নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল ছেলে!

জুবায়ের হাসান রাব্বী

পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।

জুবায়ের হাসান রাব্বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ সত্যিকারের ভালবাসা

২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪৮

-এই যে মজারাজ, এবারে ঘুম থেকে উঠুন।
ডাক শুনে ঘুম ভেঙে গেল। মেজাজটা খারাপ করে চোখ মেলে তাকালাম। সকালে সুখের ঘুম নষ্ট করলে মেজাজটা খারাপ হবেই। তারপরে যদি এভাবে কেউ ডাকে তাহলে তো রাগ বেশি বেড়ে যায়।

বিছানা ছেড়ে উঠতেই বাবা বলল
-এবারে নাস্তা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।
আমি কোন উত্তর না দিয়ে বিছানা থেকে নেমে বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়ালাম। বাবাকে ডেকে বললাম
-আমার দুই হাজার টাকা লাগবে।
আমার কথা শুনে বাবা যেন তিরস্কারের চোখে তাকাল।

-দুই হাজার টাকা! এত টাকা দিয়ে কি হবে!
বাবা গম্ভীরভাবে কথাগুলো বললেন। আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে বললাম
-আমার টাকা লাগবে। অত কিছু জনিনা।
-ও।
বাবার শেষ কথাটির মাঝে বিরক্তির ছাপ প্রকাশ পেতে দেখলাম। এটা আমার জন্য নতুন কিছুনা। চাকরি যোগ্য কোন ছেলে বাবার ঘারে বসে খেলে বাবা বিরক্ত হবেন এটাই স্বাভাবিক। তারপরে নিয়মিত এইরকমভাবে টাকা নিলে বিরক্ত হবেই।

হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বাবাকে বসে থাকতে দেখলাম। এখনো খেতে বসেনি। আমি তার বসে থাকা দেখে বললাম
-এখনো খাওনি!
বাবা আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলল
-তোকে ছাড়া আমি কখনো খেয়েছি!
-তবে শুরু কর।

বাবার সাথে নাস্তা খেতে শুরু করলাম। বাবা নাস্তা করা থামিয়ে বলল
-তো, চাকরি করবি নাকি এভাবেই বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াবি!
-চাকরি করে কি চাকর হব! আর আমার বাবার কিসে কম আছে, যে আমাকে চাকরি করতে হবে!
আমার কথা শুনে বাবা চুপ করে গেল। এর আগে অনেকবার বাবা এই প্রশ্ন করেও এইরকম উত্তর পেয়েছে। বাবা হতাশ না হয়ে অনেকবার প্রশ্ন করে যায়, আর আমি এইরকম উত্তর দিয়ে যাই।

আমার খাওয়া শেষ হলে প্যান্ট পরে নিলাম। বাবার কাছে টাকা চেয়ে পাইনি। পকেট খালি হলে বাইরে গিয়ে শান্তি লাগেনা। নিজেকে ফকির ফকির লাগে!

-এই নে টাকা।
বাবা টাকা রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। এখন আর বাবার উপর রাগ নাই। টাকা পেলে আর রাগ থাকে কিভাবে! অনেক কথা বলার পরেও টাকা পাওয়া যায় এই বাপের ব্যাংক থেকে।

অনেক্ষণ রিমির জন্য অপেক্ষা করছি। কলেজের সামনে একা একা দাঁড়িয়ে থাকা বিরক্তিকর। তাই কিছু বন্ধুদের সাথে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

-এই ছেলেকে চিনিস?
সমির আমাকে খোঁচা কথাটা বলল। আমি ওর কথায় অবাক হলাম। সামনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকা
ছেলেটির দিকে তাকালাম। এই ছেলেকে আমি চিনিনা। চেনার কথাও না। কারন এই ছেলেকে চিনে আমার কোন কাজ নাই। তবুও আগ্রহ নিয়ে বললাম
-কে ছেলেটা?
-রিমির প্রেমিক।

সমিরের কথায় আমি চুপ করে আছি। হাসব নাকি সমিরকে ধরে মারব বুঝতে পারছিনা। রিমিকে নিয়ে আমার সাথে মজা করার মানে কি! আমার ভাব দেখে সমির বলল
-এই ছেলের সাথে আমি রিমিকে অনেকবার দেখেছি।
-আরে ওর কাজিন হতে পারে।
-কাজিন হলে কেউ ওভাবে ঘোরে! তুই খোঁজ নিয়ে দেখ।

সমিরের কথায় কিছুটা চিন্তিত হয়ে গেলাম। সমিরকে দিয়ে ছেলেটিকে ডাক দিলাম। আমি সমিরকে পাশে দাঁড়াতে বলে ছেলেটিকে সালাম দিলাম। ছেলেটি আমার সালামের উত্তর দিয়ে দাঁড়িয়েই থাকল। আমি ভদ্রভাবে বললাম
-ভাইয়া, আপনি কি রিমির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন?
-হ্যা। কিন্তু আপনারা কারা?
-আমরা ওর মহল্লার। এমনিই এদিকে ঘুরতে আসছি। আপনাকে দেখে মনেহল রিমির পরিচিত কেউ। তাই ডাক দিলাম।
-ও, আচ্ছা।
-রিমি আপনার কে হয়?
-আমরা প্রেমিক প্রেমিকা। দুই বছর হল আমাদের রিলেশন।

ছেলেটির শেষ কথা শুনেই আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। রিমির প্রেমিক! তারমানে সমিরের কথা ঠিক! আমি ছেলেটির হাত ধরে বললাম
-ভাইয়া। একটু সাইডে আসেন প্লিজ। জরুরি কথা আছে।

ছেলেটিকে সাইডে এনে বললাম
-আপনি রিমির কে হন?
-প্রেমিক।
কথা শুনার সাথে সাথে মাইর শুরু করলাম। সমিরসহ অন্যদের বললাম
-মার শালারে। ওরে আজকে প্রেম শিখাব।

-ছাড়, ছাড়। বেশি মারলে মরে যাবে। তখন আরেক ঝামেলা।
সমির আর কয়েকজন মিলে আমাকে থামাল। আমার শরীরের রাগ এখনো মিটে নাই। মনেহয় তাকে মেরে ফেলতে পারলে রাগ কমবে।

ছেলেটিকে ওখানেই রেখে বাসায় চলে এলাম। এখন আর রিমির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা যাবেনা। এমনিতেই রিমি আমার মারপিট স্বভাব সহ্য করতে পারেনা। তারপরে আবার ওর পরিচিত কাউকে মেরেছি। এটা শুনতে পারলে আমি শেষ!

