নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।
১
ক্লাসে ঢুকে খুঁজতে একটা জায়গা পেয়ে গেলাম। যেখানে বসতে গেলে কোন আপত্তি নেই। তবুও আমি সেখানেই বসে পরলাম।
সিটে বসতেই রিয়া আমার দিকে সরে আসল। এই মেয়েটির কারনেই আমার অন্য কোথাও জায়গা হয় নি। বাধ্য হয়েই তার পাশে বসতে হয়েছে।
রিয়া আমার কাছাকাছি এসে বলল
-হায়। কেমন আছ?
-ভাল আছি।
-যাক ভালই হল। দুজন পাশাপাশি বসে গল্প করা যাবে।
-কানের কাছে পকপক করলে আমি ক্লাস থেকে চলে যাব।
-যাকে ভালবাসি তার সাথে.....
আমার উঠে যাওয়া দেখে রিয়া চুপ করে গেল।
আমি চুপচাপ আবার সিটে বসলাম। এখন সে চুপচাপ বসে আছে। ক্লাসে স্যারও চলে এসেছে। তাই সবাই চুপচাপ।
স্যার পড়াতে শুরু করল। আমি স্যারের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি। আমার পাশে বসে থাকা রিয়া আমার দিকে তাকাচ্ছে মাঝেমাঝে, সেটা আমি বুঝতে পারছি।
স্যার ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। রিয়া স্যারকে ডাক দিয়ে বলল
-স্যার। আজকের পড়াটা আমি পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। আমাকে একটু বুঝিয়ে দিলে...
-এখন তো সময় নেই। তুমি বরং তোমার সহপাঠী কারো থেকে শুনে নাও।
-স্যার। আমি ওর থেকে বুঝে নেই। ক্লাস চলাকালীন ও খুব মনোযোগী ছিল।
আমি উঠে যাচ্ছিলাম। আমার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছে সেটা প্রথমে বুঝিনি। পরে যখন বুঝতে পারলাম, ততক্ষণে স্যার আমাকে পড়া বুঝানোর দায়িত্ব দিয়ে চলে গেছে।
শেষে তাকে পড়া বুঝাতে বসলাম। রাগে আমার ভিতরে কটমট করছে। আমি কিছু বলতে পারছি না।
আমি বই খুলে বলতে থাকলাম। রিয়া আমার দিকে সরে এল। আমি বললাম
-কি ব্যাপার!! এত কাছাকাছি সরে আসছ কেন?
-পড়া বুঝতে হবে তো। দুরে থাকলে বুঝতে সমস্যা হয়।
-আমার গা ঘেসে বসার চেষ্টা করবে না।
-আচ্ছা।
কিছুক্ষণ পরে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
-বুঝতে পেরেছ?
-না। আবার বুঝাও।
-পড়ার সময় অন্যদিকে নজর দিলে বুঝবে কিভাবে!
-আমিতো পড়ার দিকেই নজর দিচ্ছি। তুমি আবার বুঝাও।
চারবার পড়া বুঝানোর পরেও রিয়া নাকি পড়া বুঝে নি। আমার এখন রাগ বেড়ে গিয়েছে। সে বুঝেও না বুঝার ভান করছে এটা আমি জানি। তার ধান্দা আমি বুঝে গিয়েছি।
আমি সিট থেকে উঠে পরলাম। রিয়া আমাকে উঠতে দেখে বলল
-আমিতো বুঝি নি। চলে যাচ্ছ কেন?
আমি তার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলাম
-বুঝেও না বুঝার ভান করো কেন?
-তুমি যখন জানোই তাহলে এমন করো কেন? তুমি বুঝ না! আমি তোমার সাথে সাথে, পাশে থাকতে চাই।
-একদম চুপ।
আমি এবার রেগে উঠে সামনের দিকে হাটতে থাকলাম। রিয়া আমার হাত টেনে ধরে বলল
-যেও না!
আমি ঘুরে তার মুখে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারলাম। অনেক সহ্য করেছি। কিন্তু আর সহ্য করতে পারলাম না।
থাপ্পড় দিতেই রিয়া প্রিন্সিপ্যালের রুমের দিকে চলে গিয়েছে। এখন আমার মনে ভয় কাজ করছে। প্রিন্সিপ্যাল রিয়ার কাকা। যদি উল্টাপাল্টা কিছু হয় তাহলে আমি শেষ।
ক্লাস না করার সিদ্ধান্ত নিয়েই বেড়িয়ে এলাম। আজকের মত চলে যাই। যদি কিছু হয়, কালকে হবে।
ক্লাস থেকে বের হতেই দপ্তারি আমাকে ডেকে বলল
-আপনি জিহান?
-হুম।
-প্রিন্সিপ্যাল স্যার আপনাকে ডাকছে।
"যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধা হয়"। কথাটি ভাবতে ভাবতেই প্রিন্সিপ্যাল স্যারের টেবিলের পাশে দাঁড়ালাম। স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমাকে যে কারনে ডেকেছি। তুমি ভাল ছাত্র। আমার ভাতিজা রিয়াও ভাল ছাত্রী। আমি চাই তোমারা দুজন একসাথে বসবে। আর একসাথে সব ক্লাস করবে, একজন না বুঝলে অন্যজন বুঝিয়ে দিবে।
-জ্বি স্যার।
-তাহলে আজ থেকেই শুরু কর। দুজন একসাথে যাও।
আমি রুম থেকে বেড়িয়ে আসছিলাম, রিয়াও মুচকি হেসে আমার সাথে চলে এল। এ যাত্রায় বেচে গিয়েছি।
২
আজকে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। যে করেই হোক রিয়ার ঝামেলা থেকে সরতে হবে। মেয়েটা তার ভালবাসা নিয়ে দিন দিন আমার আরো কাছে আসার চেষ্টা করছে।
রিয়া আমার সাথে হাটছে। আমি তার থেকে দুরে থাকার বুদ্ধি খুজছি। একটা কাজ করলে তাকে সারানো যেতে পারে। আমি অন্য কাউকে প্রোপোজ করলে রিয়া আর বিরক্ত করবে না। কিন্তু কাকে প্রোপোজ করব সেটাই ভাবছি।
ক্লাসে শেষে রিয়া আর আমি পাশাপাশি বসলাম। রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি চিন্তা করছ?
