নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল ছেলে!

জুবায়ের হাসান রাব্বী

পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।

জুবায়ের হাসান রাব্বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আমি একজন সার্থপর

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৩

অনেক্ষন ধরে হাসপাতালের চেয়ারে বসে আছি। কিন্তু লাইনের লোকগুলো যেন শেষ হচ্ছেই না। অনেক বড় লাইনে দাঁড়িয়ে না থেকে চেয়ারে বসেই শান্তি পাচ্ছি।

ডাক্তার মাত্র কয়েকজন কিন্তু রোগী হাজাতখানেক। আমিও সেই হাজারখানেক এর দলে। বাঙালি জাতি শুধুই ফ্রি খুঁজতে জানে। আমিও সেইরকম ফ্রি চিকিৎসা নিতে সরকারী হাসপাতালে হাজির হয়েছি।

কয়েকদিন ধরেই জ্বর আর মাথা ব্যাথা হয়ে চলেছে। প্রথমে আমলে না নিলেও এখন বেশি হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে আসতেই হল।

★★

সলালবেলা মামার কাছে গিয়েছিলাম টাকা আনতে। মামার কাছে গিয়ে বললাম
-মামা তোমার কাছে টাকা হবে?
-কেন?
-জ্বর বেড়েছে। ডাক্তারের কাছে যাব।
-আমার কাছে তো টাকা নাই।
-আচ্ছা আমি যাই।

হেটে বেড়িয়ে আসছিলাম। পিছন থেকে মামা ডাক দিয়ে বলল
-সকালে কিছু খেয়েছিস বলে মনেহয় না। কিছু টাকা নিয়ে যা।

মামা পকেট থেকে টাকা বের করে আমাকে একশ টাকা দিচ্ছে। আমার অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
-এই ছয় হাজার টাকা তোর মামির শাড়ি কেনার জন্য রেখেছি। এখান থেকে একশ টাকা দিলে কিছু হবে না। বলব "দুপুরে নাস্তা খেয়েছি"

মামা আমার জন্য মিথ্যে বলে। যখন টিউশানির টাকা ফুরিয়ে যায়, তখন তার থেকে টাকা চাই। সে তার বউএর শপিং করার টাকা মেরে দিয়ে আমাকে দেয়। কত বড় সেলফিস আমি!

আমি কিছু না বলে টাকা নিয়ে বেড়িয়ে এলাম। বাইরে থেকে পঁয়ত্রিশ টাকায় ভাত খেলাম। ঢাকা শহর এইজন্য মাঝে মাঝে অবাক লাগে। এখামে পঁয়ত্রিশ থেকে তিন হাজার টাকা সব দামের খাবার পাওয়া যায়।

পঁয়ত্রিশ টাকার খাবার খেতে দেখলে কিছু মানুষ মুখ কুঁচকে তাকায়। আমি তা দেখে মুচকি হাসি দেই। আমার জন্য পেট ভরলেই হল সস্তা পঁচা কোন বিষয় না।

পকেটে পঁয়ষট্টি টাকা নিয়েই সরকারি হাসপাতালে চলে এলাম। করন এখানে বিনামুল্যে চিকিৎসা পাওয়া যায়। যদিও দশ টাকা দিয়ে টিকিট নিয়ে হয়।

★★

হাতে টিকিট নিয়ে বসে আছি অনেক্ষন। কাছে ঘরি থাকলে বলতে পারতাম এখন কয়টা বাজে। তবুও বলতে পারি অনেকসময় বসে আছি।

-আরে তুমি এখানে!!
কথাটা শুনেই চমকে উঠলাম। কারন এই কন্ঠ আমি খুব ভালভাবেই চিনি। আশাপাশে তাকিয়ে কন্ঠের উৎস খুঁজছিলাম।

সামনে তাকিয়ে দেখলাম রিয়া দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে ডাক্তারি পোষাক। আমাকে অবাক চোখে তাকাতে দেখে সে বলল
-তাহলে এখানে বসে আছ কেন? কি হয়েছে তোমার?
-এমনিই এসেছি।
-এমনিই তুমি আস নি।

রিয়ার মুখে এখন বিরক্তির ছাপ। আমার দিকে রেগেই তাকিয়েছে। আমার মাথায় হাত রাখতেই চমকে গেল। ডাক্তারদের এই এক সমস্যা। সামান্য ব্যাপারও গুরুত্ব দিয়ে দেখে। রিয়া আহতসুরে বলল
-তোমার শরীরে তো অনেক জ্বর। আর এখানে বসে আছ!!
-দেখছ এত মানুষ। এর মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা যায়!!
-আমার সাথে আস।

আমি যেতে না চাইলেও আমাকে জোড় করেই নিয়ে যাচ্ছে। এত মানুষের ভিড়ে আমাকে লাইনের সামনে নিয়ে এল। দরজার সামনে এসে দেখি দরজা লাগানো। মনেহয় ভেতরে কোন রোগীকে দেখছে।

রোগী বেড়িয়ে আসতেই অন্যজনকে ঢুকতে দিচ্ছে। আমি সবার পিছন থেকে এসেছি, তাই আমাকে যেতে দিবে না। রিয়া চুপ থাকলেও এখন মুখ খুলল
-দরজা খুলেন।
বলতেই দরজা খুলে দিল।

রিয়া ভিতরে ঢুকল, সাথে আমিও। রিয়া আমার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে এল। ডাক্তার লাঞ্চ করতে বসছিল। রিয়াকে দেখে বলল
-আরে আপনি!! এখানে কি মনে করে?
-ওকে দেখুন তো। কি সমস্যা দেখুন।

