নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা পড়িয়া রয় অবহেলায়, তাহা সমগ্রই আমার কী-প্যাডের, দূর্দান্ত গতি ছড়ায়। যদি কোন অন্ধ/বদ্ধ মনের দ্বার একবার খোলা যায়?\n

আসিফুজ্জামান জিকো

অাইন বিভাগ..

আসিফুজ্জামান জিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

শব্দচ্ছটা..

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪

হিমুর মত আমার কোন মাজেদা খালা নাই, তাই অত্যান্ত স্নেহে রাত বিরেতে আমার অতি স্নেহে গলে যাবার ও কোন সম্ভাবনা নাই।
হিমুর মত আমার কোন মাজেদা খালা নাই।তাই নগরীর ছোট্ট ছোট্ট ফুটপাত দিয়ে হেটে হেটে ক্লান্তি আর ক্ষুধা নিয়ে খালার বাড়ীর সামনে গিয়ে দাড়াতে পারিনা।

প্রায় মাঝরাত্তিরে পৃথিবী তখন শান্ত হয়ে আসে, চাদের আলো বাড়ির প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে ঢুকে। তেমনি সময়ে ডাইনিং টায় বসে খালার রান্না করা কলই শাকে চিংড়ী ভাজি, লাউয়ের মধ্যে শোল মাছ, আর শুকনো কালো ভুনা দিয়ে সাদা ভাত মেখে মেখে মাথা নীচু করে খেতে পারিনা। সামনে বসে খালা নিরন্তর কথা বলে যাচ্ছেন, কিছুই শুনতে পারি না। কার কথা যেন মনে পড়ে আমার?
সাদা লাল পেড়ে শাড়ীতে? মাদুরে বসে খাচ্ছি পাশেই বসে আছেন লোমশ বাবা টা, আচলের একপাশ মুখে কামড়ে ধরে একহাতে বাতাস করে যাচ্ছে খুব তৃপ্তি নিয়ে, তাকে আপন মনে হচ্ছে আমার, তবে আচলের কারনে চিনতে পারছি না?
ওটাই কি আমার মা ছিলেন? পাশেরটা বাবা?

হঠাৎ মাজেদা খালার কথায় আমার ঘোর কাটবে, কি রে তুই তো কিছুই খাচ্ছিস না? শুধু মিন মিন করে ভাত মাখাস?

প্রায় ভিজে ওঠা চোখ আর মনে একটু খুশি এসে জড়ো হবে? খালার কথা বার্তা যেগুলির ভিতর কিছু শাসন থাকে, সেগুলিতে তিনি শব্দের মিল ঠিক ঠাক মিল করতে পারেন না। মিন মিন করে কথা বলা যায়, ভাত মাখা যায়?


নীচু করা মাথা উচু করলেই খালার মুখেই আমার হারানো পিতা কিংবা মাতা কে পাই আমি? আমার কোন মাজেদা খালা নেই?


হিমুর আছে। হিমুকে চেনার বিশেষ উপায় আছে। ওকে একটা হলুদ পাঞ্জাবী দিয়ে গিয়েছেন উনি।
হিমুর থেকে বেশি রাত জেগে জেগে হাটি আমি। ফুটপাতেই কাটে আমার সময়। ক্ষুধা, দন্দ, কটাক্ষ্যের প্রত্যক্ষদর্শী আমারই রন্ধ্রে হেটে বেড়ায়। কুকুরটা শেষ ডাক দিয়ে ক্লান্তি নিয়ে রাস্তার টুংটাং শব্দচ্ছটা গুলো উপেক্ষা করে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে? হিমু জানেনা? আমি জানি..


হিমুর হলদে পাঞ্জাবী র পকেট উনি দেননি। অজস্র ভালোবাসা দিয়ে গিয়েছেন..

আমাকে দিয়েছেন কিছু শব্দ। তাতে কিছু বোধ আছে। সেগুলো কখনো হাসায়, কখনো ঝরায়, ভালোবাসতে বলে, ভেতরটাকে দুমড়ে দিয়ে যায়, অজস্র জলরাশিতে ভেজার তীব্র অপেক্ষা করতে হয়, আবার কাঠফাটা রৌদ্রে সবাই যখন আশ্রিত হতে চাইছে, আমি হয়তো পীচ রাস্তায় পোড়া মানুষগুলোর নির্ভেজালতায় মজে গিয়ে পুড়ে যাই। মন্দ লাগেনা। হলদে পাঞ্জাবীটা ও চাইনে।
ভেতরটাকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে উনি আমায়, তৃপ্তি আসে..

মাটীর সানকি ছিলোনা ঘরে। ঘুম ভেঙ্গে পানতা খেতে হবে। মন্দ হবেনা। কি জানি কোন খালা একবাটি মুরগীর মাংশ নিয়ে হাজির। পানতা দিয়ে গরম তরকারী খেতে কেমন?
ফিরিয়ে দিলাম!
দেখি ওনার চোখের মায়াগুলো অস্থিরতায় পড়ে গেলো। ফেরানো হলোনা। খেতেও মন্দ লাগেনি। তবে আমার খুব সযত্নের মরিচ পোড়া আর পেয়াজ কুচি গুলো অবহেলিত হলো। খুব সামন্য পাওয়া, তবে সে মুহুর্তে কোটি টাকা কিংবা এক আকাশ গলা জেৎস্না দামে ও ওটা র মূল্যমান আমি করতে পারিনা। পরোক্ষ্য ভাবে আমার এরাম পাওয়া গুলি, ওই লোক্টার ভেতর টেনে বের করার কৃতিত্ব।

আমার কোন মাজেদা খালা নেই, হিমুর ছিলো..


