নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

The best and most beautiful things in the world cannot be seen or even touched - they must be felt with the heart---Helen Keller

জুন

ইবনে বতুতার ব্লগ

জুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সেক্টর ২ রনাঙ্গনে সক্রিয় অংশগ্রহনকারী এক বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বহস্তে লেখা দিনলিপি (পঞ্চম পর্ব)

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮



মা একটানে ঘরের সব পর্দা টেনে দিয়ে দরজা খুলে একেবারে চিলের মত ছোঁ মেরে আমাকে ঘরে ঢুকিয়ে নিলেন। অনেকদিন বাবা মা ভাই বোন এর সাথে দেখা।সবার চোখ অশ্রুসিক্ত আর তা ছিল আনন্দাশ্রু।বাবা বললেন আজ আর কোন কথা নয়, কাল সব কথা শুনবো, মা এক হাতে আমায় জড়িয়ে আরেক হাতে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন ‘এখন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো, তুমি বড্ড ক্লান্ত’।খাবার খেয়ে দোতালায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। অবশ্য তার আগে পালিয়ে যাবার পথটা দেখে নিলাম।

মনে আছে অনেকদিন পর অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছিলাম। উঠলাম যখন তখন বেলা দশটা। নাস্তা সেরে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম।তারপর বাবা মা এর সাথে অনেক গল্প হলো।মনে পরে বহুদিন পর সাবান শ্যম্পু দিয়ে গোসল করেছিলাম। সন্ধ্যার দিকে এদিক ওদিক খানিক্ষন ঘুরে ঘরে ফিরে এলাম বটে কিন্ত মনের মধ্যে সারাক্ষন একটা শংকা কি হয় কি হয় ? আর আমরা যারা ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসেছিলাম তাদের ভয় ছিল আরো বেশী।পাক বাহিনীর সিদ্ধান্তই ছিল এদের ধরা মাত্র মেরে ফেলা ।
আমাদের প্রতিও কড়া নির্দেশ ছিল যেন কোন অবস্থাতেই আমরা নিজেদের বাসায় অবস্থান না করি। সিদ্ধান্ত নিলাম আর এক মুহুর্ত বাসায় থাকবোনা কারন ধরা পড়লে শুধু আমি নই আমার পুরো পরিবারের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে।
মা বাবাকে সব জানিয়ে খুব ভোরে বাসা থেকে বের হয়ে নান্নুর সাথে যোগাযোগ করলাম। কিন্ত বাকীর কোন খবর পাচ্ছিলাম না।
রাতে বাসায় এসে লুকিয়ে রইলাম তারপর আবার খুব সকালে বের হয়ে গিয়ে জানতে পারলাম যে ঢাকার মেরাদিয়া হাটের পুর্ব পাশে এক গ্রামে আমাদের ক্যাম্প নেয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে আমরা সবাই সেখানে জড়ো হতে লাগলাম।অস্ত্র শস্ত্র আনার জন্য লোক পাঠিয়ে দেয়া হলো। ভারত থেকে প্রশিক্ষনপ্রাপ্তরা ছাড়াও অনেকে বিভিন্ন সুপারিশে আমাদের দলে যোগদান করলো। দেখতে দেখতে আমরা প্রায় ৩০/৪০ জন সদস্য হয়ে গেলাম। এর মাঝে কিছু ছিল স্থানীয়ভাবে রিক্রুট করা।

ইতিমধ্যে আমাদের গোলাবারুদ এসে পৌছালো। তাৎক্ষনিক ব্যবহারের জন্য কিছু রেখে বাকি সব অস্ত্র শস্ত্র প্লাষ্টিকে মুড়িয়ে টিনের ট্রাংকে ভরে মাটির নীচে চাপা দিয়ে রাখা হলো।শহরে অযথা ঘোরাঘুরির ব্যাপারে আমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হলো ।
বাকী আমাদের কয়েকটা ভাগে ভাগ করে দিল। তার নির্দেশ মত আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন, নারায়নগঞ্জের একটি স্থাপনা, ঢাকা সেন্ট্রাল গভর্মেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কোয়ার্টার এবং গুলবাগ পাওয়ার স্টেশনে গ্রেনেড চার্জ করি যা পাক বাহিনীর ভেতর দারুন আতংক সৃষ্টি করেছিল। সেন্ট্রাল গভ এর প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন পাক বাহিনীরএকজন দালাল এবং তিনি বংগবন্ধুর নির্দেশ অমান্য করে স্কুল খোলা রেখেছিল।

