নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল ছেলে!

জুবায়ের হাসান রাব্বী

পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।

জুবায়ের হাসান রাব্বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ অপেক্ষা

২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৩


পার্কের বেঞ্চিতে বসলাম। এখন আমি নিজের সাথে কথা বলছি। আমার রাগ হলে নিজের সাথে কথা বলি। হাতের কাছে কিছু না পেলে এভাবেই রাগ থামানোর চেষ্টা করি।

এখনো মিমি আসেনি। রাগটা মিমির জন্যই। কালকে দেখা করতে চেয়ে আসেনি। আজকেও এক ঘন্টার মত দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কোন পাত্তা নাই। আজকেও আসবে নাকি জানিনা।

পার্কের বেঞ্চিতে চুপ করে বসে আছি। এখন রাগের চেয়ে অন্যকিছু মাথায় ঘুরছে। পাশের একটা বেঞ্চিতে একজন লোক বসে আছে।

এর আগেও অনেকবার লোকটাকে এখানে বসতে থাকতে দেখেছি। তিনিও কি আমার মত কারো জন্য অপেক্ষা করছে! কিন্তু প্রতিদিন তাকে একা একা বসে থাকতে দেখি।

আমি লোকটার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। লোকটা আমাকে দেখে চোখ তুলে তাকিয়ে বলল
-বস।
লোকটা আমাকে বসার জন্য সরে গিয়ে জায়গা করে দিল।

আমি বসতেই লোকটা বলল
-কারো জন্য অপেক্ষা করছ?
আমি তার কথা শুনে মুচকি হেসে বললাম
-হুম।
-এখনো আসেনি?
-না। তবে আসবে।
-রেগে আছ মনেহয়?
-হ্যা। রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করেও আসছে না।

আমার কথা শুনে লোকটা চুপ করে থাকল। চুপ করে কিছু ভাবছে নাকি জানিনা। তবে তাকে প্রশ্ন করলাম
-আপনাকে এখানে একা একা বসে থাকতে দেখি। আপনি একা একা বসে থাকেন কেন!
-একজনের জন্য অপেক্ষা করি।
-কিন্তু তাকে আসতে দেখি না। এত অপেক্ষা করে থাকলে আপনার রাগ হয়না?
-না। ভালবাসার মানুষের উপর রাগ করতে নেই।

-একটা গল্প শুনবে?
মিমির আসতে অনেক দেরি। তাই সময় কাটানোর জন্য গল্প শোনা যেতেই পারে। আমি মুচকি হেসে বললাম
-জ্বি শুনব।
-তাহলে শুনো।

লোকটি গল্প বলতে থাকল....
আমি আর সুমি খুব ভাল ফ্রেন্ড। বেস্ট ফ্রেন্ড বলতে যা বুঝায় সেটাই আমরা দুজন। তবে প্যারা দেওয়ার জন্য সুমি আমার কাছে অন্যতম।

সুমি আর আমি রাস্তায় পাশাপাশি হাটছি। হঠাৎ সুমি আমার সামনে গিয়ে বলল
-একটা ছেলে আমাকে প্রোপোস করেছে।
-খুশির খবর। দেখতে কেমন?
-ভালই আছে।
-তাহলে রাজি হয়ে যা।
আমার কথা শুনে সুমি চুপ হয়ে গেল। তারপরে আবার বলল
-তুই ছেলেটাকে মারবি।

সুমির কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম।
-মারব কেন?
-কারন সে আমাকে প্রোপোস করেছে।
-প্রোপোস করলে মারতে হবে! রাজি হয়ে যা।

আমার কথা শুনে সুমি কিছুটা চুপ হয়ে গেল। ওর ভাব দেখে মনেহয় রাগ করেছে। আমি ওর রাগ দেখে কাছাকাছি এগিয়ে বললাম
-চল ওই ছেলেকে মারব।
-কেন মারবি?
-তোকে প্রোপোস করেছে তাই।

আমার সাথে সুমি হাটতে থাকল। সুমি এখন খুশি। আমি সেই ছেলেকে মারতে যাব না। তবে সুমিকে খুশি করার জন্য কথাটা বলেছি।

সুমির সাথে পার্কে এসে বসলাম। আমাকে পার্কে আনল কেন সেটা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সুমি বলে নি। পরে বলল, এখানে নাকি ছেলেটা আছে।

