নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল ছেলে!

জুবায়ের হাসান রাব্বী

পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।

জুবায়ের হাসান রাব্বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ ব্রেকাপের ভয়

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৪

রুমে ঢুকে দেখলাম, ইশিতা বসে আছে। ভেবেছিলাম, ইশিতা হয়ত ঘোমটা টেনে বসে থাকবে। কিন্তু তার উল্টো। ফোনে কথা বলে তাকে লাজুক মনে হয়েছে। হয়ত গরমের কারনে ঘোমটা সরিয়ে রেখেছে।

আমাকে দেখে ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকল। এতক্ষণ হয়ত আমার অপেক্ষায় বসেছিল। আমি রুমে ঢুকে তারপাশে বসলাম। এই মেয়েটা আমার বউ। কিন্তু নামটাই শুধু জানি।

হঠাৎ করেই যেন বিয়ে হয়ে গেল। তাই মেয়েটার নাম জানা ছাড়া আর কিছুই সম্ভব হয়নি। বিয়ে পড়ানোর সময় নামটা জেনেছি।

দুপুরে নামাজ পরে এসে ভাত খাচ্ছিলাম। হঠাৎ দুলাভাই এসে ডাকতে শুরু করল। আমি খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছিলাম। দুলাভাই এসে বলল
-তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।
আমার খাওয়া এতক্ষণে শেষ হয়ে গিয়েছে। হাত ধুতে ধুতে বললাম
-কেন!
দুলাভাই হাসতে হাসতে বলল
-তোর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যেতে হবে।

দুলাভাইয়ের কথায় তৈরি হয়ে নিলাম। বাবা-মা দুপুরের দিকে বাইরে গিয়েছে। এখন শুধু মেয়ে দেখতে যাব। তাই বাবা-মাকে না জানালেও চলবে।

তৈরি হয়ে দুলাভাইয়ের সাথে বেড়িয়ে পরলাম। দুলাভাই আমাকে নিয়ে একটা বাড়িতে চলে এল। দেখে মনেহয় ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান।

আমাদের আসার কথা শুনে এত আয়োজন করেছে! তাহলে বিয়েতে কেমন আয়োজন হবে! ভাবতে ভাবতে দুলাভাইয়ের সাথে বাসার ভেতরে ঢুকলাম।

কিছুক্ষণ বসে থাকার পরে মেয়ে দেখাতে নিয়ে এল। মেয়েকে দেখে অপছন্দ হওয়ার কোন কারন নেই। টানা টানা চোখ আর সুন্দর মুখশ্রী। এ যুগে তবুও মেকাপের কারসাজি আছে।

মেয়ে দেখানোর পরে নিয়ে যাওয়া হল। দুলাভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কিরে মেয়ে পছন্দ হয়েছে?
-না হওয়ার কিছু নেই।
-তাহলে বিয়ের আয়োজন করতে বলি।

দুলাভাই চলে বাইরে বের হতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। সামনে বাবা-মা, আপু সবাই এসেছে। এরা কোথা থেকে আসল! বাবা-মায়ের নাকি বাইরে যাওয়ার কথা।

বিয়ের জন্য সবকিছু আগে থেকেই কেনা হয়ে গিয়েছে। পুরোটাই যে, পুর্ব পরিকল্পিত সেটা খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছি। তাই কিছু না বলে বিয়ের জন্য প্রাস্তুতি নিয়ে নিলাম।

ভেবেছিলাম বিয়ে রেজিস্ট্রি করে রেখে দিবে। বাবা মুচকি হেসে বলল
-বেয়াই, আমরা আমাদের বৌমাকে নিয়ে যাব। পরে বড় করে অনুষ্ঠান করা যাবে।
বিয়ে এবং সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেল।

-আপনি আলাদা বিছানায় ঘুমাবেন। আমি আপনার পাশে থাকব না।
ঘরটা ভাল করে দেখছিলাম। এত তাড়াতাড়ি বাসর ঘর সাজানো হয়ে গিয়েছে! ইশিতার কথা শুনে চমকে গেলাম। বিয়ের প্রথম রাতে বউ এর কাছে এমন কথা শুনলে অবাক হওয়া স্বাভাবিক।

আমি আলাদা শুব মানে কি! এই বিয়েতে কি মেয়ের মত নেই! তাহলে জোর করে বিয়ে দিয়েছে কেন। নাকি মেয়ের অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে। সেই প্রেমিক মেয়েটিকে বলে দিয়েছে "তোমার শরীর আমি ছাড়া কেউ স্পর্শ করবে না"

শেষে এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে হল! এমন মেয়ে বলেই কি তাড়াতাড়ি এভাবে বিয়ে দিয়ে দিল। ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যাচ্ছি।

মেয়েটি আমার চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি ঘুমানোর সময় পাশের জনের গায়ের উপর পা তুলে দেই। ঘুমের মধ্যে অন্যজন এটায় বিরক্ত হয়। তাই বললাম আর কি!

