নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা পড়িয়া রয় অবহেলায়, তাহা সমগ্রই আমার কী-প্যাডের, দূর্দান্ত গতি ছড়ায়। যদি কোন অন্ধ/বদ্ধ মনের দ্বার একবার খোলা যায়?\n

আসিফুজ্জামান জিকো

অাইন বিভাগ..

আসিফুজ্জামান জিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

গতবার সে, এই বার কে?

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:১৫




লেখাটা ছিল ২০১৫ র এই দিনে।
২০১৬ তে এসে আরো কটা প্রতিমা বিসর্জন যাবে?
জানলে বলে যাবেন?
আমায় হিসেব রাখতে হয়!

#বালিকাটির_গল্প


কয়েকদিন আগে খুব ভোরে ফোন টা বেজে উঠলো। ঐ সময়ে সাধারণত কেউ ফোন ধরে নাহ, আমি ও ধরি নাহ। তবুও কিছু কিছু জিনিস উপেক্ষা করা যায় না। তার মধ্যে এক্টা হচ্ছে বাল্য বন্ধু...

ডাঃ Suvro Saikat ওরফে হুমায়ুন আহমেদের আনিস ডাক্তারের ফোন, কিভাবে না ধরে থাকি... ফোন রিসিভ করে আড়ষ্ট গলায় বললাম...

ঃ বল ভ্যাড়ভেইড়ে (ওর নিক নেম)..
ও যথারীতী ওর স্বভাব সুলভ দূর্দান্ত মোবাইলীয় গতিতে বলে গেলঃ জামাল,
( আমার নিক নেম ) এক্টা মেয়েকে রক্ত দিতে হবে ইনস্ট্যান্টলী, নাইলে বাচানো যাবে নাহহ, তোর রক্তের গ্রুপের সাথে মিল আছে, এই ভোরে রক্ত ম্যানেজ করে দিতে গেলে বাচবে না মেয়েটা...
( ও এক নিঃস্বাসে বলছে)

...আমি কথা বাড়ালাম না, বললাম কোথায় আসবো ?
ও বললো ঢাকা মেডিকেলের ৩০৫ নাম্বর বেডে আয়,
মিনিট পয়তাল্লিশ আছে আমার ডিউটি, প্রব্লেম নাই, তুই কিছু খেয়েই আয়, তবে ঢিলেমী করিস নাহ.. তুই তো ঢিলে..

আমি পকেট, ড্রয়ার মানিব্যাগ টোকাইয়া শুধু ঢামেক যাবার রিকশা ভাড়াটাই পাইলাম, কিছু খাওয়া হল না.. খাবার কথা ভাবছি ও নাহ, ভাবছি হালার ডাক্তারের কথা..
মাইনষে ডাঃ হইয়া কাড়ী কাড়ী টাকা বানায়, আর আমার বন্ধু ডাঃ নাকি বেতনের টাকা থেইকা রোগীদের ঔষুধ কিনে দেয়...
হা হা হা, এক্সেপশন এভ্রিহয়্যার..

... যাই হোক, রক্তদেবার আগে, কি কি সব যেন চেক করে নেওয়া হয়.. আমার রক্ত ও চেকিং এ পাঠানো হইছে.. আমি ডাঃ পকেট থেইকা বিড়ির প্যাকেট বের কইরা ধরাই দিলাম.. ডাঃ এক্টু বিরক্তি নিয়ে সিগারেট নেভানোর কথা বলতে চাচ্ছে হয়তো, তবে বলছে না। জানে বলে কোন লাভ হবে নাহহ... হা হা

রক্ত পর্ব শেষ। ডাঃ কে বললাম যারে রক্ত দিছি, তারেই তো দেখলাম না। বললো চল.. মনে মনে নিজেকে হিরো হিরো ভাবছি.. যাকে রক্ত দিলাম তারা তো সমীহ করবে.. খুশি খুশি মনে ডাঃ রের সাথে সিড়ি বেয়ে উঠছি... প্রথম ধাক্কাটা খেলাম পেশেন্ট আই মিন বালিকাটিকে দেখে.. প্রতিমার মত সুন্দর মেয়েটা.. ঘুমিয়ে আছে না মরে গেছে বুঝতে পারছি নাহহহ। সামান্য শ্বাস প্রশ্বাসের ও কোন ওঠানামা নাই... একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি.. খেয়াল করলাম, বন্ধু স্যালাইন এর লাইন খুলতে বলে রক্তের ব্যাগ পর্যবেক্ষণ করঠে.. নাড়ী ধরে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে.. মনে হচ্ছে যেন মেয়েটাকে বাচাতে ও হয়ত ওর সমস্ত চিকিৎসা শক্তির ব্যায় করবে.. তাও মরতে দিবে নাহ.. আমি এখন ও বুঝতে পারছি নাহ মেয়েটার হয়েছে কি ?! আমার নাস্তিক বন্ধুটি ডাক্তারী বিদ্যা প্রয়োগের পাশাপাশি হয়ত অলৌকিক কোন আস্তিক শক্তি ও প্রয়োগ করতে চাইছে.. ওর ডিউটি টাইম পার হয়েছে এক ঘণ্টা হল, তাও জীবন বাচানোর প্রাণপণ প্রচেষ্টা..

