺎ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺪﻋﻮﺍﺕ ﻣﻨﻬﺎ ﺣﺪﻳﺜﻴﻦ .
অর্থ : এ বিষয়ে বহু মুনকার হাদীস বর্ণিত
হয়েছে। যার বর্ণনাকারীরা অপরিচিত। আমি তা
থেকে দু'টি হাদীস 'আদ-দাওআত আল-কাবীর'
গ্রন্থে উল্লেখ করেছি।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তাহলে ফলাফল দাড়াল কি? ইমাম
বাইহাকীর এ মন্তব্যে যা প্রমাণিত হল :
(১) শবে বরাত সম্পর্কে অনেক মুনকার
(অগ্রহণযোগ্য) হাদীস রয়েছে।
(২) আদ-দাওআত আল-কাবীর গ্রন্থে শবে বরাত
সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস দুটি মুনকার।
(৩) তাই আলোচ্য হাদীসটি হাদীসে মুনকার।
(৪) তিনি 'আদ-দাওআত আল-কাবীর' গ্রন্থটি আগে
সংকলন করেছেন, তারপরে শুআবুল ঈমান সংকলন
করেছেন। এ কারণে তিনি পরবর্তী কিতাবে
আগের কিতাবের ভুল সম্পর্কে পাঠকদের সতর্ক
করেছেন। এটা তার আমানতদারী ও বিশ্বস্ততার
একটি বড় প্রমাণ।
(৫) মুনকার হাদীস 'আমলের জন্য গ্রহণ করা যায় না।
(৬) যিনি হাদীসটি আমাদের কাছে পৌছিয়েছেন তিনি
নিজেই যখন হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে
মতামত দিয়েছেন তখন আমরা তা সঠিক বলে গ্রহণ
করব কেন?
সৌভাগ্য রজনী ধর্ম বিকৃতির শামিল
ইসলাম ধর্মে সৌভাগ্য রজনী বলতে কিছু নেই।
নিজেদের সৌভাগ্য রচনার জন্য কোন অনুষ্ঠান বা
ইবাদাত-বন্দেগী ইসলামে অনুমোদিত নয়। শবে
বরাতকে সৌভাগ্য রজনী বলে বিশ্বাস করা একটি
বিদ'আত তথা ধর্মে বিকৃতি ঘটানোর শামিল। এ ধরনের
বিশ্বাস খুব সম্ভব হিন্দু ধর্ম থেকে এসেছে। তারা
সৌভাগ্য লাভের জন্য গনেশ পূজা করে থাকে।
সৌভাগ্য অর্জন করতে হলে জীবনের
সর্বক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করতে
হবে। কুরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে এবং সারা জীবন সালাত-
সিয়াম-যাকাত ত্যাগ করে শুধুমাত্র একটি রাতে মাসজিদে
উপস্থিত হয়ে রাত জেগে ভাগ্য বদল করে সৌভাগ্য
হাসিল করে নিবেন এমন ধারণা ইসলামে একটি হাস্যকর
ব্যাপার।
ধর্মে বিকৃতির কৃতিত্বে শিয়া মতাবলম্বীদের জুড়ি
নেই। এ শবে বরাত প্রচলনের কৃতিত্বও তাদের।
ফারসী ভাষার "শবে বরাত" নামটা থেকে এ বিষয়টা
বুঝতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। তারা এ দিনটাকে
ইমাম মাহদীর জন্ম দিন হিসাবে পালন করে থাকে।
তারা বিশ্বাস করে যে, এ রাতে ইমাম মাহদীর জন্ম
হয়েছে। এ রাতে তারা এক বিশেষ ধরনের সালাত
আদায় করে। যার নাম দিয়েছে "সালাতে জাফর"।
শবে বরাত সম্পর্কে উলামায়ে কিরামের বক্তব্য
এ শিরোনামে আমি শবে বরাত সম্পর্কে বিশ্ব
বরেণ্য আলেম শায়খ আবদুল আযীয আবদুল্লাহ
বিন বায (রহঃ) এর প্রবন্ধ -
ﺣﻜﻢ ﺍﻻﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ، ﻟﻠﺸﻴﺦ ﻋﺒﺪ
ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺑﺎﺯ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ .
'মধ্য শাবানের রাত উদযাপনের বিধান' এর সার-
সংক্ষেপ তুলে ধরব। তার এ প্রবন্ধে অনেক
উলামায়ে কিরামের মতামত তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺃﻛﻤﻠﺖ ﻟﻜﻢ ﺩﻳﻨﻜﻢ ﻭﺃﺗﻤﻤﺖ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻧﻌﻤﺘﻲ ﻭﺭﺿﻴﺖ
ﻟﻜﻢ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺩﻳﻨﺎ . ‏( ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ৩)
অর্থ : আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে
তোমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের
জন্য আমার নেআমাত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে
তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। (সূরা মায়িদা,
৩)
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন :
ﺃﻡ ﻟﻬﻢ ﺷﺮﻛﺎﺀ ﺷﺮﻋﻮﺍ ﻟﻬﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﺄﺫﻥ ﺑﻪ ﺍﻟﻠﻪ .