ক্লাস নাইনে তখন। এক বন্থু একটা বই নিয়ে এসেছে। টিফিন টাইমে না খেয়ে আধা ক্লাস বইটার উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। বইটাতে এ্যানী নামক একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে। কিশোরের নিষিদ্ধ কিছু ইচ্ছার বয়েস ওটা। সবাই হুমড়ী খাচ্ছে শুধু ওই দুইটা পৃষ্ঠায়। একফাকে বইয়ের নামটা দেখলাম- অমানুষ।


ক্লাস টেইন, এস এস সি পরীক্ষা চলে। সুশান্ত স্যার সর্বোচ্চ অবহেলিত শিক্ষক আমার স্কুলের। অবশ্য শুভ্র'র মতে সর্বোচ্চ অংক জানা মানুষটা। ওনার মত অনেক কম অংক জানা মানুষ আছেন। তবে আমার মনে হয় সর্বোচ্চ শুদ্ধ মানুষ ছিলেন তিনি। ওনাকে স্কুল থেকে বিভিন্ন ভাবে হ্যারাজ করা হতো। হঠাৎ করেই লাইব্রেরীর দায়িত্ব দেওয়া হলো। স্কুলের পাশেই আমার বাড়ী। দুপুরে খাবার পর স্যার ডেকে বলে গেলেন, লাইব্রেরীতে আসিস তো জিকো পাচটায়? ত্রিশ মিনিচের কাজ আছে। সকালে ছিলো এস এস সি পরীক্ষা, রসায়ন।


গেলাম, বইয়ের তাকে বই সাজালাম। নতুন বইয়ের যেমন একটা ঘ্রাণ থাকে, পুরোনো স্তুপে ও একটা গন্ধ রয়েছে। দুটোই টানে দু'রকম।


আসার সময় স্যার বললেন, বই লাগলে সাইন করে নিয়ে য়া। কি বই নিবো দেখছি। স্যার একটা বই এগিয়ে ধর্লেন, সেইটা ছিলো ওই ধর্ষিত মেয়েটার অমানুষ..

স্যার কি জানেন? এ বইয়ে কি আছে? হাত কাপছিলো? জানেন না বোধহয়? নিলাম স্যারের হাত থেকে।


বাড়ি ফিরে সোজা ছাদে উঠলাম, পড়া আরম্ভ কর্লাম।

পরদিন সকাল নয়টা। মা খাইয়ে দিচ্ছিলো, আর রসায়নের নৈব্যাত্তিক গুলো পড়ে শোনাচ্ছে। ওসবে কান যাচ্ছে না আমার। এখনো সতের পেইজ পড়া বাকি? এ্যানী নামের ধর্ষিত মোয়েটার জন্যে হু হু করে ডাইনিংটায় কান্না পাচ্ছে বুকের মধ্যে। মায়ে'র সামনে কাদা যাবেনা।


নয়টা পচিশে বাড়ি থেকে বের হয়েছি, ছয় পাতা তখনো পড়া হয়নি। হলের মধ্যে ঢুকেছি, সবাই তুমুল লিখে যাচ্ছে। চারপাশে খস খস কাগজ কলমের শব্দের সাথে শুধু স্যারের জুতার বুককাপানী শব্দ। স্যার দরজার পাশে গেলে সবাই গুণ গুণ গান গাইছে , তবে এখনকার মত অতটা নয়?


আমি কি লিখছি জানিনা, তবে লিখছি ব্রেইন যে মেসেজ দিচ্ছে। নৈব্যাক্তিকের সময় আসন্ন, একটা প্রষ্ন বাকি, খুব জানা উত্তর, মাথায় আসেনা- আসেনা। ব্রেইন আমার হাল ছাড়তে অভ্যস্ত না কোনদিন। না জানলে নিজেই কিছু তৈরী করে দেয়।

ওদিন আর কিছুই করতে পারেনি, বার বার এ্যানী নামের মেয়েটি দেখতে কেমন হবে সেটা একে দেখার চেষ্টা করছে?
শেষ দুই মিনিটে বুঝলাম, আমি মেয়েটির প্রেমে পড়েছি...


আমি লিখতে পারিনি, আমি গোটা রাত শুধু ওটাই পড়েছি।
ওনার ওনার প্রথম বই ছিলো। তারপর দস্যু আমারে কে আটকায়?


তার অনেকদিন পর, তার অনেক দি ন পরে,, তাহারো ক্ষণকাল পরে এসে তামাকের বীষে, উনি আর নেই... নেই.. আমার মন খারাপের রাত্রিরে আসমানের গলা জোৎস্না কিংবা মেঘবতীর ঢল হয়ে উনি আর আমবেন না?
এ ভাবা যায় না, এর কোন মানেই হয়না স্যার?

জন্মদিন,
জানেন তো, আমার সব কিছুতেই দেরী হয়ে যায়।অাপনি ভালো আছেন জানি আমি। শুধু বৃষ্টি, জোৎস্না, আর সবুজ ধরতে পারেন না। আপ্নার সবুজে কত আগন্তুক নিজেকে ফিরে পাবে।

আপনি রইবেনই..
রইবেনই..

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.