নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা পড়িয়া রয় অবহেলায়, তাহা সমগ্রই আমার কী-প্যাডের, দূর্দান্ত গতি ছড়ায়। যদি কোন অন্ধ/বদ্ধ মনের দ্বার একবার খোলা যায়?\n

আসিফুজ্জামান জিকো

অাইন বিভাগ..

আসিফুজ্জামান জিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় ফুটপাত..

২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪১

সংকীর্ণ ঢাকা দেখায়, একটু ফাকা ফাকা।
ফুটপাতটাতে আড়মোড়া ভাঙ্গার শব্দ। শান্তি ছড়ানো মায়াময় ফুটপাত।না দেখলে বোঝাই যাবেনা ডাস্টবিনের পাশে এত মায়ার বসতি।


রাত্রি সাড়ড়ে তিনটে, রোযার অর্ধেক।
কেউ কেউ সাদা পলিথিনে জমিয়ে রাখা টোকানো খাবার খাচ্ছে। নানা রকম খাদ্যের বিভিন্ন রং মিলে মিশে পলিথিনটাকে তাজা জলরং মিশ্রিত তরলের মত দেখাচ্ছে। একমাত্র যার জানা আছে, শুধু সেই বুঝতে পার্বেন ওটা কি? পলিথিনের ভেতরে, দুপুরে ভাজা চপ, জিলাপী, প্রায় গলে যাওয়া কলা, আঠালো বিরানী এবং আধ খাওয়া রোস্টের টুকরো, সাদা ভাত আর ঝোলের মিশ্রণ, অনেকগুলো কাচা ঝাল, খোসা ওয়ালা পেযাজ, অর্ধেক টমেটো কয়েকটা, আর হয়তো ভ্যাবসা বাসী খাবারের গন্ধ।
কি নেই এই প্যাকেটে ?

খাবারের উপস্থিতিই বলে দিচ্ছে, কিছু খাবার চেয়ে আনা হয়েছে, কিছু কমিউনিটি সেন্টারের পাশ থেকে তোলা, কিছু সাধারন হোটেল থেকে পাওয়া আর কিছু রাজধানীর যে কোন পড়ন্ত কাচাবাজারের দান। ওদের সম্ভবত তিনজনের পরিবার। সমবয়সী ওরা। একজন নারী, দুজন পুরুষ। মতিন বাবু অনেক চেষ্টা করেও ওদের মধ্যেকার সম্পর্ক আন্দাজ কর্তে না পারছে না। ওরা খেতে আরম্ভ করেছে। প্রত্যেকটা জিনিসকে তিনভাগ করা হচ্ছে, কাচামরিচ বাদে। ওরা সম্ভবত পেয়াজের খোসা না ছিলেই কামড় দিচ্ছে। তবে খাবারের প্রতি ওদের কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছেনা।


( এই পরিবার টি ফুটপাত সমাজের অলস পরিবার। ইহারা কর্ম না করিতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। অতিশয় দূর্বল, রোগা প্রকৃতির। এরা জগৎ পৃথিবী সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরানন্দ এবং নিরুৎসাহিত। এদের ক্যাপশন হবেঃ অপুষ্ট তিনজন )


ঘোমটা টানা বৃদ্ধা ছোট ছোট আলো চুলোতে জাল দিচ্ছে, কারো কারো ঘুমের রেশ ই কাটেনি, হাটু মুড়ে আগন্তুকের চলফেরা দেখছে নাকি চোখবন্ধ বোঝার উপায় নেই। বাচ্চাগুলো বোতলের পানি চোখে মুখে ছেটাচ্ছে, কেউ কেউ আঙ্গুল মুখে দিয়ে এক নাগাড়ে দাতের উপর ঘষে যাচ্ছে আর আমার অনাকাঙ্খিত চাহনী তে চোখ মেলাচ্ছে।


আর কয়েকজন, একা কিংবা দলবদ্ধ হয়ে এমন ঘুমে মগ্ন, বড় বড় হিনো-টাটা গাড়ীগুলোর শহর কাপানো হর্ণগুলো কানের কাছে চেপে ধর্লে ও ওদের ঘুমের কিচ্ছু হবে না। এবং কাছে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করিলে আপনি দ্বিধায় পড়বেন! মুখায়ববের হলদেটে ভাব দেখিয়াই আনমনে বলিয়া উঠিবেন, তাহারা ঘোরতর জন্ডিসে আক্রান্ত।


