নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা পড়িয়া রয় অবহেলায়, তাহা সমগ্রই আমার কী-প্যাডের, দূর্দান্ত গতি ছড়ায়। যদি কোন অন্ধ/বদ্ধ মনের দ্বার একবার খোলা যায়?\n

আসিফুজ্জামান জিকো

অাইন বিভাগ..

আসিফুজ্জামান জিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

একুশের প্রথম দিন আজ..

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১৬

আমার স্কুলে একটা ছোট্ট শহীদ মিনার ছিলো। এখনো আছে। গেইট দিয়ে ঢুকলেই ডান হাতে ওটা। আমার চেয়ে দুই তিন ফুট উচু আর বড় করবী ফুল গাছে ছাওয়া।

ওটাই আমাকে বাংলাদেশ বানাইসে, আমি বিজাতীয় হতে পারিনি কখনো। প্রভাত ফেরীর ভোর রাতে মিনারের মাইকের শহীদ আলতাফ মাহমুদের সুরের সেই টান... আ আ আ আ আ আ.. আমার বিছানা থেকেই শোনা যেত?
মাত্রই তো পঞ্চাশটি পা, স্কুল, মাঠ থেকে আমার বাড়িটা?

অন্যান্য দিনে বাবা জোর করে ঘুম থেকে টেনে তুলে টেবিলে বসিয়ে চলে যেতেই আমি বিছানায় ফেরৎ আসতাম। মা কে অন্তত ঘুমের ব্যাপারে ভয় হতোনা, নরম তো, সে মা?
কিন্তু একুশের ভোরে কিভাবে আমার ঘুম হাওয়া হয়ে যেতো? বিছানায় এপাশ ওপাশ করতাম?
বার বার বিছানা ছেড়ে নিজ হাতে বানানো তোড়া শুকে শুকে দেখতাম। কোন শব্দ হলেই বিছানায় এসে লেপ কম্বলের নীচে ঢুকে যেতাম। ঘুম হতোনা!

ঝামেলা হতো বাবা। ওনার সাথে স্বাচ্ছন্দ্য ছিলাম না কোন কাজেই। ওনার স্কুল আমার স্কুল একই ছিলো! কাজেই আমাদের মিনার টাও ছিলো এক।
উনি আগে বের হতেন, কোন কোন বার আমি। উনি উঠেই যে কাজ টি করতেন, আমায় না বলেই আমার তোড়া থেকে টুপ করে একটি ফুল তুলে নিতেন? ওটিই সেরা ফুল ছিলো তোড়ার, কখনো গোলাপ, কখনো বিশুদ্ধ হলুদের সূর্যমুখী। অন্তত আমি ভাবতাম ওটাই সেরা ফুল।

বাবা শুধুই দিতো আমাকে, আজো দিচ্ছে, এটা নিয়ম। ওই এক দিনেই উনি কিছু নিতেন। আমার কষ্ট লাগতো, তবুও কিছু বলা হতোনা। বের হতে হতে বলতেন, খালি পায়ে বের হবি?
রাগ লাগতো আরো, আমি কি জানিনা?

অদ্ভুৎ ব্যাপার একুশ আসে শীতের সাথে। এখনের শীতের সকাল রাত জাগা চোখে কখনো দেখি? তবে সে আগের মত স্নিগ্ধ লাগেনা আর? নাকি বয়স টাও একটা ব্যাপার?
মাত্রই সকালে প্রাইভেট পড়ুয়া এক ছাত্রী কুয়াশার সকালের ছবি দিয়ে বললো, শীতের সকালে প্রাইভেট পড়ার মজাই আলাদ?
আমারো ভালোলাগতো ওর বয়সে। তার মানে স্নিগ্ধতা দেখার একটা সময় থাকে? সকাল গুলো এখনো স্নিগ্ধতা নিয়েই নেমে আসে?
আমাদের তা দেখা হয়না।

