নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল ছেলে!

জুবায়ের হাসান রাব্বী

পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।

জুবায়ের হাসান রাব্বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ মায়ার সংসার

১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১০




এক

আশিক অনেক্ষণ ধরে পায়চারী করছে। এই সন্ধ্যাবেলায় শরীর ঠিক রাখার জন্য সে পায়চারী করছে না। একজনের জন্য অপেক্ষা করছে বলেই এমন পায়চারী করছে।

দিশা ফোন ধরছে না! আশিকের মনে সত্যিই চিন্তা ঢুকে গেল। কোন বিপদ হল না তো! এতক্ষণে চলে আসার কথা। আশিকের মুখ ঘেমে এখন ঘাম ঝরছে।

হঠাৎ দিশার ফোন পেয়ে আশিক তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করল। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে দিশা বলল
-সমস্যা হয়েছে। আর এভাবে ফোনে কথা বলাও হবে না। বাড়ি থেকে সব জেনে গিয়েছে। ভাল থেকো।

আশিক কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিল। আশিকের এখন কেঁদে ফেলতে ইচ্ছা করছে। বেশি চিন্তায় কান্না চলে আসছে!

-এইযে কি সাহেব। কি ভাবছেন এত!
আশিক বারান্দায় চুপ করেই দাঁড়িয়ে ছিল। পিছন থেকে দিশার ডাক শুনে কিছুটা সারপ্রাইজড হয়ে গেল। ফিরে তাকিয়ে দেখে দিশা হাসছে।

-খুব চিন্তায় পরে গিয়েছিলে নাকি!
দিশার হাসতে হাসতে কথা বলছে। আশিকের এবারে রাগ বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে ভয় পাওয়ানোর মানে কি!

-চলো, ভেতরে সবাই অপেক্ষা করছে।
দিশার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে এল। দিশার হাসি দেখলে রেগে থাকার ক্ষমতা নেই।

ভিতরে রাব্বি আর জাবের অপেক্ষা করছে। বিয়ের সাক্ষি হিসেবে তাদের দরকার। তাছাড়া আরো অনেক কাজেই বন্ধুদের দরকার হবে।

আশিক আর দিশা কাজির সামনের দুইটা চেয়ারে বসল। কাজি সাহেব একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকল। পালিয়ে বিয়ে করলে ঝামেলা পোহাতেই হবে।

খাতায় সবকিছু লেখা হলে কাজি সাহেব খাতা এগিয়ে দিল। দুজনের সাক্ষর করা হয়ে গেলে রাব্বি জাবের সাক্ষির খাতায় সাক্ষর করল।

কাজি সাহেবের বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে টাকা দিয়ে বেড়িয়ে এল। অবশেষে বিয়েটা করেই ফেলল। পালিয়ে বিয়ে করা ছাড়া উপায় ছিল না। বাধ্যে হয়ে এটাই করতে হল।

-এই দেখ তো। আমাকে দিশার মত লাগছে নাকি বউ এর মত লাগছে?
দিশার কথা শুনে আশিক কিছুসময় তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল। এই মেয়ের দুষ্টমি কখনো থামবে না। আশিক হাসতে বলল
-বউ এর মত লাগছে। এবারে ঘরে চল।

আশিক দিশাকে নিয়ে বাসায় চলে এল। রাব্বি আর জাবের চলে গিয়েছে। কোন সমস্যা হবে বলে মনেহয় না। বাসায় ঢুকতে পারলেই হল।

আশিকের মা দরজা খুলে দিল। আশিকের সাথে একটা মেয়েকে দেখে চমকে গেল। এর আগে একবার দিশার ছবি দেখেছিল। কিন্তু এভাবে বউ সাজিয়ে সামনে নিয়ে আসবে সেটা বুঝতে পারেনি।

-ভেতরে আয়।
আশিক আর দিশা ভেতরে ঢুকে সোফায় বসল। এখানেই বসতে হবে। আশিকের মা এতক্ষণে রুমে চলে গিয়েছে।

আশিকের বাবা রুম থেকে ড্রয়িংরুমে চলে এল। আশিক সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল। আশিকের বাবা একজন গম্ভীর মানুষ। তার মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই, ভেতরে কি চলছে!

-মেয়েটা কে?
আশিকের বাবার মুখ থেকে গম্ভীর কথাটা শুনেই আশিকের বুকের ভেতর ধক করে উঠল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
-ওর নাম দিশা। আজকেই আমরা...

আশিক আর কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু তার বাবা থামিয়ে দিয়ে বলল
-বিয়ে করেই ফেলেছ?
-হ্যা।
-তাহলে তো তোমার এই বাড়িতে জায়গা হবে না।

আশিক চুপ করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল। তার বাবার এক কথা। তার উপরে কারো কথা বলার সাহস নেই। আশিকের মা বলল
-ওরা কোথায় যাবে?
-সেটা ওরাই ঠিক করে নিবে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি যেন ওদের বাড়িতে না দেখি।

আশিক ঘর থেকে বেড় হয়ে এল। আশিকের মা অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করলেও লাভ হল না। দিশার সাথে বের হয়ে এল।

রাব্বিকে ফোন দিতেই চলে এল। এখন কোথায় যাবে সেটা আশিক বা দিশা কেউ জানেনা। রাব্বি কোন হেল্প করতে পারবে। এই আশায় ফোন দিল।