‏( ﺍﻟﺸﻮﺭﻯ : ২১)
অর্থ : তাদের কি এমন কতগুলো শরীক আছে
যারা তাদের জন্য ধর্মের এমন বিধান দিয়েছে যার
অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শুরা, ২১)
হাদীসে এসেছে :
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻲ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻪ
ﻓﻬﻮ ﺭﺩ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ )
অর্থ : যে আমাদের এ ধর্মে এমন কিছুর প্রচলন
করবে যা দ্বীনের মধ্যে ছিল না তা প্রত্যাখ্যাত
হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসে আরও এসেছে :
ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
ﻛﺎﻥ ﻳﻘﻮﻝ ﻓﻲ ﺧﻄﺒﺔ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ : ﺃﻣﺎ ﺑﻌﺪ ﻓﺈﻥ ﺧﻴﺮ
ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺧﻴﺮ ﺍﻟﻬﺪﻱ ﻫﺪﻱ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺷﺮ ﺍﻷﻣﻮﺭ ﻣﺤﺪﺛﺎﺗﻬﺎ ﻭﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ .
‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ )
অর্থ : সাহাবী জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী
কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমু'আর খুতবায়
বলতেন : আর শুনে রেখ! সর্বোত্তম কথা হল
আল্লাহর কিতাব ও সর্বোত্তম পথ-নির্দেশ হল
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ-
নির্দেশ। আর ধর্মে নতুন বিষয় প্রচলন করা হল
সর্ব নিকৃষ্ট বিষয়। এবং সব ধরনের বিদ'আতই
পথভ্রষ্টতা। (মুসলিম)
এ বিষয়ে অনেক আয়াতে কারীমা ও হাদীস
রয়েছে যা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে,
আল্লাহ তা'আলা ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ করে
দিয়েছেন। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে
কোন রকম অলসতা করেননি বা কার্পণ্যতা দেখাননি।
ইসলাম ধর্মের সকল খুটিনাটি বিষয় তিনি স্পষ্টভাবে তাঁর
উম্মতের সামনে বর্ণনা করে গেছেন যা আজ
পর্যন্ত সুরক্ষিত রয়েছে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের
মৃত্যুর পর যে সমস্ত নতুন আচার-অনুষ্ঠান, কাজ ও
বিশ্বাস ধর্মের আচার বলে যা চালিয়ে দেয়া হবে তা
সবগুলো প্রত্যাখ্যাত বিদ'আত বলেই পরিগণিত হবে,
তা উহার প্রচলনকারী যে কেউ হোক না কেন
এবং উদ্দেশ্য যত মহৎ হোক না কেন। সাহাবায়ে
কিরাম (রাঃ) ও তাদের পরবর্তী উলামায়ে ইসলাম এ
ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন বলে তারা বিদ'আতকে
প্রত্যাখ্যান করেছেন ও অন্যদের বিদ'আতের
ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
এ ধারাবাহিকতায় উলামায়ে কিরাম মধ্য শাবানের রাত
উদযাপন ও ঐদিন সিয়াম পালন করাকে বিদ'আত
বলেছেন। কারণ এ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে
'আমল করা যেতে পারে এমন কোন দলীল
নেই। যা আছে তা হল কিছু দুর্বল হাদীস যার উপর
ভিত্তি করে 'আমল করা যায় না। উক্ত রাতে সালাত
আদায়ের ফাযীলাতের যে সকল হাদীস পাওয়া যায়
তা বানোয়াট। এ ব্যাপারে হাফেয ইবনে রজব তার
কিতাব লাতায়িফুল মায়ারিফে বিস্তারিত আলোচনা
করেছেন।
একটি কথা অবশ্যই বলতে হয় যে, দুর্বল হাদীস ঐ
সকল 'আমল ও ইবাদাতের ক্ষেত্রে গ্রহণ করা যায়
যে সকল 'আমল কোন সহীহ হাদীস দ্বারা
ইতোপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু মধ্য
শাবানের রাতে একত্র হয়ে ইবাদাত-বন্দেগী করার
ক্ষেত্রে কোন সহীহ হাদীস নেই। এ মূল
নীতিটি ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) উল্লেখ
করেছেন।
সকল উলামায়ে কিরামের একটি ব্যাপারে ইজমা
(ঐকমত্য) হয়েছে যে, যে সকল ব্যাপারে বিতর্ক
বা ইখতিলাফ রয়েছে সে সকল বিষয় কুরআন ও