আমাদের এই সব অভিযানে পাক বাহিনী ভীষন ভাবে সতর্ক হয়ে পড়লো।সেদিন থেকে দিনে রাতে আমরা চার গ্রুপ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অনবরত চোরাগুপ্তা হামলা চালাতে লাগলাম। আমাদের এই উপুর্যপুরি আক্রমনে তারা ভীষন ভাবে ঘাবড়ে গিয়েছিল।কারন মানসিকভাবে তারা এমনিতেই দুর্বল ছিল তার উপর স্থানীয় ভাবে তাদের গ্রহন যোগ্যতা ছিল শুন্যের কোঠায়।
এবার আমরা ঠিক করলাম তাদের তথ্য সরবরাহকারীদের ধরে মেরে ফেলার।এর জন্য প্রথমেই দুজনকে লক্ষ্য বস্তুতে পরিনত করি।এই দুজনের একজনকে আমরা ক্যম্পে এনে হত্যা করি আরেকজনকে এক চায়ের দোকানের সামনে থেকে ডেকে এনে মেরেছিলাম।পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ো আমরা তিনজন তাকে ঘিরে ফেলি।আমাদের একজন প্রথমে স্টেন গান বের করে ট্রিগার টিপে। কিন্ত দুর্ভাগ্যবশত তার বন্দুকটি লক হয়ে পরে। তখন আরেকজন গায়ের চাদর সরিয়ে তাকে লক্ষ্য করে ব্রাশ ফায়ার করে। সাথে সাথেই তার মৃত্যু হয়। এই অপারেশনটা শেষ করতে আমাদের দু থেকে তিন মিনিট লেগেছিল।মুহুর্তের মধ্যে আমরা সেখান থেকে সরে পরতে সক্ষম হই।পাক বাহিনীর হাতে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেয়া এবং হত্যা করার পেছনে এ দুজনের হাত ছিল।
এরপর থেকে আমাদের খিলগাঁও মালিবাগ ও তার আশে পাশের এলাকায় প্রচন্ড ধর পাকড় শুরু হয়। তবে পাক হানাদার বাহিনী শুধু দিনের বেলাই আসতো।রাতে ফুল কনভয় নিয়ে শুধু দুবার টহল দিত। এরপর থেকে আমরাও ভীষন সতর্ক হয়ে পরলাম। আমাদের সমস্ত চলাচল হিসাব নিকাশ করে করতে হতো।
এমন কথাও শুনলাম আমাকে আর বাকীকে ধরার জন্য পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষনা করা হয়েছে। সত্যি মিথ্যা জানি না কিন্ত এরপর থেকে বাকী আমাকে কড়া ভাবে সাবধান করে দিল এবং নিজেও সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতে লাগলো।
তখন ভরা বর্ষা আর ঢাকার সেই অঞ্চলগুলো ছিল নীচু, ফলে পানি এসে পুরো এলাকা ডুবে গিয়েছিল। গ্রামগুলো এক একটা দ্বীপে পরিনত হয়েছিল।আমাদের ক্যম্প যে গ্রামে তারও একই অবস্থা। ফলে যাতায়তের একমাত্র অবলম্বন ছিল নৌকা। আমাদের নিজস্ব একটা নৌকা ছিল আর মাঝিটি ছিল অল্প বয়সী এক যুবক।আমরা পালাক্রমে ক্যম্পের চারিদিকে নৌকা করে পাহারা দিতাম। সেদিনের সেই দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ে ভরা উত্তেজনাপুর্ন দিনগুলোর কথা মনে হলে আজও প্রচন্ডভাবে আলোড়িত হই।