-একটা ব্যাবস্থা আছে। তুই আর দিশা একটা বাসায় ওঠ। আমি বাসা ঠিক করে দিচ্ছি।
রাব্বির কথা শুনে আশিকের যেন একটু সস্তি ফিরে এল। তাড়াতাড়ি রাব্বির সাথে চলল।

রাব্বির সাথে একটা বাসায় এল। দুইটা রুমের বাসা। ভাড়া কম বলে বাসার অবস্থাও তেমনি রয়েছে। তবুও এই বাসায় থাকতে হবে। আশিক দিশার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
-আচ্ছা ঠিকাছে। সমস্যা নেই।

-তাহলে আমি তোদের সংসারের কিছু জিনিসপত্র কিনে এনে দেই। নাহলে না খেয়ে থাকতে হবে।
রাব্বি চলে গেল। আশিক তার ব্যাগ থেকে চাদর বের করল। চাদরটা বাসা থেকে নিয়ে এসেছে।

দিশা চুপ করে বসে আছে। দিশার বাড়িতে ফিরে যাবে নাকি ভাবছে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হবে না মনেহয়। দিশার মুখে চিন্তার ছাপ। দুজন মানুষ কি করবে, কিভাবে চলবে। কিছুই জানা নেই।

বাবার কাছে ফোন করে দিশা ধাক্কা খেল। দিশার বাবা জানিয়ে দিয়েছে, আর যেন যোগাযোগ না করে। বাবার কাছ থেকেও নিরাশ হতে হল দিশাকে।

রাব্বি রান্নার সব জিনিসপত্র কিনে এনেছে। রুমের মধ্যে রেখে বলল
-এতেই আপাতত চলবে।
আশিক পকেট থেকে টাকা বের করে বলল
-কত টাকা লেগেছে?
-টাকা লাগবে না।
-কিন্তু আমার কাছে আছে।
-রেখে। কাজে দিবে।

দিশা জিনিসপত্র সাজাচ্ছে। তার জীবনে কোনদিন এসব কাজ করে নি। কিন্তু নতুন সংসারে একটু আগ্রহ কাজ করছে।

দিশা রান্না করতে শুরু করেছে। দিশার রান্না করার অভ্যেস নেই। তবে মাঝেমাঝে শখ করে রান্না করত। আশিক সাহায্য করতে চাইলেও দিশা নিজেই কাজ করবে।

দিশার রান্না করা খাবার খেয়ে দুজন শুয়ে পরল। দিশা আশিকের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। আশিকের চোখে ঘুম নেই। আশিকের মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরছে।

দিশাকে কে কি বাসায় পাঠিয়ে দিবে! আশিক কথাটা ভাবতেই আবার বাদ দিল। দিশাকে বাসায় যেতে হলে আশিককে সারাজীবনের জন্য ছেড়ে যেতে হবে। কিন্তু সেটা কারো জন্য সম্ভব না।

আশিক অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আর দিশা দ্বীতিয় বর্ষের ছাত্রী। দুজনেই বেকার। এই অবস্থায় চাকরিও পাবে না। তাহলে কি করবে!

আশিকের সাথে দিশার পরিচয় ভার্সিটি থেকে। আশিক একদিন ক্লাস শেষে বের হচ্ছিল। হঠাৎ পিছন থেকে একজন ডাক দিল
-আশিক ভাইয়া।
পিছনে তাকিয়ে একটা সুন্দরি মেয়েকে দেখে থমকে গেল। যাকে শুধু সুন্দরি বললে ভুল হবে, বরং বেশি সুন্দরি।

আশিক হাটতে হাটতে মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মেয়েটি চুপ করেই দাঁড়িয়ে আছে। কেন ডেকেছে সেটা বলছে না।

মেয়েটি হাটতে হাটতে চলে যাচ্ছিল। আশিক ডেকে বলল
-আমাকে ডাকলেন কেন?
মেয়েটি অবাক হয়ে বলল
-আপনাকে কখন ডাকলাম!
-আশিক ভাইয়া বলে ডাকলেন।
-আমি উনাকে ডেকেছি।
-ওহ। সরি।

আশিক পিছন ফিরে চলে আসছিল। পিছনের মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে সেটা বুঝতে পারছে। তবুও কিছু না বলে চুপ করে চলে এল।

-আশিক ভাইয়া।
আজকেও সেদিনের মেয়েটা আশিককে ডাকছে। তবে আজকে আশিক যাবে না। সেদিনের কথা ভালভাবেই মনে আছে।

-ও গায়ক ভাইয়া।
এবারে আশিক পিছন ফিরে তাকাল। আশিক গায়ক না। তবুও ভার্সিটির ফাংশনে গান গাওয়ার পরে অনেকে গায়ক বলে।

-আপনাকে ডাকার পরেও তাকাচ্ছেন না কেন?
সেদিনের মেয়েটি আশিকের সামনে দাড়িয়ে কথাগুলো দ্রুত বলে যাচ্ছিল। আশিক হেসে বলল
-এমনি।
-আমি দিশা। আপনার এক বছরের জুনিয়র।
-বেশ তো।
-আপনার পরিচয় দেওয়া লাগবে না। আমি আপনাকে ভালভাবে চিনি।
-কিভাবে?
-সেটা জানতে হবে না। আর সেদিন আপনাকেই ডেকেছিলাম।