আজ দুইদিন হল রিমির সাথে কোন যোগাযোগ নেই। আমার ফোন রিসিভ করছে না। ছেলেটিকে মারার পরে আর ওর সাথে যোগাযোগ হয়নি। ছেলেটিকে মারতে চাইনি। কিন্তু ওর কথা শুনে মাথায় রাগ উঠে গিয়েছিল।

আজ দুইদিনের মধ্যে অনেকবার রিমির বাসার সামনে গিয়েছি। কিন্তু ওর কোন দেখা নেই! ওর কোন খোঁজ'ও জানিনা। তাহলে ও কোথায় গেল!

সমিরের ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হলাম। সমির বলল রিমিকে দেখেছে সে। কথাটা শোনা মাত্রই বাসা থেকে বের হয়ে পরেছি।

সমিরের বলা চায়ের দোকানের কাছে আসতেই থমকে দাঁড়ালাম। রিমিকে দেখে ভাল লাগার বদলে রাগ উঠে যাচ্ছে আমার। রিমির পাশে সেই ছেলেটি। কিন্তু এত ঘনিষ্ঠ হয়ে বসার মানে কি!

রিমির সামনে দাঁড়াতেই রিমি উঠে দাঁড়াল। সাথে ছেলেটিও দাঁড়াল। আমি রিমির দিকে তাকিয়ে বললাম
-ছেলেটি কে?
-আমায় বয়ফ্রেন্ড।
-কে!
-শুনতে পাওনি! আমার বয়ফ্রেন্ড। দুই বছর আমাদের সম্পর্ক।

রিমির কথা শুনে আমার মুখে কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। খুব সহজভাবে সে উত্তর দিয়ে দিল। আমি তবুও রিমিকে জিজ্ঞেস করলাম
-আমি তাহলে তোমার কে!
-একজন মহল্লার প্রতিবেশি।
-প্রতিবেশি! তাহলে এতদিনের ভালবাসা!
-কিসের ভালবাসা! তোমার মত একটা ছেলেকে কি দেখে ভালবাসব! একটা বাউন্ডুলে ছেলে। সারাদিন যে মারামারি আর ঘুরে বেড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাকে ভালবাসব!

রুমে চুপ করে শুয়ে আছি। বাবা অনেকবার খাওয়ার জন্য ডেকেছে। আমি সেসব না শুনে শুয়েই আছি। রিমির কাছ থেকে আসার পরে মনটা বেশি খারাপ হয়ে আছে। ভাল হতে গিয়েও বুঝি ভাল হওয়া যায়না। কোন এক ঘটনা জীবন বদলে দেয়।

-কিরে। তোকে কতবার ডাকলাম। খাবিনা!
-না।
-কেন খাবিনা?
-ইচ্ছা করছে না।
-কেন?
-যাওতো বিরক্ত করো না।

বাবাকে রাগ করে কথা বলার পরে বাবা চুপ করে আছে। আসলে এভাবে না বললেও পারতাম। মন খারাপ হওয়ার কারনে কিছু ভাল লাগছে না।

-কিরে। তোর মন খারাপ কেন!
-এমনিই।
বাবা আমার কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-বাবারে। তোর এই মন খারাপ দেখলে আমার বেশি মন খারাপ হয়ে যায়। জানিস! তোর মা আর আমার লাভ ম্যারেজ ছিল। তুই ছিলি আমাদের চোখের মধ্যমনি। তোর মা তোর চোখের পানি সহ্য করতে পারত না। তোর মা মারা যাওয়ার পরে অনেকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু করিনি। কারন সৎমা কখনো তোকে দুঃখ দিলে আমি সহ্য করতে পারিনি। তোকে এত কথাই শুনাই, এত বকি। তারপরে কিন্তু আমার নিজের'ই খারাপ লাগে। বাবারে তোর চোখের পানি সহ্য করতে পারিনা।

বাবা কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে গেল। কথাগুলো শুনে আমি চুপ করেই আছি। বাবা আবার
-তোর কত টাকা লাগবে? যত লাগে নিয়ে যা। যেকোনো মুল্যে আমি তোর মুখের হাসি দেখতে চাই। ইচ্ছামত ঘুরবি। যত অভিযোগ আসে আসুক।

বাবার কথা শুনেই বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। এতক্ষণে চেপে থাকা কান্না ঝরে যাচ্ছে। এই মানুষটাই আমাকে বুঝে। এই মানুষটাই আমাকে আপন করে বুকে জড়িয়ে রাখে। এই মানুষটার সাথে আর কিভাবে আর খারাপ ব্যাবহার করি! আমি কাঁদতে বললাম
-আব্বা, আমি সরি।
বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
-সব ঠিক হয়ে যাবে।
এই মানুষটা আমাকে সত্যিকারের ভালবাসে। এই মানুষটার ভালবাসায় কোন মিথ্যে নেই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:০৯

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:
মহারাজ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.