দ্বীতীয় ধাক্কাটা লাগবে যখন- উহাদের শ্বাস- প্রশ্বাস চলছে কি চলছে না বহু চেষ্টা করে ও বুঝবেন না। মুখ গুলো হা হয়ে আছে- মশা গুলো রক্ত চুষে ফুলে ঢোল হয়ে উড়তে পারছে না। মাছি, পিপড়া কিংবা নাম না জানা পোকারা অনায়াসেই ওদের দেহের বিভিন্নস্থানে ট্রেসপাস ( অনধিকার প্রবেশ) করে চলেছে। কারো কারো আবার হা হয়ে যাওয়া মুখেই পোকামাকড় ঢুকে যাচ্ছে। মাথার নীচের মাম কিংবা ফ্রেশ পানির বোতল গুলো ঠিক ঠাক পজিশনে নেই। তখন আপনি ওদের মৃত ভাবিয়া ভুল কর্লে ও করতে পারেন, ঠিক মতিন বাবু ৩২ নাম্বারের ফুটপাতে যেমনটি করিয়াছিলো।


( এই পরিবারেরর সদস্যেরা, ঘুমন্ত কিংবা জাগ্রতবস্থাতে ও সেন্সলেস প্রজাতীর হয়ে থাকে। গায়ের উপর দিয়ে চাকা গেলে ও ওরা শব্দ করেনা। এরা অধিকাংশ ই বেওয়ারীশ লাশ হিসেবে নিজের জীবনাবসান ঘটান।- সেজন্যে বাবু এদের পরিবারের নাম দিয়েছে - বেওয়ারীশ পরিবার।)


আর পাশেই একটা গ্রুপ গোল হয়ে বসে আছে। এনারা সম্ভবত সিদ্ধি সেবনের পায়তারা আটিতেছেন, কোন রাক ঢাক ছাড়াই। রবী ঠাকুর এবং লালনের মতই কেশশ্রী দেখা যাচ্ছে এখানে। সম্ভবত শেষ কবে এরা নরসুন্দরের ক্ষেউরী কর্ম সারিয়াছেন বলা অতীব দূরুহ। দু এক জনের দাড়ী আর চুলের অভিতপূর্ব মিলন ঘটার ফলে ওষ্ঠ ছাড়া কোন কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। এরা পরিবার প্রদত্ত নামগুলো হারিয়ে ফেলেছে স্মৃতির অতলে। ইহা সত্যি অত্যাধিক ক্যানামিস
(গাজা) আসক্তিতে, স্মৃতির বিচ্যুতি হয়।
এদের দিকে কারোর ই খেয়াল নেই। আর ওরা এই মুহুর্তে শুধু সিদ্ধিতেই তাহারা সিদ্ধ হতে চলেছেন।


প্রিয় ফুটপাত এখন ঘর-কন্যার কাজে ব্যাস্ত। ফুাটপাতে ও শ্রেণী আছে মনে হচ্ছে। এ সমাজেও শ্রেণী থাকবে- মতিন বাবু বিশ্বাস ই করতে পারছেনা। তবে এইটা নতুন অভিজ্ঞতা। সেই কালো টিনটিনে মুরুব্বীটা এসে উচ্চস্বরে কোন কমাণ্ড করলো, আঙ্গুল দিয়ে সরে যেতে বলছে হয়তো। ওরা সম্ভবত চাচাকে ভয় পাচ্ছে। হ্যা, স্লো মোশনে ওরা একটু দুরে গিয়ে আবারো সেই বৃত্তে বসে পড়লো। ওরা একই বৃত্তে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনা- ওদের ইচ্ছে করেনা বোধহয়। করতে ও পারে। মতিন বাবু ঠিক বুঝতে পারছে না। সব বুঝতে হবে এমন কোন কথা ও নেই।


