নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখ কিংবা দুঃখ!হাসি কিংবা কান্না!জীবনের এপিঠ-অপিঠ!আমি সেই জীবন নামক খেলায় পরাজিত একজন।

আংশিক ভগ্নাংশ জামান

আমি মানুষটার পরিচয় নিয়ে বলার খুব বেশী কিছু নেই। পরিবারের জন্যে উৎসর্গীত বড়ো ছেলে। একজন প্রবাসী।

আংশিক ভগ্নাংশ জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবং তিনটি লাল গোলাপ

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৫৩

বহু ব্যবহারে মলিন,কোণার কাছে ছেড়া মানিব্যাগটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিংশ্বাস ফেলল তাশফিন।
মানিব্যাগের ভিতরে হাতড়ে তারচেয়ে করুন আরো একটা বড় নিংশ্বাস বেরিয়ে এলো তাশফিন মাহমুদের বুক ছিড়ে।

মাত্র একশো টাকার একটা নোট আর কিছু এক টাকার মুদ্রা।পথের সম্বল বলতে এগুলোই।
কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা তাশফিন।কারো কাছ থেকে ধার পাবে সেই আশাও নেই।আজকের দিনে সবাই যার যার মত ব্যস্ত।
মাসের এখনো বাকী আছে ১৫ দিন।টিউশনির বেতনের আশা করাটাও তাই সুদূরপরাহত।

ভাবতে ভাবতেই চোখ পড়লো নিজের মলিন,দোমড়ানো পান্জাবীটার দিকে।একটাই মাত্র পান্জাবী ওর।তাও তিন বছর আগে কেনা।
অথচ মহুয়া বলেছে, আজকে পান্জাবী পরে বের হতে হবে।

নামটা মনে আসতেই মনে মনে একচোট হেসে নিলো তাশফিন।পাগলী মেয়েটা জীবনে আসার পর থেকে তাশফিনের জীবনটাই বদলে গেছে।
ওর অগোছালো জীবনটাকে অনেকটা গুছিয়ে এনেছে মেয়েটা।

তাশফিনদের বাড়িওয়ালার দূরসম্পর্কের ভাগনী মহুয়া।বড়লোক বাবার একমাত্র সুন্দরী মেয়ে।মামার বাসায় বেড়াতে এসে কিভাবে যেনো প্রেমে পড়ে গেলো গরীব,চালচুলোহীন তাশফিনের।

আজকে ওদের যুগল জীবনের প্রথম ভ্যালেন্টাইনস ডে।আজকের দিনে মেয়েটাকে কিছু একটা উপহার দিতে না পারলে কেমন হয়!
অথচ পকেট গড়ের মাঠ!

মোবাইলে রিং হলো এইসময়।ডিসপ্লেতে মহুয়া নামটা ভেসে উঠলো।

-এই,কোথায় তুমি?
-বাসায়।
-এখনো বাসায় কি করতেছো?আমি সেই কখন থেকে রমনাতে দাড়িয়ে আছি।তাড়াতাড়ি বের হও।

আসতেছি বলে সংযোগ ডিসকানেক্ট করে দিলো।পান্জাবীটা তাড়াতাড়ি গায়ে দিয়ে বের হলো রমনার উদ্দ্যেশ্যে।টাকা বাঁচানোর জন্য হেঁটেই রওনা দিলো।

রমনার গেটের ভিতরের দেখা দূরত্বে দাড়িয়ে আছে মহুয়া।রাগে মুখ লাল।
কিছু মেয়ে আছে যাদের রাগ করলে আরো বেশী সুন্দর দেখাই।মহুয়া সেই কাতারে।
মাঝে মাঝে শুধু এই সৌন্দর্যটাকে দেখার জন্যেই ইচ্ছা করে মহুয়াকে রাগিয়ে দেয় তাশফিন।
তারপর মহুয়ার মিষ্টি বকুনী শুনে।যে রাগে ভালোবাসা মিশানো থাকে সেই রাগটাও সৌন্দর্য বহন করে।
আজকেও যেমন ইচ্ছা করেই দেরী করেছে।

আজকে শাড়ী পরেছে মহুয়া।নীল পাড়ের সাদা শাড়ীতে অপূর্ব সুন্দর লাগতেছে মেয়েটিকে।যেন একটা পরী।বিকেলের মলিন সূর্যের আভা সেই রূপটাকে যেনো বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
মেয়েটার সামনে দাড়ালেই মলিন পোশাক আর তারচেয়েও মলিন জুতোপরা নিজেকে কেমন হতশ্রী মনে হয় তাশফিনের।প্রতিবার দেখা হলেই এই অনুভূতিটা হয়।ভীষণ ক্ষুদ্র মনে হয় মহুয়ার সৌন্দর্যের কাছে।বেশী ভালোবাসলে হয়তো এই অনুভূতিটা হয় মানুষের।

-এই,এতো দেরী হলো কেনো তোমার?আধা ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি এখানে।

-সরি।হেঁটে আসতে দেরী হলো।

-হেঁটে আসছো!হেঁটে আসতে কে বলছে তোমাকে?