সুমির পাশে বসে বাদাম খাচ্ছি। সেই ছেলের কোন খবর নেই। এতে আমার জন্য ভাল হয়েছে। ঝামেলা নেই। কাউকে মারতে হবেনা।

-ওই ছেলে আসছে না কেন!
সুমি আমার কথায় অবাক হয়ে তাকাল। সুমি বলল
-মারার জন্য তোর হাত ইশপিশ করছে নাকি!
-আরে না। এখন এলে ওই ছেলের গলায় তোকে লটকে দেব। তাহলে ঝামেলা থেকে বাঁঁচব।
-আমি ঝামেলা!
-হ্যা। তুই তো ঝামেলা। তোর একটা বয়ফ্রেন্ড হলে আমি বেঁচে যেতাম।
-কি বললি!

আমার কথা শুনে সুমি চট করে দাঁড়িয়ে গেল। আমার কথা শুনে সে রাগ করেছে সেটা বুঝতে পারছি। রাগ থামানোর জন্য বললাম
-চল ছেলেটাকে খুঁজি।
-না। আমার মত ঝামেলা তোকে সহ্য করতে হবে না। আমি গেলাম।
-ওই দাড়া।
-আমি আর তোকে ফোন দিব না।

কিছু বলে বুঝানোর আগেই চলে গেল। আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না। একদিকে ভালই হল, কিছুদিন ঝামেলা থেকে বাঁচা যাবে।

দুইদিন হয়ে গেলেও সুমি আমাকে ফোন দেয় নি। এর আগে রাগ করলে ও নিজে থেকেই ফোন দিত। কিন্তু আজ কেন নয়!

এই দুইদিনে সুমিকে খুব মিস করছি। সুমিকে আমার জীবনে কতটা দরকার সেটা হারে হারে বুঝতে পারছি।

নিজে থেকেই সুমিকে ফোন দিলাম। সুমি ফোন ধরে বলল
-কি বলবি, বল।
-রেগে আছিস?
-.........
-কালকে দেখা কর। তোকে অনেক মিস করছি রে। তোকে আমার জীবনে খুব দরকার।
-তাহলে আমার সাথে প্রেম করবি?
আমি অবাক হয়ে বললাম।
-মানে কি!
-মানে তোরে ভালবাসি।
-প্রোপোস করছিস নাকি!
-কালকে দেখা হলে সব বলব। তুই আমার আগে পার্কে গিয়ে বসে থাকবি।

সুমি আমাকে ভালবাসে! ব্যাপারটা ভাবনার বিষয়। সেদিন তাহলে ওই ছেলেটাকে এই কারনেই মারতে বলেছিল! এখন সব বুঝতে পারছি।

পরেরদিন সুমির জন্য পার্কে এসে বসে অপেক্ষা করছি। কিন্তু সুমি আসছে না। অনেকবার ফোন দিয়েও ধরে না। রাগ হচ্ছে খুব। চলে যাব নাকি ভাবছি।

আমি চুপ এতক্ষণ ধরে উনার গল্প শুনছিলাম। এতক্ষণে মুখ খুলে বললাম
-সুমি আসার পরে কি বলেছিলেন?
লোকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-সুমি আসে নি।
-কেন!

লোকটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
-ও চলে গিয়েছে।
-কোথায় চলে গিয়েছে?
-না ফেরার দেশে।

লোকটির কথা শুনে আমি চুপ করে থাকলাম। কি বলব বুঝতে পারছি না। যেই সুমি চলে গিয়েছে তার জন্য আজ'ও অপেক্ষা করে! আসবে না জেনেও অপেক্ষা করে!

-আজ উঠি। আবার পরে কথা হবে।
লোকটি উঠে চলে গেল। পিছন থেকে ডাক দিতে চেয়েও ডাক দিলাম না। শুধু লোকটির ভালবাসা বোঝার চেষ্টা করলাম।

এখনো মিমি আসেনি। কিন্তু মিমির উপরে কোন রাগ নেই। যাকে ভালবাসা যায়, তার জন্য অপেক্ষা করা যায়। মিমি দেরি করে আসলে ক্ষতি কি!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:



হরমোন একটু কমে আসুক, তখন আপনার গল্প পড়বো।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৫

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: বুঝলাম নআ

২| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৩

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্প দারুন হইছে। ভাল লাগা সবটুকু।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৬

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১২

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা সুন্দর। কাহিনীর এক্সপেরিমেন্টটা ভালই :)
চালিয়ে যান :)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৪

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: ধন্যবাদ। দোয়া করবেন ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.