আমাকে ডাক্তার অনেক্ষন ধরে দেখল। ডাক্তার তার চেম্বারেও এত মনযোগী হয়ে রোগী দেখে নাকি জানা নেই। দেখা শেষে ওষুধ লিখে দিল। আবার কিছু টেস্ট এর কথাও বলল। আমি দেখে ঢোক গিলতে থাকলাম।

ডাক্তার এর রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম। এখনও রিয়া আমার হাত ধরে আছে। রিয়া আমাকে একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে এল। আমি বললাম
-এখানে কেন আনলে?
-রক্ত পরিক্ষা করতে।
রিয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
-চিন্তা করতে হবে না। এখন রক্ত দিয়ে যাও। পরে আমি টাকা দিয়ে নিয়ে যাব।

ডাক্তার আমার রক্ত নিয়ে একটা টেস্টটিউব জাতীয় কিছুতে রেখে বলল
-আপনার কাজ শেষ। এখন আসতে পারেন।

আমি বাইরে এসে দেখলাম রিয়া আমার জন্য বসে আছে। আমি রিয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে সামনে পা বাড়ালাম। রিয়া উঠে আমার কাছে চলে এল। আমার হাত ধরে বলল
-কোথায় যাও?
-মেসে।
-মেসে মানে! তোমার অনেক জ্বর, মাথায় পানি দিতে হবে।
-আমিই পারব।
-তোমাকে অত পারতে হবে না। আমার সাথে আমার কোয়াটারের চল। তোমার মাথায় আমি পানি দেব।
-কোয়াটার!!
-অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমার কোয়াটার এ আমার স্বামি যাবে তাতে কোন সমস্যা নেই।

আমি মনে হাসলাম। এই হাসিটা রিয়া দেখলে রেগে যেত। সে আমাকে যতবারই তার স্বামি বলে আমি শুধু মনে মনে হাসি।

★★

রিয়া আমাকে তার বেডরুমে বসিয়ে পানি আনতে চলে গেল। আর আমার মনে সব ভাবনা জাগতে থাকল।

আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট এ পড়তাম, রিয়া তখন ক্লাস নাইনে পড়ত। তখন ওকে পড়াতে গিয়েই আমাকে ভাল লাগে ওর। আমিও ওর প্রেমে পরে যাই। কিন্তু সেটা সবসময় মনে মনেই রাখতাম।।

একদিন জন্মদিনে রিয়া আমাকে প্রোপোজ করে, আর সেটা তার বাবার সামনেই। আমি তখন অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। রিয়া তখন ক্লাস টেনে পড়ে।

আমি সেদিন কিছু না বলেই চলে আসি। বড়লোকদের অনেক খায়েস থাকে। এটাকেও আমি একটা খায়েস ভেবে নিয়েছিলাম। বাবা মরা একমাত্র মেয়ে বলে তার বাবাও রাজি হয়েছিল।

সেদিনই আমি টিউশানি ছাড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু টিউশানি ছাড়লে আমাকে না খেয়ে মরতে হত। কারন বাবা মা মারা যাওয়ার পরে মামা খরচ দিলেও একসময় তা বন্ধ করে দেয়। তাই এই টিউশানিতে আমার খাওয়া চলত।

তারপরে রিয়াকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়াই। এর মধ্যে অনেকবার ভালবাসার কথা বলতে চাইলে আমি হারিয়ে যাওয়ার কথা বলতাম। আমার হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনে রিয়া চুপ হয়ে যেত।

ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে রিয়া মেডিকেল এ ভর্তি হয়। একসময় তার মেডিকেল এ পড়াও শেষ হয়ে যায়। ততদিনে আমি অনার্স পাশ করা এক বেকার যুবক। একটা টিউশানি করে দুবেলা খেয়ে আমার পেট চলে।

রিয়া মেডিকেল এ পড়া অবস্থায়ও আমার খোজ রেখেছে। সে ডাক্তার হওয়ার পরে আমি পালিয়ে বেড়ালেও সে আমাকে খুঁজে বের করেছে।

★★

রিয়া পানি নিয়ে রুমে চলে এল। আমার কাছে এসে বলল
-এবারে শুয়ে পর। আমি তোমার মাথায় পানি দিয়ে দিচ্ছি।
-না মানে…
-চুপ করে শুয়ে পর। নইলে ভাল হবে না কিন্তু।

রিয়া আমার মাথায় পানি দিচ্ছে। আমি চোখ বুজে শুয়ে আছি। মেয়েটা আমাকে জোড় করলেও আমি মানতে বাধ্য হই। কারন সে আমাকে ভালবাসে।

আমি যে মেয়েটাকে কত ভালবাসি তা আজও বুঝতে দেই নি। কারন সে একজন ডাক্তার। আর আমি অনার্স পাশ করা এক বেকার। কোনদিন যদি সে জোড় করে আমাকে বিয়ে করতে চায় তবে আমি তাকে সেলফিস এর মত বিয়ে করে নেব।

মাঝে মাঝে ভাবি "আমি কত বড় সেলফিস! কত বড় সার্থপর আমি!" যাকে ভালবাসি তাকে কিছু না দিয়ে শুধু নিয়েই যাই। তবুও একদিন এই সেলফিস মানুষই মনের সব ভালবাসা দিয়ে দেব। সেদিন নাহয় সব মিটিয়ে নেব।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২

ফয়সাল রকি বলেছেন: ভাল লিখেছেন, তবে গল্পটা বাস্তবের থেকে কাল্পনিক বেশি মনে হলো।

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৫

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: কিছু গল্প কাল্পনিক হলেও বাস্তবে ঘটে যায়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.