নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল ছেলে!

জুবায়ের হাসান রাব্বী

পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।

জুবায়ের হাসান রাব্বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিরিয়াল এবং বউ

২০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৪৪

টিভির সামনে সোফায় সোফায় বসেই রিমোট হাতে নিলাম। রিমোট হাতে নিয়ে চ্যানেল বদলে আয়েশ করে বসলাম। এই ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের চ্যানেল নাম শুনলেই মেজাজ খারাপ হয়, তারপরে আবার দেখার প্রশ্নই আসেনা।

-চ্যানেল বদলে দিলে কেন!!
অধরা আমার হাত থেকে রিমোট নিয়ে চ্যানেল বদলে দিতেই অবাক হয়ে গেলাম। আমি কিছু বুঝার আগেই আমার হাত থেকে সে রিমোট নিয়ে চ্যানেল বদলে দিল। আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না।

চোখের সামনে ইন্ডিয়ান সিরিয়াল আসতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আমি অধরার হাত থেকে রিমোট নিতে গেলে অধরা তার আগেই হাত সরিয়ে নিল। এর হাত থেকে রিমোট নেওয়া সম্ভব না। বাঙালি নারীর কাছ থেকে রিমোট ছিনিয়ে নেওয়া সবচেয়ে কষ্টসাধ্য কাজ।

-এই চ্যানে বদলে দাও।
অধরা আমার কথা শুনেও কোন বিকার নেই। ভাব দেখে মনেহয় আমার কথা শুনতেই পায়নি। আমি এবারে কিছুটা রেগে বললাম
-চ্যানেল বদলাও।
-না।
-এসব বাজে চ্যানেল দেখে মেজাজ খারাপ করতে চাইনা। বদলে দাও।
-এই চ্যানেল'ই দেখতে হবে। চুপ করে দেখ।
-না।
-দেখতে বলছি দেখ।
জানি কথা বলে কাজ হবেনা। অধরা সেই আগে থেকেই এমন। সে যেটা বুঝবে সেটাই বড়। এমনকি তার বাবা-মায়ের কাছেও সে যা বুঝে সেটাই বড়। আরকিছু শোনার প্রয়োজন মনে করেনা।

ভার্সিটির প্রথম ক্লাস বাদ দিয়ে দ্বিতীয় ক্লাসে আসলাম। ক্লাস ফাকি দেওয়ায় আমি খুব পারদর্শী। ক্লাসে বসে তবুও মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছি।

-এই আপনার সমস্যা কি!!
একটা সুন্দরি মেয়ে পিছন ঘুরে আমার দিকে চোখ রাঙাতে শুরু করল। আমার তো কোন সমস্যা নেই। সমস্যা থাকলেও এই মেয়ে চোখ রাঙাবে কেন!!

-কি ব্যাপার এভাবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন কেন!! ভাব যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেন না!
মেয়েটির চোখ রাঙানো দেখে ভয় পাওয়ার বদলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম
-আমার সাথে এইরকম করার মানে কি!
-তো কি করব! আপনি আমার গায়ে বারবার কাগজের টুকরা বারবার কাগজের টুকরা ছুড়ে মারছেন কেন!
-আমি কাগজের টুকরা মারলাম কখন!
-অপরাধ করে আবার মিথ্যা কথা!
-দেখুন। মেজাজ খারাপ করবেন না। আমি আপনার গায়ে কাগজের টুকরা মারিনি।
-মিথ্যা বলেন কেন! স্বীকার করলেই তো হয়।
-আমি না করে সেটা স্বীকার করব কেন! আজব!
মেয়েটি রেগে বলল
-দেখুন। বেশি কথা বললেন না। আমি স্যারের কাছে কমপ্লেইন জানাতে বাধ্য হব কিন্তু।
কথা শুনে মেজাজ আরো বিগড়ে যাচ্ছে। তাই এখানে আর না।

পুরো ক্লাস না করেই ক্লাস থেকে বেড়িয়ে এলাম। মেজাজটাই খারাপ করে দিল। কাগজ ছুড়ে মারিনি, তবুও এমন আচরন। আর যদি মেরেও থাকি, তবে সামান্য ব্যাপার নিয়েই এতকিছু!

-এই যে শুনুন।
ডাক শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম। ক্যাম্পাসের রাস্তা ধরে সোজা হাটছিলাম। পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম সেদিনের সেই মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। আমি মেজাজ গরম করেই বললাম
-কি! আজ আবার মেজাজ দেখাবেন নাকি!
-আমি সরি।
-সরি কিসের জন্য!
-সেদিন আপনাকে বিনাদোষে আপনাকে অনেক কথা কথা বলেছি। পরে জানতে পারলাম আপনার কোন দোষ ছিল না। আপনার পাশে বসা ছেলেটি আমার পাশে বসা মেয়েটিকে কাগজ ছুড়ে মেরেছিল।
আমি মুচকি হেসে বললাম
-তাহলে অবশেষে বুঝতে পারলেন!
-হুম। সেদিন সামান্য কাগজ ছুড়ে মারার জন্য এমনাভবে বলাও ঠিক হয়নি। আসলে আমি এমন'ই। আমার উপরে কেউ কথা বললেই রেগে যাই।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম
-সমস্যা নেই। আমি কিছু মনে করিনি।