যদিও আমরা গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ছিলাম তারপর ও আমাদের দুবার পাক বাহিনীর মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তখন অক্টোবর মাস। গ্রামীন এলাকায় কিন্ত শহরের আগেই শীত নেমে আসে।আমাদের ক্যম্পেও রাত হলে চারিদিক ঠান্ডা হয়ে আসতো এবং সেই সাথে ঘন কুয়াশাও ছিল।আগেই বলেছি আমাদের ক্যম্প যেই গ্রামে ছিল তার চারিদিকেই ছিল নীচু বিল এলাকা ।ফলে কুয়াশাটা আরো প্রকট হয়ে পরতো।তেমনি এক রাতে আমরা প্রায় বিশ বাইশ জন যোদ্ধা ক্যম্পের মধ্যে অবস্থান করছিলাম।এত জন সদস্য একসাথে থাকা সচরাচর এমনটা কখনো হতো না।
এদিকে আমাদের ঘাটির উপর পাক বাহিনীর যে নজর পড়েছে তা আমরা ঠিক বুঝতে পারি নি।ক্যম্পে থাকার সময় আমরা দল বেঁধে দূরে একটা পুকুরে গোসল করতে যেতাম।একদিন দেখলাম একটি সেসনা বিমান আমাদের মাথার উপর দিয়ে চক্কর দিচ্ছে। খুব সম্ভবত এর মাধ্যমেই পাক বাহিনী আমাদের অবস্থানকে চিন্হিত করেছিল।
একদিন খুব ভোরে আমি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে চোখ রগড়াতে রগড়াতে বাইরে বের হয়ে আসি। আমাদের ক্যম্প থেকে মেরাদিয়ার হাট ছিল প্রায় পৌনে একমাইলের মত দুরত্বে।কুয়াশার ভেতর আবছায়া ভাবে একটি লাল ব্যারেল খুব ধীর গতিতে আমাদের ক্যাম্প বরাবর এগিয়ে আসছে।আবার চোখ কচলে তাকালাম না সত্যি একটি পাকিস্তানি গান বোট ইঞ্জিন বন্ধ করে নিঃশব্দে এসে আমাদের ক্যাম্পের আড়াআড়ি তীরে ভিড়াচ্ছে।ওটার পেছনে দুটো ছোট লঞ্চ ভর্তি পাক সেনা।লঞ্চ দুটোও থেমে গেল আর হানাদার সৈন্যরা আস্তে আস্তে শব্দ না করে নেমে আমাদের ক্যাম্পের দিকে পজিশন নিতে শুরু করলো।
কিছুক্ষনের জন্য আমি সম্পুর্ন অসার হয়ে পরেছিলাম। তারপর দৌড়ে ঘরে ঢুকে বাকীকে ঘটনা জানালাম আর সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলাম। বাকী বাইরে গিয়ে এক পলকে পরিস্থিতি দেখে এসে নির্দেশ দিল আমাদের যে লাইট মেশিন গান আর তিন ইঞ্চি মর্টার গান ছিল তা রেডী করার জন্য। আমি বললাম রেডি করা যাবে কিন্ত পাক বাহিনীর গান বোট, ছয় ইঞ্চি মর্টার, ভারী মেশিন গান আর আর চাইনীজ রাইফেলের সাথে লড়তে গেলে আমাদের কারোই অস্তিত্ব থাকবে না। সেদিন আমার আরেক বন্ধু জাহাঙ্গীর আমার কথায় সম্পুর্ন সমর্থন দিয়েছিল।
আমাদের যা ছিল পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সেই অপ্রতুল অস্ত্র শস্ত্র গুলো তৈরী করে নিলাম । আমরা ছয় /সাতজনের মত ক্যম্পে থাকলাম আর অন্যান্যদের বলা হলো বাকি সব অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে নৌকা করে দু কিঃমিঃ দুরের এক গ্রামে চলে যেতে। আমরা বাইরে গিয়ে দেখলাম পাক বাহিনী তাদের মিলিটারী বোট নদীর পারে ভিড়িয়ে সেখান থেকে নেমে সম্পুর্ন প্রস্ততি নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে দাড়ালো। কোমর সমান পানি পার হয়ে তারা আমাদের ক্যাম্পের দিকে নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে।একজন আমাদের অবস্থানের দিকে লক্ষ্য করে অস্ত্র তাক করে রাখছে পাশেরজন দশ কদম এগিয়ে আসছে।এভাবে আসতে গিয়েই ওদের অনেক সময় লেগে যাচ্ছিল।

