নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখ কিংবা দুঃখ!হাসি কিংবা কান্না!জীবনের এপিঠ-অপিঠ!আমি সেই জীবন নামক খেলায় পরাজিত একজন।

আংশিক ভগ্নাংশ জামান

আমি মানুষটার পরিচয় নিয়ে বলার খুব বেশী কিছু নেই। পরিবারের জন্যে উৎসর্গীত বড়ো ছেলে। একজন প্রবাসী।

আংশিক ভগ্নাংশ জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাঁদের প্রস্থান এবং একটি রহস্য।

০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:০০

(১)

- তোমার জন্যে খুশীর একটা খবর আছে।আমার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে।
এই খবরটাই তো শুনতে চেয়েছো তুমি?এবার নিশ্চয় তুমি খুশী হয়েছো?

তিথির কথাগুলো কাঁটা হয়ে বিঁধছিলো আহনাফের হৃদয়ে।অপরপ্রান্তের ফোঁপানির আওয়াজ শুনে বুঝলো কাঁদছে মেয়েটা।
কান্নার আওয়াজটা তার কষ্টটাকে আরো বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দিলো।

তবুও আহনাফ কষ্ট বুকে চেপে কন্ঠটাকে কঠিন করে বললো, "এগুলো বলার জন্যেই কি ফোন করেছো?নাকি আরো কিছু বলবে?
এসব ফালতু কথা শুনার চেয়েও আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আমার।"

- অন্তত আজকের দিনটাতেও কি আমার সাথে একটু ভদ্র ব্যবহার করতে পারোনা তুমি?

- না!ভদ্র ব্যবহার শিখিনি আমি।

- বাসার সামনে একটু আসতে পারবে?কয়েক মিনিটের জন্যে।আমাকে বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছেনা।

- কেনো?

- তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করতেছে।দূর থেকে একটু দেখবো।দয়া করে আমার এই শেষ অনুরোধটা রাখো।

- কি দরকার তিথি?তুমি এখন অন্য আরেকজনের হবু স্ত্রী।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।
তুমি একজন খারাপ মানুষকে ভালোবেসেছো।যার মধ্যে তোমার জন্যে তিলমাত্র ভালোবাসা নেই।যে তোমার সাথে শুধুই ভালোবাসার অভিনয় করেছে।
আশা করি তুমি অনেক ভালো একজন মানুষকে স্বামী হিসেবে পাবে।তোমার জন্য শুভকামনা রইলো।

কথাগুলো দ্রুত বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলো।

মোবাইলটার সুইচ বন্ধ করে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো আহনাফ।জানে তিথি আবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে।যাতে করতে না পারে তাই এই ব্যবস্থা।
তার নিষ্ঠুর অভিনয় করা শেষ।বাস্তবতা এখন তার ধারালো ছুরি দিয়ে কাঁটছে আহনাফের হৃদয়টা।ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে প্রচুর আর বাইরে তার প্রমাণ আহনাফের চোখ দিয়ে ঝরে পড়া বাঁধভাঙ্গা অশ্রু।

তিথি জানতেও পারলোনা তাদের বাড়ির ব্যালকনি থেকে দেখা দূরত্বে গাছের আড়ালে দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে আহনাফ নামের ছেলেটি।
চোখের জলে নীরব শুভকামনা জানাচ্ছে তার প্রতি।

(২)

- তিথির ছবি তোমার বালিশের তলায় কেনো আহনাফ?তোমার বিছানা ঝারতে গিয়ে বালিশের তলায় পেলাম।

সুফিয়া বেগম সন্দেহপূর্ণ কন্ঠে ছেলে আহনাফকে প্রশ্ন করলেন।

আহনাফ মায়ের হাতে তিথির ছবিটা দেখে প্রমাদ গুণল।বুঝলো আজ আর রক্ষে নেই।

- মা আমি তিথিকে ভালোবাসি।

"আহনাফ, তুমি খুব ভালো করেই জানো তিথির পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের বিরোধ চলতেছে অনেকদিন ধরে।সর্বশেষ জমি নিয়ে বিরোধের সময় তিথির বাবা,ভাই আর মামারা তোমার বাবাকে কি পরিমাণ অপমান করেছিলো তুমি কি ভুলে গেছো?
ওর বাবা যদি জানতে পারে তাহলে আবার সেই বিরোধ চরম আকার ধারণ করবে।
তুমি ওকে ভুলে যাও বাবা।এতেই তোমাদের দুইজনের ভালো হবে।
তোমাদের সম্পর্কটা কেউ মেনে নিবেনা।
তুমি পরিবারের বড় ছেলে বাবা।তোমার সাথে আমাদের অনেক আশা-ভরসা জড়িয়ে আছে।এমন কিছু করোনা যাতে তোমার বাবার সম্মান ধূলোই মিশে যায়।"