-কেউ বলেনি।ভাবলাম হাটলে শরীরের জন্য ব্যায়াম হবে।মোটা হয়ে যাচ্ছি কিনা।

-কি বললা?উল্টাপাল্টা কথা বলা আর উল্টাপাল্টা চিন্তা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তোমার?
যাও আমার সামনে থেকে।কথা বলবানা আমার সাথে।

মেয়েটার রাগ দেখে হাসতে শুরু করলো তাশফিন।
ওকে হাসতে দেখে আরো রেগে গেলো মহুয়া।

-হাসতেছো কেনো?আমি কি হাসির কিছু বলছি?যাও তুমি আমার সামনে থেকে।

-সত্যিই চলে যাবো?
-যাও।

-ঠিক আছে।আমাকে যখন তোমার সহ্য হচ্ছেনা।যাচ্ছি তাহলে।

তাশফিন পিছনে ফিরে হাঁটার ভান করতেই আবার কথা বলে উঠলো মহুয়া,

-এক পা নড়ে দেখো।খুন করে ফেলবো তোমাকে আমি।

-কি মুশকিল।যেতেও বলতেছো আবার হুমকিও দিতেছো।

-আমিতো ওটা এমনি বলছি।দেরী হলো কেনো তোমার?তোমার নাম্বার টাও বন্ধ।আর হাত পিছনে লুকিয়ে রেখেছো কেনো?

-ডান হাতটা একটু সামনে বাড়াও।

মহুয়া বিনাবাক্যে হাতটা সামনে বাড়িয়ে দিলো।তাশফিন বক্স থেকে একটা ঘড়ি বের করে মহুয়ার হাতে পরিয়ে দিলো।

-অনেক সুন্দর হয়েছে ঘড়িটা।
-তোমার পছন্দ হয়েছে?
-হুম।

-তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর হলো,ঘড়িটা কিনতে একটু দেরী হলো আর আমার নাম্বারে সংযোগ দিচ্ছেনা কারণ আমি মোবাইল বিক্রী করে দিয়েছি।

মহুয়া খানিকক্ষন কোন কথা বললোনা।একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তাশফিনের দিকে।
এই চাহনী দেখে ভয় পেয়ে গেলো তাশফিন।ভুল কিছু করে ফেললো নাকি!
এই মেয়ের রাগ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে বিপদ।

একটু পর আটকে রাখা নিংশ্বাসটা ছাড়লো তাশফিন।কারণ মহুয়া নিজের ব্যাগের ভিতর হাত ঢুকিয়ে কিছু একটা খুঁজছে।
তারপর নিজের ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে তাশফিনের হাতে দিলো।
বক্স খুলে তাশফিন দেখলো একটা মোবাইল।

-আমি জানতাম তুমি এরকম কিছু একটা করবে তাই আগেই আমি তোমার জন্য মোবাইলটা কিনে রেখেছি।

কিছুক্ষন নীরব রইলো দুইজন।আসলে আবেগ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে দুইজনে।

ওদের সেই স্বর্গীয় অনুভূতিকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্যেই যেন একজন ফুলবিক্রেতা মেয়ে এসময় ওদের দিকে এগিয়ে এল।
আবেগবিহ্বল তাশফিন তিনটি লাল টকটকে গোলাপ কিনল।

সেখানেই হাঁটু গেড়ে বসে ফুলগুলো মহুয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
"Will You Be Mine Forever?"

মহুয়া নামের রাগী আর পাগলী মেয়েটার চোখে তখন খুশীর ঝিলিক।
আবেগরুদ্ধ কন্ঠে ফিসফিস করে শুধু বললো,
"You And Me Forever"

বাকী সব গল্পের মতোই ওদের প্রেমের গল্পও এভাবেই ছুটে যাবে অমোঘ নিয়তির দিকে।পরস্পরের হাত ধরে ভালবাসার বন্ধন অটুট রেখে যদি তারা পারে সকল বাঁধাকে অতিক্রম করতে তবে দুইটি আত্মার মিলনের মাধ্যমে সেই প্রেম পূর্ণতা পাবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:১৫

শায়মা বলেছেন: বাহ !!!


-আমি জানতাম তুমি এরকম কিছু একটা করবে তাই আগেই আমি তোমার জন্য মোবাইলটা কিনে রেখেছি।
:)

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৫৭

আংশিক ভগ্নাংশ জামান বলেছেন: ভালাবাসার আধিক্য বোঝাতে কাকতালীয় ঘটনার যোগ।ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।ধন্যবাদ আপনাকে। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.