আমরা বেরিয়ে পড়েছি, উদ্দেশ্য চানখার পুলের বিরানী। দুজনেই খুব শান্ত, যেটা আমরা কখনই থাকি নাহ.. নীরবতা ভেঙ্গে বললাম, শুভ্র কি হইছে রে মেয়েটার ? কয়েক সেকেন্ড সময় নিয় বললো দোস্ত, মেয়েটা অনেক মেধাবী, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ম্যথে চান্স পাইছিল, পড়তে পারবে না রে, মারা যাবে.. বাচবে নাহ.. আমি সাহস দিয়ে বলেছিলাম আরে নাহ, বাচবে বাচবে.. আমার রক্ত শরীরে যেয়ে তাজা হইয়া যাবে এক্কেরে... ( তারপর খেতে খেতে মেয়েটির হিস্ট্রী ওর থেকে শুনেছিলাম )

আজ সকালে শুভ্র'র ফোন, যথারীতি ধরতেই হবে, আমি এখন বাড়িতে, বললাম হ্যালোঃ তোর রক্তে তাজা হয় নাইরে মেয়েটা দোস্ত, এক্টু আগে মারা গেছে.. ( আজকে ওর গলাটা কেমন ধরা ধরা ছিল, মোবাইলীয় গতি ও ছিল নাহহহহহ)

বালিকাটির নাম ছিল প্রভা। বাড়ি পুরান ঢাকাতে। বাবা র ব্যাবসা। টাকা পয়সাওয়ালা ঘরের মেয়ে। ইন্টার পাস করে ভর্তি হয়েছিল ফার্মগেইট একটা কোচিং সেন্টারে। সেখানে মাদারীপুরের েককটা ছেলের সাথে পরিচয়, প্রেম, তারপর পালিয়ে বিয়ে করা..অপরিণত বয়সে ই করে ফেলেছিল অনেক কিছু যা করা উচিৎ ছিল নাহ। হ্যা ঠিক ধরেছেন, যৌতুকের বলী। মেয়েটির বাবা মারা গ্যাছেন চার মাস হল, তার আগে প্রত্যেক মাসেই মেয়ের খরচের জন্যে হাজার পঞ্চাশেক টাকা লুকিয়ে বা প্রকাশ্যে পাঠিয়ে দিত বাবা। ( যৌতুক)। বাবা মারা যাবার পরে ভাইয়েরা এই অদৃশ্য যৌতুক দিত নাহ.. মেয়েটি বলতে ও পারত না, শুধু নীরবে সহ্য করে যেত। মুখবুজে.. ওকে মারা হত কাচা কুন্চি বা খুন্তী দিয়ে.. দরজার ডাসা দিয়ে মাথায় বাড়ি দেওয়া হয়েছিল, সেইখানে রক্তখরন তারপর চরম পরিণতি...

আজ কে বিশ্ব নারী দিবস। প্রভা নামের মেয়েটা বালিকা ই আছে, নারী হয়ে ওঠেনি এখন ও, তাই মনে হয় ওপরওয়ালা এই নারী দিবসে বালিকাটিকে নারী বানানোর জন্যে নিয় গেলেন... আমি অপেক্ষায় থাকবো প্রভা তুমি নারী হয়ে আসবে... তোমমার জন্যে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ম্যাথমেটিকস ডিপার্টমেন্টের সীট টা রেখে দেব যত্নে। তুমি ছাড়া ওই সীটে আর কেউ ভর্তি হবেনা.. কথা দিচ্ছি...
( কথা না রাখলেও কোন ক্ষতি নাই, প্রভা বোবা, বোবারা কথা বলেনা। )...

মাঝে মাঝে ভয় হয়, আমার নিজের ও একটা ছোট্ট বোন আছে....
পৃথীবির আর কোন দেশেই আমাদের মত অনৈতিক মৃত্যু আসেনা। কিছু করতে না পেরে কোন যুবা তার আন্দোলিত রক্তে ঘুমের ধারা মিশিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়না...

ইয়েস, আজকেই নারী দিবস...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:২১

বিজন রয় বলেছেন: দুঃখজনক।

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:১১

আসিফুজ্জামান জিকো বলেছেন: পড়ার জন্যে ধন্যবাদ বিজন দাদা।
এরকম লক্ষ্য কোটি দুঃখ রোজ বাতাসে মিলিয়ে যায়।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৫২

আজিজার বলেছেন: সুন্দর উপষ্হাপন, অনেক মেয়ে অাছে ভালবাসার মোহে সবকিছু ভুলে যায়।

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:১২

আসিফুজ্জামান জিকো বলেছেন: এটা বড় একটা পয়েন্ট আজিজার ভাইয়া।
পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.