সুন্নাহর কাছে ন্যস্ত করা হবে। কুরআন অথবা
হাদীস যে সিদ্ধান্ত দিবে সেই মোতাবেক
'আমল করা ওয়াজিব।
এ কথা তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই
বলেছেন :
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﺃُﻭﻟِﻲ
ﺍﻟْﺄَﻣْﺮِ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓَﺮُﺩُّﻭﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂَﺧِﺮِ ﺫَﻟِﻚَ ﺧَﻴْﺮٌ
ﻭَﺃَﺣْﺴَﻦُ ﺗَﺄْﻭِﻳﻠًﺎ . ‏(ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ৫৯)
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও
আখিরাতে বিশ্বাস কর তাহলে আনুগত্য কর আল্লাহর
ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের, যারা
তোমাদের মধ্যে (ধর্মীয় জ্ঞানে ও শাসনের
ক্ষেত্রে) ক্ষমতার অধিকারী; কোন বিষয়ে
তোমাদের মধ্যে মতভেদ হলে তা ন্যস্ত কর
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর। এটাই উত্তম ও
পরিণামে উৎকৃষ্টতর। (সূরা নিসা, ৫৯)
এ বিষয়ে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস রয়েছে।
হাফেয ইবনে রজব (রহঃ) তার কিতাব লাতায়িফুল
মায়ারিফে লিখেছেন :
"তাবেয়ীদের যুগে সিরিয়ায় খালিদ ইবনে মা'দান,
মকহুল, লুকমান ইবনে আমের প্রমুখ আলিম এ
রাতকে মর্যাদা দিতে শুরু করেন এবং এ রাতে
বেশী পরিমাণে ইবাদাত-বন্দেগী করতেন। তখন
লোকেরা তাদের থেকে এটা অনুসরণ করতে
আরম্ভ করল। এরপর লোকদের মধ্যে মতানৈক্য
শুরু হল; বসরা অঞ্চলের অনেক আবেদগণ এ
রাতকে গুরুত্ব দিতেন। কিন্তু মক্কা ও মদীনার
আলিমগণ এটাকে বিদ'আত বলে প্রত্যাখ্যান
করলেন। অতঃপর সিরিয়াবাসী আলিমগণ দুই ভাগ হয়ে
গেলেন। একদল এ রাতে মাসজিদে একত্র হয়ে
ইবাদাত-বন্দেগী করতেন। এদের মধ্যে ছিলেন
খালেদ ইবনে মা'দান, লোকমান ইবনে আমের।
ইসহাক ইবনে রাহভিয়াহও তাদের অনুরূপ মত পোষণ
করতেন।
আলিমদের অন্যদল বলতেন : এ রাতে মাসজিদে
একত্র হয়ে ইবাদাত-বন্দেগী করা মাকরূহ, তবে
কেহ ব্যক্তিগতভাবে ইবাদাত-বন্দেগী করলে
তাতে দোষের কিছু নেই। ইমাম আওযায়ী এ মত
পোষণ করতেন।
মোট কথা হল, মধ্য শাবানের রাতের 'আমল
সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও
সাহাবায়ে কিরামদের থেকে কোন কিছু প্রমাণিত
নয়। যা কিছু পাওয়া যায় তা তাবেয়ীগণের যুগে সিরিয়ার
একদল আলেমের 'আমল।"
বিশুদ্ধ কথা হল, এ রাতে ব্যক্তিগত 'আমল সম্পর্কে
ইমাম আওযায়ী ও ইবনে রজব (রহঃ) এর মতামত যা
উপরে উল্লেখ করা হয়েছে তা তাদের ব্যক্তিগত
অভিমত যা সহীহ নয়। আর এটাতো সকল আলেমে
দ্বীনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত যে, শরয়ীভাবে
প্রমাণিত নয় তা ব্যক্তিগত হোক বা সমষ্টিগত,
প্রকাশ্যে হোক অথবা গোপনে হোক তা
কোন মুসলিমের ধর্মীয় 'আমল হিসাবে পালন করা
জায়েয নয়। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত নিম্নের হাদীস
হল আম তথা ব্যাপক অর্থবোধক। তিনি বলেছেন :
ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﻋﻤﻼ ﻟﻴﺲ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ )
অর্থ : যে কেহ এমন 'আমল করবে যা করতে
আমরা (ধর্মীয়ভাবে) নির্দেশ দেইনি তা
প্রত্যাখ্যাত। (মুসলিম)
ইমাম আবূ বকর আত-তারতূশী (রহঃ) তার কিতাব
( ﺍﻟﺤﻮﺍﺩﺙ ﻭﺍﻟﺒﺪﻉ ) 'আল-হাওয়াদিছ ওয়াল বিদ'আ'তে
উল্লেখ করেন : ইবনে ওয়াদ্দাহ যায়েদ বিন
আসলাম সূত্রে বর্ণনা করে বলেন : আমাদের
কোন উস্তাদ বা কোন ফকীহকে মধ্য শাবানের
রাতকে কোন রকম গুরুত্ব দিতে দেখিনি। তারা
মাকহূলের হাদীসের দিকেও তাকাননি এবং এ রাতকে
অন্য রাতের চেয়ে 'আমলের ক্ষেত্রে মর্যাদা
সম্পন্ন মনে করতেন না।
হাফেয ইরাকী (রহঃ) বলেন : মধ্য শাবানের রাতে
সালাত আদায় সম্পর্কিত হাদীসগুলো বানোয়াট বা জাল