ঐ অবস্থায় অসীম সাহসী বাকী আরেকবার বলেছিল গুলি করা শুরু করতে। আমি আবারও যুক্তি দেখিয়ে বলি ‘বাকী ওরা আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, প্রশিক্ষিত, তাদের ব্যাক সাপোর্টও অনেক শক্তিশালী এছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো গ্রামের সব লোক এখনো পালিয়ে যেতে পারে নি, এখন আমরা এই কয়জন যদি তাদের আক্রমন করি তা আত্মহত্যারই সামিল হবে’। বাকী আমার যুক্তি মেনে নিল।
এ প্রসঙ্গে একটি কথা না বললেই নয় । তাহলো বর্তমানে রাজনৈতিক নেতা কর্মী থেকে শুরু করে সাধারন মানুষও পরমত অসহিষ্ণু। তাদের আদর্শ ও নীতির ব্যাপারে প্রচন্ড রকম রক্ষনশীল এবং একগুয়ে। শেখ কামালের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ প্রিয় বন্ধু এবং ক্লাশ মেট আবদুল্লাহ হেল বাকী সম্পুর্ন অন্য একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারী হয়েও আমার সাথে বন্ধুত্ব, আমার প্রতি তার আন্তরিকতা আর হৃদ্যতার কোন অভাব ছিল না।বন্ধুর মত সে আমার সকল সমস্যায় সব সময় পাশে ছিল এবং বয়সে তার ছোট হলেও আমার অনেক পরামর্শ আর যুক্তি মেনে নিতে কখনোই দ্বিধা করতোনা।

যখন নিশ্চিত হোলাম যে আমাদের ছেলেরা এবং গ্রামবাসীরা নিরাপদ দুরত্বে চলে গেছে তখন আমরা স্থান ত্যাগ করতে শুরু করলাম। আমরা যখন পিছনের বিলের প্রায় শেষ প্রান্তে তখন পাক বাহিনী আমাদের ক্যাম্পে এসে হাজির হয়। আমরা কোন পথে পালিয়েছি তা বের করতেও তাদের কিছুটা সময় লাগে। এরপর তারা আমাদের পিছু নেয় এবং রাস্তা্র চিনহ রাখার জন্য তারা ব্যাবহার করেছিল আমাদের ক্যম্পে থাকা প্রচুর পরিমান মাল্টি ভিটামিন যা ছিল লাল এবং সবুজ দুটি উজ্জ্বল রঙ এর।
তাদেরও ভয় ছিল যে আমরা যদি আক্রমন করি তাহলে গ্রামের পথ ধরে নিজেদের গান বোটে ফিরে আসতে যেন কোন সমস্যা না হয়।পাক বাহিনী সেখানে ঘন্টা দুয়েকের মত অবস্থান করে তান্ডব চালায় এছাড়াও তারা পাঁচটি বড় বড় বাড়ীতে আগুন দেয় এবং অন্যন্য বাড়ীঘর ভাংচুর করে ।
তিন ঘন্টা অপেক্ষার পর আমরা যখন সিগনাল অল ক্লিয়ার তখন ক্যাম্পে ফেরৎ এসে দেখি আমাদের কাপড় চোপড় থেকে শুরু করে সব কিছুতেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। সেদিনটি আমাদের সবার অভুক্ত কেটেছিল।

এ ঘটনার দিন পনেরো পর আমরা পনেরো বিশজন ক্যাম্পে বসে অস্ত্রশস্ত্রগুলো পরিস্কার করছি। সামনে আমাদের একটি বড় অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে তারই প্রস্ততি হিসেবে সমস্ত রসদ আর অস্ত্র ঠিক ঠাক করে নিচ্ছিলাম।এমন সময় এক ঝাঁক গুলির শব্দে আমরা সতর্ক হয়ে গেলাম।শব্দটা এসেছিল ক্যাম্পের দক্ষিন পশ্চিম দিক থেকে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই খবর এসে গেল যে পাক বাহিনী আমাদের অবস্থানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।সংখ্যায় তারা প্রায় ২৫/৩০ জন ছিল।তারা আসছিল স্থল পথে, ফলে তাদের ঢাকার পাশ ঘেষে বয়ে যাওয়া বালু নদী পার হওয়ার কোন সম্ভাবনা তখনো আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম না। খুব সম্ভবতঃ তাদের পরিকল্পনা ছিল যে তারা গুলি করতে করতে এগিয়ে আসবে, যদি পথে বাধাগ্রস্ত হয় তখন নদীর পারে এসে একটা ব্যাবস্থা নেবে। কারন নদীটা খুব একটা চওড়া ছিল না। নৌকায় সহজেই পার হওয়া যেত।কিন্ত নদীর পাড় পর্যন্ত আসার আগেই মুক্তি যুদ্ধের আর এক বীর সৈনিক আইউব ভাই সাথে আরো কিছু মুক্তি সেনা নিয়ে পাক বাহিনীর উপর আক্রমন চালায়।ফলে পাক হানাদাররা আর এগুতে না পেরে নদীর পাড়ের গ্রামের মধ্যে অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকেই ক্রমাগত গুলি ছুড়তে থাকে।

