নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল ছেলে!

জুবায়ের হাসান রাব্বী

পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।

জুবায়ের হাসান রাব্বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পেয়ে হারাব না

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:১১

-তো। কি খবর তোমার?
বস আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেন। আমি একগাল মুচকি হেসে বললাম
-খবর ভালই।
-তোমাকে একটা নতুন প্রোজেক্ট দিতে চাই।
-কি প্রোজেক্ট?
-চায়না একটা কোম্পানির সাথে আমাদের ডিল হবে। আর এই ডিলটা হয়ে গেলে তোমার প্রোমোশন।
-জ্বি স্যার।
-চিন্তা করোনা। তোমাকে সাহায্য করার জন্য একজন সহকারী থাকবে। আমাদের উত্তরার শাখায় কাজ করত। সিলভিয়া রহমান।
-ওকে স্যার। আসি তাহলে।
-আচ্ছা।

রুমে এসে চেয়ারে বসে ভাবছি। বসকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোন হাতে নিতেই বসের ফোন। বস শব্দটা এমন'ই নাকি!! না চাইতেই কোন না কোন কাজ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য আমার বস সেরা।

ফোন ধরে বললাম
-জ্বি স্যার বলুন।
-আমার রুমে আস।
-আচ্ছা স্যার।

বসের রুমের সামনে এসে বললাম
-আসব?
-হ্যা আস।

রুমে ঢুকে চেয়ারে একটা মেয়েকে বসে দেখছি। পিছনে ঘুরে থাকায় মেয়েটির মুখ দেখতে পাচ্ছিনা। বস আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল
-আরে দাঁড়িয়ে কেন!! বস।
-আচ্ছা স্যার।

চেয়ারে বসতেই বস বলল
-এটা তোমার সহকারী, সিলভিয়া রহমান।
আমি কিছু বলার আগেই সে আমার দিকে ঘুরে বলল
-নাইস টু মিট ইউ।
-ধন্যবাদ।

বস আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তো, আজ থেকেই কাজ শুরু করে দাও।
-জ্বি স্যার।
-আর হ্যা, তোমাদের দুজনকে আমাদের সব শাখায় গিয়ে ডাটা কালেক্ট করতে হবে। তারা সবকিছু জেনেই আমাদের সাথে ডিল করবে।
-সমস্যা নেই স্যার। দুই একদিনের মধ্যেই সব হয়ে যাবে।
-আরেকটি কথা, সামনের সপ্তাহেই ওরা আসবে।
-আচ্ছা স্যার।
-তাহলে আজ থেকেই কাজ শুরু কর। সিলভিয়ার কাছে কিছু পেপার্স আছে। ওগুলো দেখলে বাকি কাজ সহজ হবে।
-আসি স্যার।
-যাও দোয়া রইল।

আমি আর সিলভিয়া দুজন মিলে অফিস থেকে বেড়িয়ে পরলাম। সিলভিয়া আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছে। আমি সেটা বার বার বুঝতে পেরেও পাত্তা দিচ্ছিনা।

একটা রিক্সা ডেকে বললাম
-যাবেন?
-হ্যা যাব।
সিলভিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
-উঠুন।
সিলভিয়া আমার কথায় কিছুটা অবাক আর মর্মাহত হয়ে বলল
-আজ আপনি করে বলবে!!
-দেখুন আমরা অফিসের কাছে যাচ্ছি। আপনি আমার সহকারী হলেও আপনাকে যথেষ্ট সন্মান করি।
-আচ্ছা উঠছি।

সিলভিয়ার পাশাপাশি আমি উঠে রিক্সাওয়ালাকে চালাতে বললাম। সিলভিয়া আমার পাশে বসে আছে।

রিক্সা একটা পার্কের পাশ দিয়ে ঢুকাল। এই রাস্তায় জ্যাম কম থাকায় এই রাস্তাই ভাল। পার্কের দিকে চোখ পরতেই মিমের সেদিনের কথা মনে পরে গেল। সেদিন মিম আমার পাশে বসে বলেছিল
-এই শুনো, আমি কিন্তু সিলভিয়া রহমান।
মিমের কথা শুনে হাসতে শুরু করলাম। মিম আমার হাসি দেখে বলল
-হেসো না। মিম নামেই আমাকে সবাই জানে। কিন্তু সার্টিফিকেটে আমার যে আরেকটা নাম আছে, সেটা কেউ জানেই না।
আমি একগাল হেসে বললাম
-ওকে। আজ থেকে এই নামে আমি জানব।