এবং এটা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া
সাল্লামের প্রতি মিথ্যা আরোপের শামিল।
এ সম্পর্কে সকল উলামাদের মতামত যদি উল্লেখ
করতে যাই তাহলে বিরাট এক গ্রন্থ হয়ে যাবে।
তবে সত্যানুরাগীদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যা
ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
মধ্য শাবানের রাতে সালাত আদায়ের জন্য একত্র
হওয়া, ঐ দিন সিয়াম পালন করা ইত্যাদি নিকৃষ্ট বিদ'আত।
অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম এটাই বলেছেন। এ ধরনের
'আমল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া
সাল্লামের যুগে যেমন ছিল না তেমনি ছিল না তাঁর
সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) এর সময়ে। যদি এ রাতে ইবাদাত-
বন্দেগী করা সওয়াবের কাজ হত তাহলে রাসূলে
কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে
সে সম্পর্কে সতর্ক ও উৎসাহিত করতে কার্পণ্য
করতেন না, যেমন তিনি কার্পণ্য করেননি লাইলাতুল
কদর ও রামাযানের শেষ দশ দিন ইবাদাত-বন্দেগী
করার ব্যাপারে মুসলিমদের উৎসাহিত করতে।
যদি মধ্য শাবানের রাতে অথবা রজব মাসের প্রথম
জুমু'আর রাতে বা মি'রাজের রাতে ইবাদাত-বন্দেগী
করা সওয়াবের কাজ হত তাহলে আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে এ ব্যাপারে
অবশ্যই দিক-নির্দেশনা দিতেন। আর তিনি যদি দিক-
নির্দেশনা দিতেন তাহলে তার সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)
কোনভাবেই তা গোপন করতেন না। তারা তা
অবশ্যই জোরে শোরে প্রচার করতেন। তারা
তো নবীগণের পর উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।"
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! চলমান শিরোনামে এতক্ষণ যা বলা
হল তা ছিল শায়খ আবদুল আযীয আবদুল্লাহ বিন
বাযের বক্তব্যের সার কথা।
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, শবে বরাতের
বিপক্ষে উলামাদের বক্তব্য উল্লেখ করলেন,
কিন্তু শবে বরাত উদযাপনের পক্ষেও তো
অনেক বিখ্যাত উলামাদের বক্তব্য আছে তা তো
উল্লেখ করলেন না। তাই ব্যাপারটা কি একপেশে ও
ইনসাফ বহির্ভূত হয়ে গেল না?
এর জবাবে আমি বলব : দেখুন, কোন বিষয়
বিদ'আত হওয়ার ক্ষেত্রে উলামাদের বক্তব্য
যথেষ্ট। কেননা কুরআন ও হাদীসে কোন
বিষয়কে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি যে, অমুক কাজটি
বিদ'আত। তাই আলেমগণ যেটাকে বিদ'আত বলে
রায় দিবেন সেটা বিদ'আতই হবে। বিদ'আত
নির্ধারণের দায়িত্ব আলেমদের। কিন্তু কোন
বিষয়কে ওয়াজিব, সুন্নাত বা মুস্তাহাব অথবা সওয়াবের
কাজ বলে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আলেমদের
বক্তব্য যথেষ্ট হবে না যদি না উহার পক্ষে কুরআন
ও হাদীসের সহীহ দলীল থাকে। অতএব
কোন বিষয় বিদ'আত হওয়ার ক্ষেত্রে উলামাদের
বক্তব্য গ্রহণযোগ্য, কিন্তু সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে
নয়।
আর এ কারণে আমরা শবে বরাত প্রচলনের
সমর্থনে আলেমদের বক্তব্য উল্লেখ করা
প্রয়োজন মনে করিনা।
এ বিবেচনায় যে সকল আলেম শবে বরাত উদযাপন
করাকে বিদ'আত বলেছেন তাদের বক্তব্য গ্রহণ
করতে হবে। যারা শবে বরাতের পক্ষে
বলেছেন তাদের বক্তব্য এ জন্য গ্রহণ করা
যাবে না যে, তা কুরআন ও সুন্নাহর সহীহ দলীলে
উত্তীর্ণ নয়।
শবে বরাত সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহর অবস্থান
শবে বরাত উদযাপন করা ও না করার ক্ষেত্রে
বিশ্বের মুসলিমদেরকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমতঃ যারা কোনভাবেই শবে বরাত উদযাপন
করেন না ও উদযাপন করাকে ইসলাম সম্মত মনে
করেন না।
দ্বিতীয়তঃ যারা সম্মিলিতভাবে শবে বরাত উদযাপন
