নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল ছেলে!

জুবায়ের হাসান রাব্বী

পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।

জুবায়ের হাসান রাব্বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাশাপাশি থাকলেই হবে

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫১

পাশাপাশি থাকলেই হবে



ওয়ালিউল ক্যম্পাসে একা একা হাটছিল। পিছন থেকে চুমকি এসে বলল -তোমাকে অনেক্ষন ধরে ডাকছি শুনছো না কেন?
-অন্যমনস্ক ছিলাম। তাই খেয়াল করি নি।
-এত অন্যমনস্ক হয়ে কি চিন্তা করছিলে?
-না তেমন কিছু না। কিছু বলবে নাকি?
-তোমার তাড়া আছে নাকি?
-আজকে বাড়িতে যাব তো। তাই একটু তারাতারি যেতে চাচ্ছি।
-তুমিও বাসায় যাবে নাকি?
-সবাই যাচ্ছে, আমিও যাব। তুমি যাবে না নাকি?
-আমিও যাব তাহলে। আচ্ছা তাহলে যাও। ফোনে কথা বলব। যাওয়ার আগে ফোন করবে।

মেসে এসে ব্যাগে কাপড় নিয়ে ওয়ালিউল বেড়িয়ে পরল। উদ্দেশ্য গ্রামের বাড়ি। অনেকদিন যাওয়া হয় না।

ওয়ালিউল বাসে উঠার আগে কিছু সময় দাঁড়িয়ে আছে। কারন তার কাকা তাকে একটু অপেক্ষা করেছে। ওয়ালিউল এর কাকা তার মা মানে ওয়ালিউল এর দাদির জন্য কিছু পাঠাবে।

ওয়ালিউল এর কাকা এসে তার কাছে একটা ব্যাগ দিয়ে বলল
-এটা বাড়ি নিয়ে যাবি। আর এই নে তোর টিকিট।
-আবার টিকিট নেওয়া লাগবে কেন? আমিই নিতাম।
-আরে নে...

ওয়ালিউল ফোন বেজে উঠায় ওয়ালিউল ফোন হাতে নিয়ে আবার রেখে দিল। ওয়ালিউল এর কাকা বলল
-কিরে ফোন ধরে কথা বল।
-গাড়িতে উঠেই কথা বলল।
-আচ্ছা। সাবধানে যাস।

গাড়িতে উঠে ওয়ালিউল ফোনের কথা ভুলেই গিয়েছিল। হঠাৎ মনে হতেই চুমকির কাছে নাম্বারে কল দিল।

চুমকি ফোন ধরে বলল
-কি ব্যাপার তখন ফোন ধরলে না কেন?
-আমার সামনে তখন আমার কাকা ছিল।
-তাতে কি!! আমি কি তোমার গার্লফ্রেন্ড নাকি!! যে কথা বলতে সমস্যা হবে?
-আমি কাকার সামনে ফোনে কথা বলি না।
-আচ্ছা হয়েছে। তুমি এখন কোথায়?
-আমি গাড়িতে বসে আছি। তুমি কোথায়?
-আমিও বাসায় যাচ্ছি।
-আচ্ছা। তাহলে বাসায় গিয়ে কথা হবে।



ওয়ালিউল বাসায় এসে কয়েকদিন খুব ব্যাস্ততার মাঝে যাচ্ছিল। চুমকির সাথেও তেমন কথা বলা হয় না। তাই আজ ফোন দিল।

চুমকি ফোন ধরে বলল
-কি খবর বন্ধু তোমার তো কোন খোঁজখবর নাই।
-কয়েকদিন ব্যাস্ততায় আছি। তোমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা হল?
-ওই হয়েছে আর কি।
-কেমন মজা হচ্ছে? ঘুরছ কেমন?
-ঘোরাঘুরি নাই।
-কেন? বয়ফ্রেন্ড এর সাথে রাগারাগি?
-সে আবার আমার উপর কি রাগ করবে?
-ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছে নাকি?
-আরে না। ওটা তো আমার বয়ফ্রেন্ড না?
-তাহলে কি গার্লফ্রেন্ড!!
-আরে না। ওটা আমার ভাইয়ার বন্ধু। সবার কাছে বলে আমি নাকি তার গার্লফ্রেন্ড। আমিও তেমন কিছু বলি না। সে আমাকে বিয়ে করতে চায়।
-ও। এই ব্যাপার!!