মিম আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
-কি ভাবছ?
-কই!! কিছুনাতো।
-সেইসব দিনের কথা মনে পরে?
-ওসব আগে মনে পরত খুব। এখন মনে আসলেও পাত্তা দেইনা।
আমার কথা শুনে মিম চুপ করে গেল। আমিও চাইনা সেসব পুরাতন কথা এখন বলুক।

★★

কাজ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। তবে একদিনেই সব ডাটা সংগ্রহ করে ফেলেছি। মিম আমার পাশ থেকে বলল
-আমাকে বাসায় যেতে হবে।
-ওকে চলে যাও।
-এতরাতে আমি একা যেতে পারব না।
-সেদিন তো একাই চলে গিয়েছিলে।
মিম আমার কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। তাকে এভাবে খুঁচিয়ে কথা বলা ঠিক হয়নি।

-আচ্ছা। আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসছি।
-ওকে।
-এই ব্যাগ আর পেপার্সগুলো কি করব?
-কিছু তুমি নিয়ে যাও। আর বাকিগুলো আমার কাছে থাক।

মিম ঝড়পট ব্যাগ গুছিয়ে আমার সাথে বেড়িয়ে পরল। এতরাত হলেও এখানে রিক্সার অভাব নেই। একটা রিক্সা ডেকে দুজনে উঠে পরলাম।

রিক্সা চলছে, আমি আর মিম পাশাপাশি বসে আছি। মিম বলল
-সেদিনের কথা মনে আছে?
মিমের কথা শুনেও আমি চুপ করে আছি। সেদিনের কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। মিম আমার পাশে থেকে বলল
-সেদিন অনেক রাতে এভাবেই রিক্সায় দুজন গিয়েছিলাম। তারপরে দুজনে সম্পর্ক শেষ করে দিলাম। জানি সেদিন আমার দোষ ছিল। কিন্তু সেই ভুলের কারনে আজ'ও আমাকে পুড়তে হয়। জানো আজ...
মিম এটুকু বলতেই আমি বললাম
-চুপ কর। সেদিনের কথা শুনতে চাইনা।

রিক্সা এসে মিমের বাসার সামনে থেমে গেল। মিম নেমে বলল
-আমার বাসায় আস।
-না। আজ সময় নেই।
-মা তোমাকে দেখলে খুশি হবে।
-অন্য কোনদিন আন্টির সাথে দেখা করে যাব।

রিক্সাওয়ালাকে ঘুরাতে বলে মিমের চোখের দিকে তাকালাম। মিমের চোখে পানি চিকচিক করছে। আমি সেসব পাত্তা না দিয়ে রিক্সাওয়ালাকে আমার বাসার দিকে যেতে বললাম।

★★

আজ আমাদের কোম্পানির সাথে চায়না কোম্পানির ডিল হবে। প্রেজেন্টেশন এর দায়িত্ব আমাকেই দেওয়া হয়েছে। কাজটা যেহেতু আমার নিজের'ই। তাই প্রেজেন্টেশন আমার'ই।

কোম্পানির লোক আমাদের অফিসে এসে গেছে। আমি মিমের অপেক্ষায় আছি। মিমের কাছে কিছু কাগজপত্র আছে। সে না আসলে কিভাবে হবে!!

মিমকে অনেকবার ফোন দিচ্ছি। কিন্তু সে ফোন ধরছে না। মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে। এতদুর আসার পরে এখন থমকে যেতে হবে!! মিম কি তাহলে আমাকে নতুনভাবে ঝামেলায় ফেলবে!! সেদিনের ঝামেলা কাটিয়ে উঠে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। কিন্তু আজ এমন করলে তো আমার সব এতদিনের শ্রম সাধনা শেষ।

বসের ফোন পেয়েই চমকে উঠলাম। এখন সে আবার কি বলবে কে জানে!! তবুও ফোন ধরলাম
-স্যার।
-তুমি কোথায়?
-আমি অফিসে।
-তাহলে প্রেজেন্টেশনে এত দেরি করছ কেন!! তারা কি তোমার জন্য তাদের মুল্যবান সময় নষ্ট করবে!!
-স্যার।
-তুমি এখন'ই তাদের সাথে কথা বল। মনে রেখ, তোমার জন্য কোম্পানির দুর্নাম হলে তোমার চাকরি থাকবে না।

আমি আর কিছু বলার আগেই স্যার ফোন কেটে দিল। এমনিই চিন্তায় আছি। তারপরে আবার নতুন চিন্তা ধরিয়ে দিল। কি করব বুঝতে পারছিনা। মিম তো ফোন ধরছেই না।

ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেড়িয়ে পরলাম। আমার কাছে থাকা পেপার্স নিয়েই প্রেজেন্টেশন করব। তাতে যা হবার হবে।

মিটিং রুমে ঢুকে সবার সাথে সাক্ষাত বিনিময় করলাম। তারপরে আমার মত আমি প্রেজেন্টেশন শুরু করে দিলাম। তারা মুচকি হেসে আমার থেকে পেপার্স দেখল। আমাদের কোম্পানির সব বুঝাতে থাকলাম।

★★

অনেক্ষন আগে মিটিং শেষ হয়েছে। চায়না কোম্পানির লোকগুলো চুপচাপ চলে গিয়েছে। তারা কি করবে জানিনা। মিমের ওই পেপার্সগুলো থাকলে এত ঝামেলা হত না। মিম কি নতুন করে আমার সাথে প্রতারনা করল!!

বসের ডাক পেয়ে দুরু বুক নিয়ে বসের রুমে ঢুকলাম। বস আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে বলল
-কংগ্রাচুলেশনস।
আমি চুপ করে আছি। চাকরি যাওয়ায় কি তাহলে অভিনন্দন জানাচ্ছে!!
বস আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এই নাও প্রোমোশন লেটার।
-থ্যাংকস।

স্যারের হাত থেকে প্রোমোশন লেটার নিয়েই বের হয়ে এলাম। আর কিছু বলার ভাষা নেই। হঠাৎ চমকে গেলে মানুষ এভাবেই মনেহয় বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।

-স্যার মিমেম খবর শুনেছেন?
মিমের নাম শুনেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। এই মিমের কারনে আজ চাকরি হারাতে বসেছিলাম। আর পুরাতন কথা বাদ দিলাম। তবুও গম্ভীর মুখে বললাম
-কিসের খবর।
-ও তো কাল থেকে হাসপাতালে। খুব অসুস্থ।
-কি অসুখ?
-জানিনা। তবে আপনি একবার যান।

আমি আর কথা না বলে বেড়িয়ে পরলাম। হঠাৎ মন কেন বদলে গেল জানিনা। দিলিপের কাছ থেকে হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে নিয়েছি।

হাসপাতালে এসে রিসিপশন থেকে তথ্য নিয়ে মিমের কেবিনে চলে এলাম। মিমের কাছে এসে মন কেঁদে উঠল। বেডে মরার মত হয়ে পরে আছে। আর কিছু দেখার আগেই মিমের মায়ের কাছে গেলাম।

মিমের মা আমাকে দেখে বলল
-কেমন আছ?
-ভাল আছি। মিমের কি হয়েছে সেটা বলুন আগে।
-মিমের কিডনিতে সমস্যা। এই সমস্যার কারনেই সেদিন তোমার সাথে সম্পর্ক শেষ করে দেয়। তুমি কষ্ট পাবে ভেবে বলেনি। তোমার মনে তার জন্য ঘৃনা সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু শেষে এসে সে তোমার কাছাকাছি আবার যাওয়ার চেষ্টা করে। অসুস্থতা আর তোমাকে হারানোর যন্ত্রনায় সে বেশি ভেঙে পরে। কালকে অজ্ঞান হয়ে গেলে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
-এসব আমাকে আগে জানান নি কেন!!
-মিম জানাতে দেয়নি।
-এতদিনে ওর চিকিৎসা করান নি কেন!!
-টাকা হয়নি। তুমি জানোতো আমাদের অবস্থা। ওর বাবা মারা যাওয়ার পরে কিছুদিন কষ্টে যায়। তারপরে ও চাকরি পেলে আমাদের সংসার ভালমতো চলে। কিন্তু বারো লাখ টাকা কিভাবে জোগাড় করব!!

আন্টির কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম
-টাকা আমি দেব। আমি মিমের চিকিৎসা করাব। আমি মিমকে আমার থেকে হারাতে দেব না।

আন্টি কিছু বলার আগেই আমি হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে ব্যাংকে রওনা দিলাম। নিজের ভবিষ্যৎ এর জন্য ব্যংকে তের লাখের মত টাকা জমিয়েছিলাম। মিমকে যদি হারাই তাহলে সে টাকা দিয়ে কিভাবে ভবিষ্যৎ গড়ব!! এই টাকা দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে মিমের চিকিৎসা করাব। মিমকে পেয়ে হারাতে চাইনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.