আমি কথা শেষ করে আবার ক্যাম্পাসে হাটা শুরু করলাম। এই ক্যাম্পাস আমার প্রিয় জায়গা। হাটতে আরো বেশি ভাল লাগে। এই ক্যাম্পাসের জন্যই হয়ত ভার্সিটিতে আসি। এখানে আমাদের আড্ডা জমে ভাল।

অধরার সাথে পরিচয় এভাবেই শুরু। সেদিনের পর থেকে দুজন কাছাকাছি চলে এসে দুজনের প্রেম। বিয়েটা দুই পরিবারের মতেই হয়। কারন কেউ কারো অযোগ্য ছিলাম না। তবে অধরার সেই প্রথম দিনের স্বভাব আজ'ও আছেই।

ফোন পেয়ে সোফা থেকে উঠে এলাম। টিভির সামনে বসে ফোনে কথা বলতে সমস্যা হয়। একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। ব্যালকুনিতে এসে ফোনটা ধরলাম।

-হ্যালো।
-কেমন আছেন? রাব্বি সাহেব।
কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। অপরিচিত কোন নাম্বার থেকে মেয়েকন্ঠ এভাবে কথা বলছে! আমাকে মনেহয় সে চিনে।
-ভাল আছি। কিন্তু আপনাকে তো...
-আমাকে চিনলেন নাতো! না চেনার কথা। তবে আমাকে আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ভাবতে পারেন।
-শুভাকাঙ্ক্ষী!
-তবে আমাকে একজন বন্ধু ভাবতে পারেন। নাকি তাতেও কোন সমস্য আছে?
-না কোন সমস্যা নেই।
-আপনি বিরক্ত হচ্ছেন নাতো? কিছুক্ষণ কথা বলা যাবে?

ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের ঘ্যানঘ্যানানির চেয়ে এই মেয়ের সাথে কথা বলাই ভাল। আমি বললাম
-না কোন সমস্যা নেই। বলা যাবে।
-ধন্যবাদ।

-কার সাথে এত হেসে কথা বলছ!
পিছনে তাকিয়ে দেখলাম অধরা দাঁড়িয়ে আছে। ফোনে হেসে হেসেই কথা বলছিলাম। মেয়েটি খুব ফ্রেন্ডলি। এইটুকু সময় কথা বলেই ভাল বন্ধত্ত হয়েছে।

-কার সাথে কথা বলছ! নাম্বার তো সেভ করা নয়। দেখি কার সাথে কথা বলছ?
অধরা আমার কাছ থেকে ফোন নিয়ে কথা কানের কাছে নিল। কিছুক্ষণ পরে অধরা রেগে গেল। ওপাশ থেকে কি বলছে বুঝতে পারছিনা। সবশেষে অধরা বলল
-এই মেয়ে, আমার স্বামীকে আর ফোন দিবেনা। ফোন দিলে তোমার খবর আছে কিন্তু।

-টিভি দেখবে চল। আমি চ্যানেল বদলে দিচ্ছি।
অধরা ফোনের লাইন কেটে আমার হাতে ফোন দিয়ে দিল। হাত ধরে টানতে টানতে টিভির রুমে নিয়ে এল।
-তুমি দেখ।
-আমি বলছি তুমি টিভি দেখবে।

আমি অধরার পাশে বসে টিভি দেখতে লাগলাম। রিমোট এখন আমার হাতে। চ্যানেলটাও আমার ইচ্ছামত। অধরা হঠাৎ সোফা থেকে উঠে বসল। তার ভাল না লাগলে চলে গেলেও সমস্য নেই।

-এই। তুমি সোফার উপরে আধাশোয়া হয়ে পিঠ লাগিয়ে বস।
-কেন?
-দরকার আছে।
আমি সোফার উপরে পিঠ লাগিয়ে আধা শোয়া হয়ে বসলাম। অধরা কিছু না বলে আমার কোলের ভেতরে এসে বসল। কি করবে বা কি করতে চাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।

-এখন আমাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বসে থাকবে।
অধরার কথা শুনে এতক্ষনে আসল।কাহিনি বুঝতে পারলাম। এখন তার প্রেম জেগে উঠেছে।

হঠাৎ ফোনে একটা মেসেজ আসতেই খুলে দেখলাম "হারামি, ভাবি মনেহয় বেশি রেগে গিয়েছে। তুই সামলা।"
সেই অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। এইভাবে তো মুন আমাকে ডাকত। তারমানে মুন গলা চেঞ্জ করে ফোন দিয়েছিল!! রাগ হওয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে না। কারন সময়মত ফোন দিয়ে ভালই উপকার করেছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৪৯

চিন্তিত নিরন্তর বলেছেন: বউ আনলে টিভি আনমু না, টিভি থাকলে বিয়েই করুম না।

২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৫৭

সৈয়দ আবুল ফারাহ্‌ বলেছেন: এটা কেমন কথা। বউ/স্ত্রী যে চ্যানেল দেখে আপনি সে চ্যানেল দেখেন না ! আচরণিক পরিবর্তন দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.