নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাসির মূল্য - ১

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৫

মাস দুয়েক আগে আমি আমার ফেইসবুকে “পার্ট অফ লাইফ!” শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটাতে অনেকে মন্তব্য করেছেন এবং “লাইক” দিয়েছেন। তাতে বুঝলাম, জীবনের এ ধরনের অভিজ্ঞতাগুলোর হয়তো একটা সার্বজনীন আবেদন আছে। লেখাটা ছিল আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে আমার বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমীতে (বিএমএ) জেন্টেলম্যান ক্যাডেট (জিসি) হিসেবে প্রশিক্ষণ চলাকালীন একটা ঘটনা নিয়ে।

বিএমএ লাইফে আমরা সাধারণতঃ কোন ছোটখাট অপরাধের জন্য যখন "এক্সট্রা ড্রিল" (ইডি) পেতাম, তখন সেটা কী অপরাধে পেতাম তা আগে থেকেই জানতাম। একদিন হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই ইডি তালিকায় নিজের নাম দেখে বিস্মিত হ'লাম। যথারীতি প্রস্তুত হয়ে ইডিতে হাজির হয়ে দেখি, ইডি পরিচালনা করবেন ১ নং প্লাটুনের এনসিও প্রশিক্ষক হাবিলদার আলী আকবর জোয়ারদার, ই বেঙ্গল (বর্তমানে মরহুম, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে বেহেস্ত নসীব করুন!)। আমি ছিলাম ২ নং প্লাটুনের। বিএমএতে তখন এটা একটা প্রতিযোগিতার মত শুরু হয়ে গিয়েছিল যে এক প্লাটুনের ওস্তাদরা সুযোগ পেলেই অন্য প্লাটুনের জিসিদের টোকাই করতেন। তাতে তাদের নিজেদের প্লাটুনের শ্রেষ্ঠ প্লাটুন বিবেচিত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যেত। আমি তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে কী অপরাধে ইডি দেওয়া হয়েছে? উনি পকেট থেকে একটা ছোট্ট নোটবই বের করে আমাকে দেখালেন। দেখলাম, তাতে লেখা আছে- "GC 139-ED For LOV"। GC 139 আমারই জিসি নম্বর ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না LOV বলতে কি উনি লাভ টাভ জাতীয় কোন কিছু বুঝাচ্ছেন নাকি? তখন তো আমাদের ব্যক্তিগত চিঠিপত্রগুলো সেন্সর করা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু সেটা করলেও তো করবেন এ্যাডজুট্যান্ট স্যার, কোন এনসিও তো নয় নিশ্চয়। তাই তাঁকে আবার LOV এর অর্থ জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, "ভিহিক্যালে (Vehicle এ) উইঠ্যা এত হাসেন ক্যান?" ইডি পাইছেন "লাফিং অন ভিহিকাল" এর জন্য।

বুঝলাম, মিলিটারী যানবাহনে উঠে হাসাহাসি করা একটা অপরাধ, আর সে অপরাধের নামই তাহলে "লাফিং অন ভিহিকাল" বা LOV!

মনে পড়লো, একদিন বহিরাঙ্গণ প্রশিক্ষণ থেকে ফেরার সময় আমি বসেছিলাম একটা খোলা ৩ টন লরীর একেবারে শেষে, টেইল বোর্ড ঘেঁষে। আমাদের ট্রাকটার ঠিক পেছনেই আসছিলো ১ নং প্লাটুনের ট্রাক, যেটার ফ্রন্ট সীটে বসা ছিলেন ওস্তাদ (হাবিলদার) আলী আকবর জোয়ারদার। তাঁর সাথে আমার কয়েকবার চোখাচোখিও হয়েছিলো। ফেরার সময় সতীর্থ ফিরদাউস আহমেদ (আর্মি দলের এবং পরে জাতীয় হকি দলেরও, নামকরা গোল কীপার ছিলো একসময়ে) আমার পাশে বসেই দারুণ একটা জোক বলেছিলো। আমি হাসিতে ফেটে পড়েছিলাম, আর ওস্তাদ আলী আকবর জোয়ারদার পেছনের ট্রাকের ফ্রন্ট সীটে বসে সেটাই লক্ষ্য করেছিলেন। আর যাই কোথা! সাথে সাথে তিনি সেটা তার নোটবুকে টুকে নিয়েছিলেন।

একটা নির্দোষ, নির্মল প্রাণখোলা হাসির জন্য এরকম একটা মূল্য আর কোথাও দিতে হয় কিনা জানিনা, কিন্তু তখন ওগুলোই ছিলো আমাদের পার্ট অফ লাইফ!

ঢাকা
১৪ অগাস্ট ২০১৫

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:২২

রোকন রাইয়ান বলেছেন: মজার বিষয় জানলাম।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ, পড়ে কিছু বলার জন্যও, রোকন রাইয়ান।

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৩০

গেম চেঞ্জার বলেছেন: মিলিটারীদের সাইকোলজিক্যাল ভ্যালু বজায় রাখতেই বোধহয় এইরকম .....। যাক নিয়মের কড়া থাকাটা যেকোন ফোর্সের জন্য ভালো।