যাক সে কথা, নিয়ম ছিলো আযানের আগেই বাড়ি ফিরতে হবে। বাইন্ডিংস, কোন ব্যাতিক্রম হলে সাজা মাফ হবেনা?
তবে বছরের চারটে দিন ও নিয়ম আমায় আটকে রাখতে পারতো না?
দুটো ঈদের দিনে আমি রাত করে ফিরতাম,
দূর্গা বিসর্জনের রাতে আমি কালীবাড়ীর পুকুরে কিংবা নবগঙ্গায় দেবীর বিসর্জন না দিয়ে ফিরতাম না। আরেকটা বিশ ফেব্রুয়ারীর ফুল দস্যু হবার রাত?

অাশ্চর্য জনক ভাবে বাড়ির রুলস ভাঙ্গলেও আমাকে ওরা কিছুই বলতো না। উল্টো মা সাথে বসে বসে অনেকক্ষণ ধরে সাজিয়ে দিতো ডালাটা। বাড়িতে ফোটা গাদা আর গোলাপের মালিক ছিলেন মা আর মেয়ে! তাই কখনোই আমি মিনারে দেবার ফুল খুব সহজেই পেতাম না।

ওটা একটা নেশা ও বলতে পারেন, প্রচন্ড মাদক এল এস ডির ও সাধ্যি নাই একুশের ফুল খোজার সে নেশার ধারে কাছে যায়?
ওটাই আমার প্রথম চুরি বোধহয়?
ফুল চুরি? আশে পাশের কয়েকটা জনপদে চলে গেসি বন্ধুরা মিলে? কখনো ভিন গ্রামে গিয়ে গেরস্থের তাড়া?
কখনো কখনো হিন্দু বাড়িগুলোর কর্তারা ডেকে নিয়েই উজাড় করে দিগো রক্ত গাদা, থোপা থোপা হলুদ গাদা।

দ্যাখেন না, একুশ আশেই বলেই শীত আসে,
সি অফিসটার বুড়ো পলাশ গাছটায় এখনো লালের চূর্ণ ভাসে? প্রকৃতি দু হাত ভরে ফুল রং গন্ধ ঢেলে দেয়, বাংলা বর্ণমালার সম্মানে?
আমার তাই মনে হয়।

ছোট্ট মিনারের সবচেয়ে খারাপ অনুভূতী ও আছে আমার। বেলা বারোটার দিকে যখন ফিরে আসে সবাই, এক ঝাক ছেলে দাড়িয়ে থাকতো, মুরাদ স্যার বেত হাতে লাইব্রেরী তে ঢুকতেই ওরা মিনারে জমে থাকা ফুলের স্তূপ গুলো কয়েক মিনিটে লুটেরা দের মতো, ছিড়ে কুড়ে, টেনে হেচড়ে নষ্ট করে দিতো?
কি মজা পেতো আমি জানিনা?
তখন মনে হতো, বয়সে আমার বড় না হলে প্রত্যেকটাকেই আমি মারতাম ইচ্ছে মত?

ওরা চলে গেলে মিনারের দিকে চাইলে আবারো মন ভালো হতো, গাদা গাদা ফুলের বিশুদ্ধ রং টা ঢেকে রেখেছে মিনারকে, যেন জলরং করা কোন বড় থ্র্রি ডি স্ক্রীন। রং ছড়াচ্ছে, দুপুরের হলদে রোদে নানান ফুলের মাদকতা...

খালি পায়ে হেটে হেটে যখন স্কুলের গেইট পার হয়ে বাড়ি যাই, তখনো আমার গায়ে কাটা দিয়ে যায়, ক্রাক প্লাটুনের শহীদ যোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের অবিষ্মরণীয় সেই সুরটা,

আমি কি ভুলিতে পারি,
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু,
গড়া এ ফেব্রুয়ারী,
আমি কি ভুলিতে পারি...

অনুভূতিকে লিখে প্রকাশ করা যায়না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৪২

আসিফুজ্জামান জিকো বলেছেন: কেউ কিছু লেখেনি??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.