নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা পড়িয়া রয় অবহেলায়, তাহা সমগ্রই আমার কী-প্যাডের, দূর্দান্ত গতি ছড়ায়। যদি কোন অন্ধ/বদ্ধ মনের দ্বার একবার খোলা যায়?\n

আসিফুজ্জামান জিকো

অাইন বিভাগ..

আসিফুজ্জামান জিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঝুলন্ত বাংলাদেশ..

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৫


বাংলাদেশ মরে ছিলো
বাংলাদেশ ঝুলে ছিলো - আর আমি অসহায় অথর্বের মতই চেয়ে ছিলাম। চেয়েছিলো বাংলাদেশ টাও। কিচ্ছু কর্তে পারেনি। ওর ফোটা ফোটা রক্তে নীচে একটা মানচিত্র হয়ে আছে- অক্ষত দূর্বল আজন্ম দুঃখী এক দেশের মানচিত্র! অপেক্ষায় রইলো বাংলাদেশ।

২০১৫, চিত্রার পাড়ঃ-

মাথা দিয়ে শিশির ঝরছে মুক্তোর দানার মতো। চুপচুপে ভেজা চুল, হাটু অব্দি প্যান্ট। বাড়িতে ঢুকলে মা জিগেস করবেই, বাইরে কি বৃষ্টি হচ্ছিলো? তারপর বকতে বকতে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে দিবে।

টাক টাক দুইবার শব্দ করার পরে দরজাটা খুললো। আমি ভয়ে ভয়ে নীচ থেকে স্লো মোশনে মা'র চোখে চাইলাম। দেখলাম উনি আমার গায়ে লেগে থাকা সর্ষে ফুলের ঘ্রাণ টেনে নিচ্ছে। কোন প্রশ্ন না, তোয়ালে ও আসলো না। মা একটু চুপ করে থেকে বললো, বাড়ি ময় ময় করছে সর্ষে ফুলের গন্ধে, কই গেছিলিস রে?

সর্ষের গন্ধ কটু লাগে আমার, বদখত। মা'র কেন এত ভাল্লাগে আমি জানিনা। কই গেছিলাম সেটা বললে মা বিশ্বাস করবে না, তাই চুপ করে চেপে গেলাম। তবে আপনাদের বললে, কেউ কেউ বিশ্বাস করবেন, কেউ কেউ পাগল বলে হাসবেন।

কথা ছিল প্রতি বছর এই দিনে দুপুরের রৌদ পড়লেই আমার ওখানে থাকতে হবে। তবে শীতের বিকেলের ওম মাখানো বিকেলের আলোয় আমার ওর চোখে তাকানোর দুঃসাহস নাই। তাই বিকেল যখন সন্ধ্যেটাকে ছুয়ে দেয়, সবকিছু আবছা, ঠিক তখন ই আমি ওখানে পৌছাই। তখন কেউ কারো চোখ দেখতে পারিনা। তাই ভেতরেও দুমড়ানী আসেনা।

স্বর্গের সেই বোরাকে চেপে যখন বেড়ার এইপারে ও নামলো তখন চারপাশটায় কিছু আলো বিচ্ছুরিত হলো। ঘাসের ডগার শিশিরগুলো এক মুহুর্তের জন্যে মুক্তোর দানা।

প্রতিবারের মত আমি এবারো কিছু বলতে পারিনি? ও বলে গেলো, আমি ভালো আছি। তুমি দেরী করলে কেন? দেরী করেই ভালো করেছো। আমি বাড়ি গিয়েছিলাম জানো? দেখলাম মা আমার শান বাধানো কবরটাকে আচল দিয়ে মুছেই যাচ্ছে মুছেই যাচ্ছে। মনে হচ্ছিলো, মা'র হাতটা আমার মুখেই ছুয়ে যাচ্ছে? দৌড়ে মাকে খুব জড়াতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, পারিনি।

বাবা প্রতি বছর এই দিনে সেই সাদা সার্টটা পরে। কোনটা মনে আছে? দূর্গা পুজোর মেলা থেকে যেটা কিনেছিলাম বাবার হাত ধরে। আমার তখন কান্না আসছিলো খুব, দৌড় দিয়ে সরে গেলাম ওদের থেকে দুরে।

দুলুর কথা মনে আছে? ওই যে আমার আচা মুচি খেলার হাড়ি, পুতুল গুলো যাকে দিয়ে গেলাম গতবার। আহহহ, আমার পাশের বাড়ির মেয়েটা। দুলু খেলছিলো, সাথে আমার ছোট্ট ভাইটি। ছোট মনে হয় ওর বু'জানের কথা ভুলেই গিয়েছে? ভালোই হয়েছে, দুলুই তো ওর নতুন দিদি। আমার আবারো গলা ধরে আসে, ছুট দিলাম মাঠের দিকে!