করেন না ঠিকই, কিন্তু এ রাতে ব্যক্তিগতভাবে চুপে
চুপে 'আমল করা ফাযীলাতপূর্ণ মনে করেন,
দিবসে সিয়াম পালন করেন ও রাত্রি জাগরণ করেন।
তৃতীয়তঃ যারা ১৫ শাবানের রাতে মাসজিদে জমায়েত
হয়ে ইবাদাত-বন্দেগী করেন, কবর যিয়ারত
করেন, মাসজিদে ওয়াজ-নাসীহাতে শরীক হন,
পরের দিন সিয়াম পালন করেন, এই রাতে হায়াত-মউত,
রিয্ক-দৌলত সম্পর্কে আল্লাহ সিদ্ধান্ত নেন বলে
বিশ্বাস করেন। সারা রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী
করেন। তবে আতশ-বাযি, মোমবাতি জ্বালানো ও
আলোকসজ্জা ইত্যাদিকে নাজায়েয বলে জানেন।
চতুর্থতঃ যারা ১৫ শাবানের রাতে আতশবাজি, আলোক
সজ্জা ও আমোদ ফুর্তি করেন ও সময় সুযোগ
মত ইবাদাত-বন্দেগীও করেন।
এ চার প্রকার লোকদের মধ্যে প্রথম প্রকারের
মানুষের সংখ্যাই বেশী। আমি কিন্তু এ কথা বলতে
চাচ্ছিনা যে, অধিকাংশ মুসলিম শবে বরাত পালন করেন না
বলে তা করা ঠিক নয়। বরং আমি বলতে চাচ্ছি যে,
শবে বরাত সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহর এ বিভক্তি শবে
বরাত উদযাপন বিদ'আত হওয়ার একটা স্পষ্ট আলামত। এ
ক্ষেত্রে আমি বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন
আবুল হাসান আলী নদভী (রহঃ) এর কিতাব 'র্শিক ও
বিদয়াত' থেকে একটি উদ্ধৃতি দেয়া যথার্থ মনে
করছি। তিনি লিখেছেন : "আল্লাহর দ্বীন ও
শরীয়তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হলো
বিশ্বব্যাপী সম-আদর্শতা। এই সমাদর্শ ও স্বাদৃশ্যতা
যেমন কাল ও সময়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
তেমনি স্থানের ক্ষেত্রেও। আল্লাহ হচ্ছেন
রাব্বুল মাশরিকাইন ওয়া রাব্বুল মাগরিবাইন; পূর্ব-পশ্চিম
সকল কিছুর রব ও মালিক। তিনি স্থান ও কালের সীমা ও
বাধার উর্দ্ধে। তাই তাঁর শরীয়াত ও তাঁর দ্বীনে
এক অত্যাশ্চর্য সমতা ও সমাদর্শ বিদ্যমান। তাঁর আখিরী
শরীয়াত ও আখিরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শে এসে যা
হয়েছে তাকমীল -পূর্ণতা প্রদীপ্ত সূর্যের
মতই সকলের জন্য সমান এবং আকাশ ও মাটির মত
সকলের জন্য সম উপযোগীতাপূর্ণ। প্রথম যুগে
এর যে রূপ ও আকৃতি ছিল হিজরী পনের শতকেও
উহার রূপ ও আকৃতি সেই একই। প্রাচ্যবাসীদের
জন্য এটি যেমন ও যতটুকু, ঠিক তেমন ও ততটুকুই
প্রতীচ্যের জন্য। যে সমস্ত নীতি ও নির্দেশ,
ইবাদাতের যে রূপ ও আকৃতি, আল্লাহর নৈকট্য লাভের
যে সমস্ত সুনির্ধারিত পন্থা ও উপায় আরবদের জন্য
ছিল ঠিক তদ্রূপ আছে তা ভারতবাসীর জন্যও। তাই
দুনিয়ার যে কোন অংশের একজন মুসলিম অধিবাসী
অপর কোন অংশে যদি চলে যায় তাহলে ইসলামী
ফরয আদায় এবং ইবাদাত-বন্দেগী করার ক্ষেত্রে
তার কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় না। তার
জন্য কোন স্থানীয় গাইডের প্রয়োজন পড়ে
না। তিনি যদি আলিম হন, শরীয়ত সম্পর্কে বিজ্ঞ হন
তাহলে কেবল মুক্তাদীই নয় অধিকন্তু যে কোন
স্থানে তিনি ইমামও হতে পারেন।
বিদ'আতের অবস্থা এর বিপরীত। এতে সমদৃশ্যতা ও
একত্বতা নেই। স্থান ও কালের প্রভাব এতে
পরিস্ফুট থাকে। গোটা মুসলিম বিশ্বে এর একটিমাত্র
রূপে প্রচলনও হয়ে ওঠে না।"
সকল ধরনের বিদ'আতের ক্ষেত্রে উপরোক্ত
কথা প্রযোজ্য। শবে বরাত এমনি একটা বিষয় যা
আমরা ভারতীয় উপমহাদেশের লোকেরা মহা
ধুমধামে উদযাপন করছি, কিন্তু অন্য এলাকার
মুসলিমদের কাছে এ সম্পর্কে কোন খবর নেই।
কি আশ্চর্য! এমন এক মহা-নিয়ামাত যা মক্কা-মদীনার
লোকেরা পেলনা, অন্যান্য আরবরা পেলনা,
আফ্রিকানরা পেলনা, ইন্দোনেশীয়,
মালয়েশীয়রা পেলনা, ইউরোপ-আমেরিকা-
অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশের লোকেরা পেলনা; অথচ
ভাগ্যক্রমে সৌভাগ্যের মহান রাত পেয়ে গেলাম
আমরা উপ-মহাদেশের কিছু লোকেরা ও শিয়া
মতাবলম্বীরা!