এই বৃত্তের সবগুলোই ফুটপাত সমাজের ভবঘুরে, ভাদাইম্মা, আকাইম্মা, নিষ্কর্মা বেকার এবং অচল। সভ্য সমাজের মতো এখানে ও তিরস্কার পদ্ধতি চালু আছে। এবং এদের মেধার বিকাশ হয় না বলে বাবু স্বীয় মনেই একটা দীর্ঘশ্বাস অনুভব করিলেন। শুধুমাত্র লিখতে বা পড়তে জানে না বলেই এই শ্রেণীরা, স্বীয় ঘটানো কাজ কর্ম, আমানবিক আচরণ, লৌহমর্ষক বাস্তব অভিজ্ঞাতা এবং জীবনের তিক্ততা প্রকাশ করিতে পারে না- আমরা ও জানিতে পারিনা। এদের এই অভিজ্ঞতা, কৃত কর্ম, এবং এরা নিজেরাই সমাজ কে সচতন হবার মেসেজ দিতে পারতো দৃড় ভাবে। অন্ধকারে হাটার পরিণতি ক্যামোন, উহারাই তাহার মডেল। আর কেউ জানি এ পথ না মাড়ায়। হলোনা..


এক বুক আফসোস নিয়া বাবু কহিয়া উঠিলেন, বুঝিলে চা দোকানী ভায়া,, এরা যদি লিখতে পারতো, বলতে পারতো এদের প্রত্যেকের প্রতিদিনের যেসব বাস্তব অভিজ্ঞতা তৈরী হয়, সেগুলা একেক্টা হলিউডি অস্কার পাওয়া মুভিকে ও হার মানাইতো সেকেন্ডের মধ্যে ! আমরা শিখতে পার্তাম।

দোকানীঃ হ্যা মামা কি বলিলেন?

-বাবুর সৎবিৎ ফিরিলো, কিছু না বলিয়াই দোকানীর দিকে মিষ্টি একটা দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেন।

দোকানীঃ মামা চা চাইছেন না সিগারেট??

-গুল্লীফ বলিয়াছি।

ধরাইতে ধরাইতে, ফুটপাত রাজ্যে বাবুর দৃষ্টি আবারো নিক্ষেপিত হইলো।
পাতলা টিনটিনে চাচাটা বারবার সাদা একটা টুপিতে ফু দিচ্ছে আর আমার দিকে তাকাচ্ছে। টুপি পরবে কি পরবে না বুঝতে পারছে না। বাচ্চাগুলোকে ধমকাচ্ছে । বাচ্চারা সরে যাচ্ছে। চাচাই সম্ভবত এই ফুটপাত সমাজ প্রধান, রাজা, দলপতি, কিংবা প্রধানমন্ত্রী। কিংবা আপনি যাহা মনে করেন।
মুরুব্বী সম্ভবত জামাতে যাবেন। পাশের চাকচিক্য ভরা বহুতল মসজিদের আলোর আভা এসে পড়েছে চাচার ফুটপাত সাম্রাজ্যে। নীচতলায় দশবারোটা মুসল্লী বসে আছে। উপরের তিন, চার তলাতে লাইট এবং ফ্যান গুলো চলে নিরন্তর, তবে কোন মানুষের অস্তিত্ব দেখা যায় না। দোতলাটা অন্ধকার।


এত কাছে মসজিদ তাই চাচা হয়তো নামায মিস করেনা বলেই বাবুর মনে হচ্ছে।
সবাই তো আর আমার মতন না, ঘরের বের হলেই মসজিদ, তবুও কোনদিন ঢুকেই দেখিনি ! মাঝে মাঝে নামায শেষ হওয়া মুহুর্তে বাবু বাসায় ঢুকতে বা বেরুতে গেলে, লজ্জা পেয়ে যায়। তখন পাড়ার মুসল্লীদের এক প্রকার রাগান্বিত চাউনী আর বাবুর স্বীয় লজ্জা মিলে মিশে, এক প্রকার পাপবোধের উদ্রেক ঘটে মনে। উর্ধশ্বাসে গলিটা পার হয় বাবু, যেন কেউ তাড়াচ্ছে। মানুষের চাউনীর শক্তিটা বোঝা যায় তখন। আর পাপবোধ দুর কর্তে তৎখনাৎ ই হেডফোন গুজে নেন কানে। আশ্চর্য হলেও হেডফোনটা বাজতে আরম্ভ করলে বাবুর পাপবোধেরর স্থায়ীত্ব এক মিনিট ও সময় নেয় না। এই হেডফোন থিওরী টি বাবুর জন্যে এক মহাঔষধ। যে কোন পরিস্থিতিতিকেই বাবু হেডফোন থিওরী তে স্ব নিয়ন্ত্রণে আনিতে পারেন।


" গানগুলো বেচে থাকুক, সুর গুলো প্রাণে প্রাণে ছড়িয়ে যাক, রুক্ষ প্রাণ গুলো কোমল হোক " - আনমনেই বিড়বিড়াচ্ছেন বাবু..