মাঠের ওই পারে স্কুল। সবাই একই রকম আছে, কেউ কেউ একটু লম্বা হয়েছে। শুধু আমি' ই নেই!
জানো, ওদের তখন ছুটি, সবার হাতে নতুন বই। প্রত্যেকবার নতুন বই নেবার দিনে আমি লাইনের আগে দাড়াতাম। মনেনে হচ্ছিলো ওদের থেকে বই কেড়ে নিয়ে আমি স্কুল ঘরে দৌড় লাগাবো। পড়বো আর পড়বো?

কত্ত দিন আমি স্কুলে যাইনা? কশি টানা খাতায় লিখিনা? পুতুলের বিয়ে দেইনা? উঠোনের বরই গাছে চড়ে নুন দিয়ে ডলে ডলে বরই ও খেতে পারিনা? বাবার হাত ধরে গঞ্জে যেতে ইচ্ছে করে? ছোট্ট ভাইটাকে কোলে নিয়ে ধানখেতের আইল ধরে দৌড় দিতে ইচ্ছে করে? কলই শাকে টাকি মাছের ঝুরো ভাজি দিয়ে মায়ের হাতের গরম ভাত খেতে ইচ্ছে করে?

সে কি, তুমি মনে হয় কাদছো?
আমি ও বোকা, প্রতিবার ডেকে ডেকে তোমায় কাদাই?

আমার সময় হয়ে যাচ্ছে, ফিরতে হবে ভাই। তোমায় একটা গোপন কথা বলে যাই, আমার কাছে ইন্ডিয়ান একটা পয়সা ছিলো না, এক টুকরো সুতো, কিংবা এক দানা কোন অবৈধ পণ্য! তবুও আমি উল্টো হয়ে ঝুলেছিলাম। টুপ টুপ করে একেক ফোটা রক্ত ঝরে অসাড় হয়ে ছিলাম। আর তুমি কেদেছিলে। ওই যে বোরাক টা চলে এসেছে, আমি যাচ্ছি, আমি যাইইইই....

ফেলানী,
কাটা তারের বেড়া থেকে,
এইতো কিছুক্ষণ আগে।

( ওরা কিন্তু হত্যা কন্ধ করেনি ? )

তুমি জানো, টুপ টুপ করে ঝরে যাওয়া ফেলানীর রক্তে একটা মানচিত্র খচিত হয়ে আছে বেড়ার পাদদেশে। কতগুলো বর্ষা, শীত, গেলো, তবুও অক্ষত, মোছেনি একফোটা...

পুনশ্চঃ এই গল্প মা'কে বললে উনি কি বিশ্বাস করতেন? হাসতেন আর বলতেন, পাগল কোথাকার...

কবির সুমনের কয়েকটা লাইনঃ

ওপার বাংলা এপার বাংলা
মাঝখানে কাঁটাতার
গুলি খেয়ে ঝুলে থাকলে ফেলানি
বলো তো দোষটা কার।

কেউ দোষী নয় ফেলানি খাতুন
বি এস এফ জানে ঠিক
পথ ভুল করে নিয়েছিল গুলি
হঠাৎ তোমার দিক।

বেকসুর ছুটি পেয়েছে সেপাই
খুনীরা যেমন পায়
ভেবে দেখো মেয়ে ওই খুনীটাও
বাংলায় গান গায়।

তুমিও গাইতে গুনগুন করে
হয়তো সন্ধে হলে
তোমারই মতন সেই সুরগুলো
কাঁটাতার থেকে ঝোলে।

শোনো বি এস এফ শোনো হে ভারত
কাঁটাতারে গুনগুন
একটা দোয়েল বসেছে যেখানে
ফেলানি হয়েছে খুন।

রাইফেল তাক করো হে রক্ষী
দোয়েলেরও ভিসা নেই
তোমার গুলিতে বাংলার পাখি
কাঁটাতারে ঝুলবেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:২৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সে কি, তুমি মনে হয় কাদছো?
আমি ও বোকা, প্রতিবার ডেকে ডেকে তোমায় কাদাই?

গোল্ড ফিশ মেমোরি! কত আর মনে রাখে ? ইস্যুর পর ইস্যু! তরতাজা
সদ্য তোলা ঝেকর ইরিশের মতো চকচকে
তনু, রুপা, না জানা অজানা হাজারো ধর্ষিতা
বেঁচে থাকাটাই যেন মুফকতে পাওয়া বোনাস...
মূখ বুজে, বুলতে মূখ ডুকানো উটের মতো
গোজ করে থাকা জাতির আবার স্মরণ!!!!!!

অতর্কিত বুলেটের অতংকে
গুম খুন আর হারিয়ে যাবার ভয়ে
গুটিয়ে গেছে জাতি!

ফেলানি কথা -অগনন বিচার বহির্ভূত হথ্যার কথা
কেউ আর বলে না!
কবরের শান্তিতে -পতপত করে ওড়ে পতাকা
সকলরে বুকের ক্ষরিত লাল রক্ত লয়ে

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩৪

কুকরা বলেছেন: +

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.