এ বিষয়টি যদি বিভ্রান্তিকর না হত তাহলে সকল
মুসলিমের পাওয়ার কথা ছিল। হাদীসে এসেছে :
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻻ ﻳﺠﻤﻊ ﺃﻣﺘﻲ
ﻋﻠﻰ ﺿﻼﻟﺔ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ
ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺭﻗﻢ ১৮৪৮)
অর্থ : সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে
বর্ণিত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন :আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতকে কোন
গোমরাহী বা বিভ্রান্তিতে একমত হতে দিবেন না।
(তিরমিযী)
অন্য বর্ণনায় এসেছে :
ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻗﺪ ﺃﺟﺎﺭ ﺃﻣﺘﻲ ﺃﻥ ﺗﺠﻤﻊ ﻋﻠﻰ
ﺿﻼﻟﺔ . ‏(ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ১৭৪৬ ﺭﻗﻢ ১৭৪৬)
অর্থ : সাহাবী আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ
তা'আলা আমার উম্মতকে কোন ভ্রান্ত বিষয়ে
একমত হওয়া থেকে মুক্তি দিয়েছেন। (সহীহ
জামেয়)
এ হাদীসের অর্থ হল আমার উম্মত যদি কোন
বিষয়ে একমত হয় তাহলে সে বিষয়টি বিভ্রান্তিকর
হতে পারে না। আর আমার উম্মতের কোন বিষয়ে
একমত না হওয়ার বিষয়টি বিভ্রান্ত হওয়ার একটা আলামত
হতে পারে।
শবে বরাত এমনি একটি 'আমল যে উম্মতে মুসলিমাহ
এ বিষয়ে কখনো একমত হয়নি, হওয়া সম্ভবও নয়।
আবার যারা উদযাপন করেন তাদের মধ্যেও দেখা যায়
'আমল ও বিশ্বাসের বিভিন্নতা।
শবে বরাত সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করার দায়িত্ব
উলামায়ে কিরামের
ইসলাম ধর্মে যতগুলো বিদ'আত চালু হয়েছে তা
কিন্তু সাধারণ মানুষ বা কাফির মুশরিকদের মাধ্যমে
প্রসার ঘটেনি। উহার প্রসারের জন্য দায়ী যেমন
এক শ্রেণীর উলামা, তেমনি উলামায়ে কিরামই যুগে
যুগে বিদ'আতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন,
নির্যাতন সহ্য করেছেন, দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য
হয়েছেন, জেল-যুল্ম বরদাশত করেছেন।
তাই বিদ'আত যে নামেই প্রতিষ্ঠা লাভ করুক না কেন
উহার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করতে হবে
আলেমদেরকেই। তারা যদি এটা না করে কারো
অন্ধ অনুসরণ বা অনুকরণ করেন, বিভ্রান্তি ছড়ান বা
কোন বিদ'আতী কাজ-কর্ম প্রসারে ভূমিকা রাখেন,
তাহলে এ জন্য তাদেরকে আল্লাহর সম্মুখে
জবাবদিহি করতে হবে। যে দিন বলা হবে :
ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﻳُﻨَﺎﺩِﻳﻬِﻢْ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻣَﺎﺫَﺍ ﺃَﺟَﺒْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺮْﺳَﻠِﻴﻦَ . ‏( ﺍﻟﻘﺼﺺ
:৬৫)
অর্থ : আর সে দিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে
জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা রাসূলদের আহ্বানে
কিভাবে সাড়া দিয়েছিলে? (সূরা কাসাস, ৬৫)
সেদিন তো এ প্রশ্ন করা হবে না যে, তোমরা
অমুক পীরের মত অনুযায়ী বা অমুক ইমামের মত
অনুযায়ী 'আমল করেছিলে কিনা। যারা সহীহ সুন্নাহ
মত 'আমল করবে তারাই সেদিন সফলকাম হবে।
একটি বিভ্রান্তির নিরসন
১৫ শাবানে দিনের সিয়াম ও রাতের ইবাদাত-
বন্দেগী, কুরআন তেলাওয়াত, নফল সালাত, কান্নাকাটি,
দু'আ-মুনাজাত, কবর যিয়ারাত, দান-সাদকাহ, ওয়াজ-নাসীহাত
প্রভৃতি নেক 'আমল গুরুত্বসহকারে পালন করাকে
যখন কুরআন ও হাদীস সম্মত নয় বলে আলোচনা
করা হয় তখন সাধারণ ধর্ম-প্রাণ ভাই-বোনদের পক্ষ
থেকে একটি প্রশ্ন আসে যে, জনাব! আপনি
শবে বরাতে উল্লিখিত ইবাদাত-বন্দেগীকে
বিদ'আত বা কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত নয় বলেছেন,
কিন্তু রোযা রাখা সওয়াবের কাজ ও রুটি তৈরী করে
গরীব দুঃখীকে দান করা ভাল কাজ নয় কি? আমরা
কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে
দোষের কি?