হারিয়ে যাওয়া বাবু হঠাৎ করে, আবারো চোখ ফেরালেন ফুটপাতে, দেখলেন,
বহুক্ষণ অপেক্ষার পরে দলপতি নিজ হাতে ধরে রাখা এবং মাঝে মাঝে ফু দিতে থাকা টুপিটি মাথায় সেট করতেছেন। গায়ে একটা শতচ্ছিন্ন স্যান্ডো গেন্জী- ইহা পরিয়া তিনি কিভাবে জামাতে যাইবেন ? বাবু বুঝতে পারে না!


দোকান থেকে বাবু দুইটা সিগারেট নিয়ে সোজা ফুটপাত পার হয়ে, টিনটিনে লোকটার সামনে দাড়াইলেন।
চাচা, ক্যামোন আছেন ?

-ভালা (একটু সময় নিয়ে, রাগের সাথে)

নামাযে যাবেন?
-না!

টুপি পরেছেন কেন?
-টুপিডা পাইছি রোডেত
(রোডে টুপিটা পেয়েছে)

সিগারেট টানবেন?
-না

ক্যানো, নেন, ধরান ?
( আস্ত এবং জলন্ত সিগারেট দুইখানা একই হাতের চার আঙ্গুলের মাঝে গুজে ফুটপাত রাজার দিকে বাড়িয়ে ধরেছেন বাবু।)

-ফুহহহহহহহহ
( এবারো সময় নিয়ে, একটা মুখে ধরে আরেক্টা দিয়ে জ্বালিয়ে টান দিয়ে ধোয়া ছাড়িলেন গম্ভীরতার সাথে)

নামাযে যাবেন না ক্যানো ?
-মসজিদিৎ ঢুক্তি মানা
( মসজিদে ফুটপাত বাসীদের ঢুকতে দেওয়া হয়না- ইহা নতুন কিছু না- পুরোনো। একমাত্র বড়লোক, অর্থবান, ক্ষমতাধারী, কিংবা সুশীল, সুশ্রী অথবা আতরের গন্ধে ভরা ভালো পোশাক পরিধান কারীরাই, আল্লাহকে ডাকবে, আল্লাহর ঘরে ঢুকবে- এমনটাই কি নিয়ম এই শহরে ? )

রোযা রাখেন?
-নাহহহহ ( প্রচণ্ড ভারী রাগী কন্ঠে )

তাহলে সবাই উঠেছে কেন?, এই যে রান্না হচ্ছে- এগুলো ত সেহরীর জন্যেই না ?
- না, এগ্লু বাইচ্চাগুলোনের জইন্যে!
বুঝতে পারিনি চাচা?

-ওগো এ্যাহন গেলামু, হ্যারপরে রোডেত পাডামু, হ্যারাদিন টোকাইবো, ফির্তি মানা আছে, ফির্লি ওরা খাওন চাইবো, তাই বুলা আছে, রোযার দিনি হ্যারাদিন টোকাইবি, রাস্তাথন ইফ্তারী সাইরা এলবি, রাইতে হুদু পাকামু, তহন আইয়া খাইবি ! হ্যামরা দু এক দিন না খাইলি ও আওয়াজ অইতো না, ছুড়া গুলোন ক্যাচায়, হ্যামনের পরে কষ্ট থাকলি ভালা লাগেনা।
( দলপতির কন্ঠ খুব নরম শোনাচ্ছিলো ক্যানো ?)

(রোযার সময়ে বাচ্চাগুলোরে সকালে বস্তা সহ ছেড়ে দেওয়া হয়, সারাদিন এই ফুটপাত রাজ্য ঘেষতে মানা, আসলেই ওরা খাবার চায়। তাই এই বিশেষ কৌশল। এই কৌশলের উদ্ভাবনকারী ফুটপাত রাজাটি ও অনেক অভিমান চেপে রেখে, মিথ্যে মুখায়বব করে কঠিন হতে হয়। মনে মনে সে ও চায় ওরা একসময় প্রতিদিন পেট ভরেই খাবে, তবে,

বাস্ববতা আর প্রকৃতি ফুটপাত রাজার ইচ্ছে পূরণ করেনা। ওদের ও তাই কোনদিন ই হয়তো পেট পুরে খাবারের অভিজ্ঞতাই হয়না )

yes, its Bangladesh !


