নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখ কিংবা দুঃখ!হাসি কিংবা কান্না!জীবনের এপিঠ-অপিঠ!আমি সেই জীবন নামক খেলায় পরাজিত একজন।

আংশিক ভগ্নাংশ জামান

আমি মানুষটার পরিচয় নিয়ে বলার খুব বেশী কিছু নেই। পরিবারের জন্যে উৎসর্গীত বড়ো ছেলে। একজন প্রবাসী।

আংশিক ভগ্নাংশ জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি আর প্রবাস এবং আমাদের কথা

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৩

৮ মে,২০১৫।
দিনটি আমার জীবনের অনেক স্মরণীয় একটা দিন।কারণ এই দিনেই যে রীতিমতো ঘরবাড়ি ছেড়ে আমি হয়ে গেলাম প্রবাসী।
সেই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়টা;আত্মীয়-স্বজনদের সবার কান্না ভেজা চোখ;আমার আম্মুর পাগলের মতো আমাকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি!
সব স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে।

অবাক ব্যাপারটা ছিলো এই যে, আমাকে সবাই নরম মনের মানুষ জানতো সেই আমার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানিও বের হয়নি।
আমার আম্মুকে স্বান্তনা দিয়েছিলাম আমিই।
সেদিন অবুঝ আমি কিভাবে যেনো অনেক পরিপক্ক একজন মানুষে পরিণত হয়েছিলাম।
শুধুই আমিই জানতাম আমার মনের মধ্যে কি চলছিলো তখন।মনটা কাঁদছিলো আমার।
ইচ্ছা করছিলো মায়ের আঁছলের তলাই মুখ লুকিয়ে মন খুলে কাঁদি।
পারিনি আমি।আমি কান্না করলে যে আমার মা আরো ভেঙ্গে পড়তো।
বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা যে আমি ছোট থেকেই এতোটাই মা ন্যাওটা ছিলাম যে কখনোই কোথাও আম্মুকে ছেড়ে দুইদিনের বেশী থাকিনি।তাও বাধ্য হলে!
সেই আমি বছরের পর বছর মা-বাবা,পরিবার,আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ছেড়ে ভিন্ন একটা দেশে জীবনযাপন করতেছি।
অনেক দুঃখ-কষ্ট আর যন্ত্রনার জীবনযাপন।
একটু স্বচ্ছলতার জন্যে।পরিবারের সবাইকে একটু সুখে রাখার জন্যে।
গায়ে মশা কামড়াবে এই ভয়ে আম্মুকে জেগে পাশে বসে থাকতে দেখে কতো শত রাত গেছে আমার।আর এখন সেই মাকে ছেড়ে ভিন্ন একটা দেশে কতো পোকার কামড় খেয়ে দিনযাপন করছি।
এটাকেই প্রবাস বলে।বাধ্য না হলে কেউ প্রবাসযাপন করেনা।

এতো কথা বলার প্রয়োজন ছিলোনা।কষ্টের কথাগুলো এইজন্যেই বলা যে প্রবাসীরা প্রবাসে এতো কষ্ট করে দেশে তাদের সামান্যতম সম্মানটুকুও দেওয়া হয়না।
তারা দেশের জন্যে কি করেছে বা করেনি সেই তর্কে আমি যাবোনা।সেগুলো বলার জন্যে অনেকেই আছে।
কিন্তু প্রবাসীদের অন্তত মানুষ হিসেবে ভাবতেও বাংলাদেশের কিছু কিছু মানুষের আপত্তি দেখেছি আমি।
গত পরশুদিন এক ভিডিওতে ঢাকা বিমানবন্দরেই দেখলাম এক পুলিশ কর্মকর্তা কয়েকজন প্রবাসীকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।
এরকম আরো অনেক ভিডিও আছে।একজন প্রবাসীর দুর্দশা বাংলাদেশের যেকোনো একটা বিমান বন্দর থেকেই শুরু হয়ে যায়।
এটা-সেটা সমস্যাই ফেলে টাকা নেওয়া,ব্যাগেজ কেটে কিংবা খুলে জিনিস চুরি করা কিংবা যেকোনো প্রকারে হেনস্থা করা এসব প্রবাসীদের জন্যে যেনো বরাদ্দই থাকে!

কিন্তু কেনো?