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ! নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলার
সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দ'ুআ-মুনাজাত, সালাত, সিয়াম,
দান-ছাদাকাহ, কুরআন তিলাওয়াত, রাত্রি জাগরণ হল নেক
'আমল। এতে কারও দ্বি-মত নেই। আমরা কখনো
এগুলিকে বিদ'আত বলি না। যা বিদ'আত বলি এবং যে
সম্পর্কে উম্মাহকে সতর্ক করতে চাই তা হল এ
রাতকে শবে বরাত বা সৌভাগ্য রজনী অথবা মুক্তি
রজনী মনে করে বিভিন্ন প্রকার 'আমল ও ইবাদাত
বন্দেগীর মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা। এটা
কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী। এটাই ধর্মে বাড়াবাড়ি। যা
ধর্মে নেই তা উদযাপন করা ও প্রচলন করার নাম
বিদ'আত।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর
নবুওয়াতের তেইশ বছরের জীবনে কখনো
তার সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে মক্কায় মাসজিদুল
হারামে অথবা মদীনায় মাসজিদে নবুবীতে কিংবা
অন্য কোন মাসজিদে একত্র হয়ে উল্লিখিত ইবাদাত-
বন্দেগীসমূহ করেছেন এমন কোন বর্ণনা
পাওয়া যায় না। তাঁর ইন্তেকালের পরে তাঁর সাহাবায়ে
কিরাম (রাঃ) তথা খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে কেহ
জানতো না শবে বরাত কি এবং এতে কি করতে হয়।
তারা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের 'আমল
প্রত্যক্ষ করেছেন। আমাদের চেয়ে উত্তম
রূপে কুরআন অধ্যয়ন করেছেন। তারা তাতে শবে
বরাত সম্পর্কে কোন দিক-নির্দেশনা পেলেন না।
তারা তাদের জীবন কাটালেন আল্লাহর নবী
সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে, অথচ
জীবনের একটি বারও তাঁর কাছ থেকে শবে বরাত
বা মুক্তির রজনীর ছবক পেলেন না? যা পালন
করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলে যাননি, যা কুরআনে নেই, রাসূল সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তা'লীমে নেই,
সাহাবীগণের 'আমলে নেই, তাদের সোনালী
যুগের বহু বছর পরে প্রচলন করা শবে বরাতকে
আমরা বিদ'আত বলতে চাই। আমরা বলতে চাই, এটা
একটা মনগড়া পর্ব। আমরা মানুষকে বুঝাতে চাই, এই
সব প্রচলিত ও বানোয়াট মুক্তির রজনী উদযাপন
থেকে দূরে থাকতে হবে। আমরা উম্মতকে
কুরআন ও সুন্নাহমুখী করতে এবং সেই অনুযায়ী
'আমল করাতে অভ্যস্ত করতে চাই।
বিদ'আত সম্পর্কে কিছু কথা
বিদ'আত কাকে বলে এ বিষয়ে অনেকেরই স্পষ্ট
ধারণা নেই। অনেকের ধারণা যা আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ছিলনা তা-ই
বিদ'আত। আবার অনেকে মনে করেন বর্তমান
নিয়মতান্ত্রিক মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতি একটি বিদ'আত,
তাবলীগ জামাতের পদ্ধতি বিদ'আত, বিমানে হজ্জে
যাওয়া বিদ'আত, মাইকে আজান দেয়া বিদ'আত ইত্যাদি।
এ সকল দিক বিবেচনা করে তারা বিদ'আতকে
নিজেদের খেয়াল খুশি মত দুই ভাগ করে
কোনটাকে হাসানাহ (ভাল বিদ'আত) আবার
কোনটাকে সাইয়্যেআহ (মন্দ বিদ'আত) বলে
চালিয়ে দেন। আসলে বিদ'আত সম্পর্কে সঠিক
ধারণা না থাকার কারণে এ বিভ্রান্তি।
বিদ'আতের আভিধানিক অর্থ হল :
ﺍﻟﺸﻲﺀ ﺍﻟﻤﺨﺘﺮﻉ ﻋﻠﻰ ﻏﻴﺮ ﻣﺜﺎﻝ ﺳﺎﺑﻖ ﻭﻣﻨﻪ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ
‏(ﻗﻞ ﻣﺎ ﻛﻨﺖ ﺑﺪﻋﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﺳﻞ ‏) ﻭﺟﺎﺀ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﻌﻨﻰ
ﻗﻮﻝ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ‏( ﻧﻌﻤﺖ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ )
অর্থ : পূর্বের দৃষ্টান্ত ব্যতীত নতুন সৃষ্ট কোন
বিষয় বা বস্তু। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন : "বলুন,
আমি তো কোন নতুন রাসূল নই।
আসলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাসূল
হিসাবে নতুনই। কিন্তু এ আয়াতে বিদ'আত শব্দের
অর্থ হল এমন নতুন যার দৃষ্টান্ত ইতোপূর্বে গত
হয়নি। আর উমার (রাঃ) তারাবীহর জামাত কায়েম করে
বলেছিলেন "এটা উত্তম বিদ'আত।" এখানেও
বিদ'আতের আভিধানিক অর্থ প্রযোজ্য।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় বিদ'আতের সংজ্ঞা
ﻣﺎ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻲ ﺩﻳﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻟﻴﺲ ﻟﻪ ﺃﺻﻞ ﻋﺎﻡ ﻭﻻ ﺧﺎﺹ
ﻳﺪﻝ ﻋﻠﻴﻪ .
'যা কিছু আল্লাহর দ্বীনে নতুন সৃষ্টি করা হয় অথচ
এর সমর্থনে কোন ব্যাপক বা বিশেষ দলীল
প্রমাণ নেই।'
অর্থাৎ নব সৃষ্ট বিষয়টি অবশ্যই ধর্মীয় ব্যাপারে
হতে হবে। যদি ধর্মীয় ব্যাপার ব্যতীত অন্য
কোন বিষয়ে নব-আবিস্কৃত কিছু দেখা যায় তা
শরীয়তের পরিভাষায় বিদ'আত বলে গণ্য হবে না,
যদিও শাব্দিক অর্থে তা বিদ'আত।
এ প্রসঙ্গে আবুল হাসান আলী নদভী (রহঃ) তার
'র্শিক ও বিদ'আত' কিতাবে বিদ'আতের পরিচ্ছন্ন
সংজ্ঞা উল্লেখ করেছেন। তা হল : যে বিশ্বাস বা
কাজ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া
সাল্লাম দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত করেননি কিংবা পালন
করার নির্দেশ দেননি সেই ধরনের বিশ্বাস বা
কাজকে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত করা, এর অঙ্গ
বলে সাব্যস্ত করা, সওয়াব বা আল্লাহর নৈকট্য লাভের
উপায় মনে করে এই ধরনের কাজ করার নাম
বিদ'আত।
যে সকল বিশ্বাস ও কাজকে দ্বীনের অংশ মনে
করে অথবা সওয়াব হবে ধারণা করে 'আমল করা হয়
তা বিদ'আত। কারণ হাদীসে এসেছে :
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻲ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻪ
ﻓﻬﻮ ﺭﺩ . ‏(ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ )
অর্থ : আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : যে আমাদের এ ধর্মে এমন কোন
নতুন বিষয় উদ্ভাবন করবে যা ধর্মে অন্তর্ভুক্ত ছিল
না তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট হল যে, নতুন আবিস্কৃত বিষয়টি
যদি ধর্মের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরে নেয়া হয়
তাহলে তা বিদ'আত ও প্রত্যাখ্যাত।
হাদীসে আরো এসেছে :
ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﻋﻤﻼ ﻟﻴﺲ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ )
অর্থ : যে ব্যক্তি এমন কাজ করল যার প্রতি
আমাদের (ইসলামের) নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।
(মুসলিম)
এ হাদীসে "যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই"
বাক্যটি দ্বারা এ কথা বুঝানো হয়েছে যে, বিষয়টি
ধর্মীয় হতে হবে। ধর্মীয় বিষয় হিসাবে কোন
নতুন 'আমল করলেই বিদ'আত হবে। যারা মাইকে
আজান দেন তারা জানেন যে, মাইকে আজান দেয়ার
আলাদা কোন মর্যাদা নেই বা আজানে মাইক ব্যবহার
করা সওয়াবের কাজ বলে তারা মনে করেন না।
এমনিভাবে বিমানে হজ্জে যাওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক মাদ্রাসার
প্রচলন, নাহু সরফের শিক্ষা গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়
ধর্মীয় বিষয় বলে মনে করা.

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.