আমাদের কাছে যথারিতী কোন ভারী অস্ত্র শস্ত্র ছিল না। প্রতি তিরিশ জনের মাঝে বরাদ্দ ছিল ৩ইঞ্চি মর্টার, একটি করে এল এম জি, সাথে থাকতো বিশটা এস এল আর, দশটা করে থ্রি নট থ্রি রাইফেল আর সাব মেশিন গান। আমাদের কাছে প্রচুর পরিমানে যে অস্ত্র ছিল তার বেশিরভাগই বিস্ফোরক যা কোন স্থাপনা, ট্যাংক, লরী ইত্যাদি ধ্বংশের কাজে লাগে।যেমন হ্যান্ড গ্রেনেড, এন্টি পার্সোনেল মাইন, এন্টি ট্যাঙ্ক মাইন, বিস্ফোরক পাউডার ইত্যাদি।
যাই হোক আমরা তখন আমাদের সাথে থাকা দুটো এল এম জি , একটি ৩ ইঞ্চি মর্টার , সাত/ আটটা এস এল আর এবং খুব সম্ভবত গোটা তিনেক এস এম জি ও কিছু গ্রেনেড নিয়ে মেরাদিয়া হাটের একটু পশ্চিমে অবস্থান নিলাম, যা কিনা পাক বাহিনীর অবস্থানের ঠিক উত্তর প্রান্তে।পাক বাহিনীর অবস্থানের ঠিক পুর্ব দিকে ছিল আইয়ুব বাহিনী এবং পশ্চিম দিক থেকে লিয়াকত ভাইও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে এগিয়ে আসছিল।
আবারো বলি আমাদের যেহেতু সন্মুখ যুদ্ধের জন্য প্রস্তত করা হয়নি তাই আমাদের সব গ্রুপের কাছেই অস্ত্রের সরবরাহ একই রকমের ছিল। অর্থাৎ গুলির সীমানা ৩০০ গজ।যার ফলে পাক বাহিনীকে আমরা শুধু জানান দিতে পেরেছিলাম যে আমরা প্রস্তত আছি, নদী পার হলে তোমাদের জন্য যম অপেক্ষা করছে।

চলবে:-
ছবি নেট
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সেক্টর ২ রনাঙ্গনে সক্রিয় অংশগ্রহনকারী এক বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বহস্তে লেখা দিনলিপি ( শেষ পর্ব ) )

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:২৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ এগুচ্ছে । খুব ভাল লাগছে । সাথে অস্ত্রের বর্ননাগুলো জোশ । চলুক যুদ্ধ....

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:২১

জুন বলেছেন: যুদ্ধের সময় কারো সাহায্য সহযোগীতা পেলে তার জন্য কৃতজ্ঞতা । তেমনি লেখার সময় ও একই কথা প্রযোজ্য ককাশে । সাথে থাকা আর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:০১

সকাল রয় বলেছেন:
অনেকদিন পর এমন ভালো লেখা পড়লাম। আমি পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়। আর অফলাইনে আগের লেখা গুলো পড়ে নেব।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:২২

জুন বলেছেন: শত প্রতিকুলতার মাঝেও শেষ পর্যন্ত যে তোমার সুযোগ হলো পড়ার তার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ সকাল।
পরবর্তী আর একটি পর্ব আছে । সাথে থেকো ।

৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:০২

মুরশীদ বলেছেন: ঢাকার গেরিলা রণক্ষেত্রের একটি চমৎকার বর্ণনা। খুব প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। পরবরতি অংশের অপেক্ষায় রইলাম।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:২৭

জুন বলেছেন: আর বেশি দিন মনে হয় অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে না মুরশীদ । সামনের পর্বেই হয়তো আমার এই দীর্ঘ লেখার সমাপ্তি হবে। যদিও আমার অন্যান্য লেখার চেয়ে এটা অনেক দীর্ঘ তারপর ও মনে হয় আমাদের এই প্রজন্ম যারা সেই ভয়াল দিনগুলো চোখে দেখে নি, স্বাধীনতার আস্বাদ পেয়েছে কিন্ত কত ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়ার শুভক্ষনটি এসেছে তার সাক্ষী হতে পারে নি । তাদের জন্যই জনাব মনসুরুল আজীম এবং আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
মন্তব্যের জন্য এবং প্রেরনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে

৪| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:০৯

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: চলুক। আগ্রহ নিয়ে পড়তেছি প্রতিটা পর্ব।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৪১

জুন বলেছেন: আরেকটি পর্ব শতদ্রু ।
সাথে ছিলেন , সামনের শেষ পর্বেও সাথে থাকবেন সেই আশায় রইলাম
ভালো থাকুন, শুভ কামনা সকল সময় আপনার জন্য ।

৫| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:০১

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ভাই, অনুরোধ রইল - চলতে থাকুক । প্রিয়তে নিলাম । ধন্যবাদ ।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৪৩

জুন বলেছেন: প্লাবন ২০০৩ স্বাগতম আমার ব্লগে । মন্তব্য আর প্রিয়তে নেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
চলা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে , আরেকটি পর্বে সাথে থাকুন সেই কামনা করি ।

৬| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৩৬

তাহসান আহমেদ বলেছেন: ভালো লাগা

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪

জুন বলেছেন: ভালোলাগার জন্য আপনাকেও অনেক ভালোলাগা তাহসান আহমেদ ।
সামনের শেষ পর্বে সাথে থাকবেন সেই কামনা করি ।

৭| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:১২

রিভানুলো বলেছেন: জুন আপনার লেখাটি দেখে অনেক দিন পর লগইন হোলাম।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের খানিকটা ইতিহাস সবার সামনে তুলে ধরার জন্য আপনাকে স্যালুট। +++++++

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯

জুন বলেছেন: সেটাই দেখছি রিভানুলো ।অনেক দিন পরই মনে হয় আপনাকে দেখলাম।
মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ।

৮| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৫৮

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ধন্যবাদ আবারো। অনেক কিছুই জানতে পারছি। উপলব্ধি করছি।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:০৩

জুন বলেছেন: আমিও চেষ্টা করছি এই ক্ষুদ্র পরিসরে নাম না জানা সেই গৌরবজ্জ্বল দিনের এক জন্য অংশীদারের কথা লিখে জানাতে দিশেহারা।
সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ।

৯| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: দারুন সিরিজ পোষ্ট। শেষ না করে উনাকে অনুরোধ করতে পারেন একাত্তর পরবর্তী সময় নিয়েও লিখতে, একজন মুক্তিযোদ্ধার দৃস্টিতে। শুভকামনা রইলো।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:২৩

জুন বলেছেন: আপনি দারুন বলেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা মায়াবী রূপকথা । চেষ্টা করবো । শুভকামনা রইলো আপনার জন্য ।

১০| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: এই পর্বের মেসেজ আমার মনে হচ্ছে পরমত সহিষ্নুতা।
দল মত এর উর্দ্ধে আবার আমরা এই জেনারেশন কবে উঠতে পারব??

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৩১

জুন বলেছেন: কিন্ত বর্তমান অবস্থা দেখলে মনে হয় না আমাদের রাজনীতিতে এই পরমত সহিষ্ণুতার ঐতিহ্য কখনো ছিল । নইলে মুক্তিযোদ্ধা / সেক্টর ২ এর কমান্ডার বাকীর টুয়াইসি কি করে অন্য মতাবলম্বী একজন হয় ? অনেক ধন্যবাদ মনিরা সুলতানা আরেকটি পর্বে ধৈর্য্যের সাথে থাকুন ।

১১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৭:২১

এহসান সাবির বলেছেন: চলুক......

শুভ নববর্ষ আপু!

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৩২

জুন বলেছেন: আরেকটি পর্ব সাথে থাকুন এহসান সাবির ।
শুভ নববর্ষ

১২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২

সুমন কর বলেছেন: শুভ নববর্ষ !!

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৩২

জুন বলেছেন: শুভ নববর্ষ !!

১৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৩৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: জুন ,




পাক বাহিনী অধিকৃত বাঙলায় এই সব অদম্য মুক্তিযোদ্ধারা ছিল বলেই পাক বাহিনীর মনোবল অনেকখানি খসে গেছিলো । সাথে সাধারন মানুষের অসহযোগিতা ছিল গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মতো । সব মিলিয়ে তাদের ছিলো , "ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা" ।
এই ছিলো সেদিনকার সত্যিকারের চিত্র । এই দিনগুলোকে যারা অস্বীকার করে ধিক তাদের ......

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৮

জুন বলেছেন: আহমেদ জী এস পোষ্টটি পড়ার জন্য জনাব মনসুরুল আজীমের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.