(৩)

আহনাফের কথাবার্তা আজকাল অদ্ভুত লাগে তিথির কাছে।উল্টাপাল্টা কথা বলে।
অনেকটা বদলে গেছে আহনাফ।আগের সেই হাস্যেজ্জল আহনাফ এখন নিরেট গাম্ভীর্যের প্রতীক।
যে আহনাফ আগে কখনো তার সাথে রেগে কথা বলেনি সেই আহনাফ এখন তিথির প্রতিটা কথার জবাব দেয় কড়া কন্ঠে।

কি কারণে এভাবে বদলে যাচ্ছে আহনাফ বুঝতে পারেনা তিথি।আহনাফের সাথে কথা বলতেও ভয় হয় এখন ওর।
চোখের অশ্রু হয়ে যায় ওর কষ্টের স্বাক্ষী।

পার্কে ঢুকেই অসঙ্গতিটা চোখে পড়ে তিথির।
আহনাফ সাথে থাকা মেয়েটির হাত ধরে হাঁটছিল।তাকে দেখেই দুইজনে হাত ছেড়ে দিয়ে আলাদা হয়ে দাড়িয়ে আছে।

- মেয়েটা কে?মিথ্যা কথা বলবেনা।তোমাদের দুইজনকে হাত ধরে হাঁটতে দেখেছি আমি।

-অহনা!আমার বান্ধবী।আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি।

- তাহলে আমি কে?আমার সাথে যা করেছো তা কি ছিলো?

- টাইম পাস!টাইম পাস করেছি তোমার সাথে।

গায়ের জোরে আহনাফের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় তিথি।চোখের পানি মুছে পিছন ফিরে বেরিয়ে যায় পার্ক থেকে।

মুখে একটা মলিন হাসি ঝুলিয়ে তিথির গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকে আহনাফ।

(৪)

ছাদের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে আহনাফ।সিগারেট পোড়াচ্ছে একের পর এক।

আজকে তিথির বিয়ে।

বউয়ের সাজে অপূর্ব সুন্দর দেখাচ্ছে মেয়েটিকে।চাঁদের মত সুন্দর।ঠিক যেন একটা পরী।

বিয়েতে যায়নি আহনাফ।বরং তিথিই তার মোবাইলে নববধূর সাজে সজ্জিত একটা ছবি এমএমএস করে পাঠিয়ে দিয়েছে।
ছবিটা দেখার পর থেকেই ভিতরটা কেমন শুন্য হয়ে গেছে আহনাফের।

এই প্রতিমা ওর।
তার মনের চাঁদ অন্যের ঘর আলোকিত করবে এই ভাবনা উন্মত্ত করে তুললো আহনাফকে।
পরক্ষনেই মনে পড়লো বাবা-মার কথা।

দুইভাগে বিভক্ত চিন্তা অসুস্থ করে তুললো আহনাফকে।

চরম সিদ্ধান্তটা নিলো।মোবাইলটা বের করে কল করলো কোথাও।কিছুক্ষন কথা বলে মোবাইলটা পকেটে রেখে উঠে পড়লো।তার এখন অনেক কাজ।

(৫)

সারোয়ার সাহেবের মনটা আজকে ভীষণ খারাপ।হাহাকার করছে মনটা।
মেয়েকে সম্প্রদান করেছেন শক্ত হাতে।কিন্তু মেয়েকে নিয়ে বরযাত্রীরা চলে যেতেই সবকিছু কেমন ফাঁকা মনে হলো তার।

মোবাইলে রিং বেজে উঠলো এইসময়।
ওইপাশের কথা শুনে মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো তার।

স্ত্রী জয়নাবের দিকে তাকিয়ে শুধু বললেন, "তিথিকে বহনকারী গাড়ীতে হামলা হয়েছে।তিথিকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।"

সেদিন আহনাফ নামের ছেলেটিও কাউকে কিছু না বলে বাড়ী থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪

শায়মা বলেছেন: এমন হলে তবুও ভালো।:)

২| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:০৭

আংশিক ভগ্নাংশ জামান বলেছেন: তাতো বটেই।ধন্যবাদ আপনাকে। :)

৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২

কম্পমান বলেছেন: শেষটা এমন না হলে আর ভাল হত..............????
কারণ সত্যিকারের ভালবাসা শুধু মানুষকে কাছেও টানে না দূরে ও সরিয়ে দেয়।।

৪| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৪

আংশিক ভগ্নাংশ জামান বলেছেন: কম্পমান ভাইয়া, আমি কিন্তু কোথাও উল্লেখ করিনি তাদের মিলন হয়েছে।
বরং বিষয়টি রহস্যবৃত রেখেছি।
ধন্যবাদ আপনাকে। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.