আশিক কিছু বলার আগেই মেয়েটি চলে গেল।মেয়েটি হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে। আশিক চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আশিকের রাগ হলেও মেয়েটির হাসি দেখে রেগে থাকার উপায় নেই।

-ঘুম আসছে না?
দিশার কথায় আশিক ভাবনা থেকে বাস্তবে চলে এল। আশিক আস্তে করে বলল
-তুমি ঘুমাও।
-তুমিও ঘুমাও। চোখ বুজো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

আশিক চোখ বুজে আছে। দিশা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দুজনেই চোখ বুজে আছে।

দুই

আশিক ঘুম থেকে উঠে দেখল, দিশা বুকের উপর শুয়ে আছে। দিশার খুব সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস নেই। সুর্য উঠলে তবেই দিশার ঘুম ভাঙে।

আশিক উঠে বসতেই দিশার ঘুম ভেঙে গেল।
সকালবেলার নাস্তা বানানো হয়নি। দিশা নাস্তা বানায়নি। দিশা কোনদিন সকালবেলা নাস্তা বানায়নি। ঘুম থেকে উঠে তৈরি করা নাস্তা পেয়ে যায়।

-তুমি বস। আমি নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসছি।
দিশার কথা শুনে আশিক মুচকি হাসল। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল
-আমি নাস্তা কিনে আনি। কালকে থেকে তুমি বানিও।

আশিক হোটেল থেকে খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকল। দিশা কোমরে ওরনা পেঁচিয়ে ঘরের কাজ করছে। ঘর ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে নিচ্ছে। আশিক পিছন থেকে দিশাকে জড়িয়ে ধরল। দিশা চমকে গিয়েছে। পরে যখন বুঝতে পারল এটা আশিক, তখন আশিকের বুকে মুখ লুকালো।

-ভয় পেয়েছ?
দিশা আশিককে ছেড়ে দিয়ে বললল
-না চমকে গিয়েছি।
-এখন খেয়ে নাও। পরে কাজ করো।
-রুমটা কেমন এলোমেলো দেখছ। একটু গুছিয়ে নিতে হবে।
-এখন থেকেই এত সংসারী! দিন তো আরো বাকি আছে।
-তখন তুমি কাজ করবে।
দিশার কথা শুনে আশিক মুচকি হাসল। দিশাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল
-এবারে খেয়ে নেই।

আশিক নিজের মত খাচ্ছে। কিন্তু দিশা চুপচাপ বসে আছে। দিশাকে চুপচাপ দেখে আশিক বলল
-খাচ্ছ না কেন?
-খেতে ইচ্চা করছে না।
-আমি খাইয়ে দেই।
-হুম। তাহলে খেতে পারি।
আশিক মুচকি হেসে দিশাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজেও খাচ্ছে।

খাওয়া শেষ হলে দিশা বলল
-তুমি বস। আমি পানি নিয়ে আসছি।
আশিক চুপ করে বসে থাকল। কমদামী বাসা হলেও তাদের পানি বা গ্যাসের কোন সমস্যা নেই। কমদামে এমন বাসা পাওয়া কিছুটা ভাগ্যের ব্যাপার।

পিছন থেকে গায়ে পানি পরতেই আশিক চমকে উঠল। এই রোদের সময় বৃষ্টি এল কোথা থেকে! পিছন ঘুরে তাকাতেই আশিক পানি পরার কারন খুঁজে পেল।

-ভয় পেয়েছ?
দিশা বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মুচকি মুচকি হাসছে আর আশিকের অবস্থা দেখছে। হঠাৎ পানি দেওয়ার আশিক কিছুটা ভয় পেয়েছে মনেহয়।

দিশার কিছু কিছু ব্যাপার বোঝা মুশকিল। আশিক ভার্সিটিতে একদিন ক্লাস শেষে বের হচ্ছিল। পিছন থেকে একজন ডাক দিল
-গায়ক ভাইয়া।

আশিক পিছনে তাকিয়ে দেখে দিশা দাঁড়িয়ে আছে। আশিক কাছে যেতেই দিশা বলল
-কিভাবে আপনাকে বলব জানিনা। কিভাবে বললে আপনাকে বুঝাতে পারব সেটাও জানিনা। তবে জানি আমি আপনাকে ভালবাসি।

কথাটা বলেই দিশা দৌড়ে চলে গেল। আশিক কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। এমন করে মজা করল নাকি সত্যি বলল সেটা বুঝতে পারছে না। তবে দিশার মত মেয়ের প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার দুঃসাহস আশিকের নেই।

-আসো মুছে দেই।
দিশা গামছা দিয়ে আশিকের মাথা মুছে দিল। আশিকের রাগ হলেও এখন মুচকি হেসে ফেলল। দিশা আবার ঘরের কাজ করছে।

কয়েকদিন হল আশিক ভার্সিটিতে যায়নি। এখন আশিকের একটা চাকরি খোঁজা উচিত। পকেটের টাকা শেষের দিকে। এখন একটা চাকরি খুঁজতে হবে।

আশিক রাব্বির কাছে ফোন দিল। কোন সমস্যায় রাব্বির কাছেই ফোন করে। রাব্বি মাঝেমাঝে অনেককিছু ব্যাবস্থা করে দেয়। রাব্বির কাছে কোন চাকরির খোঁজ পেলেও পেতে পারে।