সম্ভবত ফুটপাতের বৃদ্ধাটি সদ্য রান্না করা খিচুড়ী প্লাস্টিক প্লেটে বেড়ে দিচ্ছেন। একচামচ আর অর্ধেক। পরিমাণ টা দৃষ্টি কাড়লো।প্লেটের তিনভাগ ই ফাকা থাকছে। আমার বাসায় এক পিচ্চি আছে।আমি ওকে নিহাল দি খাদক বলে ডাকি। ওর চার পাচ লোকমা ভাত হবে প্লেটে। খাদকের সাথে ওদের বয়সে পার্থক্য এক কি দুই ।শুধু দেহের পার্থক্যটাই চক্ষুগোচর হচ্ছে সহজেই। থলথলে মাংসল শিশু বনাম জিরজিরে বুকের হাড্ডি বের হয়ে থাকা টোকাই।


( ওদেরকে শিশু কিংবা বাচ্চা বলিলে, ভয়ানক রকমের উপহাস করা হবে, টোকাই শব্দটাতেই ওদের স্বকীয়তা বোঝা যাবে)


সাদা সাদা চটের আবার কেউ কেউ পাটের বস্তা কাধে নিয়েই খেতে বসিয়া গেলো। একজন নতুন মানুষের উপস্থিতিতে ওরা কিঞ্চিৎ পরিমাণে ও বিব্রত নয়। এটাই ওদের দিনের প্র্রথম ও শেষ খাবার। রাস্তা ভাগ্য ভাল হইলে কারো কিছু জুটিবে- আর কারো কারো আবারো সেই কালী বালী সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।


চাচী, এইটা কি রান্না করেছেন?
-ঘুটা। ( চাচার দিকে তাকাচ্ছে )

এ তো খিচুড়ী, হলুদ রংয়ের যে ?
(চাচী হাসলেন না কি করলেন ধরা গেলো না, কাপড়ের কোনাটা গালের মধ্যে চেপে দিলেন)
-চাইলের মইধ্যে হলদি আর লোন
(হলুদ আর লবণ ) ছাইড়া জ্বালাইছি যন্নি (জন্যে) ইরাম দ্যাহায়।

এদের বাবা মা কই?
-নাহ, এগার কেউ নাই। গ্যাদা গ্যাদা তা খুইটা আইনছিনু বিটাডা -
( ফুটপাত রাজা বিভিন্ন সময়ে ফুটপাত ও আশে পাশের থেকে যেসব বেওঢারীশ ফেলে রেখে যাওয়া বাচ্চা গুলো পায়, ওরাই এখানে বড় হয়।)

পায় কোথায় এদের?
-অবাব নাই, জন্মালি পরে ফেলি যায়, মইরতে ন দিতো মন চায় !



রাজপথ গুলো চরিত্রহীন।
কখনো মায়াতে জড়ায়,
কখনো ঘৃণাতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।


( এই ফুটপাত রাজার কোন এনজিও নেই, কোন তেলের খনী কিংবা গার্মেন্টস কোম্পানীর কিয়দাংশের মালিক তিনি নন, অথবা এই রাজা কোন ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার নন, নন কোন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট - তবুও তিনি রাজা- মনের রাজা)


বাবু আর কিছু ভাবতে পারেনা, চাইছে ও না ভাবতে, শুধু রাজার কলিজাটা কতখানি বড় হতে পারে সেইটা আন্দাজ করতে করতে পথ পেরুচ্ছে...


ইহা কোন গল্প নয়- রাজপথের সত্যি। আমাদের ডিজিটাল আর আধুনিক ২০১৫ সালের ঢাকার রাজপথের সত্যি।


" জন্মালী পরে ফেলি যায়
মইরতে ন দিতো মন চায় "


কেউ ফেলে যায়- কেউ কুড়িয়ে নেয়,
কেউ ছেড়ে যায়- কেউ মায়ায় জড়ায়।
প্রকৃতি শূণ্যস্থান পছন্দ করেনা।

জিকো
কলাবাগান
০৩:৩০ রাত্রি
৩০.০৬.১৫

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০৭

আসিফুজ্জামান জিকো বলেছেন: প্রিয় ফুটপাত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.