চুমকি চুপচাপ থেকে বলল
-তুমি ফিরবে কবে?
-ছুটি শেষ হলেই এবারে চলে আসব। আর তো মাত্র কয়েকদিন।



ছুটি শেষে সবাই ফিরে এসেছে বলে আজ সবাই মিলে বাইরে খেতে এসেছে। এখন তারা একটি ফুচকার দোকানে।

ফুচকা খেতে খেতে চুমকি ওয়ালিউল কে বলল
-আচ্ছা বন্ধু তুমি অন্যদের তুই করে বললেও আমাকে তুমি করে বলো কেন?
-তোমার সাথে তুই বলা হয় না। কিন্তু তুমি তুই করে বল না কেন?
-তুমি আমাকে তুমি করে বললে আমি আর তুই করে বলি কিভাবে!!
-সেটাও তো কথা। বাদ দাও এসব। একটা কিছু বললেই হল। বাড়ি থেকে আসার পরে তোমাকে কেমন যেন লাগছে।

চুমকি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-নাহ। তেমন কিছু না।
-আমার কাছে কিছু না লুকিয়ে সব বলো।
-ওই ছেলে'ত আমাকে বিয়ে করতে চায়।
-কোন ছেলে?
-যাকে তোমরা আমার বয়ফ্রেন্ড মনে করো।
-তো তুমি কি বললে?
-আমি কিছু বলি নি।
-পরিবার থেকে রাজি আছে?
-পরিবার থেকে কিছু বলে নি।
-আচ্ছা আজ উঠি চলো।
-চলো।



চুমকি অনেক্ষন ধরে ওয়ালিউল খুঁজছে, কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না। আসিফকে দেখে জিজ্ঞেস করল
-ওয়ালিউলকে দেখেছিস রে?
-না।
-কোথায় গেল?
-ক্যাম্পাসের দিকে খুঁজে দেখ।

ওয়ালিউল কে ফোনেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই চুমকি ওয়ালিউল কে খুঁজতে ক্যাম্পাসের দিকে চলে গেল।

ওয়ালিউল কে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দেখে চুমকি ওদিকে এগিয়ে গেল। চুমকির ইচ্ছা করছে ওকে ধরে মারবে।

চুমকি ওয়ালিউল এর কাছে গিয়ে বলল
-তুমি এখানে বসে আছ! আমি তোমাকে কত জায়গায় খুঁজছি।
-আমাকে খুঁজছ কেন?
-দরকার আছে। আমার সাথে আসো।
-একটু পরে আসছি।
চুমকি রেগে বলল
-তুমি আসবে নাকি সেটা বলো।

ওয়ালিউল চুমকির সাথে চলে আসল। ওয়ালিউল এখন চুমকির সাথে হাটছে। চুমকির সাথে হাটতে হাটতে বলল
-তুমি আমাকে এদিকে ডেকে নিয়ে আসলে কেন?
-দরকার আছে। চলো তুমি।

ওয়ালিউল না চাইতেও আসল। কারন এর আগে একবার ওয়ালিউল আসতে দেরি করেছিল বলে চুমকি রাগে তার মোবাইল আছাড় মেরেছিল।

চুমকি হাটতে হাটতে একটা ফুচকার দোকানের কাছে চলে আসল। ওয়ালিউল চুমকির সাথে চেয়ারে বসে বলল
-এখানে ডেকে আনলে যে?
-তোমার সাথে ফুচকা খেতে ইচ্ছা করছিল।
-ও এই কথা।

ওয়ালিউল আর চুমকি এক প্লেটে ফুচকা খাচ্ছে, আর সেটা চুমকির ইচ্ছায়। ওয়ালিউল খেতে খেতে বলল
-আমাদের দেখে অনেকে ভাববে আমরা প্রেমিক প্রেমিকা।
-সেটা ভাববার জন্যই তোমাকে আজ নিয়ে এসেছি।
-মানে কি!!
-ওই দেখ ওখানে কে বসে আছে।

ওয়ালিউল সেদিকে তাকিয়ে বলল
-আরে এতো সেই ছেলেটা, আমাদের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?
-ও জানে আমরা প্রেমিক প্রেমিকা।
-প্রেমিক...
-এছাড়া কোন উপায় ছিল না। প্রথমদিকে আমার বয়ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিলেও এখন সে আমার সাথে প্রেম করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। তাই আমি বলেছি তোমার সাথে আমার প্রেম হয়ে গেছে। তুমিতো জানো আমি প্রেম ভালবাসা পছন্দ করি না।

চুমকির কথাগুলো শুনে ওয়ালিউল চুপ করে আছে। আজকে কি ওয়ালিউল বলে দেবে "তোমার অভিনয় করা লাগবে না আমি সত্যি তোমাকে ভালবাসি।" কথাটা বলতে গিয়েও বলা হচ্ছে না। কারন কথাটা বলার পরে হয়তো চুমকির সাথে ওয়ালিউল এর দুরত্ব তৈরি হয়ে যাবে।

ওয়ালিউল কে চুপ করে থাকতে দেখে চুমকি বলল
-কি ভাবছ?
-না। কিছু না। ওই ছেলেটা তো চলে গিয়েছে।
-তাহলে বুঝে গিয়েছে। এইবার চলো আমরা ক্যাম্পাসে যাই। তোমার নাকি কাজ আছে।

ওয়ালিউল ভালবাসার কথা জানাতে পারছে না। চুমকিকে হারানোর বদলে এভাবে পাশাপাশি থাকতে পারলেও হবে। তবুও তো ভালবাসার মানুষটিকে সঙ্গ দিতে পারছে। মনের কথা নাহয় চাপাই থেকে গেল।

ওয়ালিউল কিছুক্ষণ ভেবে বলল
-আমার সাথে আরেক প্লেট ফুচকা খাবে?
চুমকি মিষ্টি হেসে বলল
-হ্যা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.