রাব্বির কাছে ফোন দেওয়ার পরে ফোন ধরে বলল
-কিরে কেমন আছিস?
-এইত ভাল। আমার একটা উপকার করতে পারবি?
-কি উপকার?
-আমার একটা চাকরির দরকার। তুই ম্যানেজ করে দিতে পারবি?
-চাকরি.... চাকরি তো নেই। তবে টিউশানি ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
-টিউশানি! সমস্যা নেই। তুই জোগাড় করে আমাকে জানা।
-আচ্ছা।

আশিক ফোন রেখে দিল। আশিক কোনদিন টিউশানি করায়নি। আশিকের জন্য বাসায় তিন চারটা টিউশানি থাকত। কিন্তু আজ জীবনের তাগিদে টিউশানি করতে হবে।

দিশা ঘরে চুপচাপ শুয়ে আছে। আশিক বেলকুনিতে গিয়ে কথা বলছিল। দিশা কথাগুলো শুনেছে। কিন্তু দিশাও বেকার। তার'ও কিছু করার নেই।

-তুমি টিউশানি করাতে পারবে তো?
দিশার কথা শুনে আশিক মুচকি হেসে বলল
-আরে পারব না কেন! এ কি এমন কঠিন কাজ!

বিকেলে রাব্বির ফোন পেয়ে আশিক বের হল। টিউশানির জন্য বের হতে হবে। আজকে টিউশানি ঠিক করে দেওয়ার কথা।

আশিক রাব্বির সাথে একটা বাসায় আসল। কলিংবেল বাজানোর পরেই একজন মহিলা দরজা খুলে দিল। রাব্বি সালাম দিয়ে বলল
-আপনি একজন টিউটরের কথা বলেছিলেন।
-হ্যা। ভিতরে আস।

রাব্বির সাথে আশিক সোফায় গিয়ে বসল। মহিলাটি দুইজন বাচ্চাকে নিয়ে আসল। মহিলাটি সোফায় বসতে বসতে বলল
-এই দুজন তোমার ছাত্র। সপ্তাহে তিনদিন পড়ালেও চলবে। তবে সময়মত আসতে হবে। দেরি করা চলবে না।

রাব্বি আশিকের দিকে তাকিয়ে বলল
-কিরে?
আশিক বলল
-আচ্ছা সমস্যা নাই। কালকে থেকেই আমি পড়াতে আসব তাহলে।
-আচ্ছা। তোমরা বস। আমি চা দিতে বলি।
-না আমরা চা খাব না।

রাব্বির সাথে আশিক'ও চলে আসল। চারহাজার টাকা বেতন। বাসা থেকে একটু দুরে হলেও সমস্যা হবে না। তবুও কিছুটা হল। এখন একটা চাকরি পেলেই হল।

রাতে আশিক খেয়েই শুয়ে পড়ল। দিশা সবকিছু গুছিয়ে চলে আসল। দিশা আশিকের বুকে শুয়ে বলল
-টিউশানিতে চলবে?
-চিন্তা করোনা একটা চাকরি পেয়ে যাব।
-তোমার উপর দিয়ে বেশি ধকল যাবে।
-আরে নাহ। চিন্তা করোনা।

আশিক ঘুম থেকে উঠে চাকরির সন্ধ্যানে বের হল। রাস্তা থেকে একটা চাকরির পত্রিকা কিনে নিল। একটা চাকরির আবেদন দেখে কিছুটা আগ্রহ জাগল। এখানে আশিক চেষ্টা করতে পারে।

আশিক চাকরির পত্রিকা নিয়ে বাসায় চলে এল। এতক্ষণে দুপুর হয়ে গিয়েছে। সকালে ক্ষুধাটা রুটি আর চায়ের মাধ্যমে মিটাতে পারলেও দুপুরেরটা সম্ভব না।

বাসায় এসে দেখল দিশা শুয়ে আছে। দুপুরের খাবার এখনো খায়নি। আশিক আসেনি বলে, দিশার খাওয়া হয়নি। আশিক দিশাকে খাবার দিতে বলে ওয়াশরুমে গেল।

আশিক দিশার সাথে খেতে বসল। দিশা আশিকের দিকে তাকিয়ে বলল
-কোন চাকরির ব্যাবস্থা হল?
-হয়ে যাবে। চেষ্টা করছি।
দিশা আস্তে করে বলল
-আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারছি না।
আশিক দিশার দিকে তাকিয়ে বলল
-আরে বাদ দাও। একটা ব্যাবস্থা হবেই।

আশিক টিউশানির জন্য বেড়িয়ে পরল। হেটে যেতে হয়। রিক্সায় গেলে ভাড়া লাগে বলে, আশিক হেটে যায়। হেটে গেলে বিশ-পচিশ মিনিট লাগে।

আশিক ছাত্রদের পড়ানো শুরু করল। আজকেই প্রথম কাউকে এভাবে পড়াচ্ছে। এর আগে একদিন আশিকের কাছে পড়তে আসছিল। সেদিন রাগ দেখিয়েছিল। কিন্তু আজ রাগ দেখানোর উপায় নেই।

আশিক টিউশানি শেষ করে বাসার দিকে হাটা ধরল। টিউশানির ছাত্র দুইটা ভালই। কোন সমস্যা নেই। এখন চাকরিটা জোগাড় করতে পারলেই হল। ভাবতে ভাবতে আশিক হাটতে থাকল।