প্রতিটা প্রবাসীই একেকজন যোদ্ধা।
প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় মানুষগুলোকে এই প্রবাসের মাটিতে।
যুদ্ধ বলতে যদি শুধু চাকরিস্থলের কাজটাকেই বুঝে থাকেন তাহলে ভুল করছেন।
চাকরি সেটাতো মামুলি ব্যাপার!
চাকরি করো পুরো মাসে।অতঃপর বেতন পেলেই নিজের জন্যে সামান্য যেটুকু না রাখলেই নয় সেটুকু রেখে বাকি পুরোটাই দেশে নিজের পরিবারের জন্যে দিয়ে দেই অধিকাংশ প্রবাসীই।নিজের পরিবারের সাথে রেমিট্যান্স সমৃদ্ধ হয় দেশটাও।
আবার কখনো কখনো দেখা যায় বিভিন্ন সমস্যা যেমন বিয়ে,ছেলের পরীক্ষার ফিস,পরিবারের কারো চিকিৎসা কিংবা অপারেশনের মতো এরকম নানাবিধ সমস্যা দেখা দিলে ধার করে হলেও টাকা দিতেই হয় একজন প্রবাসীকে।
টাকা দিতে না পারা পর্যন্ত মানুষিক এবং শারীরিক প্রচন্ড চাপ।সারাদিন পরিশ্রম করে এসে নিজের খাবারটা তৈরী করার মতো শক্তি অবশিষ্ট থাকেনা একজন প্রবাসীর।তবুও সবকিছু করতে হয় বেঁচে থাকার এবং পরিবারের মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদেই।
এমন অনেক প্রবাসী আছে দিনের পর দিন দেশে টাকা পাঠাতে গিয়ে নিজে অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে থাকে।
কিন্তু দেশে থাকা পরিবারের মানুষগুলোকে সেটা বুঝতেই দেইনা।
কতোটা কষ্টের এই জীবন দেশের মানুষগুলো সেটা কি কখনো বুঝবে?

রোজার ঈদ কিংবা কোরবানীর ঈদে এই প্রবাসীদের সবচেয়ে বেশী কষ্টের সময়।নিজের উপার্জিত পুরোটাই প্রায় প্রবাসী এইসময় দেশে পাঠিয়ে দেই পরিবারের মানুষগুলো যাতে ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারে।নিজের জন্যে বলতে গেলে অবশিষ্ট রাখেনা কিছুই।
তবুও হাসিমুখ গুলো মোবাইলে স্ক্রীনে হাসি হাসি মুখ করে বলে,ভালো আছি।ঈদে সেই মজা করতেছি।
সেই সময় মানুষগুলোর ভিতরের ভাঙ্গাচোরা এক উপরওয়ালা ছাড়া কেউ বুঝতে পারেনা।

একজন প্রবাসী বলতে গেলে নিজের পুরো জীবনটাই উৎসর্গ করে দেই পরিবার এবং দেশের জন্যে।

কিন্তু বিনিময়ে কি পাই?
ন্যুনতম সম্মানটাও কি পাই?

দেশের যে রেমিট্যান্সের দোহাই দিয়ে দেশকে উন্নত দাবি করে সেই রেমিট্যান্স তো এই প্রবাসীদের ঘাম-রক্ত ঝরানোর ফসল।
কিন্তু যখন দেখি সেই প্রবাসীদেরকেই অপমান করা হচ্ছে তখন সত্যিই মনটা ভেঙ্গে যায়।

বাকি সব বাদ দিলাম।অন্তত প্রবাসীদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিন।
প্রবাসের এতো কষ্টের মাঝেও সব প্রবাসী শুধু দেশে যাওয়ার দিনক্ষণ গুনে।দেশের টানে যখন মানুষগুলো দেশের মাটিতে পা রাখে তখন তারা যেনো নিজেদের নিরাপত্তাহীন অনুভব না করে এবং নিজেকে অসহায় না ভাবে এটা দেশের মানুষগুলোকেই নিশ্চিত করতে হবে।


বি.দ্র. - আবেগ থেকেই এই লিখাটি লিখেছি।কোনো ভুল-ক্রটি হলে মার্জনা করবেন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৪৫

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: যারা প্রবাসীদের সম্মান করে না আমার মনে হয় তাদের নৈতিক শিক্ষার অভাব আছে।
কিছু মূর্খ মানুষের জন্য মন খারাপ করবেন না।
নিজের স্বপ্ন পূরন করে দেশে ফিরে আসুন দ্রুত সেই কামনায় করি।শুভ কামনা সব সময়।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫২

আংশিক ভগ্নাংশ জামান বলেছেন: ভালো বলেছেন।
ভালোবাসা রইলো।
ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭

যোখার সারনায়েভ বলেছেন: সৃষ্টিকর্তা আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিক।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০০

আংশিক ভগ্নাংশ জামান বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভালোবাসা রইলো।

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমি প্রবাসীদের সম্মান করি।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৮

আংশিক ভগ্নাংশ জামান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
ভালোবাসা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.