-তেমন কিছু না।
-আমাকে বল।
-আমি একজনকে ভালবাসি। কিন্তু তাকে কিভাবে বলব বুঝতে পারছি না।
-কে সে? তাকে সরাসরি বলে দাও।
-ভয় পাওয়ার কিছু নাই। রাজি হয়ে যাবে। একবার বলেই দেখ।
-তুমি তাহলে এখন বাসায় যাও। আমিও যাই।
রিয়া চলে যেতেই আমি আরিফাকে ডাক দিলাম। মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরি। আবার বয়ফ্রেন্ড'ও নাই। আমাকে আরিফাই এখান থেকে সাহায্য করতে পারবে।
আরিফা কাছে আসতেই সবকিছু খুলে বললাম। আরিফা সব শুনে বলল
-কোথায় আসতে হবে?
-তুমি দুপুরের দিকে ক্যাম্পাসে থেক। আমি হঠাত তোমার কাছে গিয়ে হাজির হব।
-আচ্ছা।
আরিফা যেতেই আমি ফুল কিনে আনলাম। আর তো মাত্র দুই ঘন্টা। তাই মেসে না গিয়ে ক্যম্পাসেই থেকে গেলাম।
রিয়াকে ফোন করে ডেকে এনেছি। রিয়াকে দেখে একটু হাসিখুশি মনে হচ্ছে। আমি রিয়াকে সাথে নিয়ে আরিফার কাছে চলে এলাম।
রিয়াকে পাশে দাঁড় করিয়ে আরিফার হাতে ফুল দিয়ে প্রোপোজ করলাম। কথামত আরিফাও একছেপ্ট করে নিল।
পাশে তাকিয়ে দেখলাম রিয়া নেই। তাহলে সে গেল কোথায়! তবুও ভাল ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে পেরেছি। আরিফাকে একটা ধন্যবাদ দিয়েই মেসের দিকে চলে গেলাম।
৩
অনেক্ষন ধরে রিয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। আজ নাকি রিয়া আমাকে কিছু কথা বলবে। যত কথাই বলুক ভালবাসার কথা আর বলবে না। কালকের সবকিছু দেখে আজকে বেচারি কলেজে আসে নি।
কিছুক্ষণ পরে রিয়া আসল। পার্কের বেঞ্চিটায় বসে আমাকেও পাশে বসতে বলল। আমি তার কথামত বসতেই সে প্রশ্ন করল
-আচ্ছা জিহান,একটা কথা বলি?
-হুম বল।
-আমি কি তোমাকে বিরক্ত করি? আমার ভালবাসা কি তোমার কাছে এতটাই বিরক্ত মনেহয়?
-দেখ, আমি তো আরিফাকে ভালবাসি। কালকে সেটা তুমি দেখলে।
-আরিফাকে!! আমাকে দুরে সরানোর জন্য কালকের নাটক না করলেও হত।
-নাটক!!
-হুম। আরিফা আমার কাজিন। কালকের সব ঘটনা আরিফা আমাকে বলেছে।
আমি রিয়ার শেষ কথাটা শুনেই চুপ করে বসে আছি। জীবনে এত বড় বাশ খাইনি। খাল কেটে কুমিড় নিয়ে এসেছি। আমি এখন কিছু বলতে পারছি না। কিভাবে এইরকম বাশ খেলাম তা বুঝতেই পারলাম না।
রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমার চোখের দিকে তাকাও।
আমি তার চোখের দিকে তাকাতেই বলল
-তুমি কি আমার চোখে ভালবাসা দেখতে পাও না!!
-......
-আচ্ছা তোমাকে কিছু বলতে হবে না। আজকের পর থেকে আমি তোমাকে বিরক্ত করব না। তোমার পাশে আসব না। তুমি যাতে ভাল থাক তাতে আমি কষ্ট করে হলেও মেনে নিতে পারব।
আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। রিয়ার চোখ থেকে পানি ঝরছে। আমি রিয়ার কাছে সরে গিয়ে বললাম
-একবার বুঝার চেষ্টা...
-আমি বুঝে গিয়েছি। তবে ভেব না। আমার মনের দুয়ার সবসময় তোমার জন্য খোলা থাকবে। তুমি ডাক দিলেই আমি চলে আসব।
রিয়া আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উঠে পরল। চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। আমার দিকে না তাকিয়েই হাটতে শুরু করল।
আমি ভাবছি তাকে ডাক দেই। এভাবে না ফিরিয়ে দিলেও পারতাম। মেয়েটা অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে। আমি ভাবতে ভাবতেই রিয়াকে ডাক দিলাম
-এই রিয়া শোন।
কিছু বুঝার আগেই রিয়া এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি তার এই কাজে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার শার্ট ভিজাচ্ছে। কি করতে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।
২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩
বিজন রয় বলেছেন: দারুন গল্প।
+++
৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০৫
জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:১৯
অনিসাদ রাজেদ বলেছেন: ভাল্লাগছে