তিন

আশিক ফোন রেখে একটা সুন্দর মুচকি হাসি দিল। আগের সপ্তাহে আবেদন করা চাকরিটা হয়ে গিয়েছে। বেতন প্রায় দশ হাজার টাকা। বেতন বেশি না হলেও কোনরকম চলে যাওয়ার মত।

আশিক টিউশানি শেষ করে বাসায় ফিরছিল। হঠাৎ এই খবরটা পেয়ে গেল। আজকে টিউশানির বেতন পেয়েছে। ইচ্ছা করছে দিশার জন্য কিছু কিনে নিয়ে যেতে। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কিছু কিনলে সামনের মাসে বাসা ভাড়া দেওয়া হবে না।

গত দুইদিন হল আরেকটা টিউশানি শুরু করেছে। এই মাসটা পকেটে থাকা টাকা দিয়ে ভালই চলেছে। কিন্তু সামনের মাসের জন্য চিন্তা।
আজকে তো।মাসের শেষ দিন।

ভাবতে ভাবতে আশিক বাসার সামনে চলে এসেছে। রাস্তা তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য কোন কিছু চিন্তা করা উচিত। চিন্তার মধ্যে থাকলে হাটার রাস্তাও কিছু মনেহয় না।

বাসায় ঢুকে দিশাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখল। সারাদিন ঘরে বসে থাকা ছাড়া তেমন কোন কাজ নেই। দিশা আশিককে দেখে ফ্রেশ হতে বলল।

আশিক ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসল। দিশাও আশিকের পাশাপাশি বসল। আজকে পুইশাক রান্না করেছে। কতদিন মাছ কেনা হয়নি সেটা আশিক ভুলে গিয়েছে।

-আমার চাকরি হয়েছে।
আশিকের কথা শুনে দিশা খাওয়া বাদ দিয়ে আশিকের দিকে তাকাল। দিশা বলল
-সত্যি?
-হ্যা। তবে বেতন দশ হাজার টাকা।
-কম কোথায়!
-সামনের মাসে জয়েনিং। এক মাস চাকরি না করলে বেতন দিবেনা। চিন্তা করছি সামনের মাস কিভাবে চলব!

-আমিও টিউশানি করালে কেমন হয়?
আশিক চুপ করে ছিল। দিশার কথা শুনে অবাক হয়ে বলল
-কি বল!
-বাসায় একা একা সময় কাটেনা। আর সামনের মাস থেকে তোমাকে তো অফিসে যেতে হবে। তখন একা একা বোর হব। তারচেয়ে দুইটা টিউশানি করালে কেমন হয়?
-কিন্তু....
-কোন কিন্তু করোনা।
আশিক দিশার কথায় রাজি হয়ে গেল। বেশি কথা বলতে পারল না।

আশিক চুপ করে ভাবছে। টিউশানির টাকা দিয়ে সংসার চালাবে নাকি বাসা ভাড়া দিবে। কালকে বাড়িওয়ালা ভাড়া নিতে আসবে। তাকে কি বলবে!

আশিক চুপ করে বসেছিল। দিশা কখন পাশে এসে বসেছে সেটা বুঝতে পারেনি। দিশাও চুপ করেই বসে আছে। আশিকের অবস্থা দেখে দিশা কিছু করতে চেয়েও পারছে না।

আজকে টিউশানিতে যেতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু যেতেই হবে। আশিকের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। সকালবেলা বাড়িওয়ালাকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এখন পকেটে মাত্র এক হাজার টাকা।

ভাবতে ভাবতেই আশিক টিউশানি শেষ করে দিল। টিউশানি থেকে বেড়িয়ে হোটেলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দিশার কথা মনে পরল। কতদিন ভাল কিছু রান্না হয়না। দিশার মুখের দিকে তাকানো যায়না। হাসিমুখটা শুকিয়ে গিয়েছে।

আশিক শুধু দিশার জন্য কিছু কিনবে। টিউশানি করাতে গিয়ে নাস্তা করেই আশিকের পেট ভরে গিয়েছে। এখন আশিকের পেটটা ছোট হয়ে গিয়েছে। পেট ভরে পানি খেলে ক্ষুধা কমে যায়।

আশিক হোটেলে ঢুকতে গিয়ে আবার ফিরে এল। বাসায় বাজার শেষ। বাসায় বাজার নিয়ে যেতে হবে। কিছু কমদানে বাজার কিনলেই হবে।

আশিক বাজার নিয়ে বাসায় চলে এল। দিশা এখনো রান্না করেনি। বাজার না থাকলে রান্না করবে কিভাবে! আশিক দিশার কাছে বাজারের ব্যাগ দিয়ে বারান্দায় চলে গেল।

রাব্বির ফোন পেয়ে আশিক ফোন হাতে নিল। রাব্বি আশিকের জন্য অনেককিছু করেছে। যেটা সামান্য হলেও এইসময়ে অনেককিছু।

-তুই কোথায় রে?
রাব্বির ফোন ধরেই এমন কথা শুনে আশিক স্বাভাবিকভাবে বলল
-বাসায়।
-আচ্ছা। আমি আসছি।

রাব্বি ফোন কেটে দিল। রাব্বি বাসায় আসলে তাকে কিছু খেতে দিতে হবে। ঘরে এমন কিছু নেই, যা দিয়ে কোন মেহমানদারি করবে। রাব্বি তাদের ব্যাপারটা বুঝবে।

-কিরে কই তুই?
রাব্বির ডাক শুনে আশিক রুমে চলে এল। রাব্বি এমন'ই। বাসায় আসলেই ডাক শুরু করে। আগেও এমন কর‍ত।