আপনার ঐ ঘটনা এখন একটা স্মৃতি হিসেবে থাকবে, এটাই বা কম কিসে।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:০৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: ঠিক তা নয়। কোন লিখিত নিয়ম নেই যে মিলিটারী গাড়ীতে উঠে হাসা যাবেনা। আসল কারণটা আমার লেখাতেই বলেছি- নিজ প্লাটুনকে শ্রেষ্ঠ বানানোর জন্য অপর প্লাটুনের নম্বর কাটানোর প্রতিযোগিতায় প্রশিক্ষকগণের অতি উৎসাহ।
এ লেখাটা লিখেছি কোন সিরিয়াস মুডে নয়, নির্দোষ একটা হাসিও কখনো বিড়ম্বনার কারণ হয়, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে সেটুকুই বোঝানোর জন্য। আমি জানি এই ব্লগে অনেক তরুণ পাঠক, লেখক আছেন। তাদের মধ্যে যদি এমন কেউ থাকেন যিনি নিকট ভবিষ্যতে কোন বাহিনীর প্রশিক্ষণে যাবেন, তিনি বা তারা এ লেখা পড়ে উপকৃত হতে পারেন। "হাসির মূল্য - ২" এ আরেকটা ঘটনার উল্লেখ করবো, সেটাও কাজে আসতে পারে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, গেম চেঞ্জার।

৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:১৯

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

সত্যিই এই অভিজ্ঞতাগুলোর সার্বজনীন আবেদন আছে। সত্যিকার জীবনালেখ্য সবসময়ই অন্যের কাছে কৌতূহলের বিষয়।

লেখাটি ভালো লেগেছে।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার লেখাটা পড়েছেন, প্রশংসাও করেছেন, সেজন্য খুবই খুশী হয়েছি, অনুপ্রাণিত হয়েছি।
আশা করি একই বিষয়ে প্রকাশিতব্য (আগামী কাল, ইন শা আল্লাহ) আমার পড়ের লেখাটাও পড়ে দেখবেন।
পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, মাঈনউদ্দিন মইনুল!

৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: খায়রুল আহসান ,



ইয়েস , ইটস আ পার্ট অব লাইফ ।

নির্দোষ, নির্মল অথচ মাঝে মাঝে কি ভীষন ভাবে নির্দয় !!!

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১২

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, আহমেদ জী এস। শুভেচ্ছা রইলো।

৫| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৩৮

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
পার্ট অফ লাইফ ! হুম !
টুকরো টুকরো হাসি-কান্না-অনুভূতি আর অভিজ্ঞতার মিশেল ...
এইতো জীবন।

লেখালেখিতে নিয়মিত থাকুন। শুভ কামনা রইলো।

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্য, পরামর্শ আর শুভকামনার জন্য অশেষ ধন্যবাদ, অন্ধবিন্দু। পরের সিরিয়ালটাও পড়বেন বলে আশা করি।

৬| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৫

শামছুল ইসলাম বলেছেন: মজার বাস্তব কাহিনী, ভাল লেগেছে।

পার্ট অফ লাইফঃ
//একটা নির্দোষ, নির্মল প্রাণখোলা হাসির জন্য এরকম একটা মূল্য আর কোথাও দিতে হয় কিনা জানিনা, কিন্তু তখন ওগুলোই ছিলো আমাদের পার্ট অফ লাইফ!//

ভাল থাকুন। সবসময়।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, শামছুল ইসলাম, আমার এ লেখাটাতে এসে কিছু কথা রেখে যাবার জন্য। লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে প্রীত ও অনুপ্রাণিত হ'লাম। আশাকরি হাসির মূল্য - ২ লেখাটাও একবার সময় করে পড়ে দেখবেন।
ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা রইলো।

৭| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ২ টা আগেই দেখেছি।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০২

খায়রুল আহসান বলেছেন: এখানে প্রায়ই একটা মন্তব্য দেখি যে, অমুকে আপনাকে অনুসরণ করছেন। এই অনুসরণ কথাটা একটু বুঝিয়ে বলবেন কি? কিভাবে অনুসরণ করা হয় এবং অনুসরণ করার মধ্যে ভালো মন্দ কি কি থাকতে পারে?

৮| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪

শামছুল ইসলাম বলেছেন: এই যেমন আমি আপনাকে অনুসরণ করছি।
এটা করার জন্য আমি আপনার নামের নীচে 'অনুসরণ' লেখাটায় ক্লিক করার সাথে সাথে ওটা 'অনুসারিত' হয়ে গেছে।

মন্দ দিকটা এখনো জানি না, ভালটা হলো ব্লগের শুরুর পাতায় অনুসারিত ব্লগে ক্লিক করে আপনার সমস্ত পোস্ট আমি দেখতে পাব।

আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন।



০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার জন্য।

৯| ২২ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৪:৩৩

অপু তানভীর বলেছেন: লাভ এর কারণে শাস্তি ! :D

আপনাদের আরও কী কী কারণে শাস্তি পেতে হত সেটার একটা তালিকা তৈরি করবেন তো ! জানতে আগ্রহবোধ হচ্ছে !

২২ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫১

খায়রুল আহসান বলেছেন: কারণের কি কোন শেষ আছে? অগুনতি কারণ থাকতো।

"লাভ এর কারণে শাস্তি !" - না, ঠিক তা নয়। শাস্তিটা হয়েছিল "লাফিং অন ভিহিকাল" বা সংক্ষেপে LOV এর কারণে। যানবাহনে বসে অট্টহাসি হাসাটাকে (যদিও তিনি সে হাসির আওয়াজ শুনতে পান নাই, পেছনে অন্য আরেকটা যানবাহনে বসে থাকার কারণে) তিনি শৃঙ্খ্লার পরিপন্থী বলে গণ্য করেছিলেন।

মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.