মেয়েটির কথা শুনে সস্তি ফিরে পেলাম। তারমানে মেয়েটির অমতে বিয়ে হয়নি। আর তার কোন প্রেমিক নেই। শুধু শুধু মেয়েটিকে উল্টাপাল্টা ভাবছিলাম।

আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম
-সমস্যা নেই। আমার অভ্যাস আছে।
-আগেও আপনি বিয়ে করেছিলেন নাকি! যে এইরকম অভ্যাস আছে।
-আরে না। আমরা আগে কয়েকজন বন্ধু বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। তখন এভাবেই থাকতে হত।

মেয়েটি আমার কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসছে। তার মুখের মাঝে দুষ্টমি ভরা হাসি। মেয়েটির হাসির মাঝে একটা ব্যাপার আছে। যে কারো মন জয় করে নিতে এই হাসিটাই যথেষ্ট।

-আপনি বসুন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আমি সাজানো বিছানায় বসে থাকলাম। ইশিতা চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশরুমে গেল। প্রথমে মেয়েটিকে যতটা বোকা মনে করেছিলাম, এখন ততটা চঞ্চল মনেহয়। তবে কথা বলার ধরন সহজ সরল।

-আপনি চেঞ্জ করবেন না?
ইশিতা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। এখন মুখে কোন মেকাপ নেই। মুখটা অপরুপ সুন্দর লাগছে। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে। আমি তার দিকে তাকিয়েই বললাম
-হ্যা। যাচ্ছি।

-শুনুন। রাতে আমি একা একা ঘুমাতে পারিনা। পাশের জনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই।
ইশিতার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম। এই মেয়ে বলে কি! এত বড় মেয়ে কি তাহলে একা একা ঘমাতে পারেনা।

-বাসায় কিভাবে ঘুমাতেন?
আমার কথা শুনে হেসে বলল
-বাসায় আমার বি এফ ছিল। তাকেই জড়িয়ে ঘুমাতাম।
বি এফ ছিল মানে! শুনেই চমকে গেলাম। এই মেয়ে বলে কি! রাতে বি এফ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমাত!

-আমার বি এফ এর ছবি দেখবেন?
ইশিতা দুষ্টমিভরা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বি এফ এর কথা বলার সময় মেয়েরা হাসিমুখে বলে। এই মেয়ে ব্যাতিক্রম হবে কেন!

-এখন ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপরে ছবি দেখাব।
আমি ওয়াশরুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ইশিতার বি এফ চেয়ে আমি কি সুন্দর! সুন্দর বলেই কি বি এফ ছেড়ে আমাকে বিয়ে করল। নাকি আমি প্রতিষ্ঠিত বলে। ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম ইশিতা মুচকি হাসছে। আমি মুখে পানি দিলেও মুখ শুকিয়ে আছে। বউ এর বি এফ এর গল্প শুনলে যে কারো মুখ শুকনা হয়ে যাওয়ার কথা।

-এই দেখুন আমার বি এফ ছবি।
ইশিতার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলাম। ইশিতার মোবাইলে একটা টেডিবিয়ারের ছবি। এটাই নাকি ওর বি এফ! আমার হাসি দেখে ইশিতাও হাসতে হাসতে বলল
-এটাই আমার বি এফ। মানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। প্রতিদিন রাতে একে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই।

ইশিতাকে দেখে মনেহয় একটু দুষ্টু টাইপের। সুন্দরি মেয়ে একটু দুষ্টু হতেও পারে। ইশিতা আমার সামনে এসে বসল। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। ইশিতা বলল
-শুনুন। আমার অনেকদিনের শখ বিয়ে করে বরের সাথে প্রেম করব। আমি আপনার সাথে প্রেম করতে চাই করবেন?

আমি চুপ করে বসে আছি। নতুন বউ এর কাছ থেকে এমন প্রস্তাব পেয়ে অবাক হওয়ার কথা। আমি সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে মুখে লাগালাম। ইশিতার দিকে তাকিয়ে বললাম
-হ্যা প্রেম করব।
ইশিতা আমাকে অবাক করে দিয়ে মুখ থেকে সিগারেট কেরে নিয়ে বলল
-সিগারেট খাওয়া চলবে না। আগে যা করার করছ। আজ থেকে সিগারেট বাদ। নাহলে কিন্তু ব্রেকাপ।

ইশিতার কথামত সিগারেট খাওয়া বাদ দিলাম। নতুন প্রেমিকার কথা শুনতেই হবে। নাহলে আবার সমস্যা। ইশিতা বলল
-এখন আমরা বাইরে বসে চাঁদ দেখব। চলো।
-এত রাতে বাইরে!
-তো কি হয়েছে! আমি বলেছি তুমি যাবে।
-তাই বলে....
-কোন কথা না। বেশি কথা বললে ব্রেকাপ।

আমি ইশিতার দিকে তাকিয়ে বললাম
-চলুন।
ইশিতা এবারে রাগ দেখিয়ে বলল
-প্রেমিকা কে কেউ আপনি বলে! তুমি করে বল।
-আচ্ছা।
-হাত ধর। দুরে দুরে থাকবে না।

ইশিতা আর আমি পুকুরপাড়ে বসে চাঁদ দেখছি। চাদের আলোটা আজ বেশ ছড়িয়ে পড়েছে। ইশিতার কথাগুলো শুনছি আর ওর কথা মেনে চলার চেষ্টা করছি। কথা না শুনলেই নাকি ব্রেকাপ!

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৯

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: চমৎকার

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:২৯

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১০

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: রূপকথা।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:২৮

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: কাল্পনিক বটে

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৭

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৩১

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: থ্যংকু থ্যংকু

৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৫৭

অবনি মণি বলেছেন: অসাধারণ!!

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৫

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩১

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা ভালই লাগছিল, লাস্টে যেয়ে কেমন জানি লুতুপুতু টাইপের হয়ে গেছে :(
ব্যাপার না, চালিয়ে যান :)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৪

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: শেষে রোমান্টিক করতে গিয়ে একটু লুতুপুতু হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.