আশিক রুমে এসে রাব্বির হাতে বাজারের ব্যাগ দেখে অবাক। ব্যাগভর্তি বাজার করেছে। মাছ কিনেছে বড় একটা। আশিক কিছু বোঝার আগেই রাব্বি দিশার হাতে ব্যগটা এগিয়ে বলল
"ভাবি, অনেকদিন বাসার রান্না খাইনা। মেসের খাবার খেয়ে কেমন যেন লাগছে। তাই ভাবলাম আজ বাজার নিয়ে আসি"

-কিরে তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন! ওদিকে চল।
রাব্বি আশিকের হাত ধরে বারান্দায় চলে এল। আশিকের সামনাসামনি রাব্বি বসল।

-তুই এতসব বাজার করতে গেলি কেন!
রাব্বি আশিকের কথা শুনে মুচকি হাসল। এইসময় সম্ভবত মুচকি হাসি দেওয়া স্বাভাবিক। আশিক রেগে আছে নাকি চুপ করে আছে বোঝা যায়না।

-দেখ, আমার কাছে কিছু লুকাস না। আর আমি তোকে ভালভাবে জানি।
রাব্বির কথা শুনে আশিক চুপ করে থাকল। আশিকের সবকিছু জেনেই রাব্বি বাজার করে নিয়ে এসেছে। আশিক অনেককিছু লুকাতে চাইলেও রাব্বি ঠিক বুঝে যায়।

একবার দিশার সাথে আশিকের রাগারাগি হয়। আশিক স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলেও, রাব্বি বুঝেছিল তার মন খারাপ। পরে রাব্বি দুজনের মাঝে সবকিছু ঠিক করে দিয়েছিল।

-তুই আমার জন্য এতকিছু করছিস!
আশিক কথাটা বলে চুপ করে থাকল। কথাটা হয়ত বলা ঠিক হয়নি। কথাটা শুনে রাব্বি কিছু মন খারাপ করে বলল
-আমার জন্য তুই কম করেছিস!
রাব্বির সমস্যা হলে সবসময় আশিকের কাছেই হেল্প পেত। রাব্বির পকেটে টাকা না থাকলেও আশিক কোন না কোনভাবে জোগার করে দিত।

রাব্বি পকেট থেকে তিন হাজার টাকা বের করে আশিকের হাতে দিয়ে বলল
-রেখে দে।
-কিন্তু তুই....
-ভাবিস ন। আমার চলার মত টাকা পকেটে আছে। মিতুর জন্য টাকাটা আলাদা করে রেখেছিলাম। পরে মনে পড়ল, মিতু এখন অন্য কারো বউ। তার দায়িত্ব অন্য কারো।
রাব্বির চোখে পানি দেখে আশিক কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু আশিক কিছু বলতে পারছে না।

-আমি মিতুকে পাইনি। কিন্তু তুই তো তোর ভালবাসাকে পেয়েছিস। একদিন তোদের সব সমস্যা দুর হবে। তোরা সুখি হলে আমার ভাল লাগবে। মনের মধ্যে একটা সুখ পাব।
আশিক রাব্বির খুব কাছের মানুষ হলেও মাঝেমাঝে বুঝতে পারেনা। নিজের দুঃখ লুকিয়ে রাখতে পারে। অন্যের সুখ দেখে নাকি ছেলেটা সুখি! অন্যের প্রেমের সমাধান করতে পারলেও নিজের টা পারেনি।

-আশিক।
দিশার ডাক শুনে রাব্বি মুচকি হেসে বলল
-ওই ভাবি তোরে ডাকে। যা শুনে আয়।
আশিকও হাসতে হাসতে বারান্দা থেকে রুমে চলে আসল।

-খাওয়ার জন্য ডাকছে। খেতে আয়।
আশিক রান্নাঘর থেকে ফিরে রাব্বিকে খাওয়ার জন্য ডাক দিল। রাব্বি আশিকের সাথে হাতমুখ ধুতে গেল।

-অনেকদিন পরে এমন ভাল খাবার খাচ্ছি।
খেতে বসে রাব্বি আর আশিক পাশাপাশি বসেছে। আশিক খেতে খেতে বলল
-তবে মিতুর মত ভাল রান্না পারেনা।
-কিরে! তুই নিজের বউ এর সামনে অন্যের বউ এর প্রশংসা করছিস! এটা ঠিক না কিন্তু।
রাব্বির কথা শুনে দিশা হাসতে থাকল।

-এখন আমি যাই রে।
রাব্বি খাওয়া শেষ হতেই উঠে পরল। আশিকের'ও খাওয়া শেষ। আশিক রাব্বির সাথে বাসা থেকে বেড়িয়ে এল।

-কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবি। কোনকিছু লুকাবি না। আমি চেষ্টা করব।
রাব্বির কথা শুনে আশিক চুপ করে থাকল।

-আমি এখন যাই।
আশিক রাব্বির কথা শুনে বলল
-আচ্ছা যা।
রাব্বিকে এগিয়ে দিয়ে আশিক হাটতে হাটতে বাসায় চলে এল।

চার

আশিক কিছুটা ক্লান্ত শরির নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকবার কলিংবেল বাজানোর পরেও দরজা খুলছে না। শরীরটা অসুস্থ লাগলেও আজকে পড়াতে আসতে হল। বেতন দেওয়ার কথা ছিল বলেই এসেছে।

কয়েকবার কলিংবেল বাজানোর পরেও দরজা খুলল না। বাধ্য হয়ে আশিক ফোন বের করে ফোন দিল। কয়েকবার বাজার পরে ফোন ধরল। জানিয়ে দিল উনারা বাইরে গিয়েছে।

আশিক হতাশ হয়ে বাসার দিকে রওনা দিল। স্টুডেন্ট এর মা জানিয়ে দিল, আজকে তারা বাসায় ফিরবে না। বেতনের টাকা না পেয়ে হতাশ হয়েই ফিরতে হল।

আশিক একটা চাকরি পেয়েছে। গত ছয় সাত মাস তাদের সংসার খুব ভালভাবে চলছে। দিশাও গত দুইমাস ধরে দুইটা টিউশানিদ শুরু করেছে।

আশিকের আগের চাকরিটা চলে গিয়েছে। চাকরিটা গিয়ে ভালই হয়েছে। কম বেতনে বেশি খাটতে হত। সেই বেতন দিয়েও সংসার চালাতে সমস্যা হত। তিনমাস পরে চাকরিতে আর যায়নি।

রাব্বি একটা চাকরির ব্যাবস্থা করে দেয়। এই কাজটায়, যত কাজ তত টাকা। আশিক বেশি পরিশ্রম করে বেশি টাকা পায়। এখন একটা টিউশানি করেই চলে যায়।

আশিক কোনরকমে হাটতে হাটতে বাসায় ঢুকল। শরীরটা বেশি দুর্বল হয়ে পরেছে। জ্বর আসবে মনেহয়। বাসায় ঢুকতেই বিছানায় শুয়ে পরল।

দিশা রান্নাঘরে রান্না করছিল। দুপুরের টিউশানি শেষ করে রান্না করতে শুরু করে। আশিককে হঠাৎ এসে এভাবে শুতে দেখেই দিশার অবাক লাগল। রান্নাঘর থেকে এসে আশিকের মাথায় হাত দিতেই চমকে উঠল। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।

-তুমি জ্বর নিয়ে বাইরে গিয়েছ কেন?
দিশার কথা শুনে আশিক চুপ করে থেকে বলল
-আজকে টিউশানির টাকা দেওয়ার কথা ছিল।
দিশা চুপ করে পানি আনতে চলে গেল।

বালতি ভরে পানি নিয়ে এসে আশিকের মাথায় ঢালতে থাকল। এখন আপাতত পানি দিলেই হবে। পরে ডাক্তারের কাছে নিলেই হবে।

আশিক চুপ করে শুয়ে আছে। গত কয়েকদিন বেশিসময় ধরে কাজ করতে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে। কালকে আশিকের বিবাহ বার্ষিকি। দিশাকে কিছু কিনে দিতেই হবে। তাই একটু বেশি কাজ করতে হয় তাকে।

দিশার মুখের দিকে তাকানো যায়না। সংসারের কাজ আর সবকিছু মিলিয়ে দিশার মুখটা শুকিয়ে গিয়েছে। যে আগে গাড়ি ছাড়া কখনো বাইরে যেত না। সেই দিশা এখন পায়ে হেটে টিউশানি করাতে যায়।

গত দুইমাস আশিক বেশি কাজ করে বাড়তি টাকাগুলো দিশাকে দেয়। যাতে হেটে টিউশানিতে যেতে নাহয়। এতে আশিকের কোন কষ্ট হয়না। ভালবাসার মানুষটিকে একটু আড়ামে রাখতে এটা কোন কষ্ট নয়।

-থাক। আর লাগবে না।
দিশাকে মাথায় অনেক্ষণ ধরে পানি ঢালল। আশিকের কথা শুনে মাথায় পানি দেওয়া বন্ধ করে দিল। রান্না করা এখনো বাকি।

আশিক বিছানায় শুয়ে আছে। এখন জ্বরের তাপ কিছুটা কম মনেহয়। আশিকের মাথায় এখন একটা কথাই ঘুরছে। কিভাবে টাকা জোগাড় করবে। টিউশানির টাকাও তো দেয়নি।

-রান্না হয়ে গিয়েছে। খেয়ে নিবে চল।
দিশার কথা শুনে আশিক উঠে বসল। দিশার রান্নার হাতটা আস্তে আস্তে পাকা হয়ে গিয়েছে। এখন সব ধরনের রান্না করতেই পারে। মধ্যেবিত্ত ফ্যামিলির একজন বউ হয়ে গিয়েছে।

-তুমি বস। আমি খাবার নিয়ে আসছি।
আশিক বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়েই আবার বসে পরল। দুর্বল শরীর নিয়ে হাটতে পারছে না। দিশা আশিকের অবস্থা দেখে প্লেটে খাবার নিয়ে এল।

আশিক বিছানায় বসে আছে। দিশা খাবার মাখিয়ে মুখে তুলে দিচ্ছে। আশিক দিশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মুখে ক্লান্তি বা কষ্টের ছাপ নেই। আশিককে ভালবেসে একসাথে রয়েছে মেয়েটা।

-এবার আমি খাইয়ে দেই।
আশিকের কথা শুনে দিশা মুচকি হাসল। মাঝে মাঝেই এমন করে দিশা খাইয়ে দেয়। টাকার অভাব হলেও ভালবাসার অভাব নাই তাদের মাঝে।

আশিক আর দিশার খাওয়া হলে আশিক আবার শুয়ে পরল। দিশা প্লেট রেখে ওষুধ নিয়ে আসল। সন্ধ্যার পরে দোকান থেকে জ্বরের ওষুধ নিয়ে আসছে।

আশিকের ওষুধ খাওয়া হলে দিশা আশিকের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরল। আশিকের বুকে এখন তাপ।।আর সেটা জ্বরের তাপ। কালকে জ্বর না কমলে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

আশিক সকালে ঘুম থেকে উঠে রাব্বিকে ফোন দিল। রাব্বির কাছ খেকে টাকা ধার নিতে হবে। আজকে বিবাহ বার্ষিকি উপলক্ষে কিছু কিনে না দিলে চলে!

রাব্বি ফোন ধরতেই আশিক বলল
-কেমন আছিস?
-ভাল। তুই?
-জ্বর আসছে কালকে থেকে।
-ডাক্তার দেখিয়েছিস?
-না। এখন কম। আমাকে কিছু টাকা ধার দিতে পারবি?
-কত টাকা?
-দুই হাজার টাকা।
-আচ্ছা।

রাব্বির কথা শুনে আশিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
-তুই টাকাটা আমার কাছে এসে দিয়ে যাস। আমি যেতে পারব না। আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকি।
-বলিস কি! অভিনন্দন। তাহলে আমার কাছ থেকেও তোর কিছু পাওনা আছে।
-আরে লাগবে না।
-সন্ধায় আসব তোর বাসায়।

রাব্বি ফোন কেটে দিল। বিয়ের পরে রাব্বি এই এক বছরে অনেকবার হেল্প করেছে। কাছের বন্ধু বলতে এই রাব্বি। রাব্বি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তবুও তাদের বন্ধুত্ত গভীর।

সারাদিন রুমে শুয়েই কেটে গেল। জ্বর নিয়ে বাইরে যাওয়া হয়নি। রাব্বিকে ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে। তবুও আশিকের বাইরে যেতে ইচ্ছা করছে। দিশার জন্য একটা শাড়ি কিনবে।

সন্ধ্যার পরে রাব্বি এল। দিশা আশিকের পাশেই বসে ছিল। রাব্বি দুজনকে দেখে বলল
-শুভ বিবাহবার্ষিকী।
-ধন্যবাদ।
একটা ফুলের তোরা আশিকের হাতে দিল। আশিক রাব্বির দিকে তাকিয়ে আছে। এখন টাকা নিয়ে বাইরে যাবে নাকি ভাবছে।

আশিক রাব্বির কাছ থেকে টাকা নিল। কিন্তু দিশা তাকে এই অবস্থায় বাইরে যেতে দিবেনা। রাব্বিও বারন করায় যাওয়া হল। হঠাৎ রাব্বি বলল
-পাশের রুমে চল।

আশিক পাশের রুমে এসে অবাক। টেবিলের উপর সুন্দর কেক। কয়েকটা মোমবাতি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। আশিক এমন কিছু আশা করেনি। রাব্বির দিকে তাকিয়ে বলল
-তোকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেই।
-ধন্যবাদ তোর বউকে দে। বুদ্ধিটা ভাবি দিয়েছে।

আশিক দিশার দিকে তাকিয়ে আছে। আশিক দিশাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।

-কিরে তাকিয়ে না থেকে কেকটা কাট।
রাব্বির কথা শুনে আশিক কেক কাটল। দিশাকে কেক খাইয়ে দিল, আর দিশা আশিককে কেক খাইয়ে দিল। হঠাৎ দিশা কেক নিয়ে আশিকের মুখে মাখিয়ে দিল। এই মেয়েটার দুষ্টামি হঠাৎ জেগে ওঠে। আশিকের রাগ হওয়ার বদলে হাসি পাচ্ছে।

রাব্বি ব্যাগ থেকে একটা পাঞ্জাবী আর শাড়ি দিয়ে বলল
-তোদের জন্য।
আশিক চুপ করে আছে। আশিককে চুপ করতে থাকতে দেখে রাব্বি বলল
-আরো কিছু বাকি আছে।

দিশা আশিকের হাতে একটা ঘড়ি পরিয়ে দিল। আশিক আরেকবার অবাক হল। দিশাকে গত দুই মাসে যে টাকা দিয়েছিল ভাড়ার জন্য। সেটা বাঁচিয়ে ঘরি কিনেছে!

আশিক দিশার দিকে চুপ করে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা এমন কেন! এত কষ্ট করে হেটে গিয়ে টাকা বাঁচিয়েছে! দিশাকে বুকে জড়িয়ে নিল।

টাকা পয়সার সমস্যা হলেও দুজন পাশাপাশি আছে। কষ্ট করে হলেও কেউ কাউকে ছেড়ে যায়নি। এই মায়ার সংসারে সুখের কমতি নেই। কমতি নেই ভালবাসার।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০২

বহ্নি শিখা বলেছেন: সুন্দর

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০২

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৭

সাকিন সিকদার (জেন) বলেছেন: এক কথায় অসাধারণ! আরো এরকম গল্প লিখার অনুরোধ রইলো।

২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৬

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: ধন্যবাদ। লেখার চেষ্টা করব।

৩| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০২

আসিক ইসলাম বলেছেন: আমার নামটা ব্যবহারের জন্য ধন্যবাদ জনাব, অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো

২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.